সাময়িক পত্র
সাময়িক পত্র, সাময়িকী বা ম্যাগাজিন বলতে নির্দিষ্ট সময় পরপর প্রকাশিত এক ধরনের পত্রিকা যা কাগজে বা ইলেক্ট্রনিকভাবে (যাকে অনেক সময়ে অনলাইন সাময়িক পত্র বলা হয়ে থাকে) প্রকাশিত হয়ে থাকে। সাময়িকীগুলিতে বিভিন্ন বিষয়বস্তুর সমাহার থাকে। এটি আর্থিক সহযোগিতা পেয়ে থাকে বিভিন্ন বিজ্ঞাপন, ক্রয়মূল্য, আগাম প্রদত্ত চাঁদা অথবা এই তিনটির সমন্বয়ে।
ম্যাগাজিন হলো একধরনের সাময়িক প্রকাশনা যা মুদ্রণ অথবা বৈদ্যুতিক মুদ্রণ (বৈদ্যুতিক বা অনলাইনে প্রকাশিত ম্যাগজিন মুলত অনলাইন ম্যাগাজিন) মাধ্যমে সাধারণত নির্দিষ্ট সময়-অন্তর প্রকাশিত হয়ে থাকে। ম্যগাজিন নির্ধারিত সময়ে বৈচিত্র্যপূর্ণ বিষয়বস্তুর প্রকাশ করে। সাধারণত বিজ্ঞাপন, বিনিময় মূল্য, এবং পূর্বে পরিশোধিত সাবস্ক্রিপশন অর্থ, অথবা এই তিনের সমন্বয়ে ম্যাগাজিনের আর্থিক ব্যবস্থা গড়ে উঠে ও ম্যাগাজিন প্রকাশ নিশ্চিত হয়।[1] বুৎপত্তিগত অর্থে, "ম্যাগাজিন" শব্দটি সংগ্রহ বা সংগ্রহস্থল নির্দেশ করে। তবে, প্রকাশনা মাধ্যমে একে অনুচ্ছেদ বা নিবন্ধের সংগ্রহ বলা হয়ে থাকে।কয়েকটি ম্যাগাজিনের উদাহরণ হল "এখন শান্তিকেতন","দাহপত্র", "পিপল", "ফ্যামিলি সার্কেল", "ন্যাশনাল জিওগ্রাফিক", "ওয়াচটাওয়ার", "নাটমন্দির", "উজানের পথে" , "উত্তর কাল", কাঞ্চিদেশ প্রভৃতি।
বণ্টন
ম্যাগাজিনগুলোকে মেইল, পত্রিকার দোকান, বইয়ের দোকান অথবা অন্য কোন বিক্রেতা অথবা বাছাইকৃত স্থানে বিনামুল্যে বিতরনের মাধ্যমে বণ্টন করা হয়ে থাকে । ক্রেতারা নির্দিষ্ট সময়ের জন্য অর্থ খরচ করেও ম্যাগাজিন ক্রয় করতে পারে ।
প্রদেয় প্রচলন
এই পন্থায় ভোক্তাদের কাছে টাকার বিনিময়ে অথবা মাসিক বা বার্ষিকভাবে টাকা নিয়ে ম্যাগাজিন বণ্টন করা হয়। এর মাধ্যমে ম্যাগাজিন পাঠকের সংখ্যা নিয়ে ধারণা পাওয়া যায় ।
অপ্রদেয় প্রচলন
এই পন্থায় ম্যাগাজিনগুলকে বিনামুল্যে বিতরন করা হয় ভোক্তাদের কাছে । যেমনটি করা হয় বিমানবন্দরে, রাস্তার অন্যান্য প্রকাশনীগুলোতে । এর মাধ্যমে কতগুলো বিষয়বস্তু প্রদান করা হয়েছে এ নিয়ে তথ্য রাখা হয়, কত জন পাঠক পড়েছেন এটি নিয়ে নয় ।
নিয়ন্ত্রিত প্রচলন
