সম্মেদ শিখর
সম্মেদ শিখর বা সম্মেত শিখর বা শিখরজি বা পরেশনাথ পাহাড় বা মারাং বুরু ভারতের ঝাড়খণ্ড রাজ্যের সর্বোচ্চ পাহাড়। এই পাহাড় জৈন ধর্মাবলম্বী মানুষদের অন্যতম প্রধান একটি তীর্থস্থান।[1] জৈনদের চব্বিশ জন তীর্থঙ্করের মধ্যে কুড়িজন এই স্থানে মোক্ষলাভ করেছিলেন বলে বিশ্বাস করা হয়।[2][3]
সম্মেদ শিখর | |
---|---|
সম্মেদ শিখর | |
স্থানাঙ্ক: | ২৩.৯৬১১° উত্তর ৮৬.১৩৭১° পূর্ব |
নাম | |
অন্য নাম: | শিখরজি পরেশনাথ পাহাড় মারাং বুরু |
দেবনাগরী: | शिखरजी |
অবস্থান | |
দেশ: | ভারত |
জেলা: | গিরিডি |
উচ্চতা: | ১,৩৫০ মি (৪,৪২৯ ফু) |
নামকরণ
সম্মেদ বা সম্মেত শিখরের অর্থ সমাধি শিখর কারণ এই পাহাড়ে চব্বিশজন তীর্থঙ্করের মধ্যে কুড়িজন সমাধির মাধ্যমে মোক্ষলাভ করেছিলেন বলে জৈন মতে বিশ্বাস করা হয়। জৈন সম্প্রদায়ের মধ্যে সম্মেদ ও সম্মেত উভয় নাম প্রচলিত রয়েছে। শ্বেতাম্বর জৈন ঐতিহ্যে অর্ধ প্রাকৃত মাগধী ভাষায় সম্মেত এবং দিগম্বর জৈন ঐতিহ্যে শৌরসেনী প্রাকৃত ভাষায় সম্মেদ শব্দটি ব্যবহৃত হয়।[4] এছাড়া তেইশতম তীর্থঙ্কর পার্শ্বনাথের এই পাহাড়ে মোক্ষলাভ করেছিলেন বলে এই পাহাড়কে পার্শ্বনাথ বা পরেশনাথ পাহাড়ও বলা হয়ে থাকে। সাঁওতাল সম্প্রদায়ের নিকট এই পাহাড় মারাং বুরু হিসেবে পূজিত হয়।
গ্রন্থে উল্লেখ
মল্লিনাথ এই পাহাড়ে মোক্ষলাভ করেছিলেন বলে জৈনধর্মের বারোটি প্রধান গ্রন্থের মধ্যে অন্যতম জ্ঞাতৃধর্মকথা নামক গ্রন্থে উল্লেখ করা হয়েছে। দ্বাদশ শতাব্দীতে রচিত পার্শ্বনাথের জীবনী পার্শ্বনাথচরিত গ্রন্থেও এই পাহাড়ের উল্লেখ রয়েছে।
কূট
যে স্থানে কোন জৈন সাধক মোক্ষলাভ করেছিলেন বলে মনে করা হয় সেই স্থানে মার্বেল পাথরের তৈরী চড়া বিশিষ্ট মন্দিরকে কূট বা দেহরী বা টঙ্ক বলা হয়ে থাকে। সম্মেদ শিখরের বিভিন্ন চূড়ায় প্রায় নয় কিলোমিটার বিস্তৃতিতে একত্রিশটি কূট অবস্থিত। গণধর ইন্দ্রভূতি গৌতম স্বামীর কূটের পূর্বদিকে উনিশটি এবং পশ্চিমদিকে এগারোটি কূট বর্তমান। চব্বিশজন তীর্থঙ্কর, দুইজন গণধর এবং চারজন শাশ্বত জীনের উদ্দেশ্যে ত্রিশটি কূট নির্মিত হয়। এই পাহাড়ে অবস্থিত জল মন্দিরকে একটি কূট হিসেবে বিবাচনা করা হয়ে থাকে। পূর্বদিকে সবচেয়ে শেষ প্রান্তে চন্দ্রপ্রভের জন্য নির্মিত ললিত কূট এবং পশ্চিমদিকে সবচেয়ে শেষ প্রান্তে পার্শ্বনাথের জন্য নির্মিত সুবর্ণভদ্র কূট অবস্থি্ত। এই পাহাড়ে চব্বিশজন তীর্থঙ্করের জন্য কূট নির্মিত হলেও তাদের মধ্যে আদিনাথ, বাসুপূজ্য নেমিনাথ ও মহাবীর এই পাহাড়ে মোক্ষ লাভ করেননি। জল মন্দির ব্যতিরেকে প্রতিটি কূটে সাধককদের মূর্তি না থেকে শুধুমাত্র চরণ পাদুকা উপস্থিত রয়েছে।
