সহবিবর্তন

জীববিজ্ঞানের ভাষায়, যখন দুই বা ততোধিক প্রজাতি একে অপরের বিবর্তনে ভূমিকা রাখে, তখন তাকে সহবিবর্তন বলে।

পরাগায়ণকারী ওয়াস্প  Dasyscolia ciliata অযৌন বংশবিস্তারে Ophrys speculum নামক ফুলের পরাগায়ণ ঘটাচ্ছে। 

বিজ্ঞানী চার্লস ডারউইন সপুষ্পক উদ্ভিদকীটের মধ্যে বিবর্তনীয় সম্পর্কের কথা তার রচনা অন দ্য অরিজিন অব স্পিসিস (১৮৫৯) বইটিতে উল্লেখ করেছিলেন। ১৯৬৪ সালে  পল আর. এরলিখ এবং পিটার এইচ. রাভেন সহবিবর্তন ব্যাপারটি নিয়ে আলোচনা করেন। তত্ত্বীয়গতভাবে বর্তমানে সহবিবর্তনের ধারণা সুগঠিত এবং সুস্পষ্টভাবে প্রধান বিবর্তনীয় পরিবর্তনে সহবিবর্তনের ভূমিকা দেখাতে সক্ষম। [1] সম্প্রতিকালে, ছোঁয়াচে রোগের ব্যপ্তি এবং পরিবেশের বিভিন্ন প্রজাতির সম্প্রদায়ের গঠন এবং ক্রিয়ায় সহবিবর্তনের ভূমিকা দেখানো হয়েছে।[1]

সহবিবর্তন জীববিজ্ঞানের একটি প্রাথমিক ধারণা। অবশ্য কম্পিউটার বিজ্ঞান, সামাজিক বিজ্ঞান এবং জ্যোতির্বিজ্ঞানেও এই ধারণার প্রয়োগ ঘটেছে। 

পারস্পরিক সুবিধা

সহবিবর্তন দুই বা ততোধিক প্রজাতির মধ্যে পারস্পরিক সম্পর্ক গড়ে ওঠার মাধ্যমে ঘটে। এই সম্পর্ক বিভিন্ন ধরনের হতে পারে। [2][3]

সপুষ্পক উদ্ভিদ

সপুষ্পক উদ্ভিদ ফসিল রেকর্ডে অনেকটা হুট করেই এসেছে এবং বৈচিত্র্যতা লাভ করেছে। যা বিজ্ঞানী চার্লস ডারউইনের ভাষায় এই সপউষ্পক উদ্ভিদগুলো কীভাবে এত দ্রুত বিবর্তিত হয়েছে তা   "অসহ্যকরভাবে রহস্যজনক"। তিনি এই সকল উদ্ভিদের বিবর্তন সম্ভাব্য ব্যাখ্যায় সহবিবর্তনের ধারণাকে মাথায় এনেছিলেন। [4] তিনি প্রথমে অন দ্য অরিজিন অব স্পিসিস বইয়ে এই সম্ভাব্যতার কথা বললেও পরবর্তীতে এই ধারণার বিস্তৃত বিবরণ পাওয়া যায় তার ফার্টিলাইজেশন অব অর্কিডস (১৮৬২) রচনায়। [5][6]

কীট ও পতঙ্গপরাগী ফুল

মৌমাছি ফুল থেকে মধুর পাশাপাশি ফুলের পরাগ নিজের পরাগঝুড়িতে সংগ্রহ করছে। 

আধুনিক পতঙ্গপরাগী পুষ্প সমূহ পতঙ্গ ও কীটদের সাথে সহবিবর্তিত হয়েছে। পতঙ্গের সাথে খাপ খাইয়ে নিয়ে এবং নিজেদের পরাগায়ণ নিশ্চিত করতে এসমস্ত ফুল পরাগায়নকারী পতঙ্গদের মধু দিয়ে পুরস্কৃত করে। এভাবে তারা একে অপরের উপকার সাধনের মাধ্যমে সহবিবর্তিত হয়।[7][8] উদ্ভিদ ও প্রজাপতির মধ্যে সহবিবর্তন বর্ণনার মাধ্যমে ১৯৬৪ সালে এই ধারণার শক্তভাবে উপস্থাপন শুরু হয়। [9]

