সৃষ্টিবাদ

{{কাজ চলছে/২০২৩}}

গুস্তাভ ডোরের আঁকা "দ্য ক্রিয়েশন অব লাইট"

[1][2]সৃষ্টিবাদ এমন এক ধর্মীয় বিষয়ে যে প্রকৃতি এবং যে জগৎ আমরা দেখি যেমন মহাবিশ্ব পৃথিবী জীবন এবং মানুষ সবকিছুই সৃষ্টি হয়েছে এমন এক সত্তার থেকে যাকে আমরা দেখি না।[১][২] বৃহত্তর অর্থে এটি মূলত ধর্মীয় চিন্তারই প্রতিফলন।[৩][৪] কোন কোন ধর্মীয় চিন্তা বিজ্ঞানের ব্যাখ্যা যেমন বিবর্তনবাদ এর সাথে মিলে আবার কোন কোনটি মিলে না।[৫][৬]

নব্য পৃথিবী সৃজনবাদীগণ বাইবেলের জেনেসিসে বর্ণিত সৃষ্টিতত্ত্বকে সমর্থন করে বিবর্তনের বৈজ্ঞানিক তত্ত্বকে প্রত্যাখ্যান করে থাকেন।[3] জেনেসিস অনুসারে, ঈশ্বর আদিতে বিদ্যমান বিশৃঙ্খল শূন্যতাকে সুসজ্জিত করে তা থেকে জীবন সৃষ্টি করেছেন। অন্যান্য ধর্মে সৃষ্টিতত্ত্বের পৃথক পৃথক পৌরাণিক ব্যাখ্যা রয়েছে। এর প্রথম উদ্যোগটি ক্রিয়েশিয়ো এক্স নিহিলো নামে পরিচিত। ল্যাটিন ভাষায় যার অর্থ হল কিছু নেই বা শূন্য থেকে সৃষ্টি

হিপ্পোর অগাস্টিনের ন্যায় আরও বহু লেখক হাজার হাজার বছর ধরে ঈশ্বর বিশ্ব সৃষ্টি করেছেন এই মতবাদটি শিক্ষা দিয়ে এসেছেন।

১৮শ শতাব্দীতে বিবর্তন মতবাদের ইতিহাস বিজ্ঞমহলে প্রাধান্য বিস্তার করায়, পশ্চিমা সংস্কৃতিতে আব্রাহামীয় ধর্মসমূহ ও জেনেসিসে বর্ণিত সৃষ্টিতত্ত্বসমূহ জীববিদ্যা ও অন্যান্য বিজ্ঞানের সাথে পুনরায় একীভূতকরণের প্রবণতা শুরু হয়।[4] যারা দাবি করেন যে, সকল প্রজাতির জীব পৃথকভাবে সৃষ্টি হয়েছে তাদেরকে সাধারণত সৃজনবাদের সমর্থক বলা হলেও, বিপরীতভাবে চার্লস ডারউইন ও তার সমর্থকদের "বিবর্তনবাদী" উপাধির সাথে সাদৃশ্য রেখে তাদেরকে "সৃজনবাদী"ও বলা হয়ে থাকে।

সময়ের ধারাবাহিকতায় সৃজনবাদ-বিবর্তনবাদ বিতর্ক বিকাশের সাথে সাথে, "বিবর্তনবাদ-বিরোধী" নামক পরিভাষাটি বিশ্বজুড়ে পরিচিতি পেতে থাকে। বর্তমানে জানা যায় যে, ১৯শতকে মৌলবাদী প্রোটেস্ট্যান্ট খ্রিস্টানগণ বিজ্ঞানীদের দ্বারা সমর্থিত ভূতত্ত্ব ও বিবর্তনবাদের সপক্ষের তত্ত্বসমূহের বিরোধিতায় প্রথম সৃজনবাদী আন্দোলনের সূচনা ঘটান।

