সার্কাস

সার্কাস (ইংরেজি: Circus) এক ধরনের বিশেষ বিনোদন কেন্দ্র বা বিনোদন প্রক্রিয়াবিশেষ। এর মাধ্যমে আবালবৃদ্ধবনিতা নির্মল আনন্দ ও চিত্তাকর্ষক বিষয়াবলী সম্পর্কে সম্যক অবগত হন। সার্কাসে এক দলভূক্ত বিশেষ প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত ব্যক্তি অংশগ্রহণ করেন। তারা শারীরিক ব্যায়াম, বিশেষ কলা-কৌশল, ভাঁড়, মূকাভিনয়, রশি দিয়ে হাঁটা, পোষা প্রাণীসহ নানা মাধ্যমে তাদের দক্ষতা প্রদর্শন বা উপস্থাপনা করে থাকেন। মূলতঃ সার্কাস বিনোদন কেন্দ্র হলেও প্রায়শঃই তা ভ্রাম্যমাণ যা দেশের এক স্থান থেকে অন্য স্থানে কিংবা এক দেশ থেকে অন্য দেশে শুভেচ্ছা সফরে বা ব্যবসায়িক কারণে বের হয়। সকল সার্কাসই অবশ্য ভ্রাম্যমাণ নয়। কিছু সার্কাস দলের নিজস্ব ভবন বা মিলনায়তন রয়েছে।

১৮৫২ সালে অঙ্কিত পোল্যান্ডে একটি ভ্রাম্যমাণ সার্কাসের তেলচিত্র
কলস শূন্যে ভাসিয়ে উড়ে বেড়ান মঞ্জুরুল হক

নামকরণ

বাংলায় সার্কাস শব্দটি আসলে একটি ইংরেজি শব্দ। ১৪শ শতকে ইংরেজি ভাষায় প্রথম এর ব্যবহার লক্ষ্য করা যায়। ইংরেজি সার্কাস আসলে ল্যাটিন circus থেকে উদ্ভূত হয়েছে।[1] ল্যাটিন শব্দটি আবার গ্রিক κίρκος থেকে এসেছে যার আক্ষরিক অর্থ বৃত্ত বা রিং[2]

পরিচালনা ব্যবস্থা

সার্কাসে অনেক ধরনের বৈচিত্র্যপূর্ণ বিষয়াবলী অন্তর্ভুক্ত থাকায় বিরাট আয়তনের খোলামেলা উন্মুক্ত জায়গার প্রয়োজন পড়ে। রোদ-বৃষ্টি থেকে দর্শককে দূরে রাখতে কিংবা সুষ্ঠুভাবে পরিচালনার স্বার্থে বড় ধরনের তাঁবু ব্যবহার করা হয় যা বিগ টপ নামে পরিচিত। মিলনায়তনে শত শত লোকের বসার উপযোগী পরিবেশ সৃষ্টি করা হয়। দূরের দর্শকের জন্য সম্মুখের তুলনায় উঁচু আসন তৈরী করা হয়। সার্কাসের আকার সাধারণতঃ গোলাকৃতি। মাঝখানের এলাকায় বিশেষ পোশাক পরিহিত শিল্পীরা তাদের জন্যে বরাদ্দ নির্দিষ্ট বিষয়াবলী দর্শকদের সম্মুখে তুলে ধরেন। মাঝখানের গোলাকৃতি জায়গাটি রিং নামে পরিচিত। যিনি সমগ্র অনুষ্ঠান তদারকী ও পরিচালনা করে থাকেন, তিনিই রিংমাস্টার

অভিনয় শৈলী

সার্কাসে বিভিন্ন ধরনের অভিনয়-পর্ব ও ক্রীড়াশৈলী অন্তর্ভুক্ত থাকে। কিছু ব্যক্তি জিমন্যাসটিক্‌সে অংশ নিয়ে থাকেন। প্রায়শঃই একদল জিমন্যাস্ট দাঁড়িয়ে থাকাবস্থায় অন্য দল তাদের ঘাড়ে অবস্থান নিয়ে পিরামিডের ন্যায় স্থাপত্যকলার প্রতীকিচিত্র অঙ্কন করেন। আগুনের গোলকে ঝাঁপ দিয়ে অন্য প্রান্তে চলে যান কিংবা শূন্যে কোন কিছু নিক্ষেপ করে ধারাবাহিকতার সাথে দু'হাত পরিচালনা করেন। দর্শকদেরকে হাসানোর জন্যে ভাঁড় বা ক্লাউন মজার মজার বিষয়াবলীর বহিঃপ্রকাশ ঘটান। শুরুতে ক্লাউনেরা ভীষণ দুষ্টুমী করেন ও পরবর্তীকালে তারা তাদের চাতুর্য্যতা প্রদর্শন করেন।

প্রাণীর ব্যবহার

গত দুই শতাব্দী ধরে আধুনিক সার্কাসে অনেক ধরনের প্রজাতির প্রাণী সার্কাসের অন্যতম অংশ হয়ে দাঁড়িয়েছে। বন্য প্রাণী বিশেষতঃ সিংহ, বাঘ, ভল্লুকের ন্যায় প্রাণীগুলোকে সার্কাসে ব্যবহার করা হচ্ছে। এছাড়াও উট, ঘোড়া, হাতিসহ গৃহপালিত কুকুরও এর অন্তর্ভুক্ত হয়েছে। সাম্প্রতিককালে মানুষের ধ্যান-ধারনায় পরিবর্তনের ছোঁয়া লক্ষ্য করা যায়। বন্য প্রাণীকে দক্ষতা প্রদর্শনে বাধ্য করানোর ন্যায় কর্মে এর দায়িত্বরত প্রশিক্ষক প্রয়োজনে রূঢ় আচরণ করছেন। তন্মধ্যে - প্রাণীকে আঘাত করা, ইলেকট্রিক শক দেয়াসহ অন্য কোন উপায়ে ব্যথা প্রদান করা অন্যতম। এছাড়াও, প্রাণীগুলোকে সর্বদাই ছোট খাঁচায় পুরে সফরে নিয়ে যাওয়া হয়। অনেক দেশের জনগণই সার্কাসে বন্য প্রাণীর ব্যবহার দেখতে চায় না।

তথ্যসূত্র

  1. circus, Charlton T. Lewis, Charles Short, A Latin Dictionary, on Perseus
  2. krikos, Henry George Liddell, Robert Scott, A Greek-English Lexicon, on Perseus

বহিঃসংযোগ

This article is issued from Wikipedia. The text is licensed under Creative Commons - Attribution - Sharealike. Additional terms may apply for the media files.