সালাতুত তাসবীহ
সালাতুত তাসবীহ (আরবি: صلاة تسبيح ), তাসবীহের নামাজ নামেও পরিচিত। সালাত শব্দের অর্থ নামাজ। আর তাসবিহ বলতে ‘সুবহানাল্লাহি ওয়াল হামদুলিল্লাহি ওয়া লা ইলাহা ইল্লাল্লাহু ওয়াল্লাহু আকবার’ এ শব্দগুলো বোঝানো হয়েছে। যে নামাজে এসব তাসবীহ পড়ানো হয় তা সালাতুত তাসবীহ বা তাসবীহের নামাজ হিসেবে পরিচিত। ইসলামে অনুসারীদের জন্যে এটি একটি ঐচ্ছিক ইবাদত। এটা বাধ্যতামূলক পাঁচ ওয়াক্ত নামাজের মতো নয়। ইসলাম ধর্মের নবী মোহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তার অনুসারীদেরকে এ নামাজ পালনে উৎসাহিত করছেন। জীবনে একবার হলেও মুসলমানরা যেনো এ নামাজ পড়ে এ বিষয়ে গুরুত্বারোপ করেছেন।[1][2][3][4]
ইসলাম |
---|
বিষয়ক ধারাবাহিক নিবন্ধের অংশ |
|
হাদীসে সালাতুত তাসবীহ
রাসুল (সা.) তার চাচা হযরত আব্বাস (রা.)-কে বলেন, ‘চাচা, পারলে আপনি সালাতুত তাসবিহ নামাজ দিনে একবার তা না পারলে সপ্তাহে একবার, তাও না হলে মাসে একবার, তাও না পারলে বছরে একবার পড়বেন। তাতেও অক্ষম হলে অন্তত জীবনে একবার হলেও এ নামাজ পড়বেন। এ নামাজ দ্বারা জীবনের ছোট, বড়, স্বেচ্ছায়, অনিচ্ছায়, নতুন, পুরনো, গোপন, প্রকাশ্য সব রকম গুনাহ মাফ হয়ে যায়।’ [5]
নিয়ম
সালাতুত তাসবীহ চার রাকাত। প্রতি রাকাতে ‘সুবহানাল্লাহি ওয়াল হামদুলিল্লাহি ওয়া লা ইলাহা ইল্লাল্লাহু ওয়াল্লাহু আকবার’ তাসবীহগুলো ৭৫ বার পড়তে হয়। চার রাকাতে মোট ৩০০ বার পড়তে হয়। [1]
- প্রথম রাকাতে সানা পড়ার পর ১৫ বার পড়তে হবে-
(سُبْحَانَ اللهِ وَالْحَمْدُ لِلهِ وَلَا اِلهَ اِلَّا اللهُ وَاللهُ اَكْبَرُ ) সুবহানাল্লাহি ওয়াল হামদুলিল্লাহি ওয়া লা ইলাহা ইল্লাল্লাহু ওয়াল্লাহু আকবার।
তারপর সূরা ফাতিহা তারপর কোরআন থেকে কেরাত পাঠ (সুরা মিলানো) সম্পন্ন হবার পর
- দাঁড়ানো অবস্থায় রুকুতে যাওয়ার পুর্বে ১০ বার।
- রুকু করবে এবং রুকু অবস্থায় দোয়ার পর (এ তাসবিহ) ১০ বার পাঠ করতে হবে।
- রুকু থেকে মাথা ওঠানোর পর সোজা হয়ে দাঁড়ানো অবস্থায় (রাব্বানা লাকাল হামদ পড়ার পর)এ তাসবিহ ১০ বার পাঠ করতে হবে।।
- তারপর সিজদায় যাবে এবং সিজদা অবস্থায় এ তাসবীহ ১০ বার পাঠ করবে।
- সিজদা থেকে মাথা ওঠানোর পর ১০ বার।
- পুনরায় সিজদা গিয়ে ১০ বার
- সিজদা থেকে মাথা ওঠিয়ে আবার দ্বিতীয় রাকাতে একি ভাবে তাসবিহ পাঠ করতে হবে।
