সিরাজুল হক (বীর প্রতীক)

শহীদ সিরাজুল হক (জন্ম: অজানা - মৃত্যু: ১৯৭১) বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধের একজন বীর মুক্তিযোদ্ধা। স্বাধীনতা যুদ্ধে তার সাহসিকতার জন্য বাংলাদেশ সরকার তাকে বীর প্রতীক খেতাব প্রদান করে। [1]

সিরাজুল হক
মৃত্যু১৯৭১
জাতীয়তাবাংলাদেশী
নাগরিকত্ব পাকিস্তান (১৯৭১ সালের পূর্বে)
 বাংলাদেশ
পরিচিতির কারণবীর প্রতীক

জন্ম ও শিক্ষাজীবন

শহীদ সিরাজুল হকের পৈতৃক বাড়ি চট্টগ্রাম জেলার মীরসরাই উপজেলার ওয়াহেদপুর গ্রামে। তিনি অবিবাহিত ছিলেন। তার বাবার নাম সামসুল হক ভূঁইয়া এবং মায়ের নাম ঝিরাদন বিবি।

কর্মজীবন

শহীদ সিরাজুল হক চাকরি করতেন পাকিস্তান সেনাবাহিনীর অষ্টম ইস্ট বেঙ্গল রেজিমেন্টে। ১৯৭১ সালে এর অবস্থান ছিল চট্টগ্রামের ষোলশহরে। তবে তিনি কয়েকজনসহ তখন চট্টগ্রামের একটি জুট মিলের নিরাপত্তার দায়িত্বে নিয়োজিত ছিলেন। মুক্তিযুদ্ধ শুরু হলে ঝাঁপিয়ে পড়েন যুদ্ধে। প্রতিরোধযুদ্ধ শেষে ভারতে যান। ১ নম্বর সেক্টরের হরিনা ক্যাম্পে থাকাকালে তিনি মুক্তিবাহিনীর জেড ফোর্সে অন্তর্ভুক্ত হন।

