সামরাতুত তারবিয়াত
সামরাতুত তারবিয়াত (আরবি: ثمرة الطربيات, অনুবাদ 'প্রশিক্ষণের ফল') ব্রিটিশদের ভারত থেকে উৎখাত করার জন্য সশস্ত্র আন্দোলন পরিচালনার লক্ষ্যে প্রতিষ্ঠিত একটি রাজনৈতিক দল। ১৮৭৮ সালে দারুল উলুম দেওবন্দের প্রথম ছাত্র মাহমুদ হাসান দেওবন্দি এই দলটি প্রতিষ্ঠা করেন। এর পৃষ্ঠপোষক ছিলেন দারুল উলুম দেওবন্দের প্রতিষ্ঠাতা মুহাম্মদ কাসেম নানুতুবি। এটিই দেওবন্দ আন্দোলনের প্রথম রাজনৈতিক দল।[1][2] সংগঠনটি প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে মাহমুদ হাসান দেওবন্দি ভারতে মুসলিম জাতীয়তাবাদের এক নতুন অধ্যায়ের সূচনা করেন। এ সংগঠন পরবর্তীকালে ভারতের জাতীয় প্রেক্ষাপটে উদিত হওয়া বিভিন্ন বিপ্লবী সংস্থার অগ্রদূত হিসেবে ভূমিকা পালন করেছিল। সংগঠনটি ৩০ বছর পথচলার পর জমিয়তুল আনসারে রূপ নেয়।[3]
ثمرة الطربيات | |
উত্তরসূরী | জমিয়তুল আনসার |
---|---|
গঠিত | ১৮৭৮ |
প্রতিষ্ঠাতা | মাহমুদ হাসান দেওবন্দি |
আইনি অবস্থা | ধর্মীয় সংগঠন |
উদ্দেশ্য | প্রকাশ্য উদ্দেশ্য ছিল দারুল উলুম দেওবন্দের উন্নতিকল্পে অত্র শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের প্রতি সহানুভূতিশীল ব্যক্তিবর্গের সাথে সম্পর্ক স্থাপন করা, অপ্রকাশ্য উদ্দেশ্য ছিল ভারতকে ব্রিটিশ শাসনের কবল থেকে মুক্ত করার জন্য সশস্ত্র বিপ্লবের উদ্দেশ্যে মুজাহিদ বাহিনী গঠন করা |
সদরদপ্তর | দেওবন্দ |
দেওবন্দি আন্দোলন |
---|
সিরিজের অংশ |
|
বর্ণনা
মাহমুদ হাসান দেওবন্দি দারুল উলুম দেওবন্দের শিক্ষক হিসেবে নিয়োগ লাভের পর পঞ্চম বছরে ১৮৭৮ সালে এই সংগঠনটি প্রতিষ্ঠা করেন। সামরাতুত তারবিয়াত শব্দের অর্থ প্রশিক্ষণের ফল। দারুল উলুম দেওবন্দের উন্নতিকল্পে অত্র শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের প্রতি সহানুভূতিশীল ব্যক্তিবর্গের সাথে সম্পর্ক স্থাপন করাই ছিল এ সংগঠনের প্রকাশ্য উদ্দেশ্য ও লক্ষ্য। কিন্তু অপ্রকাশ্য উদ্দেশ্য ছিল ভারতকে ব্রিটিশ শাসনের কবল থেকে মুক্ত করার জন্য সশস্ত্র বিপ্লবের উদ্দেশ্যে মুজাহিদ বাহিনী গঠন করা। এ উদ্দেশ্য ফাঁস হয়ে গেলে ব্রিটিশ সরকার সংগঠনের সাথে সম্পৃক্ত সকলকে সমূলে বিনাশ করে দিতে পারে বিধায় সংগঠনটির কার্যক্রম অত্যন্ত গোপনে পরিচালিত হত।[3]
দারুল উলুম দেওবন্দের প্রথম দিকের স্নাতকদের অধিকাংশই পাঞ্জাব ও আফগানিস্তানের অধিবাসী ছিলেন। দারুল উলুম দেওবন্দের আলেমরা তাদের মাঝে ভারতকে ইংরেজদের কবল থেকে মুক্ত করার স্পৃহা জাগিয়ে তোলেন। কেননা, এদের মাধ্যমে ইংরেজ কবলমুক্ত এলাকা আফগানিস্তান ও সীমান্ত থেকে ভারতের উপর বহিরাক্রমণ করা সম্ভব হবে। সংগঠনটির মাধ্যমে তারা সশস্ত্র সংগ্রামের প্রশিক্ষণ লাভ করেন। এ প্রশিক্ষণ লাভ করে তারা সীমান্তবর্তী অঞ্চলগুলোতে ব্রিটিশ বিরোধী আন্দোলন গড়ে তোলেন এবং সীমান্তবর্তী উপজাতীয় জনগণের মধ্যে জাতীয়তাবাদী চেতনা জাগ্রত করার প্রয়াস পান।[3]
১৮৮০ সালে সংগঠনটির পৃষ্ঠপোষক মুহাম্মদ কাসেম নানুতুবি মৃত্যুবরণ করলে সংগঠনটির নেতৃত্ব প্রদানে শূণ্যতার সৃষ্টি হয় এবং মাহমুদ হাসান দেওবন্দি হতোদ্যম হয়ে পড়েন। ফলে সংগঠনটি কাঙ্ক্ষিত লক্ষ্য পৌঁছাতে ব্যর্থ হয়। ৩০ বছর ধরে চলার পর ১৯০৯ সালে মাহমুদ হাসান দেওবন্দি নতুনভাবে সংগঠিত হয়ে জমিয়তুল আনসার প্রতিষ্ঠা করেন।[3]
আরও দেখুন
তথ্যসূত্র
- হাসান, তুরাবুল; আহমদ, খলিল; হাসান, শহিদ (২০১৫)। "The Role of Deobandi Ulema in Strengthening the Foundations of Indian Freedom Movement (1857-1924)" [ভারতীয় স্বাধীনতা আন্দোলনের ভিত্তি শক্তিশালীকরণে দেওবন্দি ওলামাদের ভূমিকা (১৮৫৭-১৯২৪)] (পিডিএফ)। পাকিস্তান জার্নাল অব ইসলামিক রিসার্চ। পাকিস্তান: বাহাউদ্দিন জাকারিয়া বিশ্ববিদ্যালয়। ১৫: ৪০।
- খান, ইরফানুল্লাহ (২০১৭)। দি দেওবন্দ মুভমেন্ট এন্ড দি রাইজ অব রিলিজিয়াস মিলিট্যান্সি ইন পাকিস্তান। পিএইচডি অভিসন্দর্ভ (ইংরেজি ভাষায়)। ইসলামাবাদ: কায়েদে আজম বিশ্ববিদ্যালয়। পৃষ্ঠা ১০২।
- শামসুজ্জামান, মুহাম্মদ (২০১৯)। ব্রিটিশ বিরোধী আন্দোলনে দেওবন্দ মাদ্রাসার ভূমিকা (গবেষণাপত্র)। বাংলাদেশ: ইসলামের ইতিহাস ও সংস্কৃতি বিভাগ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়। পৃষ্ঠা ১২৫–১২৬। ৩ জুন ২০২২ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ৪ জানুয়ারি ২০২২।