এই পন্থাটি বাণিজ্য ম্যাগাজিনের ক্ষেত্রে প্রযোজ্য । এই উপায়ে শুধুমাত্র জরিপ থেকে বাছাইকৃত ভোক্তারাই ম্যাগাজিন পড়তে পারবেন এবং তা অনেক ক্ষেত্রে বিনামুল্যে। যে কেউ এই ম্যাগাজিন পড়ার সুযোগ পাবেন না, শুধু যারা তাদের বাণিজ্যিক যোগ্যতার ভিত্তিতে বাছাই হবেন তারাই বিনামুল্যে ম্যাগাজিনটি পড়তে পারবেন। এক্ষেত্রে ম্যাগাজিনের প্রচারণাও নির্দিষ্ট ভোক্তাদের কাছেই পৌঁছাবে । এর ফলে প্রিন্টিং খরচ ও কাগজের অপচয় কম হবে । এ পন্থাটি ইন্টারনেট সুবিধা আসার আগে ব্যপকভাবে প্রচলিত ছিল এবং বর্তমানে কোন কোন প্রতিষ্ঠান এ পন্থা অবলম্বন করছে । উদাহরণ হিসেবে যুক্তরাজ্যের কিছু ম্যাগাজিন যেমন কম্পিউটার উইকলি এবং ওয়াটার্স ম্যাগাজিন অন্যতম । বিশ্বব্যপী প্রচলিত ভিডিওএজ ইন্টারন্যাশনাল এই পন্থার আরেকটি উদাহরণ ।
বিতরণ
ম্যাগাজিনের বিতরণ চলতে পারে মেইলে; বিক্রিত হয় নিউজস্ট্যান্ডে, বইয়ের দোকানসমুহে, বা অন্যন্য বিক্রয় কেন্দ্রে। তবে কিছু কিছু নির্ধারিত স্থানে বিনামূল্যেও বিতরণ করা হয়। সাবক্রিপশন বিজনেস মডেলে বিতরণ ব্যবস্থাকে প্রধানত তিনটি শ্রেণীতে বিভক্ত করা হয়েছে।
পেইড সার্কুলেশন
পেইড সার্কুলেশন মডেলে, ম্যাগাজিন বিক্রিত হয় প্রতি সংখ্যা বা ইস্যু ভিত্তিতে অথবা সাবস্ক্রিপশনের মাধ্যমে, যাতে বিনিময়মূল্য মাসিক বা বাৎসরিক প্রদান করা হয় এবং ম্যাগাজিনও ডাকযোগে প্রেরিত হয়। যুক্তরাজ্যের প্রাইভেট আই যার একটি ভাল দৃষ্টান্ত।
নন-পেইড সার্কুলেশন
বিতরণের এই মাধ্যমটিতে ম্যগাজিনের কোন প্রচ্ছদমূল্য থাকেনা, রাস্তায় বা উডোজাহাজে্র যাত্রাপথে এই ধরনের ব্যবস্থায় বিতরণ কার্যক্রম পরিচালত হয়। যুক্তরাজ্য এবং অস্ট্রেলিয়ার টিএনটি ম্যাগাজিন নন-পেইড বিতরণের উদাহরণ।
কন্ট্রোলড সার্কুলেশন
বাণিজ্য পত্রিকাসমুহ (কলকারখানা ভিত্তিক সাময়িকীসমুহ) বিতরণের এই পদ্ধতি অনুসরন করে বিশেষ জরিপের মাধ্যমে তাদের মনোনীত পাঠকদের কাছে বিনামূল্যে ম্যাগাজিন বিতরণ করে থেকে। এই মডেলটি ব্যপকভাবে ব্যবহৃত হতো ওয়ার্ল্ড ওয়াইড ওয়েব উত্থানের পূর্বে, তবে কিছু কিছু প্রতিষ্ঠান এখনো এটি অনুসরণ করে চলছে। উদাহরণ হিসেবে যুক্তরাজ্যের, কম্পিউটার-শিল্প ম্যগাজিন, কম্পিউটার উইকলি ও কম্পিউটিং, এবং আর্থিকখাতের, ওয়াটারস ম্যাগাজিন উল্লেখযোগ্য। এছাড়া বিশ্ব মিডিয়া শিল্পে ভালো উদাহরণ হতে পারে ভিডিওএজ ইন্টারন্যাশনাল।