মুক্তিযুদ্ধে ভূমিকা

১৯৭১ সালের ৪ আগস্ট শেরপুর জেলার নকশী বিওপিতে মুক্তিবাহিনী ও পাকিস্তান সেনাবাহিনীর মধ্যে ভয়াবহ এক যুদ্ধ সংঘটিত হয়। মুক্তিযুদ্ধকালে পাকিস্তান সেনাবাহিনী নকশী বিওপি দুর্গের আদলে সুসজ্জিত করেছিল। এখানে মোতায়েন ছিল প্রায় একদল সুপ্রশিক্ষিত পাকিস্তানি সেনা। মূল আক্রমণে মুক্তিবাহিনীর দুটি কোম্পানি (ব্রাভো ও ডেলটা) অংশ নেয়। একটি দলে ছিলেন সিরাজুল হক। তার দলে তিনিসহ মাত্র কয়েকজন ছিলেন নিয়মিত বাহিনীর মতো প্রশিক্ষিত। বাকিরা ছিলেন স্বল্প প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত। যুদ্ধের পূর্ব অভিজ্ঞতা তাদের ছিল না। ওই যুদ্ধই ছিল তাদের জীবনের প্রথম যুদ্ধ। এই যুদ্ধে মুক্তিবাহিনীর আক্রমণকারী দলের নেতৃত্ব দেন আমীন আহম্মেদ চৌধুরী (বীর বিক্রম)। ৩ আগস্ট রাতে দুই কোম্পানি যোদ্ধা নিয়ে নকশী বিওপি আক্রমণ করেন তিনি। অ্যাসেম্বলি এরিয়া থেকে যোদ্ধারা অত্যন্ত সাবলীল গতিতে এফইউপিতে (ফর্মিং আপ প্লেস) রওনা হয় মুক্তিযোদ্ধা দল। মাঝপথে নালা ক্রস করার সময় কোনো শব্দ হয়নি। এর আগে যোদ্ধাদের নিয়ে পানির মধ্যে বিনা শব্দে চলার প্র্যাকটিস করেছিলেন আমীন আহম্মেদ চৌধুরী। তিনটা ৪৫ মিনিটে মুক্তিযোদ্ধাদের আর্টিলারি গর্জে ওঠে। কিন্তু ভাগ্যের পরিহাস, যুদ্ধের আগেই এফইউপিতে নিজেদের আর্টিলারির কয়েকটি গোলা এসে পড়ে। একই সময়ে পাকিস্তানি আর্টিলারিও গর্জে ওঠে। এর মধ্যেই এক্সটেনডেড ফরমেশন তৈরি করে নেন মুক্তিযোদ্ধারা। একটু পর অ্যাসল্ট লাইন ফর্ম করে আমীন আহম্মেদ চৌধুরী চার্জ বলে হুংকার দেওয়ামাত্র মুক্তিযোদ্ধারা সঙ্গিন উঁচু করে ‘জয়বাংলা’ ধ্বনি দিয়ে ক্ষিপ্রগতিতে এগিয়ে যায়। শত্রু পাকিস্তানি সেনাদের বেয়নেট চার্জের জন্য তারা রীতিমতো দৌড়াতে থাকে। মুক্তিযোদ্ধাদের মনোবল দেখে পাকিস্তানি সেনারা তখন পলায়নরত। ‘ঠিক তখনই শত্রুর আর্টিলারির শেলভো ফায়ার (এয়ার ব্রাস্ট) এসে পড়ে মুক্তিযোদ্ধাদের ওপর। সঙ্গে সঙ্গে কয়েকজন মুক্তিযোদ্ধা মাটিতে লুটিয়ে পড়ে। এতে মুক্তিযোদ্ধারা কিছুটা ছত্রভঙ্গ হয়ে যায়। এতে আমীন আহম্মেদ চৌধুরীর ডান পায়েও একটা শেল লাগে। শত্রুর বাংকার তখন কয়েক গজ দূরে। তখনও গুটি কতক অতি সাহসী মুক্তিযোদ্ধা পলায়নরত শত্রু পাকিস্তানি সেনাদের মারছে। কেউ কেউ মাইন ফিল্ডে ফেঁসে গিয়ে উড়ে যাচ্ছে। কেউবা শত্রুর গুলি খেয়ে পড়ে যাচ্ছে। তাদের মন চাঙা রাখার জন্য জোরে জয়বাংলা চিৎকার দিয়ে আমীন আহম্মেদ চৌধুরী বলেন, আগে অগ্রসর হও। এরপর পাকিস্তানিদের বিওপি তছনছ হয়ে গেল। সেদিন যুদ্ধে অবশ্য মুক্তিযোদ্ধারা বিজয়ের দ্বারপ্রান্তে পৌঁছেও শেষ পর্যন্ত বিজয়ী হতে পারেননি। সিরাজুল ইসলাম হাতাহাতি যুদ্ধের একপর্যায়ে গুলিবিদ্ধ হন। বিদীর্ণ হয়ে যায় তার শরীর। শহীদ হন তিনি। সহযোদ্ধারা তার মরদেহ উদ্ধার করতে সক্ষম হন। তাকে ভারতের মাটিতে আরও কয়েকজনের সঙ্গে সমাহিত করা হয়। [2]

পুরস্কার ও সম্মাননা

তথ্যসূত্র

  1. দৈনিক প্রথম আলো, "তোমাদের এ ঋণ শোধ হবে না" | তারিখ: ১৩-১০-২০১২
  2. একাত্তরের বীর মুক্তিযোদ্ধা (দ্বিতীয় খন্ড)। ঢাকা: প্রথমা প্রকাশন। মার্চ ২০১৩। পৃষ্ঠা পৃ ৩৩৩। আইএসবিএন 9789849025375।

পাদটীকা

বহি:সংযোগ

This article is issued from Wikipedia. The text is licensed under Creative Commons - Attribution - Sharealike. Additional terms may apply for the media files.