২০শতাব্দীতে, ইসলাম এবং ইহুদি ধর্মেও সৃজনবাদী আন্দোলনের উত্থান ঘটে।

আস্তিক বিবর্তনবাদ, যা বিবর্তনীয় সৃজনবাদ নামেও পরিচিত, তা হল পৃথিবীর বয়স ও বিবর্তনভিত্তিক বৈজ্ঞানিক আবিষ্কারসমূহের সাথে ধর্মকে একীভূতকরণের একটি প্রয়াস। পুরোনো পৃথিবী সৃষ্টিতত্ত্বকেও (ওল্ড আর্থ ক্রিয়েশনিজম) এই মতবাদে সামঞ্জস্যপূর্ণভাবে অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে।[5][6]

সৃজনবাদের প্রকারভেদ

বিভিন্ন ধরনের সৃজনবাদকে শ্রেণিবদ্ধ করা ও সৃজনবাদীদের একটি "শ্রেণিবিন্যাস" তৈরির লক্ষ্যে এ পর্যন্ত বহু উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়েছে।[7][8][9] সৃজনবাদ (বিশদ বিশ্লেষিত) একটি বর্ণিল বিশ্বাসমালাকে ধারণ করে যেগুলো নিম্নের তালিকায় সাধারণভাবে শ্রেণিভুক্ত করা হয়েছে।

প্রধান সৃজনবাদী অভিমতসমূহের তুলনা
যুক্তরাষ্ট্রে স্বীকৃতি মানবতা জৈব প্রজাতিসমূহ পৃথিবী মহাবিশ্বের বয়স
নবীন পৃথিবী সৃজনবাদ ৪০%[10] সরাসরি ঈশ্বর কর্তৃক সৃষ্ট। সরাসরি ঈশ্বর কর্তৃক সৃষ্ট। ম্যাক্রোবিবর্তন ঘটে নি। ১০,০০০ বছর হতে কম। বৈশ্বিক প্লাবন দ্বারা পুনর্গঠিত। ১০,০০০ বছর হতে কম, কিন্তু অনেকের মতে তা শুধু আমাদের সৌরজগতের জন্য।
শূন্যস্থান সৃজনবাদ বৈজ্ঞানিকভাবে স্বীকৃত বয়স। বৈশ্বিক প্লাবন দ্বারা পুনর্গঠিত। বৈজ্ঞানিকভাবে স্বীকৃত বয়স।
প্রগতিশীল সৃজনবাদ ৩৮%[10] সরাসরি ঈশ্বর কর্তৃক সৃষ্ট, প্রাইমেট শারীরবিদ্যার ভিত্তিতে। সরাসরি সৃষ্টি + বিবর্তন। কোন একক পূর্বসূরি নেই। বৈজ্ঞানিকভাবে স্বীকৃত বয়স। কোন বৈশ্বিক প্লাবন নেই। বৈজ্ঞানিকভাবে স্বীকৃত বয়স।
বুদ্ধিদীপ্ত অনুকল্প প্রবক্তাগণ বিভিন্ন বিশ্বাস ধারণ করেন। (উদাহরণস্বরূপ, মাইকেল বেহে প্রাইমেট হতে বিবর্তনকে স্বীকার করেন।) অতীতে কিছু দৃষ্টিকোণ হতে স্বর্গীয় হস্তক্ষেপ, বুদ্ধিদীপ্ত-অনুকল্প সৃজনবাদীদের ভাষ্যমতে "অপরিবর্তনযোগ্য জটিলতা" নামক তথ্যপ্রমাণের ভিত্তিতে। কিছু অনুসারী কমন ডিসেন্ট বা সাধারণ উৎপত্তি তত্ত্বকে মেনে নেন, বাকিরা মানেন না। অনেকে দাবি করেন যে পৃথিবীর অস্তিত্ব হল স্বর্গীয় হস্তক্ষেপের ফল। বৈজ্ঞানিকভাবে স্বীকৃত বয়স।
আস্তিক্যবাদী বিবর্তন (বিবর্তনীয় সৃজনবাদ) প্রাইমেট হতে বিবর্তন। একক সাধারণ পূর্বপুরুষ হতে বিবর্তন। বৈজ্ঞানিকভাবে স্বীকৃত বয়স। কোন বৈশ্বিক প্লাবন নেই। বৈজ্ঞানিকভাবে স্বীকৃত বয়স।

