সর্বশেষ সাধারণ পূর্বপুরুষ
জীববিজ্ঞানের পরিভাষায় সাম্প্রতিক সাধারণ পূর্বপুরুষ বা most recent common ancestor (MRCA, শেষ সাধারণ পূর্বপুরুষ বা last common ancestor (LCA), অথবা সাধারণ পূর্বপুরুষ concestor[1]) দ্বারা সবচেয়ে সাম্প্রতিক জীবের সমষ্টিগত দলকে বোঝায় যাদের থেকেই অন্যান্য সকল জীব সরাসরি বংশগতিপ্রাপ্ত হয়েছে। এই একই শব্দ সমষ্টিবদ্ধ জিনের (হ্যাপ্লোটাইপ) পূর্বপুরুষের তথ্যসূত্র (পূর্বপুরুষ জীব অর্থে নয়) বোঝাতে ব্যবহার করা হয়। সর্বশেষ সাধারণ পূর্বপুরুষ একদল জীবকে বোঝাতে পারে, যারা কিনা একটি সুগঠিত পেডিগ্রি তালিকাকে নির্দেশ করে। অবশ্য সাধারণভাবে, একটি বড় দলকে পেডিগ্রি তালিকায় ফেলা সহজসাধ্য নয়। কিন্তু একটি ধারণামূলক তালিকা এক্ষেত্রে প্রধান সাহায্যকারী উপাদান।উদাহরণস্বরূপ, সর্বশেষ সাধারণ পূর্বপুরুষের সময়কাল নির্ধারণে ডিএনএ পরীক্ষার ফলাফল এবং মিউটেশন হারের ফলাফল জিনগত জিনেলজির পদ্ধতি বা একটি অজিনগত পদ্ধতি বা গাণিতিক নমুনা অথবা কম্পিউটআর স্টিমুলেশোন প্রক্রিয়ায় গণনা করা হয়েছে। মানুষের সর্বশেষ সাধারণ পূর্বপুরুষ আজো অজানা। তবে নিঃসন্দেহে এর বয়স ওয়াই- এমআরসিএ এবং এমটি-এম আরসিএ অপেক্ষা কম বয়েসী হবে। আনুমানিকভাবে বয়েস ২০ হাজার বছর। অবশ্য এই শেষ পূর্বপুরুষ ৩ হাজার বছর আগেও পৃথিবীর বুকে বিরাজ করতে পারে বলে আনুমানিক গণনায় জানা যায়।[2]
বিবর্তনীয় জীববিজ্ঞান |
---|
নিম্নোক্ত বিষয়ের উপর একটি ধারাবাহিকের অংশ |
শেষ সার্বজনীন সাধারণ পূর্বপুরুষ (The Last Universal Common Ancestor, LUCA) পৃথিবীতে উপলব্ধ্য সকল জীবের সর্বশেষ সাধারণ পূর্বপুরুষ, যা কিনা ৩.৫ থেকে ৩.৮ বিলিয়ন বছর আগে পৃথিবীতে বেঁচে ছিল।[3]
বিভিন্ন প্রজাতির সর্বশেষ সাধারণ পূর্বপুরুষ
সকল জীবের জাতিজনি বা ফাইলোজেনি বর্ণনাকারী প্রকল্পকে "জীবন বৃক্ষ" বা "ট্রি অব লাইফ" বলে আখ্যায়িত করা হয়। এই প্রকল্পে সকল জ্ঞাত প্রজাত্যায়নের সময় হিসেব করা হয়। উদাহরণস্বরূপ, শ্বাপদ বর্গীয় (কুকুর, বিড়াল প্রজাতি) প্রাণিদের সর্বশেষ সাধারণ পূর্বপুরুষ ৪২ মিলিয়ন বছর আগে বেঁচে ছিল বলে আনুমানিক হিসাবের ফলাফল পাওয়া গেছে। [4] ২০০৪ সালে বিজ্ঞানী রিচার্ড ডকিন্স তার "দি এনসেস্টর টেইল" এ মান বিবর্তনের দৃষ্টিভঙ্গির আলোকে এই ধারণআর বর্ণনা করেন। তিনি মানব বিবর্তনের কালপঞ্জিতে মানুষের শেষ সাধারণ পূর্বপুরুষের একটি তালিকা করেন। এই তালিকা বয়স বৃদ্ধি, হোমিনিন ( মানব-শিম্পাঞ্জি), হোমিনাইন (মানব-গরিলা), হোমিনিড (মানব-ওরাংওটাং), হোমিনয়েড (মানব-গিবন) সহ সর্বমোট ৪০টি ধাপ এই তালিকায় অন্তর্ভুক্ত করেন।এই ধাপগুলো শেষ সার্বজনীন পূর্বপুরুষ (মানব-ব্যাক্টেরিয়া)তে গিয়ে থামে।