পাখি ও পাখিপরাগী পুষ্প

বেগুনীকণ্ঠী কারিব পাখি ফুল হতে খাদ্য সংগ্রহ করছেr

হামিংবার্ড এবং পাখি পরাগী পুষ্প পরস্পরের মধ্যে সহবিবর্তিত হয়েছে।এই ফুলগুলোর অমৃত এই বিশেষ ধরনের পাখির খাদ্যাভাসের সাথে মিলে। এমনকি এপ্রজাতির ফুলের রঙ ও আকার পাখির দৃষ্টি ক্ষমতা ও শারীরিক সক্ষমতার সাথেও অদ্ভুদভাবে মিলে। এই ধরনের ফুল ফোটার সময়ই হামিংবার্ড পাখির প্রজননকাল। [10]

বাহক ও পরজীবী

পরজীবী ও যৌন প্রজননকারী বাহক

বাহক ও পরজীবী সহবিবর্তন  হল পরজীবী ও এর বাহকের মধ্যে হওয়া সহবিবর্তন।[11] সাধারণভাবে অনেক ধরনের পরজীবী ভাইরাস নিজেদের বাহকদের সাথে সহবিবর্তিত। রাণী মৌমাছি তত্ত্ব [12] মতে যৌন প্রজনন কোন কোন প্রজাতিকে পরজীবী থেকে এগিয়ে থাকতে সাহায্য করে।[13] বাহক যৌন প্রজননের মাধ্যমে বংশবিস্তার করে এবং নতুন প্রজন্মের সেই নির্দিষ্ট পরজীবীর বিরুদ্ধে প্রতিরক্ষা থাকে। ফলশ্রুতিতে পরজীবীরাও বিবর্তিত হয়। [14]

জীববিজ্ঞানের বাইরে

সহবিবর্তন প্রাথমিকভাবে জীববিজ্ঞানের ধারণা হলেও অন্যান্য ক্ষেত্রেও এর ব্যবহার আছে। জীববিজ্ঞানের বাইরে সহবিবর্তনের ধারণা নিম্নোক্ত ক্ষেত্রগুলোতেও পাওয়া যায়।

  • বীজগাণিতিকঃ মেশিন লার্নিঙ্ , গেইম লার্নি ইত্যাদি ক্ষেত্রে বীজগাণিতিক সহবিবর্তনের ধারণার প্রয়োগ আছে। কম্পিউটার গ্রাফিক্স শিল্পী কার্ল সিমস পরাবাস্তব জগতের জীবে সহবিবর্তন এনেছেন।[15]
  • স্থাপত্যবিদ্যায়ঃ ডেনমার্কের স্থাপত্যশিল্পী হেনরিক ভালোর সর্বপ্রথম "তারকা স্থাপত্যনকশা" ধারণার মাধ্যমে স্থাপত্যশিল্পে সহবিবর্তনীয় ধারণার প্রকাশ ঘটান। তার এই কর্মের জন্য তিনি গোল্ডেন লায়ন পদক লাভ করেন। [16]
  • সমাজবিদ্যায়ঃ আন্তর্জাতিক রাজনৈতিক অর্থনীতি ও সমাজবিদ্যায় সহবিবর্তনের মডেলের ধারণা প্রস্তাবিত হয়েছে।[17]