শাশ্বত জীনদের কূটের তালিকা
সম্মেদ শিখরে যে চার জন শাশ্বত জীনের উদ্দেশ্যে কূট নির্মিত হয়েছে, তার তালিকা নিম্নে প্রদত্ত হল[4]-
শাশ্বত জীন | প্রতিষ্ঠাকাল (খ্রিষ্টাব্দ) | কূটের চিত্র | চরণ পাদুকার চিত্র | সংক্ষিপ্ত বর্ণনা |
---|---|---|---|---|
ঋষভানন | ১৮৬৮-১৮৭৫ | পূর্বমুখী কূট | ||
চন্দ্রানন | ১৮৬৮-১৮৭৫ | পূর্বমুখী কূট | ||
বর্ধমান | ১৮৬৮-১৮৭৫ | পূর্বমুখী কূট | ||
বারিসেন | ১৮৬৮-১৮৭৫ | পূর্বমুখী কূট |
সম্মেদ শিখরে মোক্ষলাভপ্রাপ্ত তীর্থঙ্করদের কূটের তালিকা
সম্মেদ শিখরে যে সকল তীর্থঙ্কর মোক্ষলাভ করেন, তাদের উদ্দেশ্যে নির্মিত কূটগুলির তালিকা নিম্নে প্রদত্ত হল[4]-
কূট | তীর্থঙ্কর | প্রতিষ্ঠাকাল (খ্রিষ্টাব্দ) | কূটের চিত্র | চরণ পাদুকার চিত্র | সংক্ষিপ্ত বর্ণনা |
---|---|---|---|---|---|
সিদ্ধাবর কূট | অজিতনাথ | ? | উত্তরমুখী কূট | ||
ধবল কূট | সম্ভবনাথ | ১৭৬৮ | পূর্বমুখী কূট | ||
আনন্দ কূট | অভিনন্দননাথ | ১৭৬৮ | পূর্বমুখী কূট, ২০০৯ খ্রিষ্টাব্দে বজ্রপাতে বিধ্বস্ত হওয়ার পর নতুন করে নির্মাণ করা হয়। | ||
অবিচল কূট | সুমতিনাথ | ১৭৬৮ | পূর্বমুখী কূট | ||
মোহন কূট | পদ্মপ্রভ | ১৭৬৮ | দক্ষিণমুখী কূট, দ্বারে দুই দ্বারপালের মূর্তি বর্তমান। | ||
প্রভাস কূট | সুপার্শ্বনাথ | ? | পূর্বমুখী কূট | ||
ললিত কূট | চন্দ্রপ্রভ | ১৭৬৮ | পশ্চিমমুখী কূটটি একটি বৃহদাকার গম্বুজাকৃতি স্থাপত্য দ্বারা বেষ্টিত। | ||
সুপ্রভ কূট | পুষ্পদন্ত | ১৭৬৮ | ২০০৯ খ্রিষ্টাব্দে বজ্রপাতে বিধ্বস্ত হওয়ার পর নতুন করে নির্মাণ করা হয়। | ||
বিদ্যুৎপ্রভ কূট | শীতলনাথ | ? | পূর্বমুখী কূট | ||
সঙ্কুল কূট | শ্রেয়ংসনাথ | ১৭৬৮ | দক্ষিণমুখী কূট | ||
সুবীর কূট | বিমলনাথ | ? | পূর্বমুখী কূট | ||
স্বয়ম্প্রভু কূট | অনন্তনাথ | ১৭৬৮ | দক্ষিণমুখী কূট | ||
সুদত্তাবর কূট | ধর্মনাথ | ? | পশ্চিমমুখী কূট | ||
কুণ্ডপ্রভ কূট | শান্তিনাথ | ? | পূর্বমুখী কূট, দ্বারে দুই দ্বারপালের মূর্তি বর্তমান। | ||
জ্ঞানধর কূট | কুন্থুনাথ | ১৭৬৮ | পূর্বমুখী কূট | ||
নাটক কূট | অরনাথ | ১৭৬৮ | দক্ষিণমুখী কূট | ||
সম্বল কূট | মল্লিনাথ | ১৭৬৮ | দক্ষিণমুখী কূট | ||
