সহশিক্ষা কার্যক্রম
সহশিক্ষা কার্যক্রম হলো শিক্ষার্থীদের দ্বারা পরিচালিত উন্নয়নমূলক কার্যক্রম, যা স্কুল, কলেজ বা বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার সাধারণ পাঠ্যক্রমের অতিরিক্ত হিসেবে বিবেচিত হয়। অধিকাংশ ক্ষেত্রেই এগুলো স্বেচ্ছাসেবাভিত্তিক (বাধ্যতামূলক নয়), সামাজিক, জনহিতকর এবং সমবয়সী শিক্ষার্থীদের দ্বারা পরিচালিত। শিক্ষার্থী এবং কর্মীরা কর্তৃপক্ষের পৃষ্ঠপোষকতায় এই ক্রিয়াকলাপ পরিচালনা করে, যদিও শিক্ষার্থীদের স্বাধীন নেতৃত্বে পরিচালিত দেয়ালিকা, ম্যাগাজিনের মতো উদ্যোগও দেখা যায়। কখনও কখনও প্রতিষ্ঠান প্রধান এবং শিক্ষকরাও শিক্ষার্থীদের সাথে এসকল কর্মকাণ্ডে অংশ নিয়ে থাকেন।
অংশগ্রহণের উপকারিতা
যুক্তরাষ্ট্রের ন্যাশনাল লম্বিটুডিনাল স্টাডি অফ অ্যাডোলেসেন্ট হেলথ পরিচালিত স্কুলের শিক্ষার্থীদের উপর একটি সমীক্ষায় দেখা যায় যে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে সত্তর শতাংশ কিশোর কিশোরী কোনো না কোনো সহশিক্ষা কার্যক্রমের সাথে জড়িত।[1]
আরো কিছু গবেষণা দেখায়, সহশিক্ষা কার্যক্রমে জড়িত শিক্ষার্থীদের মধ্যে ঝরে পড়ার হার কম, অপরাধমূলক কর্মকাণ্ডের সম্ভাবনাও বেশ কম এবং উচ্চতর শিক্ষাক্ষেত্রে সাফল্যের জন্য প্রয়োজনীয় উপস্থিত। তাছাড়া বিদ্যালয়ের নিয়মিত কাজে সাফল্য ও অর্জনের হারও এদের ভেতর বেশি। উল্লেখ্য এর সবথেকে ভালো সুফল হলো পারস্পরিক যোগাযোগ এবং সম্পর্কের ক্ষেত্রে আরও দক্ষ করে তোলা এবং শিক্ষার্থীদের মধ্যে অসামাজিক আচরণের প্রবণতা কমানো।[2][3]
বিদ্যালয়ের সহশিক্ষা সংগঠনে এবং তার কার্যক্রমে জড়িত থাকা বিকাশমান প্রজন্মের জন্য বেশ উপকারী। উদাহরণস্বরূপ, বিদ্যালয়ের সহশিক্ষা সংগঠনগুলো নতুন সম্পর্ক তৈরি এবং বাড়তি জীবনমুখী শিক্ষার জন্য একটি ভালো প্লাটফর্ম তৈরি করতে পারে, যা একাধিক শিক্ষার্থী দলের ওপর ইতোমধ্যে পরিচালিত গবেষণায় নিশ্চিত হওয়া গেছে। সহশিক্ষা কার্যক্রমের সাথে জড়িত প্রতিবন্ধী শিক্ষার্থীদের ওপর পরিচালিত গবেষণা থেকে জানা যায় যে তাদের সক্রিয় বন্ধুদল সহশিক্ষা কার্যক্রমে জড়িত না থাকাদের তুলনায় অনেক বড়।[4] জাতিগতভাবে সংখ্যালঘু এবং অভিবাসী কিশোর-কিশোরীদের সাথে একই রকম গবেষণায় এর প্রমাণ পাওয়া গেছে যে, প্রথম এবং দ্বিতীয় প্রজন্মের সংখ্যালঘু কিশোর-কিশোরীরা তুলনামূলকভাবে কম বন্ধুবৎসল ছিল এবং তাদের সম্পর্কে জড়িত হবার প্রবণতাও কম। সেক্ষেত্রে সহশিক্ষা কার্যক্রম সামাজিকীকরণকে দ্রুত ও বেগবান করেছে।[5] এভাবে পাঠ্যক্রমের বাইরের কার্যকলাপে জড়িত থাকা শিক্ষার্থীদের বন্ধুত্ব তৈরির সুযোগ বাড়িয়ে দেয়। এছাড়াও, সহশিক্ষা কার্যক্রম পরিবারের কর্মজীবী সদস্যদের ব্যস্ত থাকাকালীন তাদের সন্তানদের একটি নিরাপদ পরিবেশ সরবরাহ করতে পারে।[6] এটি পিতামাতাকে সমস্ত কাজের পর্যাপ্ত সময় পাওয়ার সুযোগ দেয় এবং শিশুকে শিক্ষামূলক বা ক্রীড়া কার্যক্রমে অংশ নেয়ার সুযোগ দেয়। তদুপরি, সহশিক্ষা কার্যক্রম আত্মনিয়ন্ত্রণ ও স্বশিক্ষিত হবার সুযোগ বাড়ায়, তা বিদ্যালয় কিংবা বিদ্যালয়ের বাইরে যেখানেই অনুষ্ঠিত হোক না কেন।[7] তেমনি স্কুল ভিত্তিক সহশিক্ষা কার্যক্রম জড়িত কিশোরীরা তুলনামূলকভাবে বেশি আত্ম-সম্মানের অধিকারী হয়।[8] সামগ্রিক গবেষণা থেকে এর পর্যাপ্ত প্রমাণ পাওয়া যায় যে, ক্রীড়া, ক্লাব কিংবা বিদ্যালয়ভিত্তিক অনুষ্ঠান - যেকোনো সহশিক্ষা কার্যক্রমের সাথে জড়িত থাকাই অংশগ্রহণকারীদের ওপর ইতিবাচক প্রভাব রাখে।
