সালভাদোর আইয়েন্দে
সালভাদোর গিইয়ের্মো আইয়েন্দে গোস্সেন্স (স্পেনীয় ভাষায়: Salvador Guillermo Allende Gossens) (বালপারাইসো, ২৬শে জুলাই, ১৯০৮ – সান্তিয়াগো, ১১ই সেপ্টেম্বর, ১৯১৩) ১৯৭০ থেকে ১৯৭৩ সাল পর্যন্ত চিলির রাষ্ট্রপতি ছিলেন। তিনি চিলির প্রথম সমাজতন্ত্রবাদী রাষ্ট্রপতি ছিলেন।
সালভাদোর আইয়েন্দে | |
---|---|
চিলির ২৯তম রাষ্ট্রপতি | |
কাজের মেয়াদ ৩রা নভেম্বর, ১৯৭০ – ১১ই সেপ্টেম্বর, ১৯৭৩ | |
পূর্বসূরী | এদুয়ার্দো ফ্রেই মোন্তাল্বা |
উত্তরসূরী | আউগুস্তো পিনোশে |
ব্যক্তিগত বিবরণ | |
জন্ম | ২৬শে জুলাই, ১৯০৮ বালপারাইসো, চিলি |
মৃত্যু | ১১ই সেপ্টেম্বর, ১৯৭৩; ৬৫ বছর বয়সে সান্তিয়াগো, চিলি |
জাতীয়তা | চিলীয় |
রাজনৈতিক দল | চিলির সমাজতান্ত্রিক দল |
দাম্পত্য সঙ্গী | হোর্তেন্সিয়া বুস্সি |
চিলির এক উচ্চ-মধ্যবিত্ত পরিবারে তার জন্ম হয়। তিনি ১৯৩২ সালে চিলি বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ডাক্তারি পাস করেন। বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াকালীন অবস্থায় তিনি মার্ক্সবাদী ছাত্র রাজনীতি করতেন। ১৯৩৩ সালে অন্যদের সাথে তিনি চিলির সমাজতান্ত্রিক দল প্রতিষ্ঠা করেন এবং ১৯৪৩ থেকে ১৯৭০ পর্যন্ত দলটির সাধারণ সম্পাদক ছিলেন। ১৯৩৭ সালে তিনি চেম্বার অফ ডেপুটিজ-এ নির্বাচিত হন। পেদ্রো আগির্রে সের্দার উদারনৈতিক বামপন্থী কোয়ালিশন ক্ষমতায় থাকার সময় তিনি ১৯৩৯ থেকে ১৯৪২ সাল পর্যন্ত চিলির স্বাস্থ্যমন্ত্রী ছিলেন। ১৯৪৫ সালে সিনেট নির্বাচনে দাঁড়িয়ে জয়লাভ করেন। ভবিষ্যতে তিনি আরও তিনবার সিনেটে নির্বাচিত হয়েছিলেন।
১৯৫২, ১৯৫৮ এবং ১৯৬৪ সালে তিনি রাষ্ট্রপতি নির্বাচনে দাঁড়ালেও প্রতিবারই ব্যর্থ হন। ১৯৫২ সালে কট্টর সাম্যবাদীদের সাথে সম্পর্ক রাখার ফলে বামপন্থী ভোট হারান। ১৯৫৮ সালে বামপন্থী ভোট পেলেও খুব অল্প ব্যবধানে হোর্হে আলেস্সান্দ্রির কাছে পরাজিত হন। ১৯৬৪ সালেও একই সমর্থন নিয়ে খ্রিস্টান ডেমোক্র্যাট প্রার্থী এদুয়ার্দো ফ্রেই মোন্তাল্বার কাছে পরাজিত হন।
