সমরেন্দ্র নাথ পাণ্ডে
সমরেন্দ্র নাথ পাণ্ডে (জন্ম: ২৬ অক্টোবর ১৯২৭―১৫ নভেম্বর ২০০১) একজন ভারতীয় বাঙ্গালী লেখক, ডাক্তার ও জ্যোতিষী। তিনি অন্য পরিচয়ে গোয়েন্দা কাহিনী লেখক শ্রীস্বপনকুমার, জ্যোতিষী শ্রীভৃগু, ডক্টর এস এন পাণ্ডে নামেও পরিচিত ছিলেন। লিখেছেন শ্রীস্বপনকুমার ছদ্মনামে শতাধিক গোয়েন্দা বই। সৃষ্টি করেছেন দীপক চ্যাটার্জি নামক জনপ্রিয় গোয়েন্দা চরিত্র। শেষ জীবনে অর্থ উপার্জনের জন্য জ্যোতিষী শ্রীভৃগু নামে জ্যোতিষ চর্চা করে জীবিকা উপার্জন করেছেন ও জ্যোতিষী শ্রীভৃগু ছদ্মনামে বেশ কয়েকটি বই লিখেছেন। সাথে ডাঃ সমরেন্দ্র নাথ পাণ্ডে বা ডাঃ এস এন পান্ডে নামে লিখেছেন ডাক্তারী শাস্ত্রের উপর বেশ কিছু বই।[1]
জন্ম | সমরেন্দ্র নাথ পাণ্ডে ২৬ অক্টোবর ১৯২৭ রাজশাহী, বাংলাদেশ |
---|---|
মৃত্যু | ১৫ নভেম্বর ২০০১ ৭৪) শ্যামনগর,কলিকাতা, ভারত | (বয়স
ছদ্মনাম | সমরেন্দ্র নাথ পাণ্ডে, লেখক শ্রীস্বপনকুমার, জ্যোতিষী শ্রীভৃগু, ডক্টর এস এন পান্ডে৷ |
পেশা | লেখক, ডাক্তারি, জ্যোতিষী |
ভাষা | বাংলা |
বাসস্থান | কোলকাতা |
জাতীয়তা | ভারতীয় |
শিক্ষা | ডাক্তারি |
শিক্ষা প্রতিষ্ঠান | আর জি কর মেডিক্যাল কলেজ |
সময়কাল | ১৯৬০-১৯৯৯ |
প্রারম্ভিক জীবন
জানা যায় যে তারা ছিলেন কনৌজের ব্রাহ্মণ পরিবার। বসতবাটি ছিল বর্তমান বাংলাদেশের রাজশাহীতে৷ তাঁদের পারিবারিক পেশা ছিল ওকালতি। ঠাকুরদা ও বাবা ছিলেন ব্যারিস্টার। ১৪ বছর বয়সে চলে আসেন কলকাতায়, পরে উত্তর ২৪ পরগণা জেলার শ্যামনগরে। কয়েকবছর পর ভর্তি হন আর জি কর মেডিক্যাল কলেজে ডাক্তারি পড়তে। পারিবারিক আর্থিক অনটন চলায় ডাক্তারির দ্বিতীয় বর্ষে পাঠ কালে বই লেখা শুরু করেন।
লেখক শ্রীস্বপনকুমার
আপার চিত্পুর রোডে অবস্থিত প্রকাশক জেনারেল লাইব্রেরির কৃষ্ণচন্দ্র গুপ্ত প্রকাশ শুরু করে দেন দীপক চ্যাটার্জীর সিরিজ৷ লেখকের ছদ্মনাম হয় শ্রীস্বপনকুমার। এগুলি প্রকাশিত হত ছোট চটি বই আকারে প্রতিমাসে একটা করে, দাম ছিল চল্লিশ পয়সা৷ দেব সাহিত্য কুটির, মহেশ পাবলিকেশন, আদিত্য পাবলিকেশন থেকেও তার বই প্রকাশিত হয়েছে। স্বপনকুমারের গোয়েন্দা কাহিনি প্রায় ১০০টির বেশি হবে বলে অনুমান করা হয়। ৪৭ থেকে ৬৬/৬৮ পাতার শ্রীস্বপনকুমারের বই ছিল প্রকাশকদের মতে 'হটকেক', তাই তারা এইগুলি প্রকাশ করে গেছেন। এক সময় টাকা রোজগারের জন্য মুম্বইও গিয়েছিলেন ছায়াছবির চিত্রনাট্য লিখতে। সেখানে বিশেষ সম্মান বা অর্থ না পেয়ে ফিরে আসেন। অনেকে তাঁর ‘শ্রীস্বপনকুমার’ সিরিজের লেখাকে মার্কিন লেখক রবার্ট লেসলি বেলামের সঙ্গে তুলনা করেন।[2][3]
জ্যোতিষী শ্রীভৃগু
শ্রীস্বপনকুমার থেকে শ্রীভৃগু হয়ে ওঠার ঘটনাটাও বেশ অবাক করা। তখনও শুধুই রহস্যগল্পের লেখক শ্রীস্বপনকুমার। সমরেন্দ্রনাথ ছিলেন উদারমনা, আদর্শবান একজন মানুষ। কিন্তু তাঁর মধ্যে সম্মানবোধ, জেদ ছিল। অনেকটা সে কারণেই এক সময় তিনি জ্যোতিষচর্চা শুরু করেন। একবার প্রকাশকের কাছে গিয়েছেন পাওনা টাকা আনতে। প্রকাশক তাঁকে বসিয়ে রেখে অন্য আরেকজন লেখকের পাওনাগণ্ডার হিসেব নিকেশ করছেন। অধৈর্য হয়ে বলে ফেলেছিলেন, ‘‘আরে, আমিও তো লিখি! আমাকে বসিয়ে রেখেছেন কেন!’’ উত্তরে সেই প্রকাশক নাকি বলেছিলেন, ‘‘আরে গোয়েন্দা গল্প তো সবাই লিখতে পারে। উনি জ্যোতিষের বই লেখেন, অনেক টাকার ব্যবসা দেন। ওঁকে আগে ছাড়তেই হবে। সে দিন নাকি প্রকাশকের দপ্তরে বসে প্রতিজ্ঞা করেছিলেন, জ্যোতিষ শিখে এক দিন দেখিয়ে দেবেন। তা দিয়েও ছিলেন। রীতিমতো জ্যোতিষচর্চা শিখে তিনি শ্রীভৃগু নামে প্র্যাকটিস শুরু করেন। জ্যোতিষচর্চার ওপর প্রচুর বইও লেখেন। সেসব বই এখনও বাজারে বিক্রি হয়। এই পেশাতে তাঁর এত নাম হয় যে নামমাহাত্ম্যে এক সময় শ্রীভৃগুরও একাধিক নকল বেরিয়ে গিয়েছিল বাজারে। সবাই বিজ্ঞাপনে দাবি করত, তারাই ‘আদি এবং অকৃত্রিম’! ২০০১ সালের ১৫ নভেম্বর মৃত্যু হয় সমরেন্দ্রনাথ পান্ডের।[2]
তথ্যসূত্র
- "জ্যোতিষী স্বপনকুমার (শ্রীভৃগু) এমবিবিএস"। EI Samay। সংগ্রহের তারিখ ২০২১-০৫-০৯।
- "দীপক রতন এবং স্বপনকুমার"। www.anandabazar.com। সংগ্রহের তারিখ ২০২১-০৫-০৯।
- Prohor। "গোয়েন্দা কাহিনি, জ্যোতিষশাস্ত্র থেকে চিকিৎসা বিজ্ঞান – বিভিন্ন নামে বই লিখেছেন এই বাঙালি - Prohor"। গোয়েন্দা কাহিনি, জ্যোতিষশাস্ত্র থেকে চিকিৎসা বিজ্ঞান – বিভিন্ন নামে বই লিখেছেন এই বাঙালি - Prohor (ইংরেজি ভাষায়)। সংগ্রহের তারিখ ২০২১-০৫-০৯।