সৈলানা রাজ্য

সৈলানা রাজ্য [1] ছিলো ব্রিটিশ শাসিত ভারতে অবস্থিত একটি ১১ তোপ সেলামী সম্মানপ্রাপ্ত দেশীয় রাজ্য, যা বর্তমানে ভারতের অন্তর্গত৷ ব্রিটিশ ভারতে এটি মধ্য ভারত এজেন্সির মালব এজেন্সিতে অবস্থিত রাজ্যগুলির মধ্যে একটি ছিলো। বিংশ শতাব্দীর শুরুতে রাজ্যটির মোট রাজস্বের পরিমান ছিলো ৫,০০,০০০ ভারতীয় মুদ্রা৷[2]

সৈলানা রাজ্য
सैलाना
ব্রিটিশ ভারত দেশীয় রাজ্য
১৭৩৬–১৯৪৮
সৈলানা রাজ্যের পতাকা
পতাকা
সৈলানা রাজ্যের প্রতীক
প্রতীক

সৈলানা ও রৎলাম রাজ্যের মানচিত্র
রাজধানীসৈলানা
আয়তন 
 ১৮৮১
১,১৬৫ বর্গকিলোমিটার (৪৫০ বর্গমাইল)
জনসংখ্যা 
 ১৮৮১
২৯,৭২৩
ইতিহাস 
 প্রতিষ্ঠিত
১৭৩৬
১৯৪৮
উত্তরসূরী
ভারত
(দেশীয় রাজ্য)
সৈলানা রাজ্যের রাজা দ্বিতীয় যশবন্ত সিং(আ.১৮৯৫–মৃ.১৯১৯)

ইতিহাস

রৎলাম রাজ্যে রাজা রতন সিং রাঠোরের প্রপৌত্র রাজা জয় সিং এই রাজ্যটি প্রতিষ্ঠা করেন৷ ১৭১৬ খ্রিস্টাব্দে জয় সিং তার পিতাকে হত্যার জন্য তার কাকার ওপর প্রতিশোধ নেন৷ তিনি তাঁকে সগোড়ে পূর্ব পরিকল্পিত যুদ্ধ অনুযায়ী হত্যা করেন এবং তার অগ্রজের জন্য রৎলাম রাজ্য নিশ্চিত করেন৷ পরে দুই ভাই নিজেদের মধ্যে রাজ্য ভাগাভাগি করে নেন৷ জয় সিংয়ের রাজধানী শুরুর দিকে ছিলো রাউতিতে, ১৭৩৬ খ্রিস্টাব্দে তিনি সৈলানা শহরের পত্তন ঘটান এবং সেখানে নিজের নতুন রাজধানী স্থানান্তরিত করেন৷ এই সময়ে মারাঠা সাম্রাজ্য মধ্য ভারতে তার চরম শিখরে পৌঁছায় এবং একের পর এক রাজ্য মারাঠাদের চড়া রাজস্বের দায়ে বাধ্য হয়ে নতি স্বীকার করে৷ জয় সিং কৌশলে মারাঠাদের সঙ্গে আঁতাত করেন এবং পেশোয়ার প্রতিনিধি অম্বাজী পন্থ ত্র্যম্বক পুরন্দারেকে মালব অঞ্চলের অধিকৃত রাজ্যগুলির থেকে রাজস্ব আদায়ে সাহায্য করেন ও সংলগ্ন কিছু অংশ নিজের রাজ্যের অন্তর্ভুক্ত করতে সফল হন৷[3] জীবদ্দশায় তিনি বাইশবার যুদ্ধ করেন,[4] এবং নিজেকে স্বাধীন রাজ্যের দক্ষ শাসকরূপে প্রতিষ্ঠিত করেন৷[5][6] তার পরপর বেশ কিছু উত্তরসূরী ছিলেন দুর্বল চিত্ত ও অদক্ষ৷