এ তাসবিহ প্রত্যেক রাকাআতে ৭৫ বার করে ৪ রাকাআত নামাজের প্রতি রাকাআতেই এক নিয়ম অনুসারে আদায় করতে হবে।[6]
ভুল হলে করণীয়
‘সালাতুত তাসবীহ’ নামায পড়াবস্থায় দানাদার তসবিহ হাতে গণনা করা মাকরূহ বা অনুচিত। আঙ্গুলের করগুলোতে গণনা করা যাবেনা। বরং তাহরিমা বাধা অবস্থাতেই হাতের আঙ্গুলের মাথা গুলো টিপেটিপে তাসবীহ গণনা করতে হবে। কোনো স্থানে তাসবীহ পড়তে ভুলে গেলে পরবর্তী তাসবীহ পাঠের সময় তা আদায় করে নিতে হবে। তবে ক্বওমা তথা রুকু থেকে দাঁড়ানোকালে ও দুই সিজদার মাঝখানের সময়ে পূর্বের ভুলে যাওয়া তাসবীহগুলো আদায় করা যাবে না। সূরা-কেরাত পড়ার পূর্বে তাসবীহ ভুলে গেলে সূরা-কেরাত পাঠের পরে সেটি আদায় করতে হবে। একইভাবে ক্বিরায়াতের পর তাসবীহ ভুলে গেলে রুকুতে গিয়ে আদায় করতে হবে। রুকুতে তাসবীহ ভুলে গেলে উক্ত তাসবীহ প্রথম সিজদায় আদায় করতে হবে। সিজদায় যাওয়ার পূর্বে তাসবীহ পড়তে ভুলে গেলে তা প্রথম সিজদাতে গিয়ে আদায় করতে হবে। প্রথম সিজদাতে তাসবীহ ভুলে গেলে তা দুই সিজদার মাঝখানে আদায় না করে বরং দ্বিতীয় সিজদাতে গিয়ে আদায় করতে হবে। ঠিক দুই সিজদার মাঝখানের তাসবীহ পড়তে ভুলে গেলে তাও দ্বিতীয় সিজদায় গিয়ে পড়তে হবে। আর একইভাবে দ্বিতীয় সিজদাতে তাসবীহ পড়তে ভুলে গেলে পরের রাকায়াতে সূরা-ক্বিরায়াত পাঠ করার পূর্বে পড়ে নিতে হবে। নামাজের সর্বশেষ সিজদার তাসবীহ পড়তে ভুলে গেলে সালাম ফিরানোর পূর্বে তাসবীহ পড়ে নিতে হবে।[7]
আরো দেখুন
তথ্যসূত্র
- "সালাতুত তাসবিহ নামাজ পড়ার নিয়ম ও পদ্ধতি"। ইমাম বাতায়ন। ২৬ জানুয়ারি ২০১৯ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ১১ জুন ২০১৯।
- "Salat al-Tasbeeh - Islam Question & Answer"। islamqa.info (ইংরেজি ভাষায়)। সংগ্রহের তারিখ ২০২১-০৫-১০।
- "সালাতুত তাসবিহ কি জীবনে একবার পড়তেই হবে?"। NTV Online (ইংরেজি ভাষায়)। ২০১৯-০৩-২৮। সংগ্রহের তারিখ ২০২১-০৫-১০।
- সূত্র: আবু দাউদ, হাদিস: ১২৯৭, ইবনে মাজাহ, হাদিস: ১৩৮৭, সহিহ ইবনে খুজাইমা, হাদিস: ১২১৬, সুনানে বায়হাকি কুবরা, হাদিস: ৪৬৯৫
- "'সালাতুত তাসবিহ'র ফজিলত বর্ণনায় বিশ্বনবি"। জাগো নিউজ। ১৫ জুন ২০১৭। সংগ্রহের তারিখ ১১ জুন ২০১৯।
- "সালাতুত তাসবীহ"। আহলে হক। সংগ্রহের তারিখ ১৬ জুন ২০১৯।