মূল দায়িত্বসমূহ
- সহশিক্ষা ক্যালেন্ডার পরিচালনা করা
- সহশিক্ষা ক্রিয়াকলাপগুলিতে শিক্ষার্থীর ফলাফল সম্পর্কে প্রতিবেদন প্রকাশ
- সহশিক্ষা সংগঠনের কর্মীবাহিনী পরিচালনা
- যথাযথ সময়ে সহশিক্ষা কার্যক্রমের উপাত্ত সংগ্রহ, প্রতিবেদন প্রকাশ এবং বিশ্লেষণ
- শিক্ষার্থী তথ্য ভাণ্ডার এরসাথে দ্বিমুখী যোগাযোগ নিশ্চিতকরণ
- প্রয়োজনে আধুনিক বহনযোগ্য ডিভাইসের মাধ্যমে কার্যকর কর্মপরিচালনা নিশ্চিতকরণ
- শিক্ষার্থী এবং অভিভাবকদের সাথে এককভাবে সহশিক্ষা তথ্যে বিনিময় নিশ্চিতকরণ
তথ্যসূত্র
- Feldman, Amy (২০০৫)। "The Role of School-Based Extracurricular Activities in Adolescent Development: A Comprehensive Review and Future Directions"। Review of Educational Research। 75 (2): 159–210। ডিওআই:10.3102/00346543075002159।
- Eccles, Jacquelynne; Barber, Bonnie; Stone, Margaret; Hunt, James (২০০৩)। "Extracurricular Activities and Adolescent Development"। Journal of Social Issues। 59 (4): 865–889। ডিওআই:10.1046/j.0022-4537.2003.00095.x।
- Mahoney, Joseph (২০০০)। "School Extracurricular Activity Participation as a Moderator in the Development of Antisocial Patterns" (পিডিএফ)। Child Development। 71 (2): 502–516। ডিওআই:10.1111/1467-8624.00160। পিএমআইডি 10834480। সংগ্রহের তারিখ ২৭ এপ্রিল ২০১৬।
- Pence, A. R., & Dymond, S. K. (2015). Extracurricular School Clubs: A Time for Fun and Learning. Teaching Exceptional Children, 47(5), 281-288. doi:10.1177/0040059915580029
- Cherng, H. S., Turney, K., & Kao, G. (2014). Less Socially Engaged? Participation in Friendship and Extracurricular Activities Among Racial/Ethnic Minority and Immigrant Adolescents. Teachers College Record, 116(3), 1-28.
- "Benefits for Youth, Families, & Communities | Youth.gov"। youth.gov। সংগ্রহের তারিখ ২০২০-০৪-১৫।
- Guèvremont, A., Findlay, L., & Kohen, D. (2014). Organized Extracurricular Activities: Are In-School and Out-of-School Activities Associated With Different Outcomes for Canadian Youth?. Journal of School Health, 84(5), 317-325. doi:10.1111/josh.12154.
- Kort-Butler, L., & Hagewen, K. J. (2011). School-based extracurricular activity involvement and adolescent self-esteem: A growth-curve analysis. Journal of Youth and Adolescence, 40(5), 568-81.