ম্যাগাজিনের ইতিহাস
সবচেয়ে প্রাচীনতম ম্যাগাজিনের নাম "এরবলিশে মোনাথস আন্টারডিউজেন" একটি দার্শনিক ম্যাগাজিন যা ১৬৬৩ সালে প্রথম প্রকাশিত হয়েছিল জার্মানিতে । "দ্য জেন্টল্ম্যান্স ম্যাগাজিন" ১৭৩১ সালে লন্ডনে প্রকাশিত হওয়া প্রথম সাধারণ ম্যাগাজিন । এডওয়ার্ড কেইভ, দ্য জেন্টলম্যান্স ম্যাগাজিনটি "সিল্ভেনাস আর্বান" ছদ্মনাম ব্যবহার করে সম্পাদনা করেন এবং তিনিই তার সম্পাদনার মাধ্যমে প্রথম "ম্যাগাজিন" শব্দটি ব্যবহার করেন সামরিক ভাণ্ডার হিসেবে । ১৮৪২ সালে হার্বাত ইন্গ্রাম এর সম্পাদনায় "দ্য ইলুস্ট্রেটেড লন্ডন নিউজ" হয় তৎকালীন সময়ের প্রথম সচিত্র ম্যাগাজিন ।
ব্রিটেন
সবচেয়ে পুরনো ম্যাগাজিন যা এখনও বাজারজাত করা হয় তা হল "দ্য স্কটস ম্যাগাজিন" যা ১৭৩৯ সালে প্রথম প্রকাশিত হয়েছিল । এই সময়ে বহুবার প্রকাশনাটির মালিকানা পরিবর্তন হয়, এবং দীর্ঘ ৯০ বছর ধরে প্রকাশনা বন্ধ থাকার কারণে মালিকানার দাবিটি দুর্বল হয়ে যায় । "লয়েড লিস্ট" নামক প্রকাশনাতি এডওয়ার্ড লয়েডের ইংল্যান্ড কফি শপে পাওয়া যায় ১৭৩৪, যদিও ২০১৩ সাল থেকে এটি ম্যাগাজিন হিসেবে প্রকাশ পায়নি ২৭৪ বছর চলার পর, কিন্তু অন-লাইন প্লাটফর্মে এর বিষয়বস্তুগুলো প্রতিনিয়ত পরিবর্তন করা হয় । আগের ম্যাগাজিন আরবীয় উপায়ে প্রিন্টিং করা হত, বড় কাঠের ফলক ব্যবহার করে । যখন ম্যাগাজিনের চাহিদা বেড়ে গেল তখন কাঠের ফলকের উৎপাদনও বেড়ে যায় ।
১৯ শতকের দিকে
১৮০০ সালের দিকে মাসিক ম্যাগাজিনের কদর বাড়তে শুরু করে । ম্যাগাজিনে যোগ হতে থাকে গল্প, কবিতা, ধাঁ ধাঁ, ছোট গল্প, রাজনৈতিক উপাদান, ইতিহাস, সামাজিক আলোচনা ইত্যাদি । সামাজিক ঘটনার সাথে ছবির প্রকাশ ম্যাগাজিনে বিচিত্র বয়ে আনে । ছবিসহ ঘটনা বর্ণনা করে এমন দুইটি ম্যাগাজিন হল "দ্য আটলান্টিক" এবং "হার্পারস" । এর মধ্যে "দ্য আটলান্টিক" বিশ্বের ঘটনা বর্ণনা করে আর "হার্পারস" সাংস্কৃতিক ঘটনা বর্ণনা করে ।
প্রগতিশীল যুগ (১৮৯০ - ১৯২০)