রাজা মোখাম সিংয়ের রাজত্বকালে সৈলানার একটি বৃহৎ অংশ সিন্ধিয়া এবং হোলকারদের সাম্রাজ্যের অন্তর্ভুক্ত হয় এবং সৈলানার রাজা পুনরায় গোয়ালিয়রকে রাজস্ব দিতে বাধ্য হয়৷[7] রাজা লক্ষ্মণ সিং সিন্ধিয়াদের তার রাজ্যের সীমানা থেকে বিতাড়িত করার চেষ্টা করেন৷ ১৮১৮ খ্রিস্টাব্দে তিনি গোয়ালিয়রকে চৌথ কর দিতে নারাজ হলো পেশোয়া বুজং রাওয়ের অধীনে একটি সৈন্যবাহিনী অভিযান চালায় সৈলানায়৷ পার্বত্য ও জঙ্গলাবৃত পথের কারণে ইউরোপীয় অস্ত্র ও ফরাসি প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত সৈন্য থাকা সত্ত্বেও তারা দিকভ্রষ্ট হলে লক্ষ্মণ সিং জয়লাভ করে৷ সৈন্যরা অস্ত্রবিহীন হয়ে রাজ্য ত্যাগ করে৷ ১৮১৯ খ্রিস্টাব্দে সৈলানার রাজাকে শিক্ষা দিতে ও পুনরায় রাজস্ব আরোপ করার জন্য বাপুরাও সিন্ধিয়াকে প্রেরণ করা হয়৷ তিনি পূর্বেও জয়পুরের মহারাজা ও উদয়পুরের মহারাণার থেকেও সিন্ধিয়া রাজস্ব আদায়ে সফল হয়েছিলেন৷[8] ১৮১৯ খ্রিস্টাব্দে বাপুরাও সিন্ধিয়া বৃহত্তর অনিয়ত সৈন্যবল নিয়ে সৈলানা ও রৎলামে প্রবেশ করেন৷ উভয়পক্ষই ব্রিটিশ প্রতিনিধি স্যার জন ম্যালকমের দ্বারস্থ হন৷[9] ঐ বছর ৫ই জানুয়ারি তারিখে জন ম্যালকমের মধ্যস্থতায় লক্ষ্মণ সিং ব্রিটিশ আরক্ষণপ্রাপ্ত হন৷ তিনি ১৮৬০ খ্রিস্টাব্দ অবধি গোয়ালিয়রকে ৪,২০০ ব্রিটিশ মুদ্রা রাজস্ব দেওয়ার শর্তে রাজি হন৷ বিপরীতে দৌলত রাও সিন্ধিয়া সৈলানায় সমস্ত প্রকার দাবী তুলে নেয়৷ ব্রিটিশ আরক্ষণকালে দক্ষ রাজা দ্বিতীয় যশবন্ত সিং ও তার পুত্র দিলীপ সিংয়ের শাসনকালে রাজ্যটির প্রভূত উন্নতি হয়৷ বিভিন্ন ক্ষেত্রে পরিবর্তন আসে, সুরক্ষা শক্তিশালী হয়, শিক্ষাখাতে উন্নয়ন হয়৷ ১৯৪৭ খ্রিস্টাব্দ পর্যন্ত চিকিৎসা ও শিক্ষা পরিষেবা ছিলো নিঃশুল্ক, পুরসভা হয়ে ওঠে গণতান্ত্রিক ও বিচারবিভাগ প্রতিটি নাগরিকের সমবিচারের দাবী করে৷ অর্থনীতি মূলত কৃষিভিত্তিক হলেও কিছু তৈলঘানি, লৌহকল প্রভৃতি প্রতিষ্ঠা পায়৷

১৯৪৭ খ্রিস্টাব্দে ভারতের স্বাধীনতা লাভের পর এই সৈলানা রাজ্য ভারতীয় অধিরাজ্যের অন্তর্ভুক্ত হয়। স্বাধীন ভারতে প্রাথমিকভাবে ১৯৪৮ খ্রিস্টাব্দের ১৫ই জুন এটিকে মধ্যভারত ও পরে ১৯৫৬ খ্রিস্টাব্দের পয়লা নভেম্বর তারিখে নবগঠিত মধ্যপ্রদেশ রাজ্যে অংশীভূত করা হয়।[10][11]