নির্ঝর কূট | মুনিসুব্রত | ১৭৬৮ | দক্ষিণমুখী কূট | ||
মিত্রধর কূট | নমিনাথ | ? | দক্ষিণমুখী কূট | ||
সুবর্ণভদ্র কূট | পার্শ্বনাথ | ? | পূর্বমুখী কূটটি পাহাড়ের সবচেয়ে সর্বোচ্চ শিখরে অবস্থিত। এই কূটটিকে ঘিরে একটি বৃহদাকার মন্দির অবস্থিত। |
অন্যান্য তীর্থঙ্করদের কূটের তালিকা
সম্মেদ শিখরে যে সকল তীর্থঙ্কর মোক্ষলাভ করেননি, তাদের উদ্দেশ্যে নির্মিত কূটগুলির তালিকা নিম্নে প্রদত্ত হল[4]-
তীর্থঙ্কর | প্রতিষ্ঠাকাল (খ্রিষ্টাব্দ) | কূটের চিত্র | চরণ পাদুকার চিত্র | সংক্ষিপ্ত বর্ণনা |
---|---|---|---|---|
আদিনাথ | ১৮৬৮-১৮৭৫ | দক্ষিণমুখী কূট | ||
বাসুপূজ্য | ১৮৬৮-১৮৭৫ | পশ্চিমমুখী কূট | ||
নেমিনাথ | ১৮৬৮-১৮৭৫ | উত্তরমুখী কূট | ||
মহাবীর | ১৮৬৮-১৮৭৫ | পশ্চিমমুখী কূট |
গণধরদের কূটের তালিকা
সম্মেদ শিখরে যে দুই জন গণধরের উদ্দেশ্যে কূট নির্মিত হয়েছে, তার তালিকা নিম্নে প্রদত্ত হল[4]-
গণধর | প্রতিষ্ঠাকাল (খ্রিষ্টাব্দ) | কূটের চিত্র | চরণ পাদুকার চিত্র | সংক্ষিপ্ত বর্ণনা |
---|---|---|---|---|
ইন্দ্রভূতি গৌতম | ১৯৬০ | কূটে চব্বিশ জন তীর্থঙ্কর এবং দশ জন গণধরদের পাদুকা চিহ্ন বর্তমান। কূটটি একটি বৃহদাকার গম্বুজাকৃতি স্থাপত্য দ্বারা বেষ্টিত। | ||
শুভস্বামী | ১৮৬৮-১৮৭৫ | পশ্চিমমুখী কূট |
জল মন্দির
সম্মেদ শিখরের দক্ষিণ দিকে জল মন্দির নামক একটি সুন্দর কারুকার্যময় মন্দির বর্তমান। এই মন্দিরের ভেতরে চার দেওয়ালে তীর্থঙ্করদের মূর্তি বর্তমান। মন্দিরের প্রধান উপাস্য বা মূলনায়ক পার্শ্বনাথের মূর্তি মধ্যে, সম্ভবনাথের মূর্তি বামদিকে এবং অভিনন্দননাথের মূর্তি ডানদিকে অবস্থিত। মন্দিরের বাইরেও পার্শ্বনাথের বেশ কিছু মূর্তি অবস্থিত। একটি ছোট ঝর্ণা থেকে জল মন্দিরের তিনদিকে জমা হয়ে একটি জলকুণ্ডের সৃষ্টি করে বলে এই মন্দিরকে জল মন্দির বলা হয়ে থাকে। যদিও এই মন্দিরে কোন চরণ পাদুকা নেই, তবুও এই মন্দিরকে কূটের মর্যাদা দেওয়া হয়ে থাকে।[4]
তথ্যসূত্র
- Jain V. "Hikharji." Herenow4u.net 15 April 2011 Accessed 26 May 2012
- "On a spiritual odyssey – Hindustan Times Travel." ওয়েব্যাক মেশিনে আর্কাইভকৃত ২৪ আগস্ট ২০১২ তারিখে Travel.hindustantimes.com 14 January 2011 Accessed 7 July 2012
- "Indiapedia, Jainism." Hachette UK, 2013 আইএসবিএন ৯৩৫০০৯৭৬৬৪, 9789350097663.
- Official Website of Siddhachalam THE THIRTY TONKS OF SHRI SHIKHARJI by Vivek Jain