সুবোধ ঘোষ

সুবোধ ঘোষ (১৪ সেপ্টেম্বর ১৯০৯[1] - ১০ মার্চ ১৯৮০) একজন ভারতীয় বাঙালি লেখক ও বিশিষ্ট কথাসাহিত্যিক। বিহারের হাজারিবাগে ১৯০৯ সালে জন্মগ্রহণ করেন। আদি নিবাস অধুনা বাংলাদেশের ঢাকা জেলার বিক্রমপুরের বহর গ্রামে। হাজারিবাগের সেন্ট কলম্বাস কলেজের ছাত্র ছিলেন। বিশিষ্ট দার্শনিকগবেষক মহেশ ঘোষের লাইব্রেরীতে পড়াশোনা করতেন। প্রত্নতত্ত্ব, পুরাতত্ত্ব, এমনকি সামরিক বিদ্যায়ও তার যথেষ্ট দক্ষতা ছিল। গত শতকের চল্লিশ দশকের প্রায় প্রারম্ভিক কাল ঘেঁষা বাংলা সাহিত্যের কাল পর্বের জীবন শিল্পী সুবোধ ঘোষ। আদি নিবাস বাংলাদেশের ঢাকা জেলার বিক্রমপুরের বহর গ্রামে। তার লেখালেখির কালপর্ব ১৯৪০ থেকে ১৯৮০। বাংলা সাহিত্যের অঙ্গনে একটু বেশি বয়সে যোগদান করেও নিজস্ব মেধা মনন চিন্তা চেতনা আর লব্ধ অভিজ্ঞতার আলোকে সুবোধ ঘোষ তার অসাধারণ রচনা সম্ভাবের মাধ্যমে নিজেকে সুপ্রতিষ্ঠিত করতে সমর্থ হন। [তথ্যসূত্র: অঞ্জন আচার্য, কালজয়ী কথাশিল্পী সুবোধ ঘোষ, এনটিভি অনলাইন, ১০ মার্চ ২০১৬] বাঙালী পাঠকসমাজে সুবোধ ঘোষ এখনও প্রাসঙ্গিক। বিশেষ করে তার 'অযান্ত্রিক' এবং 'ফসিল'-এর মত বাংলা সাহিত্যের যুগান্তকারী গল্প। ভাষার ওপর অনায়াস দক্ষতার প্রমাণ মেলে ওঁর বিভিন্ন স্বাদের গল্পে। মহাভারতের গল্পগুলি বলার জন্যে তিনি যে ভাষা ব্যবহার করেছেন, তার সঙ্গে অযান্ত্রিক বা ফসিলের গল্পে ব্যবহৃত ভাষার কোনও মিল নেই। বিহারের হাজারিবাগের সেন্ট কলম্বাস কলেজের ছাত্র ছিলেন তিনি। বিশিষ্ট দার্শনিকগবেষক মহেশ ঘোষের লাইব্রেরীতে পড়াশোনা করতেন। প্রত্নতত্ত্ব, পুরাতত্ত্ব, এমনকি সামরিক বিদ্যায়ও তার যথেষ্ট দক্ষতা ছিল। ম্যাট্রিকুলেশন পরীক্ষায় পাশ করে হাজারিবাগ সেন্ট কলম্বাস কলেজে ভর্তি হয়েও অভাব অনটনের জন্য পড়াশোনা ছেড়ে দিয়ে জীবন জীবিকার তাগিদে কর্মক্ষেত্রে ঝাঁপিয়ে পড়তে হয় তাকে। বিচিত্র জীবিকার সঙ্গে যুক্ত ছিলো তার জীবন। হেন কাজ নেই তাকে করতে হয়নি সংসারের ঘানি টানার প্রয়োজনে। পড়াশোনা ছেড়ে কলেরা মহামারী আকার নিলে বস্তিতে টিকা দেবার কাজ নেন। কর্মজীবন শুরু করেন বিহারের আদিবাসী অঞ্চলে বাসের কন্ডাক্টর হিসেবে। এরপর সার্কাসের ক্লাউন, বোম্বাই পৌরসভার চতুর্থ শ্রেণীর কাজ, চায়ের ব্যবসা, বেকারির ব্যবসা, মালগুদামের স্টোর কিপার ইত্যাদি কাজে তিনি তার প্রথম জীবনের যতটা অংশ ব্যয় করেন। বহু পথ ঘুরে ত্রিশ দশকের শেষে আনন্দবাজার পত্রিকার রবিবাসরীয় বিভাগে সহকারী। ১৯৪৬ এর ১৬ আগস্ট উত্তর দাঙ্গা বিধ্বস্ত নোয়াখালী থেকে তিনি গান্ধীজির সহচর থেকে অভিজ্ঞতা সঞ্চয় করেছিলেন দাঙ্গা এবং দাঙ্গাউত্তর কালপর্বে সাম্প্রদায়িকতার হিংস্রতাকে। অনামী সঙ্ঘ (বা চক্র) নামে তরুণ সাহিত্যিকদের বৈঠকে বন্ধুদের অনুরোধে সুবোধ ঘোষ পর পর দুটি গল্প অযান্ত্রিক, এবং ফসিল লেখেন যা বাংলা সাহিত্যে অসাধারণ আলোড়ন সৃষ্টি করতে সক্ষম হয়। সুবোধ ঘোষের প্রথম গল্প অযান্ত্রিক, এরপর ফসিল। তার আর একটি বিখ্যাত গল্প 'থির বিজুরি'। শুধুমাত্র গল্পকার হিসাবেই সুবোধ ঘোষ অণ্বেষু শিল্পী ছিলেন না। সুবোধ ঘোষ উপন্যাস রচনাও ঋদ্ধ তার যথার্থ প্রমাণ তিলাঞ্জলি (১৯৪৪) সুবোধ ঘোষের ঔপন্যাসিক হিসাবে প্রথম প্রভিভার স্বাক্ষর ’তিলাঞ্জলি’। এ উপন্যাসে তিনি রাজনৈতিক মতাদর্শকে উপস্থাপনে প্রয়াসী হয়েছেন। কংগ্রেস সাহিত্য সংঘের মতাদর্শ প্রতিফলিত হয়েছে এই উপন্যাসে। মন্বন্তরের পটভূমিকায় রচিত এ উপন্যাসে তৎকালীন কংগ্রেসের প্রতিপক্ষ ’জাগৃতি সংঘ’র জাতীয়তা বিরোধী চরিত্রের মতবিরোধের রূপরেখা অঙ্কনে সচেষ্ট হয়েছেন তিনি এই উপন্যাসে।১০ মার্চ, ১৯৮০ সালে তিনি মৃত্যুমুখে পতিত হন।