শাসকবর্গ

রৎলাম দেশীয় রাজ্যের শাসকগণ ছিলেন রতনওয়াত রাঠোর রাজপুত[1][12] রৎলাম ও যোধপুরের রাজার সহিত সৈলানার রাজার পিতৃকুল একই৷ [2]

রাজা

  • ১৭৩৬ - ১৭৫৭ জয় সিং
  • ১৭৫৭ - ১৭৭২ প্রথম যশবন্ত সিং
  • ১৭৭২ - ১৭৮২ আজব সিং
  • ১৭৮২ - ১৭৯৭ মোখাম সিং
  • ১৭৯৭ - ১৮২৬ লক্ষ্মণ সিং
  • ১৮২৬ - ১৮২৭ রতন সিং
  • ১৮২৭ - ১৮৪১ নাহর সিং
  • ১৮৪১ - ১৮৫০ তিখত সিং
  • ১৮৫০ - ১৮৯৫ দুলে সিং
    • ১৮৫০ - ১৮৫৯ রাজামাতা নথ কানোয়ারজী (রাজ প্রতিনিধি)
  • ১৮৯৫ - ১৯১৯ দ্বিতীয় যশবন্ত সিং
  • ১৯১৯ - ১৯৪৮ দিলীপ সিং

পরবর্তী রাজারা ছিলেন নামমাত্র৷

সৈলানার মুদ্রা

সৈলানা রাজ্যর সিকি আনা মুদ্রা, ১৯০৮ ও ১৯১২ খ্রিস্টাব্দে মুদ্রিত

সৈলানার মুদ্রার নাম ছিলো "সেলিম শাহী"৷ এগুলি ছিলো তাম্রমুদ্রা, যা রাজ্য থেকেই মুদ্রিত হতো৷ তবে ১৮৯৭ খ্রিস্টাব্দে এটি ব্রিটিশ মুদ্রাপদ্ধতি দ্বারা প্রতিস্থাপিত হয়ে যায়৷[6] ব্রিটিশ মুদ্রাগুলির এক দিকে ছিলো রাজা সপ্তম এডওয়ার্ড (১৯০৮) ও রাজা পঞ্চম জর্জের (১৯১২) ছবি এবং অপর দিকে সৈলানা রাজ্যের নাম উল্লেখ থাকতো৷[13]

তথ্যসূত্র

  1. Imperial Gazetteer of India, v. 21, p. 240.
  2. Indian States: A Biographical, Historical, and Administrative Survey By R. V. Solomon, J. W. Bond. Pg.629-634
  3. Madhya Pradesh District Gazetteers: Ratlam - Page 53-55
  4. States: A Biographical, Historical, and Administrative Survey by Arnold Wright pg.632..."The Ruler died at the age of 60 years, having, during his reign, fought no fewer than 22 battles."
  5. Malwa in Transition Or a Century of Anarchy: The First Phase, 1698–1765 pg.123–125
  6. Imperial Gazetteer of India। Vol.21। Oxford: Clarendon Press। ১৯০৮। পৃষ্ঠা 385–7।
  7. Central India State Gazetteer Series Malwa Vol-v Part-a pg.357-358
  8. History of the Marathas By R.S. Chaurasia p.41
  9. The People of India — a series of photographic illustrations, with descriptive letterpress, of the races and tribes of Hindustan Vol 7
  10. Princely States of India
  11. Sailana through the ages by Jayantilaal Mehta
  12. Imperial Gazetteer of India, v. 23, p. 51.
  13. https://www.tezbid.com/blogs/blogs/p-know-your-india-coins-of-sailana-p-p-p
This article is issued from Wikipedia. The text is licensed under Creative Commons - Attribution - Sharealike. Additional terms may apply for the media files.