সমর্থক
সমর্থক (বাংলা উচ্চারণ: [সমর্থক] (শুনুন)) হচ্ছেন কোন একজন ব্যক্তি, যিনি কোন কিছুকে একনিষ্ঠভাবে পছন্দ কিংবা কোন ব্যক্তির শক্তিমত্তা বা আদর্শে বিশ্বাস করেন। দেশীয় বা আন্তর্জাতিক পর্যায়ের বিশেষভাবে জনপ্রিয় ব্যক্তি, সঙ্গীতের ব্যাণ্ড কিংবা খেলাধুলায় কোন দলকে সমর্থন করা এর উদাহরণ। সমর্থকেরা একত্রিত হয়ে সমর্থক গোষ্ঠী বা ফ্যান ক্লাব গড়ে তোলেন এবং প্রয়োজনে অন্যান্য সমর্থকদের নিয়ে সভা-সমাবেশেরও আয়োজন করতে পারেন। এছাড়াও, তাদের আগ্রহ ও মনোযোগের উপর নির্ভর করে ব্যক্তিকে উৎসাহিতকরণ কিংবা বস্তুকে জনপ্রিয়করণের প্রয়াস চালান।
পল ডিকসন তাঁর ডিকসন বেসবল ডিকশনারিতে সমর্থকের উৎপত্তির কথা উল্লেখ করেছেন। সেখানে উইলিয়াম হেনরি নুজেন্ট নামীয় এক ব্যক্তি দাবি করেছেন যে, ফ্যান্সি শব্দ থেকে ফ্যান বা সমর্থক শব্দের উৎপত্তি হয়েছে। এটি ঊনবিংশ শতকে ইংল্যান্ডের জনপ্রিয় বক্সিং খেলায় অনুসারীদেরকে উল্লেখ করে সৃষ্ট হয়েছে। ১৮৮৯ সালের মধ্যে শব্দটি আমেরিকান শব্দের সাথে মিশে যায়।
বৈশিষ্ট্যাবলি
সমর্থকদের মাঝে নির্দিষ্ট কেন্দ্রবিন্দুকে ঘিরে প্রচণ্ড ও যথেষ্ট আগ্রহ বিরাজ করে। এরফলে অনেক সময় তাদের জীবনধারা পাল্টে যায় এবং অনুরাগ কিংবা আসক্তির পরিবেশ সৃষ্টি করে। সমর্থকেরা বাইরে থেকে সম্পৃক্ত থেকে পরিবেশকে ভীষণভাবে উজ্জীবিত রাখে। তারা আগ্রহের বৃত্তে আবৃত থেকে উদ্বুদ্ধকরণ, যথাযথ দিক-নির্দেশনার মাধ্যমে সম্পৃক্ত থাকার প্রয়াস চালায়। স্বতঃপ্রবৃত্ত ও স্বতঃস্ফূর্তভাবে সম্মেলনে উপস্থিতি, অনলাইনে ব্লগ পোস্টিং, বাড়ির বাইরে দলীয় ব্যানার নিয়ে অবস্থান করে তারা তাদের ভালবাসার বহিঃপ্রকাশ জানায়। পাশাপাশি কিছুসংখ্যক সমর্থক অন্যান্য সমর্থকদের সাথে সামাজিক যোগাযোগ ব্যবস্থার মাধ্যমে যোগাযোগ রক্ষা করে থাকে। এ যোগাযোগ পদ্ধতির ক্ষেত্রও বিভিন্ন রূপ হতে পারে। আনুষ্ঠানিক আলাপ-আলোচনা, ই-মেইল, চ্যাটের মাধ্যমে নিয়মিতভাবে সরাসরি যোগাযোগ করে। এতে সমর্থক গোষ্ঠী সভা-সমাবেশ এবং সম্মেলনেরও আয়োজন করে থাকে।
সমর্থকদের অনেক ধরনের দল রয়েছে। শখের স্তরের গভীরতা অনুযায়ী উপযুক্ততা ও সংযুক্তি অথবা আগ্রহের উপর নির্ভর করে সমর্থক দলগুলো গড়ে উঠে।[1] পছন্দসই আগ্রহের বিষয়কে ঘিরে এর গভীরতা নির্দেশ করে। মানসিক আগ্রহ নির্দিষ্ট বিষয়ে বিনিয়োজিত হয় বিধায় এর আবেদনও বৃহৎভাবে প্রকাশ পায়।
