সম্মিলিত সংগ্রাম পরিষদ
সম্মিলিত সংগ্রাম পরিষদ ১৯৮৪ সালের ২১ অক্টোবর মুহাম্মদুল্লাহ হাফেজ্জীর নেতৃত্বে প্রতিষ্ঠিত একটি রাজনৈতিক জোট। এই জোটে ১০টি দল যোগদান করেছিল। পরবর্তীতে জোটটির নাম পরিবর্তন করে খেলাফত সংগ্রাম পরিষদ করা হয়। দলটির লক্ষ্য ছিল হুসেইন মুহাম্মদ এরশাদের সামরিক শাসনের অবসান ঘটানো ও খিলাফত প্রতিষ্ঠা করা।
সম্মিলিত সংগ্রাম পরিষদ | |
---|---|
নেতা | মুহাম্মদুল্লাহ হাফেজ্জী |
প্রতিষ্ঠা | ২১ অক্টোবর ১৯৮৪ |
সদর দপ্তর | ঢাকা, বাংলাদেশ |
মতাদর্শ | খিলাফত প্রতিষ্ঠা |
আন্তর্জাতিক অধিভুক্তি | না |
লক্ষ্য
সম্মিলিত সংগ্রাম পরিষদের গঠন উপলক্ষ্যে জাতীয় প্রেস ক্লাবে আয়ােজিত সাংবাদিক সম্মেলনে মুহাম্মদুল্লাহ হাফেজ্জী দলটির লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য তুলে ধরেন। দলটির চূড়ান্ত লক্ষ্য ছিল,
- আল্লাহ ও রাসূলের কুরআন–সুন্নাহ ভিত্তিক খিলাফত প্রতিষ্ঠা করা।
আশু লক্ষ্য ছিল,
- অনতিবিলম্বে সামরিক শাসনের অবসান ঘটানাে এবং হক্কানি ওলামায়ে কেরাম, ইসলামি চিন্তাবিদ ও দ্বীনদার বুদ্ধিজীবীদের নিয়ে একটি বিপ্লবী সরকার গঠন।
- বাংলাদেশকে ইসলামি প্রজাতন্ত্র ঘােষণা।
- হক্কানি ওলামায়ে কেরাম, ইসলামি বিশেষজ্ঞদের দিয়ে খসড়া ইসলামি শাসনতন্ত্র প্রণয়ন, শাসনতন্ত্রের উপর জনমত গ্রহণ ও তার ভিত্তিতে নির্বাচন অনুষ্ঠান।[1][2]
দল ও উল্লেখযোগ্য নেতা
সম্মিলিত সংগ্রাম পরিষদের অন্তর্ভুক্ত দল সমূহ:[3]
- বাংলাদেশ খেলাফত আন্দোলন
- জাতীয় মুক্তি আন্দোলন
- ইসলামিক ডেমোক্রেটিক লীগ
- জমিয়তে উলামায়ে ইসলাম বাংলাদেশ
- নেজামে ইসলাম পার্টি
- খেলাফতে রব্বানী পার্টি
- ইসলামী যুব শিবির
- ইসলামী যুব আন্দোলন
- খাদেমুল ইসলাম জামায়াত
- মজলিসে তাহাফফুজে খতমে নবুয়ত
সম্মিলিত সংগ্রাম পরিষদের উল্লেখযোগ্য নেতাদের মধ্যে রয়েছেন: মুহাম্মদুল্লাহ হাফেজ্জী, মোহম্মদ আব্দুল জলিল, আবদুর রহিম, আশরাফ আলী, আবুল কাসেম, সদরউদ্দিন মুহাম্মাদ হোসেন, কুরবান আলী, আজিজুল হক, ফজলুল হক আমিনী, আহমদ আবদুল কাদের, সুলতান উদ্দিন প্রমুখ।[1]
ইতিহাস