আরো দেখুন

    তথ্যসূত্র

    1. Nuismer, Scott (২০১৭)। Introduction to coevolutionary theory। New York: W.F. Freeman। পৃষ্ঠা 395। আইএসবিএন 978-1-319-10619-5। ৫ নভেম্বর ২০১৮ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২৭ এপ্রিল ২০১৮
    2. Futuyma, D. J. and M. Slatkin (editors) (১৯৮৩)। CoevolutionSinauer Associates। পৃষ্ঠা whole book। আইএসবিএন 0-87893-228-3।CS1 maint: Extra text: authors list (link)
    3. Thompson, J. N. (১৯৯৪)। The Coevolutionary Process। University of Chicago Press। পৃষ্ঠা whole book। আইএসবিএন 0-226-79759-7।
    4. Friedman, W. E. (জানুয়ারি ২০০৯)। "The meaning of Darwin's 'abominable mystery'"Am. J. Bot.96 (1): 5–21। ডিওআই:10.3732/ajb.0800150পিএমআইডি 21628174। ১৫ ডিসেম্বর ২০১৬ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২৭ এপ্রিল ২০১৮
    5. Thompson, John N. (১৯৯৪)। The coevolutionary process। Chicago: University of Chicago Pressআইএসবিএন 0-226-79760-0। সংগ্রহের তারিখ ২০০৯-০৭-২৭
    6. Darwin, Charles (১৮৫৯)। On the Origin of Species (1st সংস্করণ)। London: John Murray। সংগ্রহের তারিখ ২০০৯-০২-০৭
    7. Lunau, Klaus (২০০৪)। "Adaptive radiation and coevolution — pollination biology case studies"Organisms Diversity & Evolution4 (3): 207–224। ডিওআই:10.1016/j.ode.2004.02.002
    8. Pollan, Michael। The Botany of Desire: A Plant's-eye View of the World। Bloomsbury। আইএসবিএন 0-7475-6300-4।
    9. Ehrlich, Paul R.; Raven, Peter H. (১৯৬৪)। "Butterflies and Plants: A Study in Coevolution"Evolution18 (4): 586–608। ডিওআই:10.2307/2406212
    10. Kay, Kathleen M.; Reeves, Patrick A.; Olmstead, Richard G.; Schemske, Douglas W. (২০০৫)। "Rapid speciation and the evolution of hummingbird pollination in neotropical Costus subgenus Costus (Costaceae): evidence from nrDNA ITS and ETS sequences"। American Journal of Botany92 (11): 1899–1910। ডিওআই:10.3732/ajb.92.11.1899পিএমআইডি 21646107
    11. Woolhouse, M. E. J.; Webster, J. P.; Domingo, E.; Charlesworth, B.; Levin, B. R. (ডিসেম্বর ২০০২)। "Biological and biomedical implications of the coevolution of pathogens and their hosts" (পিডিএফ)Nature Genetics32 (4): 569–77। ডিওআই:10.1038/ng1202-569পিএমআইডি 12457190
    12. Van Valen, L. (১৯৭৩)। "A New Evolutionary Law"। Evolutionary Theory1: 1–30। cited in: The Red Queen Principle
    13. Carroll, Lewis (১৮৭৫) [1871]। Through the Looking-glass: And what Alice Found There। Macmillan। পৃষ্ঠা 42। it takes all the running you can do, to keep in the same place.
    14. Rabajante, J.; ও অন্যান্য (২০১৫)। "Red Queen dynamics in multi-host and multi-parasite interaction system"Scientific Reports5: 10004। ডিওআই:10.1038/srep10004পিএমআইডি 25899168পিএমসি 4405699বিবকোড:2015NatSR...510004R
    15. "Evolved Virtual Creatures"www.karlsims.com। সংগ্রহের তারিখ ২০১৮-০৫-১৬
    16. "About CO-EVOLUTION - Danish Architecture Centre"। ২০১৫-১১-২০। Archived from the original on ২০১৫-১১-২০। সংগ্রহের তারিখ ২০১৮-০৫-১৬
    17. Norgaard, Richard B. (২০০৬-০৫-১৮)। Development Betrayed: The End of Progress and a Co-Evolutionary Revisioning of the Future (ইংরেজি ভাষায়)। Routledge। আইএসবিএন 9781134915644।
    This article is issued from Wikipedia. The text is licensed under Creative Commons - Attribution - Sharealike. Additional terms may apply for the media files.