সুবোধ ঘোষ
বাংলা ভাষার বিশিষ্ট সাহিত্যিক সুবোধ ঘোষ
জন্ম
হাজারিবাগ, বিহার, ব্রিটিশ ভারত
জাতীয়তাভারতীয়
মাতৃশিক্ষায়তনসেন্ট কলম্বাস কলেজ
পেশালেখক, কথাসাহিত্যিক
পুরস্কারআনন্দ পুরস্কার, জগত্তারিণী পদক

কর্মজীবন

বিচিত্র জীবিকার সঙ্গে যুক্ত ছিলো তার জীবন। কর্মজীবন শুরু করেন বাসের কন্ডাক্টর হিসেবে। এছাড়াও, ট্যুইশন, ট্রাক ড্রাইভার, সার্কাস পার্টিতে ক্লাউনের ভূমিকায় ছিলেন। বহু পথ ঘুরে ত্রিশ দশকের শেষে আনন্দবাজার পত্রিকার রবিবাসরীয় বিভাগে সহকারী। ক্রমে সিনিয়ার এসিস্ট্যান্ট এডিটর, অন্যতম সম্পাদকীয় লেখক। তার একটি প্রখ্যাত ছোটগল্প 'জতুগৃহ'। ছোটগল্পটি অবলম্বনে একাধিক চলচ্চিত্র নির্মিত হয়েছে। পশ্চিমবঙ্গে তপন সিংহ ঐ নামে এবং বোম্বেতে হিন্দীতে একটি ছবি নির্মিত হয় 'ইজাজাত' নামে যার পরিচালনায় ছিলেন গুলজার। এ ছাড়াও তার লেখা 'পরশুরামের কুঠার' ও জনপ্রিয়।

অনামী সঙ্ঘ (বা চক্র) নামে তরুণ সাহিত্যিকদের বৈঠকে বন্ধুদের অনুরোধে সুবোধ ঘোষ পর পর দুটি গল্প 'অযান্ত্রিক' এবং 'ফসিল' লেখেন যা বাংলা সাহিত্যে অসাধারণ আলোড়ন সৃষ্টি করতে সক্ষম হয়। গল্প লেখার ইতিবৃত্ত সম্বন্ধে স্বয়ং সুবোধ ঘোষ কী বলেন তা এখানে উদ্ধৃত করা যেতে পারে।

- সন্ধ্যা বেলাতে বৈঠক, আমি দুপুর বেলাতে অর্থাৎ বিকেল হবার আগেই মরিয়া হয়ে সাততাড়াতাড়ি গল্প দুটি লিখে ফেলেছিলাম। আশা ছিল, এইবার অনামীদের কেউ আর আমার সম্পর্কে রীতি ভঙ্গের অভিযোগ আনতে পারবেন না। কিন্তু একটুও আশা করিনি যে বন্ধু অনামীরা আমার লেখা ওই দুই গল্প শুনে প্রীত হতে পারেন। অনামী বন্ধুদের আন্তরিক আনন্দের প্রকাশ ও উৎসাহবাণী আমার সাহিত্যিক কৃতার্থতার প্রথম মাঙ্গলিক ধান দূর্বা।

শিল্পী সুবোধ ঘোষ ১৯৪৪ এ গড়া কংগ্রেস সাহিত্য সংঘ এর প্রতিষ্ঠাতা সম্পাদক ছিলেন। ১৯৪৬ এর ১৬ আগস্ট উত্তর দাঙ্গা বিধ্বস্ত নোয়াখালী থেকে তিনি গান্ধীজির সহচর থেকে অভিজ্ঞতা সঞ্চয় করেছিলেন দাঙ্গা এবং দাঙ্গাউত্তর কালপর্বে সাম্প্রদায়িকতার হিংস্রতাকে।

সাহিত্য কর্ম

প্রথম গল্প 'অযান্ত্রিক', এরপর 'ফসিল'। তার আর একটি বিখ্যাত গল্প 'থির বিজুরি'। এছাড়াও, জতুগৃহ, ভারত প্রেমকথা (মহাভারতের গল্প অবলম্বনে রচিত),। সুবোধ ঘোষের প্রথম উপন্যাস হল তিলাঞ্জলি (১৯৪৪)। গঙ্গোত্রী (১৯৪৭), ত্রিযামা (১৯৫০), ভালোবাসার গল্প, শতকিয়া (১৯৫৮) প্রমূখ।

চলচ্চিত্রায়ণ

সম্মাননা

তথ্যসূত্র

বহিঃসংযোগ

দশম শ্রেণীর বহুরূপী গল্পটির তিনি রচয়িতা

This article is issued from Wikipedia. The text is licensed under Creative Commons - Attribution - Sharealike. Additional terms may apply for the media files.