সোলান জেলা
সোলান জেলা উত্তর ভারতে অবস্থিত হিমাচল প্রদেশ রাজ্যের একটি জেলা। এই জেলাটির সদর ও প্রশাসনিক দপ্তর রয়েছে সোলান শহরে। জেলাটি ১,৯৩৬ বর্গকিলোমিটার অথবা ৭৪৭ বর্গমাইল ক্ষেত্রফল জুড়ে বিস্তৃত৷
সোলান জেলা | |
---|---|
হিমাচল প্রদেশের জেলা | |
হিমাচল প্রদেশে সোলান জেলার অবস্থান | |
রাষ্ট্র | ভারত |
রাজ্য | হিমাচল প্রদেশ |
সদর | সোলান |
তহশিল | তালিকা
|
সরকার | |
• লোকসভা | শিমলা লোকসভা কেন্দ্র |
• বিধানসভা | ৫০-অর্কী, ৫১-নালাগড়, ৫২-দুন, ৫৩-সোলান, ৫৪-কসৌলী |
আয়তন | |
• সর্বমোট | ১,৯৩৬ বর্গকিমি (৭৪৭ বর্গমাইল) |
জনসংখ্যা (২০১১) | |
• সর্বমোট | ৫,৮০,৩২০ |
• জনঘনত্ব | ৩০০/বর্গকিমি (৭৮০/বর্গমাইল) |
• পৌর এলাকা | ১৮.২২% |
জনতত্ত্ব | |
• সাক্ষরতার হার | ৮৩.৬৮% |
• লিঙ্গানুপাত | ৮৮০ |
সময় অঞ্চল | ভারতীয় প্রমাণ সময় (ইউটিসি+০৫:৩০) |
জাতীয় সড়ক | ৫ নং |
গড় বার্ষিক বৃষ্টিপাত | ১২৫৩ মিমি |
ওয়েবসাইট | http://hpsolan.nic.in/ |
ইতিহাস
ব্রিটিশ ভারতের পূর্বতন কিছু দেশীয় রাজ্য যথা; বাঘল, বাঘাত, কুনিহার, কুটহার, মঙ্গল, বেজা, মাহিলোগ, নালাগড় রাজ্য এবং কেওঁথল ও কোটী রাজ্যের কিছু অংশসহ পাঞ্জাবের পার্বত্য অঞ্চল ১৯৬৬ খ্রিস্তাব্দের ১লা নভেম্বর তারিখে স্বাধীন ভারতের সঙ্গে যুক্ত হয়৷ পরে ১৯৭২ খ্রিস্টাব্দের ১লা সেপ্টেম্বর পূর্বতন মহাসু জেলার সোলান ও অর্কী তহশিলের সাথে পেপসুর কণ্ডাঘাট ও নালাগড় তহশিল একত্রিত এই সোলান জেলাটি গঠিত হয়৷ মাতা শূলিনী দেবীর নাম অনুসারে সোলান শহরের নাম এসেছে, আবার সদরের নামানুসারে জেলাটির নামকরণ করা হয়েছে৷
জেলা প্রশাসন ও কেন্দ্র সরকারী দপ্তর
বিধানসভা নির্বাচন কেন্দ্র
জেলাটিতে পাঁচটি বিধানসভা কেন্দ্র রয়েছে:
- অর্কী বিধানসভা কেন্দ্র [1]
এই বিধানসভা কেন্দ্রটি হিমাচল প্রদেশ রাজ্যের বিধানসভা কেন্দ্রগুলির মধ্যে ৫০ নং বিধানসভা কেন্দ্র৷
- নালাগড় বিধানসভা কেন্দ্র [2]
এই বিধানসভা কেন্দ্রটি হিমাচল প্রদেশ রাজ্যের বিধানসভা কেন্দ্রগুলির মধ্যে ৫১ নং বিধানসভা কেন্দ্র৷
- দুন বিধানসভা কেন্দ্র [3]
এই বিধানসভা কেন্দ্রটি হিমাচল প্রদেশ রাজ্যের বিধানসভা কেন্দ্রগুলির মধ্যে ৫২ নং বিধানসভা কেন্দ্র৷
- সোলান বিধানসভা কেন্দ্র [4]
এই বিধানসভা কেন্দ্রটি হিমাচল প্রদেশ রাজ্যের বিধানসভা কেন্দ্রগুলির মধ্যে ৫৩ নং বিধানসভা কেন্দ্র। এটি তপসিলী জাতিদের জন্য সংরক্ষিত আসন৷
- কসৌলি বিধানসভা কেন্দ্র [5]