স্তর বিভাজন
- তারকা শিল্পী
সাধারণত চলচ্চিত্র ভুবন অথবা টেলিভিশনের প্রধান ও জনপ্রিয় চিত্রতারকা, গায়ক, খেলোয়াড় অথবা তারকা ব্যক্তিত্বরা তরুণ সমর্থকদের প্রধান আকর্ষণের কেন্দ্রবিন্দুতে পরিণত হয়ে থাকেন। এ স্তরের সমর্থকেরা সাধারণভাবে মনে করেন যে তারা তারকা শিল্পীর সাথে সংযুক্ত আছেন। অথবা, সমর্থকেরা ধারণা করেন যে তারাও একসময় তারকা ব্যক্তিত্ব হবেন। চরম পর্যায়ে পৌঁছে অতি জনপ্রিয় তারকা শিল্পী হিসেবে খ্যাতি অর্জনের ফলে তারা অত্যন্ত সতর্কতার সাথে রাস্তা-ঘাটে চলাচল করেন। কখনোবা তারা হামলার লক্ষ্যবস্তুতে পরিণত হন কিংবা কাউকে ভালবাসলে বা প্রেমে পড়লে তারকার বিরুদ্ধাচরণ করেন এবং উগ্র আচরণ ও উন্মত্ত হয়ে পড়েন।
- সঙ্গীত শিল্পী
সঙ্গীত ক্ষেত্রে প্রতিষ্ঠিত কণ্ঠশিল্পীরা তাঁদের কণ্ঠ ও সুরের মূর্চ্ছনায় শ্রোতা-দর্শকদের মনকে বিমোহিত করে তোলেন। এরফলে তাঁদের নিজস্ব সমর্থক কিংবা সমর্থক গোষ্ঠী গড়ে উঠে।
- রাজনৈতিক দল ও ব্যক্তিত্ব
বিশেষ রাজনৈতিক দলের সমর্থনকারীরা একত্রে সমর্থকবৃন্দ নামে আখ্যায়িত হন না। এ ক্ষেত্রে তারা রাজনৈতিক দল কিংবা রাজনীতিবিদের অনুসারী হিসেবে চিহ্নিত হয়ে থাকেন। ব্যক্তি হিসেবে একজন রাজনীতিবিদের ব্যক্তিগত আচার-আচরণ, চিন্তা-ভাবনা, কর্মকাণ্ড দলীয় আদর্শের মধ্যে তেমন প্রভাব বিস্তার করে না। কেননা, ব্যক্তির চেয়ে দল বড়, দলের চেয়ে দেশ বড়। যেমনঃ ইন্টারনেটে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের তদানীন্তন রাষ্ট্রপতি রোনাল্ড রিগ্যানের একটি অনানুষ্ঠানিক ফ্যান ক্লাব রয়েছে; যা তার দলের সাথে সম্পৃক্ত নয়।[2]
- ক্রীড়া ব্যক্তিত্ব
একজন ক্রীড়াপ্রেমী ব্যক্তি বিশেষ ক্রীড়াবিদ (যেমনঃ সাকিব আল-হাসান, রোনাল্দো), দল (বাংলাদেশ, ব্রাজিল), খেলা (ক্রিকেট) অথবা খেলাসংক্রান্ত (স্কোরকার্ড) যে-কোন বিষয়ে আগ্রহ পোষণপূর্বক সমর্থকরূপে গণ্য হয়ে পারেন। সচরাচর খেলাধুলার ক্ষেত্রে সমর্থকেরা প্রায়শই সংশ্লিষ্ট বিষয়ে খেলার মাঠ বা স্টেডিয়ামে কিংবা টেলিভিশনের ছোট পর্দায় সর্বদা উপস্থিত থাকেন। সংশ্লিষ্ট বিষয়ের উপর সংবাদপত্র কিংবা ওয়েবসাইটেও অনুসন্ধান চালান। প্রয়োজনে তিনি এ বিষয়ের উপর বিতর্কেও অনেক সময় অংশগ্রহণ করে থাকেন।