আরও দেখুন

  • বিবর্তন
  • বিবর্তন বিরোধিতা
  • অজীবজনি
  • বাইবেলীয় চিরন্তন সত্য
  • জীবজনি
  • সৃষ্টিতাত্ত্বিক বিতর্ক
  • উড়ন্ত স্প্যাগেটি দানব
  • উদ্দেশ্যবাদী বিতর্ক
  • যন্ত্র-প্রকৌশলী উপমা

টীকা

  1. Gunn 2004, p. 9, "The Concise Oxford Dictionary says that creationism is 'the belief that the universe and living organisms originated from specific acts of divine creation.'"
  2. "creationism: definition of creationism in Oxford dictionary (American English) (US)"Oxford Dictionaries (Definition)। Oxford: Oxford University Pressওসিএলসি 656668849। ২০১৬-০৩-০৪ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২০১৪-০৩-০৫The belief that the universe and living organisms originate from specific acts of divine creation, as in the biblical account, rather than by natural processes such as evolution.
  3. Haarsma 2010, p. 168, "Some Christians, often called 'Young Earth creationists,' reject evolution in order to maintain a semi-literal interpretation of certain biblical passages. Other Christians, called 'progressive creationists,' accept the scientific evidence for some evolution over a long history of the earth, but also insist that God must have performed some miracles during that history to create new life-forms. The theory of Intelligent Design, as it is promoted in North America is a form of progressive creation. Still other Christians, called 'theistic evolutionists' or 'evolutionary creationists,' assert that the scientific theory of evolution and the religious beliefs of Christianity can both be true."
  4. Numbers, Ronald L"The 'Ordinary' View of Creation"Counterbalance Interactive Library। Seattle, WA: Counterbalance Foundation। সংগ্রহের তারিখ ২০১০-০৮-১১
  5. Collins 2006, p. 201, "This view is entirely compatible with everything that science teachings us about the natural world."
  6. Neyman, Greg। "Theistic Evolution"Old Earth Ministries। Springfield, OH: Old Earth Ministries। ২০১২-০২-২৪ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২০১২-০৪-২৪Theistic Evolution is the old earth creationist belief that God used the process of evolution to create life on earth. The modern scientific understanding of biological evolution is considered to be compatible with the Bible.
  7. Scott, Eugenie C. (জুলাই–আগস্ট ১৯৯৯)। "The Creation/Evolution Continuum"Reports of the National Center for Science Education। Berkeley, CA: National Center for Science Education। 19 (4): 16–17, 23–25। আইএসএসএন 2158-818X। সংগ্রহের তারিখ ২০১৪-০৩-১৪
  8. Wise, Donald U. (জানুয়ারি ২০০১)। "Creationism's Propaganda Assault on Deep Time and Evolution"Journal of Geoscience Education। Bellingham, WA: National Association of Geoscience Teachers49 (1): 30–35। আইএসএসএন 1089-9995। সংগ্রহের তারিখ ২০১৪-০৩-০৯
  9. Ross, Marcus R. (মে ২০০৫)। "Who Believes What? Clearing up Confusion over Intelligent Design and Young-Earth Creationism" (PDF)Journal of Geoscience Education। Bellingham, WA: National Association of Geoscience Teachers। 53 (3): 319–323। আইএসএসএন 1089-9995। সংগ্রহের তারিখ ২০১৪-০৩-০৯
  10. Newport, Frank (ডিসেম্বর ১৭, ২০১০)। "Four in 10 Americans Believe in Strict Creationism"Gallup.com। Omaha, NE: Gallup, Inc.। সংগ্রহের তারিখ ২০১৪-০৩-০৯

আরও পড়ুন

বহিঃসংযোগ

This article is issued from Wikipedia. The text is licensed under Creative Commons - Attribution - Sharealike. Additional terms may apply for the media files.