এই বিধানসভা কেন্দ্রটি হিমাচল প্রদেশ রাজ্যের বিধানসভা কেন্দ্রগুলির মধ্যে ৫৪ নং বিধানসভা কেন্দ্র। এটি তপসিলী জাতিদের জন্য সংরক্ষিত আসন৷
বিভাগ
জেলেটি চারটি উপবিভাগে বিভক্ত: সোলান ও কসৌলী তহশীল নিয়ে গঠিত সোলান উপবিভাগ, অপর তিনটি উপবিভাগ হলো নালাগড়, অর্কী এবং কণ্ডাঘাট। এই তিনটি উপবিভাগে রয়েছে নালাগড়, বাদ্দি, রামশহর, অর্কী এবং কণ্ডাঘাট তহশীলগুলি।[6]
প্রশাসনিকভাবে জেলাটি সাতটি তহশীল বিভক্ত, এগুলি হল; সোলান, কণ্ডাঘাট, কসৌলী, নালাগড়, অর্কী, বাদ্দি ও রামশহর। উপ তহশীল সংখ্যা পাঁচটি যথা, কৃষণগড়, ধরলাঘাট, মামলিঘ এবং পঞ্জেহরা।[7] ব্লক রয়েছে পাঁচটি যথা সোলান, কণ্ডাঘাট, ধরমপুর, নালাগড় এবং কুনিহার। জেলাটিতে মোট ২১১ টি গ্রাম পঞ্চায়েত এবং ২৩৮৩ টি গ্রাম রয়েছে।[8]
জেলার প্রশাসনিক অধিকর্তা হলেন ডেপুটি কমিশনার যার দপ্তরটি জেলা সদরে অবস্থিত।
জনতত্ত্ব
বছর | জন. | ব.প্র. ±% |
---|---|---|
১৯০১ | ১,৪১,৬৯৮ | — |
১৯১১ | ১,১২,৩১৮ | −২.৩% |
১৯২১ | ১,২৫,২৫৮ | +১.১% |
১৯৩১ | ১,১৮,১১০ | −০.৫৯% |
১৯৪১ | ১,২৭,৯২১ | +০.৮% |
১৯৫১ | ১,৬৮,২৭১ | +২.৭৮% |
১৯৬১ | ১,৯২,৬৬৪ | +১.৩৬% |
১৯৭১ | ২,৩৭,৫১৪ | +২.১১% |
১৯৮১ | ৩,০৩,৩৩৫ | +২.৪৮% |
১৯৯১ | ৩,৮২,২৬৮ | +২.৩৪% |
২০০১ | ৫,০০,৫৫৭ | +২.৭৩% |
২০১১ | ৫,৮০,৩২০ | +১.৪৯% |
উৎস:[10] |
২০১১ খ্রিস্টাব্দে ভারতের জনগণনা অনুসারে সোলান জেলার মোট জনসংখ্যা ছিল ৫,৮০,৩২০ জন।[11] জনসংখ্যার বিচারে এই জেলাটি ভারতের ৬৪০ টি জেলার মধ্যে মধ্যে ৫৩২ তম স্থান অধিকার করেছে।[9] জেলাটির জনঘনত্ব ৩০০ জন প্রতি বর্গকিলোমিটার (৭৮০ জন/বর্গমাইল)।[9] ২০০১ থেকে ২০১১ খ্রিস্টাব্দের মধ্যে জেলার জনসংখ্যা বৃদ্ধির হার ছিল ১৫.৯ শতাংশ।[9] প্রতি হাজার পুরুষে এই জেলায় নারী সংখ্যা ৮৮০ জন।[9] জেলাটির সাক্ষরতার হার ৮৩.৬৮ শতাংশ, যেখানে পুরুষ সাক্ষরতার হার ৮৯.৫৬ শতাংশ এবং নারী সাক্ষরতার হার ৭৬.৯৭ শতাংশ।[9]
অন্তিম জনগণনা অনুসারে এই জেলার মোট জনসংখ্যার ৩৯.৪৬ শতাংশ হিন্দিভাষী ২৯.৭০ শতাংশ পাহাড়ি ভাষী, ২.৫৮ শতাংশ লোক মহাসু ভাষী, ১.৪২ শতাংশ লোক ভোজপুরি ভাষী, ৫.৬১ শতাংশ লোক হণ্ডুরী ভাষী, ২.৩৫ শতাংশ লোক নেপালি ভাষী এবং ৮.৯২ শতাংশ লোক পাঞ্জাবি ভাষী বলে নিজেদের উল্লেখ করেছেন।[12]
অর্থনীতি
কৃষিকাজ[14]
সোলান জেলা একটি কৃষিনির্ভর জেলা৷ জেলাটিতে বসবাসকারী জনসংখ্যার অধিকাংশ কর্মক্ষমই কৃষি কাজের সঙ্গে যুক্ত পরিসংখ্যান অনুযায়ী যা মোটামুটি ৬০ শতাংশের কাছাকাছি। জেলায় উৎপাদিত ফসল গুলি হল ভুট্টা, গম, এবং বার্লি, এছাড়া অর্থকরী ফসল হিসেবে পেঁয়াজ, ডালশস্য এবং মটরশুঁটিও জেলার বিভিন্ন জায়গায় উৎপাদিত হয়।