একক জিনেটিক মার্কার ব্যবহার করে একটি জনসংখ্যার শেষ সাধারণ পূর্বপুরুষ নির্ধারণ
একটি সমগ্র জীবের সাধারণ পূর্বপুরুষ নির্ণয় না করে জীবের নির্দিষ্ট জিনসমষ্টির (হ্যাপ্লোটাইপ) সাধারণ পূর্বপুরুষ নির্ণয় করা সম্ভব। কোয়ালেসেন্ট তত্ত্ব একটি সম্ভাব্য নমুনা বর্ণনা করে যা দ্বারা একটি জনসংখ্যার ইতিহাসে কীভাবে বংশপরম্পরা জিন পর্যায়ে চলে এসেছে তা একক জিনগত মার্কার ব্যবহার করে নির্ণয় করা সম্ভব।
পিতৃগোত্রজ ও মাতৃগোত্রজ সর্বশেষ পূর্বপুরুষ
মাইটোকন্ড্রিয়াল ডিএনএ (mtDNA) যৌন মিশ্রণে প্রায় কোনরূপ পরিবর্তিত হয় না বললেই চলে। নিউলিয়ার ডিএনএন মেন্ডেলীয় বংশগতির সূত্র মোতাবেক বিভিন্ন ভাবে বংশগতির ধারার বাহক হয়। তাই, মাইটোকন্ড্রিয়াল ডিএনএ প্রায় অপরিবর্তিতই রয়ে যায় বলা যায়। অতএব এই ডিএনএ ব্যবহার করে মাতৃগোত্রজ বংশসূত্র বা মাইটোকন্ড্রিয়াল ইভ (আফ্রিকান ইভ নামেও পরিচিত) বের করা সম্ভব। এই আফ্রিকান ইভ হল, মাইটোকন্ড্রিয়াল ডিএনএর দিক দিয়ে মানব সম্প্রদায়ের সর্বশেষ সাধারণ পূর্বপুরুষ।
ঠিক একইভাবে, পুরুষদের মধ্যে প্রাপ্ত ওয়াই ক্রোমোজোম দিয়ে সর্বশেষ সাধারণ পূর্বপুরুষ ওয়াই-ক্রোমোজোমাল এ্যাডাম অব্দি পৌছানো সম্ভব। যেটা কিনা পিতৃগোত্রজ সর্বশেষ সাধারণ পূর্বপুরুষ।
বিভিন ডিএনএ পরীক্ষা দ্বারা এটি নিশ্চিত হওয়া গেছে যে, মাইটোকন্ড্রিয়াল ইভ ২০ হাজার বছর আগেও পৃথিবীতে বেঁচে ছিলো। অপরদিকে ওয়াই ক্রোমোজোমাল এডাম ২৩৭,০০০ এবং ৫৮১,০০০ বছর আগে পৃথিবীতে বেঁচে ছিলেন। ২০১৩ সালে প্রকাশিত একটি গবেষণা প্রবন্ধ ৯৫ শতাংশ আত্মবিশ্বাসের সাথে নিশ্চিত করে, কোন ধরনের গাঠনিক ভুল এই তথ্যে নেই।[5][6]
অতএব, যৌক্তিকভাবেই মানব সম্প্রদায়ের সাধারণ পূর্বপুরুষকে নিদানপক্ষেই এই দুই সাধারন পূর্বপুরুষের চেয়ে আরো সাম্প্রতিক সময়ে বেঁচে থাকার কথা ওঠে।[7][8]
আরো দেখুন
- জাতিজনি বৃক্ষ
- প্রকৃতি সময়রেখা
- মানব বিবর্তনের কালপঞ্জি
- জীবনের বিবর্তনিক ইতিহাসের কালক্রম
তথ্যসূত্র
- MRCA is now more frequently for common ancestors of subgroups within a species, and LCA for the common ancestor between two species. The term "concestor" (coined by Nicky Warren) is used by Richard Dawkins in The Ancestor's Tale (2004).
