সাচার রথ

সাচার কচুয়ার রথটি অতি প্রাচীন।সনাতন ধর্মাবলম্বীদের নিকট তীর্থস্থান হিসেবে পরিচিত। প্রতিবছর এই রথকে কেন্দ্র করে মেলা অনুষ্ঠিত হয়।

অবস্থান

এটি বাংলাদেশের চাঁদপুর জেলার কচুয়া উপজেলার সাচার বাজারে অবস্থিত।

কাহিনী

সাচার রথ ও জগন্নাথ ধাম প্রতিষ্ঠা নিয়ে কথিত আছে যে, প্রায় দেড়শত বছর পুর্বে সাচার বাবু বাড়ির জমিদার গঙ্গা গোবিন্দ সেন ভারতে হিন্দু তীর্থস্থান পুরীতে জগন্নাথ দর্শনে গেলে, জগন্নাথ গঙ্গা গোবিন্দকে দর্শন দেননি। বরং পুরীর দরজা-জানালা গুলো আপনা আপনি বন্ধ হয়ে যায়। দর্শন লাভে ব্যর্থ হয়ে পরম ধার্মিক গঙ্গা গোবিন্দ সেন দর্শন লাভের আশায় পুরীর বাহিরে আমরন-অনশন শুরু করে দেয়। অনশনের কয়েকদিন অতিবাহিত হলে গঙ্গা গোবিন্দ সেন স্বপ্নাদিষ্ট হন যে, এ স্থানে জগন্নাথ গঙ্গা গোবিন্দ সেনকে দর্শন না দিয়ে তার সাচারের বাড়ির সম্মুখের দীঘিতে ভাসমান নিম কাঠ আকৃতিতে দর্শন দিবেন। স্বপ্নাদিষ্ট হয়ে গঙ্গা গোবিন্দ সেন নিজ বাড়ি ফিরে আসেন এবং ক’দিন পর উক্ত দীঘিতে স্নান করার সময় আকস্মিক ভাবে ভাসমান নিম কাঠ আকৃতিতে জগন্নাথ দর্শন লাভ করেন।[1][2][3]

নামকরণ

অলৌকিক ভাবে দর্শন প্রাপ্ত এ নিম কাঠ দ্বারা জগ্ননাথ, বলরাম ও শুভদ্রা এ তিনজনের তিনটি মূর্তি তৈরি হয়। গঙ্গা গোবিন্দ সেনের নেতৃত্বে তৎকালীন বঙ্গের বিখ্যাত নির্মাতা কারিগর রামকান্ত নিম কাঠ খোদাই পদ্ধতিতে মূর্তি গুলো তৈরি করেন। বলরাম জগন্নাথের বড় ভাই এবং শুভদ্রা ছোট বোন। জগন্নাথ ধামের ক’গজ সম্মূখে নিম কাঠের সাহায্যেই ১২টি চাকার উপর প্রায় ৪০ ফুট উচুঁ বিশিষ্ট অভিনব কারুকার্য খচিত রথ নির্মিত হয়। নিম কাঠে খোদাই পদ্ধতিতে বিভিন্ন আকর্ষনীয় মূর্তি তৈরি করা হয়। এসব মূর্তির মাঝে চুল বেঁধে রেখে বউ কে কাধে তুলে রাখা, পুরুষের প্রস্রাব পানে উদ্যত্ব যুবতী ষাড়ের উপর গাভী চড়ায় ও মাকে ছেলে ধর্ষন করছে ইত্যাদি নিখুত মূর্তি গুলো সবিশেষ উল্লেখযোগ্য। অর্থ্যাৎ সত্য, দ্বাপর ত্রেতা ও কলিযুগের ঘটমান মানুষের আচরনের বিভিন্ন অঙ্কিত স্মৃতি নিয়ে এ রথ নির্মিত হয়।[4][5]

পালন

১২৭৫ বাংলা সনের ১৩ আষাঢ়ে প্রতিষ্ঠিত এ রথ ও জগন্নাথ ধামে প্রতিবছরের আষাঢ় মাসে ব্যাপক আয়োজনে অনুষ্ঠিত হয় রথযাত্রার উৎসব। পাকিস্তান আমলে তৎকালীন পূর্ব বঙ্গের সর্বশেষ উল্লেখযোগ্য এ সাচার রথ উৎসবে আসাম ও ত্রিপুরা রাজ্য সহ পূর্ববঙ্গের বিভিন্ন অঞ্চল হতে হাজার হাজার হিন্দু সম্প্রদায়ের লোকজন এ রথযাত্রায় অংশ নিত। এ রথ যাত্রাকে ঘিরে অগণিত হিন্দু সম্প্রদায়ের লোকজনের ঘটত এক মহামিলন আর মহা উৎসব।[6]

তথ্যসূত্র

  1. "১৮ জুলাই থেকে সাচার রথযাত্রা উৎসব শুরু হচ্ছে"www.chandpur-barta.com। ২২ জানুয়ারি ২০২১ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ১২ জুন ২০১৭
  2. chandpur-kantho.com। "সাচারের রথ যাত্রা হিন্দু সমপ্রদায়ের ঐতিহাসিক তীর্থস্থান"chandpur-kantho.com। সংগ্রহের তারিখ ১২ জুন ২০১৭
  3. chandpurweb.com। "কোনো অশুভ শক্তি রথ উদযাপনবে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করলে কঠোর হস্তে দমন করা হবে"chandpurweb.com। সংগ্রহের তারিখ ১২ জুন ২০১৭
  4. "১৮ জুলাই থেকে সাচার রথযাত্রার উৎসব - সারাদেশ - The Daily Ittefaq"। সংগ্রহের তারিখ ১২ জুন ২০১৭
  5. "মেলা, রথ, লোকশিল্প ও চারুকলা - চাঁদপুর জেলা - চাঁদপুর জেলা"www.chandpur.gov.bd। ৩০ এপ্রিল ২০১৭ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ১২ জুন ২০১৭
  6. "ধর্ম যার যার, উৎসব সবারঃ কচুয়ার সাচারে রথযাত্রা উদযাপনে বক্তারা - মফস্বল"Premier News Syndicate Limited (PNS)। সংগ্রহের তারিখ ১২ জুন ২০১৭
This article is issued from Wikipedia. The text is licensed under Creative Commons - Attribution - Sharealike. Additional terms may apply for the media files.