জেলার বিভিন্ন জায়গায় উৎপাদিত শাক সবজির মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো বাঁধাকপি, শালগম, বিন, টমেটো, মুলা, লঙ্কা, আদা এবং অন্যান্য। এগুলো ছাড়াও এই জেলায় মাশরুমের চাষ যথেষ্ট পরিমাণে হয়। মাশরুম চাষের পরিমাণ এবং জনপ্রিয়তার ওপর ভিত্তি করে কেন্দ্রীয় সরকারের ন্যাশনাল রিসার্চ সেন্টার ফর মাশরুম (এন আর সি এম) বিভাগের সদরদপ্তর এই সোলান শহরে অবস্থিত। সাধারণ মানুষ শুধু মাশরুম উৎপাদন নয় উৎপাদিত মাশরুম থেকে আচার, মোরব্বা এবং মাশরুম সুপ তৈরি ও প্রক্রিয়াকরণের কাজেও লিপ্ত। মাশরুম উৎপাদন তার জনপ্রিয়তা এবং প্রক্রিয়াকরণের ওপর ভিত্তি করে সোলান শহরকে "মাশরুম সিটি" আখ্যা দেওয়া হয়েছে।
উদ্যানপালন
জলবায়ুগত এবং ভৌগোলিক কারণে সোলান জেলা বিগত কিছু বছরে উদ্যানপালনে যথেষ্ট উন্নতি করেছে। জেলার বহু মানুষ কৃষিকাজ থেকে উদ্যানপালন কে অধিক গুরুত্ব দিয়ে থাকেন। ফলস্বরূপ প্রতিবছরই জেলায় উদ্যান পালনের জন্য বরাদ্দ জমির পরিমাণ বৃদ্ধি পেয়ে চলেছে। খুবানি, বরই, নাশপাতি, আম, কলা, আঙ্গুর, কিউয়ি প্রভৃতি এখানকার উৎপাদিত ফল। এগুলি ছাড়া কিছু প্রাকৃতিক এবং প্রাগৈতিহাসিক স্থানীয় ফল তথা চুল্লি এবং ব্রাহ্মীও চাষ করা হয়। ফলগুলি ওয়াইন, জুস, স্কোয়াশ এবং আচার তৈরিতে ব্যবহার করা হয়ে থাকে। চুল্লি থেকে ভোজ্যতেল নিষ্কাশনেও এই জেলার খ্যাতি রয়েছে।
নিয়ন্ত্রণ স্থানীয়রা খুব ধীরগতিতে পুরাতন কৃষিকাজের পন্থা ছেড়ে উদ্যানপালনের দিকে ঝুঁকছেন, যা জেলাটির বাৎসরিক ফল উৎপাদনের পরিমাণ দেখে সহজেই বোঝা যায়। উদ্যানপালন শুধু ফলের যোগানই দেয় না, বরং এটি ফল প্রক্রিয়াকরণ শিল্পকেও উন্নত করে। উত্তরোত্তর বৃদ্ধির কথা মাথায় রেখেই হিমাচল প্রদেশ সরকার ও সোলান জেলায় উদ্যানপালনকে যথেষ্ট গুরুত্ব দিয়েছেন।
পশুপালন
জেলায় বসবাসকারী কৃষিজীবীদের মধ্যে কৃষি কাজ ছাড়াও পশু পালন করার পুরাতন প্রবণতা রয়েছে। যা তাদের কৃষিকাজ ব্যতীত অতিরিক্ত আয়ের উৎস। গবাদিপশুর দুধ এবং বিভিন্ন দুগ্ধজাত পণ্য শহরের বাজারগুলিতে ক্রয়-বিক্রয়ের সুবন্দোবস্ত রয়েছে।
বিপণন ও বাণিজ্য
জেলার বড় শহর গুলি সাধারণের কাছে অতি পরিচিত এবং খুব সহজেই পরিবহন যোগ্য। ফলে এগুলি উচ্চমানের বিপণন ও বাণিজ্য বহুল। জেলা সদর সোলানে একটি সবজি মান্ডি রয়েছে।
শিল্প
সোলান জেলায় মোট তিনটি শিল্প কেন্দ্র রয়েছে:
- ইন্ডাস্ট্রিয়াল এস্টেট, পরওয়ানো
