সাইদুল আলম
সাইদুল আলম (জন্ম: অজানা) বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধের একজন বীর মুক্তিযোদ্ধা। স্বাধীনতা যুদ্ধে তার সাহসিকতার জন্য বাংলাদেশ সরকার তাকে বীর প্রতীক খেতাব প্রদান করে। [1]
সাইদুল আলম | |
---|---|
জাতীয়তা | বাংলাদেশী |
নাগরিকত্ব | ![]() ![]() |
পরিচিতির কারণ | বীর প্রতীক |
জন্ম ও শিক্ষাজীবন
সাইদুল আলমের জন্ম বরিশাল সদর উপজেলার চরকরমজী গ্রামে। তার বাবার নাম ইসরাইল বিশ্বাস এবং মায়ের নাম লালবানু বিবি। তার স্ত্রীর নাম সেলিনা আলম। তাদের দুই ছেলে ও এক মেয়ে।
কর্মজীবন
সাইদুল আলম চাকরি করতেন পাকিস্তান সেনাবাহিনীতে। ১৯৭১ সালে কর্মরত ছিলেন যশোর সেনানিবাসের প্রথম ইস্ট বেঙ্গল রেজিমেন্টে। ৩০ মার্চ পাকিস্তান সেনাবাহিনীর বালুচ রেজিমেন্ট তাদের আক্রমণ করে। তখন তারা ঝাঁপিয়ে পড়েন যুদ্ধে। প্রতিরোধযুদ্ধ শেষে প্রথমে ১১ নম্বর সেক্টরে, পরে নিয়মিত মুক্তিবাহিনীর জেড ফোর্সের অধীনে যুদ্ধ করেন। [2]
মুক্তিযুদ্ধে ভূমিকা
মুক্তিযুদ্ধের চূড়ান্ত পর্যায়ে অক্টোবর মাসের শেষ দিক থেকে বৃহত্তর সিলেট জেলার বিভিন্ন স্থানে একের পর এক যুদ্ধ করেছেন সাইদুল ইসলাম ও একদল মুক্তিযোদ্ধা। ২৮ অক্টোবর ধলই বিওপিতে; এরপর পাত্রখোলা, চারগ্রাম ও গৌরীপুরে। এর মধ্যে ধলই বিওপি ও গৌরীপুরের যুদ্ধ করেন তারা। মুক্তিযোদ্ধাদের চারটি দল (এক ব্যাটালিয়ন শক্তি) গৌরীপুরে পৌঁছানোর পর পাকিস্তানি সেনাবাহিনী নিজ প্রতিরক্ষা অবস্থান ছেড়ে পূর্ণ শক্তিতে অগ্রসর হয়ে তাদের আক্রমণ করে। সেখানে প্রতিরক্ষায় নিয়োজিত ছিল পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর ৩১ পাঞ্জাব রেজিমেন্ট। তাদের আকস্মিক আক্রমণে মুক্তিযোদ্ধাদের একাংশ বেশ নাজুক অবস্থায় পড়ে যায়। এ সময় ওয়াকার হাসানের (বীর প্রতীক) নেতৃত্বে একদল মুক্তিযোদ্ধা ঝোড়োগতিতে পাকিস্তানি সেনাবাহিনীকে পাল্টা আক্রমণ চালায়। মুক্তিযোদ্ধাদের মেশিনগান গ্রুপ ও এলএমজি গ্রুপের ফায়ারিং সাপোর্ট নিয়ে মুক্তিযোদ্ধারা সুকৌশলে অগ্রসর হয়ে শত্রু পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর নাকের ডগার মধ্যে পৌঁছে যায়। সাইদুল আলম ছিলেন মেশিনগান গ্রুপে। তিনি সাহসিকতার সঙ্গে মেশিনগান দিয়ে গুলি করে মুক্তিযোদ্ধাদের সামনে অগ্রসর হতে সাহায্য করেন। এরপর দুই পক্ষে প্রচণ্ড যুদ্ধ হয়। সাইদুল আলমদের মেশিনগানের