সিটিজেন কেইন
সিটিজেন কেইন (ইংরেজি ভাষায়: Citizen Kane) অরসন ওয়েলস পরিচালিত একটি মার্কিন নাট্য চলচ্চিত্র যা ১৯৪১ সালে মুক্তি পেয়েছিল। আরকেও পিকচারসের অর্থায়নে নির্মীত এই সিনেমা ছিল ওয়েলসের করা প্রথম পূর্ণদৈর্ঘ্য চলচ্চিত্র। সাইট অ্যান্ড সাউন্ড সাময়িকী চলচ্চিত্র সমালোচকদের ভোটের মাধ্যমে সেরা চলচ্চিত্র নির্বাচন করে। গত পাঁচ বারই এই ভোটে সর্বকালের সেরা চলচ্চিত্র হিসেবে মনোনীত হয়েছে সিটিজেন কেইন।[3] এটি মূলত উদ্ভাবনী চিত্রগ্রহণ, সঙ্গীত এবং ন্যারেটিভ কাঠামোর জন্য প্রশংসিত।
সিটিজেন কেইন | |
---|---|
পরিচালক | অরসন ওয়েলস |
প্রযোজক | অরসন ওয়েলস |
রচয়িতা | হারমান জে ম্যাংকিভিচ, অরসন ওয়েলস |
শ্রেষ্ঠাংশে |
|
সুরকার | বার্নার্ড হারমান |
চিত্রগ্রাহক | গ্রেগ টল্যান্ড |
সম্পাদক | রবার্ট ওয়াইজ |
প্রযোজনা কোম্পানি | আরকেও রেডিও পিকচার্স |
পরিবেশক | আরকেও রেডিও পিকচার্স (মূল) প্যারামাউন্ট পিকচার্স (১৯৯১-পুনর্মুক্তি) ওয়ার্নার ব্রাদারস (বর্তমান)[1] |
মুক্তি | ১লা মে, ১৯৪১ |
দৈর্ঘ্য | ১ ঘণ্টা ৫৯ মিনিট |
দেশ | যুক্তরাষ্ট্র |
ভাষা | ইংরেজি |
নির্মাণব্যয় | $৮৩৯,৭২৭[2] |
আয় | $১,৫৮৫,৬৩৪ (যুক্তরাষ্ট্র) |
সিনেমার কাহিনী আবর্তিত হয় চার্লস ফস্টার কেইন নামক একটি চরিত্রের জীবন ও কর্মকে কেন্দ্র করে। চরিত্রটি মার্কিন সংবাদপত্র মালিক ও ব্যবসায়ী উইলিয়াম ড়্যান্ডল্ফ হার্স্ট,[4] শিকাগোর ধনকুবের স্যামুয়েল ইনসাল ও হ্যারল্ড ম্যাকরমিক[5] এবং কিছুটা ওয়েলসের নিজের জীবনী অবলম্বনে নির্মীত।[6] মুক্তি পাওয়ার পর হার্স্ট তার অধীনস্থ কোন পত্রিকায় এটি সম্বন্ধে কোন খবর প্রকাশ নিষিদ্ধ করে দিয়েছিল। কেইন প্রকাশনা বাণিজ্যে জীবন শুরু করেছিল আদর্শ ও সমাজের প্রতি দায়িত্ববোধ থেকে, কিন্তু ধীরে ধীরে সে কেবলমাত্র ক্ষমতার ধান্ধায় কাজ করতে শুরু করে। মৃত্যুর ঠিক পূর্ব মুহূর্তে কেইন "রোজবাড" শব্দটি উচ্চারণ করে। এরপর একজন সাংবাদিক এই শব্দ উচ্চারণের কারণ খুঁজে বের করার চেষ্টা করতে থাকে। এই নিউজরিল রিপোর্টারের গবেষণার মাধ্যমেই সিনেমাটি এগোয় এবং অধিকাংশ কাহিনী দেখানো হয় ফ্ল্যাশব্যাকের মাধ্যমে।
মার্কারি থিয়েটারে অত্যন্ত সফল ক্যারিয়ার এবং ১৯৩৮ সালে রেডিওতে বিতর্কিত দ্য ওয়ার অফ দ্য ওয়ার্ল্ডস সম্প্রচার করে পরিচিতিতে আসা ওয়েলসকে শীঘ্রই হলিউড সিনেমার দিকে নিয়ে আসার চেষ্টা শুরু করে। ১৯৩৯ সালেই তিনি আরকেও পিকচারসের সাথে একটি চুক্তি সই করেন। প্রথম সিনেমার জন্যই ওয়েলসকে স্টুডিও থেকে নিজের গল্প তৈরি, নিজস্ব অভিনেতা ও ক্রু ব্যবহার এবং ফাইনাল কাট নিজের মত করে তৈরির স্বাধীনতা দেয়া হয়েছিল, প্রথমবারের পরিচালকদের ক্ষেত্রে যেমনটি সাধারণত করা হয় না। প্রকল্প তৈরিতে দুইবার ব্যর্থ হওয়ার পর অবশেষে হারমান ম্যাংকিভিচকে নিয়ে তিনি সিটিজেন কেইনের চিত্রনাট্য লিখে ফেলেন। শুটিং চলে মূলত ১৯৪০ সালে এবং ১৯৪১ সালেই যুক্তরাষ্ট্র ছবিটি মুক্তি পেয়ে যায়।