- Rohde DL, Olson S, Chang JT; Olson (সেপ্টেম্বর ২০০৪)। "Modelling the recent common ancestry of all living humans" (পিডিএফ): 562–66। ডিওআই:10.1038/nature02842। পিএমআইডি 15457259। উদ্ধৃতি শৈলী রক্ষণাবেক্ষণ: একাধিক নাম: লেখকগণের তালিকা (link) calculate an age of 2,000 to 4,000 years based on a non-genetic, mathematical model that assumes random mating although it has taken into account important aspects of human population substructure such as assortative mating and historical geographical constraints on interbreeding. This range is consistent with the age of 3,100 years calculated for the MRCA of the JC virus, an ubiquitous human polyomavirus usually transmitted from parents to children by L. A. Shackelton et al., "JC Virus Evolution and Its Association with Human Populations" Journal of Virology, Vol. 80, No. 20 (Oct. 2006), ডিওআই:10.1128/JVI.00441-06.
- Doolittle WF (ফেব্রুয়ারি ২০০০)। "Uprooting the tree of life": 90–95। ডিওআই:10.1038/scientificamerican0200-90। পিএমআইডি 10710791।. Glansdorff N, Xu Y, Labedan B (২০০৮)। "The last universal common ancestor: emergence, constitution and genetic legacy of an elusive forerunner": 29। ডিওআই:10.1186/1745-6150-3-29। পিএমআইডি 18613974। পিএমসি 2478661 ।. The composition of the LUCA is not directly accessible as a fossil, but can be studied by comparing the genomes of its descendents, organisms living today. By this means, a 2016 study identified a set of 355 genes inferred to have been present in the LUCA. Wade, Nicholas (২৫ জুলাই ২০১৬)। "Meet Luca, the Ancestor of All Living Things"। New York Times। সংগ্রহের তারিখ ২৫ জুলাই ২০১৬।
- Eizirik, E.; Murphy, W.J.; Koepfli, K.P.; Johnson, W.E.; Dragoo, J.W.; O'Brien, S.J. (২০১০)। "Pattern and timing of the diversification of the mammalian order Carnivora inferred from multiple nuclear gene sequences"। Molecular Phylogenetics and Evolution। 56: 49–63। ডিওআই:10.1016/j.ympev.2010.01.033। পিএমআইডি 20138220।
- Mendez, Fernando; Krahn, Thomas; Schrack, Bonnie; Krahn, Astrid-Maria; Veeramah, Krishna; Woerner, August; Fomine, Forka Leypey Mathew; Bradman, Neil; Thomas, Mark; Karafet, Tatiana M.; Hammer, Michael F. (৭ মার্চ ২০১৩)। "An African American paternal lineage adds an extremely ancient root to the human Y chromosome phylogenetic tree" (পিডিএফ)। American Journal of Human Genetics। 92 (3): 454–59। ডিওআই:10.1016/j.ajhg.2013.02.002। পিএমআইডি 23453668। পিএমসি 3591855 । ২৪ সেপ্টেম্বর ২০১৯ তারিখে মূল (পিডিএফ) থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ১২ আগস্ট ২০১৮। (primary source)
- Barrass, Colin (৬ মার্চ ২০১৩)। "The father of all men is 340,000 years old"। New Scientist। সংগ্রহের তারিখ ১৩ মার্চ ২০১৩।
- Dawkins, Richard (২০০৪)। The Ancestor's Tale, A Pilgrimage to the Dawn of Life। Boston: Houghton Mifflin Company। আইএসবিএন 0-618-00583-8।
- Notions such as Mitochondrial Eve and Y-chromosomal Adam yield common ancestors that are more ancient than for all living humans (Hartwell 2004:539).