স্টেডিয়াম কিংবা প্রতিযোগিতাস্থলে উপস্থিত থেকে সমর্থক তাঁর কণ্ঠস্বর, হাততালি, কিংবা ব্যানারের মাধ্যমে সংশ্লিষ্ট ঘটনা, খেলোয়াড় অথবা দলকে পরোক্ষভাবে সম্পৃক্ত থেকে উৎসাহিত ও উজ্জীবিত করেন। প্রয়োজনে তিনি দলের বিপক্ষ দল বা প্রতিপক্ষের বিরুদ্ধেও অবস্থান নিয়ে থাকেন। বলা হয়ে থাকে যে, ক্রীড়াপ্রেমী সমর্থক একজন খেলোয়াড় কিংবা দল বা জাতীয় দলের জন্য সহায়ক শক্তি, যা নিজ মাঠ কিংবা স্বাগতিক দেশের জন্য ভাল ফলাফল বয়ে নিয়ে আসতে সক্ষম।
প্রযুক্তি মাধ্যম
- পুরুষ ও মহিলা
পুরুষ সমর্থকেরা মূলত কোন একটি বিষয় বা শখের উপর তাদের আগ্রহ ও মতামত ব্যক্ত করে থাকেন। কোন পণ্য, ব্রান্ড বা ব্যবসায় প্রতিষ্ঠানের চিহ্ন অথবা বৈশ্বিক চরিত্রকে (যেমনঃ কল্পকাহিনী) প্রাধান্য দিয়ে থাকেন। ২০০৯ সালের প্রথম তিন মাসে পার্সোনাল কম্পিউটার বা পিসি'র জন্য সিপিইউ তৈরিতে এএমডি এবং ইন্টেলের প্রসেসর বিশ্ব বাজারের ৯৯.৬% দখল করেছিল।[3] স্বাভাবিকভাবেই সাধারণ ব্যবহারকারীরা বাস্তবতা অনুধাবন করে খুব সহজেই দু'টি ব্রান্ডের যে-কোন একটিকেই গ্রহণ করবে। ইন্টেলের সমর্থকগণ অন্য ব্রান্ড এড়িয়ে এএমডি প্রসেসর ক্রয় করবে। অন্যদিকে, সাধারণত মহিলা সমর্থকগণ তাদের আবেগ-অনুভূতি এবং ভালবাসাকেই প্রাধান্য দিয়ে থাকেন।
- কম্পিউটার গেমস
কম্পিউটার ব্যবহারকারী স্বয়ং খেলোয়াড় হিসেবে আবির্ভূত হয়ে থাকেন। সচরাচর তিনি বোর্ড গেমস, যুদ্ধ-যুদ্ধ খেলা, কার্ড গেমস খেলে থাকেন।
তথ্যসূত্র
- Thorne, Scott (২০০৬)। "An exploratory investigation of the characteristics of consumer fanaticism"। Qualitative Market Research: an International Journal। 9 (1): 51–72। ডিওআই:10.1108/13522750610640558। অজানা প্যারামিটার
|coauthors=
উপেক্ষা করা হয়েছে (|author=
ব্যবহারের পরামর্শ দেয়া হচ্ছে) (সাহায্য) - http://www.fanpop.com/spots/ronald-reagan
- "সংরক্ষণাগারভুক্ত অনুলিপি"। ৭ সেপ্টেম্বর ২০১০ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ১৩ এপ্রিল ২০১২।
বহিঃসংযোগ
- Merriam-Webster: fan
- Oxford Dictionary: fan ওয়েব্যাক মেশিনে আর্কাইভকৃত ২৯ সেপ্টেম্বর ২০০৭ তারিখে