- ইন্ডাস্ট্রিয়াল এস্টেট এন্ড ইলেক্ট্রনিক কমপ্লেক্স চম্বাঘাট, সোলান
- ৩৫ কিলোমিটার দীর্ঘ ইন্ডাস্ট্রিয়াল করিডোর, যা বাদ্দি-বারোতিওয়ালা-নালাগড় বা বিবিএন নামেও পরিচিত৷[15][16]
বাদ্দি-বারোতিওয়ালা-নালাগড় ইন্ডাস্ট্রিয়াল করিডরটিতে একটি বিশ্বমানের ফার্মা হাব রয়েছে।[17]
তথ্যসূত্র
- https://www.news18.com/assembly-elections-2017/himachal/arki-election-result/
- https://www.news18.com/assembly-elections-2017/himachal/nalagarh-election-result/
- https://www.news18.com/assembly-elections-2017/himachal/doon-election-result/
- https://www.news18.com/assembly-elections-2017/himachal/solan-sc-election-result/
- https://www.news18.com/assembly-elections-2017/himachal/kasauli-sc-election-result/
- "Solan Sub divisions"। hpsolan.nic.in। সংগ্রহের তারিখ ১৬ সেপ্টেম্বর ২০১৮।
- "Solan Tehsils and sub tehsils"। hpsolan.nic.in। সংগ্রহের তারিখ ১৬ সেপ্টেম্বর ২০১৮।
- "Solan Panchayats"। hpsolan.nic.in। ১৬ সেপ্টেম্বর ২০১৮ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ১৬ সেপ্টেম্বর ২০১৮।
- "District Census 2011"। Census2011.co.in। ২০১১। সংগ্রহের তারিখ ৩০ সেপ্টেম্বর ২০১১।
- "Census of India Website : Office of the Registrar General & Census Commissioner, India"। www.censusindia.gov.in। সংগ্রহের তারিখ ২১ ডিসেম্বর ২০১৯।
- http://www.censusindia.gov.in/2011census/dchb/0209_PART_B_DCHB_SOLAN.pdf p. 26.
- C-16 Population By Mother Tongue – Himachal Pradesh (প্রতিবেদন)। Office of the Registrar General & Census Commissioner, India। সংগ্রহের তারিখ ৬ অক্টোবর ২০১৯।
- http://www.censusindia.gov.in/2011census/C-16.html
- "Districts of India, HP, Solan Agriculture"। Districts of India। ১৬ সেপ্টেম্বর ২০১৮ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ১৬ সেপ্টেম্বর ২০১৮।
- "What India's five manufacturing hubs expect from Modi government to kick-start growth"। The Economic Times। সংগ্রহের তারিখ ১৭ জানুয়ারি ২০১৭।
- "BBN Development Authority"। bbndahp.nic.in। ১৬ সেপ্টেম্বর ২০১৮ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ১৬ সেপ্টেম্বর ২০১৮।
- "With Rs 30K cr turnover, Baddi emerges global pharma hub"। The Indian Express। ৬ মে ২০১৬। সংগ্রহের তারিখ ১৭ জানুয়ারি ২০১৭।