সুদর্শন চক্র

সুদর্শন চক্র ( সংস্কৃত :सुदर्शन चक्र, lit. "শুভ দৃষ্টির চাকতি", IAST : sudarśana cakra) হল একটি ঘূর্ণায়মান, ১০৮ টি দারযুক্ত আকাশী চাকতি, হিন্দু শাস্ত্রে বিষ্ণু ও কৃষ্ণকে কাছে এই চক্র লক্ষ্য করা যায়। সুদর্শন চক্রটি সাধারণত বিষ্ণুর তিন হাতের শঙ্খ , গদা এবং পদ্ম থাকে এবং বাকি একটি হাতে এই সুদর্শন চক্র থাকে। [1]

সুদর্শন চক্র
একটি মন্দিরের কূপের উপর সুদর্শনা চক্রের প্রতিমা
দেবনাগরীसुदर्शन चक्र
অন্তর্ভুক্তিহিন্দুধর্ম
গ্রন্থসমূহবিষ্ণু পুরাণ

পুরাণ মতে অন্যায়-অশুভ শক্তির দমন এবং শান্তি প্রতিষ্ঠার জন্য বিষ্ণু সুদর্শন চক্র ব্যবহার করেন। বিভিন্ন সময়ে তিনি চক্রটির মাধ্যমে অনেক অসুর বধের মাধ্যমে স্বর্গ এবং মর্ত্যে শান্তি প্রতিষ্ঠা করেছেন। তাই বৈষ্ণবীয় ঐতিহ্য মেনে আজও বহু বিষ্ণুমন্দিরের শীর্ষভাগে সুদর্শন চক্রের প্রতীকস্বরূপ একটি ধাতুনির্মিত চক্র বা বলয় স্থাপন করা হয় সকল অশুভ শক্তির হাত থেকে সুরক্ষা পাবার জন্য । এর উল্লেখযোগ্য নিদর্শন পুরীর জগন্নাথ মন্দিরের চূড়ার নীলচক্রটি ।  

শব্দোৎপত্তি

সুদর্শন শব্দটি সংস্কৃত ভাষা থেকে এসেছে। সংস্কৃত সু এবং দর্শন শব্দের সমন্বয়ে সুদর্শন শব্দটি গঠিত হয়েছে। এখানে সু (सु)অর্থ  "ভালো বা মঙ্গল'' এবং দর্শন(दर्शन) অর্থ "দৃশ্যমান" । অর্থাৎ সুদর্শন শব্দের অর্থ "মঙ্গলময় দর্শন।"[2]

আবার চক্র শব্দটি সংস্কৃত চো এবং কু এর সমন্বয়ে গঠিত হয়েছে। এখাএন চো (चृ:) শব্দের অর্থ "চলাচল" এবং কু শব্দের অর্থ সম্পাদন করা। অর্থাৎ, চক্র অর্থ এমন কিছু যা চলাচল করতে সক্ষম। বেদ এবং পুরানে উল্লেখিত দেবতাদের অস্ত্রগুলোর মধ্যে সুদর্শন চক্রই একমাত্র অস্ত্র যা নিজ হতে চলাচল করতে পারে।[3] 

পৌরানিক 

সুদর্শন চক্র সম্পর্কিত অনেকগুলো পৌরানিক কাহিনীর উল্ল্যেখ পাওয়া যায়

সুদর্শন চক্রটি তৈরি করেছিলেন হিন্দু স্থাপত্যের দেবতা বিশ্বকর্মাবিশ্বকর্মার কন্যা সংজ্ঞা হিন্দু দেবতা সূর্যকে বিবাহ করেছিলেন। কিন্তু সূর্যের প্রচন্ড তাপের জন্য তিনি দেবতা সূর্যের কাছে যেতে পারতেন না। তখন তিনি তার পিতা বিশ্বকর্মার কাছে তার এই অপারগতার কথা জানালেন। তখন বিশ্বকর্মা সূর্যকে হস্তগত করেন এবং তার ঔজ্জ্বল্য নষ্ট করে দেন। যার ফলে সংজ্ঞা সূর্যের কাছে যেতে সক্ষম হয়েছিলেন। 
সুর্যের তাপ এবং আলো নষ্ট হওয়ার পর বিশ্বকর্মা কিছু  অবশিষ্টাংশ পান। যা দিয়ে তিনি ৩টি পবিত্র দ্রব্য তৈরি করেন। যথা;

১। পুষ্পক রথ (দেবতাদের বাহন)

২। ভগবান শিবের ত্রিশুল

৩।  তৃতীয়তে তিনি ভগবান বিষ্ণুর সুদর্শন চক্র তৈরি করেন।

হিন্দুপুরাণে সুদর্শন চক্রকে সবথেকে শক্তিশালী অস্ত্র হিসেবে উল্ল্যেখ করা হয়েছে। শ্রীবল্লভাচার্য কৃত সুদর্শন কবচ মন্ত্রে বলা হয়েছে , ভগবান বিষ্ণুর হস্তধৃত সুদর্শন চক্র ব্রহ্মাস্ত্র , নারায়ণাস্ত্র , পাশুপত অস্ত্র , অঘোরাস্ত্র , মৃড়াস্ত্র , যমদণ্ড ,কালপাশ আদি সমস্ত ভয়ংকর দিব্যাস্ত্রকে পরাভূত করতে সমর্থ । এই চক্রকে তিনি উগ্র-প্রলয়-কালাগ্নি-রৌদ্র-বীরভদ্রাবতার পূর্ণব্রহ্ম নামেও অাখ্যায়িত করেছেন । [4]

অন্য নাম

তামিল ভাষায় সুদর্শন চক্রকে চক্রথালবর " বলা হয়ে থাকে । চক্ররাজ , নীলচক্র , মহাজ্বাল ইত্যাদি নামেও বিষ্ণুর এই অস্ত্রটি সুপ্রসিদ্ধ । সুদর্শন চক্র সূর্যের অংশ থেকে নেওয়া হয়েছে এছাড়াও এটি শ্রী বিষ্ণুর একটি প্রিয় অস্ত্র।

তথ্যসূত্র

  1. Gopal, Madan (1990).
  2. "Sudarshan Homa" ওয়েব্যাক মেশিনে আর্কাইভকৃত ৩ মার্চ ২০১৬ তারিখে (PDF).
  3. HJS.
  4. "সংরক্ষণাগারভুক্ত অনুলিপি"। ২৮ জুন ২০১৫ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২০ অক্টোবর ২০১৫
This article is issued from Wikipedia. The text is licensed under Creative Commons - Attribution - Sharealike. Additional terms may apply for the media files.