পরিষদ গঠনের পর ১৯৮৪ সালের ২৬ অক্টোবর দেশব্যাপী দোয়া দিবস ঘোষিত হয়। এই দিন বায়তুল মোকাররম জাতীয় মসজিদ চত্বরে আয়ােজিত দোয়া সমাবেশে সামরিক আইন প্রত্যাহার, বাংলাদেশকে ইসলামি প্রজাতন্ত্র ঘোষণা ও ইসলামি শাসনতন্ত্র প্রণয়ন সম্বলিত ৩ দফা দাবি জানানাে হয়। ১৯৮৫ সালের ২১ মার্চে অনুষ্ঠিতব্য গণভােটের বিরুদ্ধে পরিষদ একটি সমাবেশ আহ্বান করে, যা পুলিশের হস্তক্ষেপে বানচাল হয়ে যায়। এসময় মুহাম্মদুল্লাহ হাফেজ্জীকে সমাবেশ যেতে বাঁধা ও গৃহবন্দী করা হয়। মোহাম্মদ আব্দুল জলিলকেও গৃহবন্দী করা হয়। পরিষদের নেতা আব্দুর রহিম, হামিদুল্লাহ সহ প্রমুখ দৈহিকভাবে পুলিশি নির্যাতনের শিকার হন। অনেক নেতাকে গ্রেফতার করা হয়।[2]
জাতীয় সমাবেশ
১৯৮৫ সালের ২১ জানুয়ারি ঢাকার মানিক মিয়া এভিনিউতে পরিষদের উদ্যোগে জাতীয় সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়। সমাবেশে পরিষদ ঘোষিত ৩ দফা দাবির পক্ষে গণআন্দোলন গড়ে তোলার হুমকি দেওয়া হয়। সমাবেশে নেতারা মুহাম্মদুল্লাহ হাফেজ্জীর হাতে ক্ষমতা হস্তান্তর করে দেশকে জাতীয় বিপর্যয় থেকে রক্ষা করার আহ্বান জানান। হাফেজ্জী তার বক্তৃতায় অঙ্গীকার করেন, তার নেতৃত্বে খেলাফত কায়েম হলে আর কোনোদিন সামরিক শাসন আসবে না।[4]
সমালোচনা
১৯৮৪ সালের ১১ অক্টোবর মানিক মিয়া এভিনিউতে জনদলের একটি জনসভায় হুসেইন মুহাম্মদ এরশাদ ইসলামপন্থীদের ঐক্যবদ্ধ হওয়ার আহ্বান জানান। তার এই ঘোষণার দশদিন পর ২১ অক্টোবর সংগ্রাম পরিষদ গঠিত হয়। ফলশ্রুতিতে রাজনৈতিক মহলে গুঞ্জরণ ওঠে এরশাদের আহ্বানে বিরােধীদলের আন্দোলনকে বিভক্ত করার জন্য এই পরিষদ গঠন করা হয়েছে। এ ব্যাপারে সাংবাদিক সম্মেলনে প্রশ্ন করা হলে পরিষদের অন্যতম নেতা আব্দুর রহিম তা সঠিক নয় বলে মন্তব্য করেন।[2]
আরও দেখুন
তথ্যসূত্র
উদ্ধৃতি
- নাসীম আরাফাত ২০১৬, পৃ. ৩০০।
- পাটওয়ারী ২০০২, পৃ. ৯৬।
- নাসীম আরাফাত ২০১৬, পৃ. ২৯৯।
- পাটওয়ারী ২০০২, পৃ. ৯৭।
গ্রন্থপঞ্জি
- নাসীম আরাফাত, মাওলানা (২০১৬)। আমীরে শরীয়ত মাওলানা মুহাম্মদুল্লাহ হাফেজ্জী হুজুর রহ. (২য় সংস্করণ)। ১১/১, ইসলামী টাওয়ার, বাংলাবাজার, ঢাকা ১১০০: মাকতাবাতুল হুদা আল ইসলামিয়া।
- পাটওয়ারী, মোঃ এনায়েত উল্যা (২০০২)। স্বৈরাচার বিরোধী আন্দোলনে ইসলাম পন্থীদের ভূমিকা। বড়মগবাজার, ঢাকা: প্রীতি প্রকাশন। পৃষ্ঠা ৯৬–৯৭। আইএসবিএন 9845811949।
আরও পড়ুন
- পাটওয়ারী, মো. এনায়েত উল্যা (২০১৪)। বাংলাদেশে ইসলামী রাজনীতির তিন দশক (পিডিএফ)। ৪২/২ ইস্কাটন গার্ডেন, ঢাকা-১০০০: অসডার পাবলিকেশন্স। পৃষ্ঠা ২৪৯–২৫১। আইএসবিএন 978-984-90583-0-4।