১৯০০ সালের পর ম্যাগাজিন প্রচুর জনপ্রিয়তা লাভ করে ।১৯২০ সালে কিছু ম্যাগাজিন লক্ষাধিক পাঠকের কাছে প্রিয় হতে শুরু করে । এই জনপ্রিয়তার কারণ তৎকালীন সময়ের প্রচারণা ব্যবস্থার উন্নতি। তাছাড়া রাজনৈতিক অবস্থার অস্থিতিশিলতা এবং ব্যবসার বিপুল প্রসারণ ম্যাগাজিনের জনপ্রিয়তার কারণ হতে সাহায্য করে । শিশুশ্রম, দারিদ্র নানা সামাজিক সমস্যার চিত্র ফুটিয়ে তোলার কারণেও ম্যাগাজিন ব্যপক সাড়া ফেলতে শুরু করে ।
২১ শতক
২০১১ সালে ১৫২ টি ম্যাগাজিনের প্রকাশ স্থগিত করা হয় এবং ৮২ টি ম্যাগাজিনের প্রকাশ বন্ধ করে দেয়া হয় । ২০০৮ থেকে ২০১৫ সালে অক্সব্রিজ কমিউনিকেশন ঘোষণা করে যে ২২৭ টি প্রকাশিত ম্যাগাজিনের মধ্যে ৮২ টি বন্ধ করে দেয়া হয় নর্থ আমেরিকায় । শুধু তাই নয়, MediaFinder.com থেকে জানা যায় ২০১৪ সালে ৬ মাসের মধ্যে প্রকাশ পাওয়া ৯৩ টি নতুন ম্যাগাজিনের মধ্যে ৩০ টির প্রকাশনা বন্ধ করে দেয়া হয় । ২০১৩ সালের শেষের পরিসংখ্যান অনুযায়ী, ২০১২ থেকে ২০১৩ সাল পর্যন্ত শীর্ষ ২৫ টি ম্যাগাজিনের ২২ টি সাবস্ক্রিপশন স্তরের সংখ্যা কমেছে, গ্ল্যামার এবং ইএসপিএন ম্যাগাজিনের জনপ্রিয়তার কারণে ।
মহিলাদের ম্যাগাজিন
ফ্যাশন
দৈনন্দিন জীবনের প্রতিটা ক্ষেত্রেই ফ্যাশনের চাহিদা বৃদ্ধি পাওয়ার কারণে ম্যাগাজিনগুলোও তাদের বিষয়বস্তু হিসেবে যোগ করে এটিকে । ১৯২০ সালে সামাজিক অবস্থানের উপর ভিত্তি করে পোশাক, অলংকার, মেক-আপের ডিজাইনে পরিবর্তন আসতে থাকায় যুগের সাথে তাল মিলাতেই শৌখিন রমণীদের কাছে প্রিয় হতে থাকে এসব ম্যাগাজিনগুলো ।
ধর্মীয় ম্যাগাজিন
১০০ বছরেরও বেশি সময় ধরে ধর্মীয় মতবাদ প্রচার ও যোগাযোগের জন্য ধর্মীয় দলগুলো ম্যাগাজিন ব্যবহার করেছেন । "দ্য ওয়াচটাওয়ার" ম্যাগাজিনটি পৃথিবীর সবচেয়ে ব্যাপকভাবে প্রচারিত ম্যাগাজিন যেটি ২ মাসের মধ্যে গড়ে ৬২ মিলিয়ন কপি ছাপানো হয় ২০০ টি ভাষায় অনুদিত করে । ক্যাথলিক্স এর একটি ম্যাগাজিন হল "ফার্স্ট থিংগস" ।
তথ্যসূত্র
- "Magazine Publisher.com's Magazine Startup Guide"। Magazine Publisher। ২৫ অক্টোবর ২০১২ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ৩ নভেম্বর ২০১২।