গুলিতে হতাহত হয় অনেক পাকিস্তানি সেনা। এই যুদ্ধে পাকিস্তানিরা পরাজিত হয় এবং জীবিতরা সিলেটে পালিয়ে যায়। গৌরীপুর যুদ্ধের পর সাইদুল আলম ও তার সহযোদ্ধারা হাফিজউদ্দীন আহমদের (বীর বিক্রম) নেতৃত্বে রওনা হন সিলেট শহর অভিমুখে। শহরের উপকণ্ঠে এমসি কলেজে ছিল পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর প্রতিরক্ষা। ১৪ ডিসেম্বর ভোরে সেখানে তারা পৌঁছালেন। কুয়াশাচ্ছন্ন সকালে খালি চোখেই দেখা যাচ্ছে পাকিস্তানি সেনাদের। তারা ঘোরাঘুরি করছে। একের পর এক যুদ্ধে সাইদুল আলমরা কিছুটা পরিশ্রান্ত। এ ছাড়া প্রচণ্ড শীত। তাদের শীতবস্ত্রও মোটেই নেই। প্রায় তিন দিন তারা প্রায় অনাহারে। কিন্তু তাদের যুদ্ধ করার আগ্রহে কোনোভাবে ভাটা পড়ল না, বরং মনোবল আরও বেড়ে গেল। কারণ, পাকিস্তানি সেনাবাহিনী পরাজয়ের দ্বারপ্রান্তে। শত্রুর নাকের ডগায় ৫০০ গজ দূরে টিলার ওপর ট্রেঞ্চ খুঁড়ে সাইদুল আলমরা পজিশন নিতে থাকলেন। তখনই হঠাৎ শুরু হয়ে গেল তুমুল যুদ্ধ। তাদের দলের কাছে তিন ইঞ্চি মর্টারের গোলা আছে মাত্র ১৪টি। কিছুক্ষণের মধ্যেই সেই গোলা শেষ হয়ে গেল। সাইদুল এতে বিচলিত হলেন না। মেশিনগান দিয়ে পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর আক্রমণ প্রতিহত করতে থাকলেন। মেশিনগান গ্রুপের নিপুণ গুলিবর্ষণে হতাহত হলো বেশ কয়েকজন পাকিস্তানি সেনা। শেষে তারা ছত্রভঙ্গ হয়ে গেল। [3]
পুরস্কার ও সম্মাননা
তথ্যসূত্র
- দৈনিক প্রথম আলো, "তোমাদের এ ঋণ শোধ হবে না"| তারিখ: ২২-০৭-২০১২
- একাত্তরের বীরযোদ্ধাদের অবিস্মরণীয় জীবনগাঁথা, খেতাবপ্রাপ্ত মুক্তিযোদ্ধা সম্মাননা স্মারকগ্রহন্থ। জনতা ব্যাংক লিমিটেড। জুন ২০১২। পৃষ্ঠা ৪৯৫। আইএসবিএন 9789843351449।
- একাত্তরের বীরযোদ্ধা, খেতাব পাওয়া মুক্তিযোদ্ধাদের বীরত্বগাথা (দ্বিতীয় খন্ড)। প্রথমা প্রকাশন। মার্চ ২০১৩। পৃষ্ঠা ১৫৮। আইএসবিএন 9789849025375।
পাদটীকা
- এই নিবন্ধে দৈনিক প্রথম আলোতে ১৩-০২-২০১২ তারিখে প্রকাশিত তোমাদের এ ঋণ শোধ হবে না প্রতিবেদন থেকে লেখা অনুলিপি করা হয়েছে। যা দৈনিক প্রথম আলো ক্রিয়েটিভ কমন্স অ্যাট্রিবিউশন-শেয়ার-এলাইক ৩.০ আন্তর্জাতিক লাইসেন্সে উইকিপিডিয়ায় অবমুক্ত করেছে (অনুমতিপত্র)। প্রতিবেদনগুলি দৈনিক প্রথম আলোর মুক্তিযুদ্ধ ট্রাস্টের পক্ষে গ্রন্থনা করেছেন রাশেদুর রহমান (যিনি তারা রহমান নামেও পরিচিত)।