সমালোচকদের প্রশংসা পেলেও সিটিজেন কেইন বক্স অফিস থেকে নিজের নির্মাণ ব্যয় পুষিয়ে নিতে ব্যর্থ হয়। মুক্তির কিছুদিন পর এর কথা সবাই ভুলে যায়। কিন্তু দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ শেষ হওয়ার পর ফরাসি চলচ্চিত্র সমালোচকরা সিনেমাটি দেখে ভূয়সী প্রশংসা করে। এরপর ১৯৫৬ সালে যুক্তরাষ্ট্রে পুনর্মুক্তির পর অত্যন্ত প্রশংসার সাথে এটি গৃহীত হয়। অনেক চলচ্চিত্র সমালোচক সিটিজেন কেইনকে এখন পর্যন্ত নির্মীত সেরা সিনেমা মনে করেন।[7] এত প্রশংসা দেখে রজার ইবার্ট এক সময় সিদ্ধান্ত টেনে দিয়েছিলেন এইভাবে, "সুতরাং সূরাহা হয়ে গেছে যে সিটিজেন কেইন সর্বকালের সেরা চলচ্চিত্র"।[8] সাইট অ্যান্ড সাউন্ডের নির্বাচনের পাশাপাশি অ্যামেরিকান ফিল্ম ইনস্টিটিউটের সেরা চলচ্চিত্রের তালিকাতেও এটি প্রথম স্থানে রয়েছে। ২০১১ সালের ১৩ই সেপ্টেম্বর ব্লু-রে ডিস্কে সিনেমাটি ছাড়া হয়েছে। মুক্তির ৭০ বছর পূর্তি উপলক্ষে এমনটি করা হয়।[9]
চরিত্রসমূহ
- চার্লস ফস্টার কেইন চরিত্রে অরসন ওয়েলস
- জেরি টমসন চরিত্রে উইলিয়াম অ্যালান্ড
- জিম ডব্লিউ গেটিস চরিত্রে রেই কলিন্স
- সুজান আলেকজান্ডার কেইন চরিত্রে ডরোথি কমিংগোর
- জেডেডিয়াহ লিল্যান্ড চরিত্রে জোসেফ কটন
- ওয়াল্টার পার্কস থ্যাচার চরিত্রে জর্জ কলোরিস
- মেরি কেইন চরিত্রে অ্যাগনেস মুরহেড
- জিম কেইন চরিত্রে হ্যারি শ্যানন
- মিস্টার বার্নস্টিন চরিত্রে এভারেট স্লোয়ান
- এমিলি মনরো নর্টন কেইন চরিত্রে রুথ ওয়ারিক
- রেইমন্ড চরিত্রে পল স্টুয়ার্ট
তথ্যসূত্র
- http://www2.warnerbros.com/citizenkane/
- The American Film Institute Catalog of Motion Pictures Produced in the United States: Feature Films, 1941 – 1950। University of California Press। ১৯৭১। পৃষ্ঠা 433–435। আইএসবিএন 978-0-520-21521-4।
- "Sight & Sound – Top ten"। সংগ্রহের তারিখ আগস্ট ১৮, ২০১০।
- Epstein, Michael and Thomas Lennon. "The Battle Over Citizen Kane." PBS, 1996. Retrieved January 14, 2008.
- Welles, Orson, and Peter Bogdanovich, This is Orson Welles. New York: HarperCollins Publishers 1992 আইএসবিএন ০-০৬-০১৬৬১৬-৯ page 49. Welles states, "There's all that stuff about McCormick and the opera. I drew a lot from that from my Chicago days. And Samuel Insull."
- "American Composers Orchestra – David Raksin remembers his colleagues"। Americancomposers.org। ডিসেম্বর ৯, ২০০৮ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ জানুয়ারি ২২, ২০০৯।
- Georgaris, Bill। "The 1,000 Greatest Films The Top 500 (1–25)"। They Shoot Pictures, Don't They?। অক্টোবর ২১, ২০১১ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ অক্টোবর ১৫, ২০১১।
- Ebert, Roger (সেপ্টেম্বর ৪, ২০০৮)। "What's your favorite movie?"। Roger Ebert's Journal। ৫ সেপ্টেম্বর ২০০৮ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ জানুয়ারি ৬, ২০১০।
- Taylor, Charles, "The New Season DVDs: Movies That Said, 'Look What I Can Do'"; The New York Times, September 16, 2011
বহিঃসংযোগ
- ইন্টারনেট মুভি ডেটাবেজে সিটিজেন কেইন (ইংরেজি)
- টিসিএম চলচ্চিত্র ডেটাবেজে সিটিজেন কেইন
- রটেন টম্যাটোসে সিটিজেন কেইন (ইংরেজি)
টেমপ্লেট:অরসন ওয়েলস