১৯৭০ সালে তিনি সমাজতন্ত্রী, সাম্যবাদী ও দলছুট খ্রিস্টান ডেমোক্র্যাটদের এক কোয়ালিশনের নেতা হিসেবে ত্রিমুখী প্রতিদ্বন্দ্ব্বিতায় খুব অল্প ব্যবধানে রাষ্ট্রপতি নির্বাচিত হন। তিনিই ছিলেন লাতিন আমেরিকার প্রথম মার্ক্সবাদী রাষ্ট্রপতি। তবে তিনি খুব স্বল্প ব্যবধানে জয়লাভ করেছিলেন বলে রক্ষণশীল কংগ্রেসের কাছ থেকে তার সমাজতন্ত্রমুখী সংস্কার কাজগুলির বাস্তবায়নে বাধা পান। তিনি চিলির সমস্ত তামার খনি এবং বিদেশীদের (বিশেষ করে মার্কিন) মালিকানাধীন অনেক ব্যবসা ক্ষতিপূরণ ছাড়াই বাজেয়াপ্ত করেন ও এগুলির জাতীয়করণ করেন। এর ফলে চিলির প্রতি বিদেশী সরকারগুলি (বিশেষত মার্কিন সরকার) রুষ্ট হয় এবং আস্থাহীনতার কারণে চিলিতে মার্কিন ও পশ্চিম ইউরোপের বৈদেশিক বিনিয়োগ শূন্যের কোঠায় নেমে আসে। আইয়েন্দে কিউবা ও চীনের সাথে বৈদেশিক সম্পর্ক গড়ে তোলেন। দেশের জনগণের মধ্যে অর্থনৈতিক বৈষম্য দূর করার জন্য তিনি দ্রব্যমূল্যের দাম স্থির করে দেন এবং ন্যূনতম বেতন বাড়িয়ে দেন, তবে এর ফলে বিনিয়োগের পরিমাণ হ্রাস পেয়ে ভোগের পরিমাণ বেড়ে যায় এবং কালোবাজারির পরিমাণও বেড়ে যায়। ভূমিহীনদের সুবিধার জন্য ভূমি-সংস্কার করতে গিয়ে হাসিয়েন্দা সমবায় ভূমিগুলি ভেঙে দিয়ে সরকারীকরণ করেন এবং এর ফলে চিলির গ্রামাঞ্চলেও বিশৃঙ্খলার সৃষ্টি হয়। দরিদ্রদের সাহায্য করতে গিয়ে আয়েন্দে চিলির ব্যক্তিসম্পত্তি-সচেতন উচ্চবিত্ত ও মধ্যবিত্ত শ্রেণীর কুনজরে পড়েন। তবে বহু দরিদ্র শ্রমিক ও কৃষক তার পদক্ষেপগুলিকে স্বাগত জানায়। ১৯৭৩ সালের কংগ্রেস নির্বাচনে আইয়েন্দের দলকে ৪৪% ভোট দিয়ে নির্বাচিত করে তারা এই আস্থার প্রতিফলন ঘটায়। কিন্তু ঐ বছরই আইয়েন্দের শাসনের হঠাৎ ও করুণ পরিসমাপ্তি ঘটে।
১৯৭৩ সালের সেপ্টেম্বরে চিলির সামরিক জেনারেল আউগুস্তো পিনোশে মার্কিন গোয়েন্দা সংস্থা সিআইএ-র সহায়তায় [1] আয়েন্দেকে রাষ্ট্রপতির রাজপ্রাসাদে অন্তরীণ করলে আইয়েন্দে আত্মহত্যা করেন। তবে আইয়েন্দের অনেক সমর্থক মনে করেন তাকে হত্যা করা হয়েছিল। প্রায় দুই দশক পরে ১৯৯০ সালে আইয়েন্দের মৃতদেহ একটি নামচিহ্নহীন কবর থেকে উত্তোলন করা হয় এবং সান্তিয়াগোতে তার যথাযথ অন্ত্যেষ্টিক্রিয়া সম্পন্ন করা হয়।
তথ্যসূত্র
- এ সম্পর্কিত বিস্তারিত পড়ুন সিআইএ-র ওয়েবসাইটের এই পৃষ্ঠায়: https://www.cia.gov/library/reports/general-reports-1/chile/index.html#14 ওয়েব্যাক মেশিনে আর্কাইভকৃত ১২ জুন ২০০৭ তারিখে