সফিউদ্দীন আহমেদ
সফিউদ্দিন আহমেদ (২৩ জুন ১৯২২ - ১৯ মে ২০১২) ছিলেন একজন বাংলাদেশী চিত্রশিল্পী। তাকে বাংলাদেশের আধুনিক ছাপচিত্রের জনক বলা হয়।[1] তবে ছাপচিত্রের পাশাপাশি তিনি জলরং এবং তেল রং-এর কাজেও দক্ষতা দেখিয়েছেন।[2] তিনি সাত দশকের বেশি সময় ধরে শিল্পচর্চায় দেশের চারুকলার জগৎকে সমৃদ্ধ করেছেন।
সফিউদ্দিন আহমেদ | |
---|---|
জন্ম | সফিউদ্দিন আহমেদ ২৩ জুন ১৯২২ |
মৃত্যু | ১৯ মে ২০১২ ৮৯) ঢাকা, বাংলাদেশ | (বয়স
জাতীয়তা | বাংলাদেশী |
শিক্ষা | ছাপচিত্র, তেলচিত্র, রেখাচিত্র |
পরিচিতির কারণ | পেইন্টিং, অঙ্কন |
পুরস্কার | নিচে দেখুন |
তার শিল্পকর্মে ১৯৫২ সালের ভাষা আন্দোলন এবং ১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধের বাস্তব চিত্র ফুটে উঠেছে। ১৯৪৫ সালে কলকাতা একাডেমি অব ফাইন আর্ট থেকে একাডেমি প্রেসিডেন্ট পদক, বাংলাদেশ সরকার কর্তৃক একুশে পদক ও স্বাধীনতা দিবস পুরস্কারসহ আরও অনেক পুরস্কার অর্জন করেন।[2]
প্রাথমিক জীবন
সফিউদ্দিন ১৯২২ সালে কলিকাতায় জন্ম নেন। ১৯৩৬ সালে কলকাতা আর্ট স্কুলে ভর্তি হন এবং ১৯৪২ সালে এখান থেকে চারুকলায় স্নাতক ডিগ্রি লাভ করেন। পরবর্তীতে তিনি যুক্তরাজ্যেের সেন্ট্রাল স্কুল অফ আর্টস অ্যান্ড ক্র্যাফটস্ থেকে এচিং ও এনগ্রেভিংয় বিষয়ে ডিপ্লোমা ডিগ্রি অর্জন করেন।[2] ১৯৪৭ সালে দেশ ভাগের পর কলকাতা থেকে ঢাকায় ধানমন্ডিতে চলে আসেন।[2]
কর্মজীবন
দেশে-বিদেশে বহু দলবদ্ধ প্রদর্শনীতে অংশগ্রহণ করেন ১৯৫৮ সালে থেকে। চল্লিশের দশকে কলকাতার আর্ট কলেজে পড়ার সময়ে তিনি দক্ষতা অর্জন করেন ছাপচিত্রে। তার কিছু অসাধারণ কাজের মাধ্যমে তিনি ভারতের কলারসিকদের দৃষ্টি আকর্ষণ করেন।[3] বাংলাদেশের শিল্পী কাইয়ুম চৌধুরী, হাশেম খান, আবুল বারক আলভী, ফরিদা জামান, আবুল খায়ের, সুবীর চৌধুরী সফিউদ্দিন আহমেদের কাজের মাধ্যমে অনুপ্রাণিত হয়েছেন।[4]
শৈলী ও প্রযুক্তি
দুই বাংলার রঙ তার কাছে ছিল ভিন্ন। তাই পশ্চিম বাংলার প্রকৃতির ধূসরতা এবং বাংলাদেশে নীলাভ সবুজের ছড়াছড়িকে মিশিয়ে নিয়েছেন। প্রাথমিক ভাবে তার কাজে পরিস্ফুিটিত হয় লোকশিল্পের বৈশিষ্ট্য। কালো রঙের প্রতি দুর্বলতা ছিলো তার তাই কালো রঙের অনুশীলনের জন্যে ত্রিশ-চল্লিশের দশকেই শিয়ালদা স্টেশনে গেছেন রাতের বেলার কালো রঙ দেখতে। যুক্তরাজ্যে তিনি কালোর বৈচিত্র্যপূর্ণ ব্যবহার করেন এচিং-অ্যাকুয়াটিন্ট মাধ্যমে। নব্বইয়ের দশকে তিন বছরের মতো সময়ে তিনি নিরবচ্ছিন্নভাবে অকেন রেখাচিত্র আঁকেন যা "ব্ল্যাক সিরিজ" বা "কালো চিত্রমালা" নামে পরিচিত। তার শিল্পকর্মে ১৯৫২ বাংলা ভাষা আন্দোলন এবং ১৯৭১ সালে বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধের ছবি উঠে এসেছে বিভিন্ন মাধ্যমে রচনার মাধ্যমে। তার কলিকাতায় আঁকা ছবিতে এসেছে মহানগরের বস্তিজীবন, বিহারের বিভিন্ন অঞ্চলের নিসর্গ, দুমকার প্রকৃতি ও সাঁওতাল-জীবন এবং ঢাকায় আঁকা ছবিতে বিষয়বস্তু হিসেবে এসেছে [বন্যা, জাল, মাছ, নৌকা, ঝড় প্রভৃতি প্রাকৃতিক উপাদানের পাশাপাশি নানা শ্রমজীবী মানুষ।[2]
মৃত্যু
১৯ মে ২০১২ শনিবার রাত ১২টা ২০ মিনিটে শিল্পগুরু সফিউদ্দীন ঢাকার স্কয়ার হাসপাতালে মৃত্যুবরণ করেন। বার্ধক্যজনিত কারণে মারা যান শিল্পী সফিউদ্দীন।
পুরস্কার এবং সম্মাননা
তিনি শিল্পী জয়নুল আবেদীনের সাথে ও অন্যান্য শিল্পীরা মিলে একসঙ্গে ঢাকা আর্ট কলেজ প্রতিষ্ঠায় বিশেষ ভূমিকা পালন করেন যা বর্তমানে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনে থাকা চারুকলা ইনস্টিটিউট নামে পরিচিত।
তিনি ১৯৪৫ সালে কলকাতা একাডেমী অব ফাইন আর্ট প্রদত্ত একাডেমী প্রেসিডেন্ট পদক লাভ করেন। এছাড়াও তিনি অর্জন করেন ভারতের পার্টনার শিল্পকলা পরিষদের দেওয়া ‘দ্বারভাঙ্গা মহারাজার স্বর্ণপদক’(১৯৪৭ সাল), পাকিস্তান সরকারের দেয়া ‘প্রেসিডেন্ট পদক’ ১৯৬৩ সালে, বাংলাদেশ সরকারের দেওয়া ‘একুশে পদক’ (১৯৭৮ সাল) এবং ‘স্বাধীনতা দিবস পুরস্কার’ (১৯৯৬ সাল)। তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলা ইনস্টিটিউটে ছাপচিত্র বিভাগের বিভাগীয় প্রধান ছিলেন ১৯৪৮ সাল থেকে ১৯৭৯ সাল পর্যন্ত।
২০০৮ সালে ২৩শে জুন প্রচারবিমুখ এই গুণী শিল্পীর প্রথম একক প্রদর্শনী 'রেখার অশেষ আলো' অনুষ্ঠিত হয় বাংলাদেশে যা উদ্বোধন করেন সাবেক প্রধান উপদেষ্টা বিচারপতি মুহাম্মদ হাবিবুর রহমান। শিল্পীর ছাত্র শিল্পী কাইয়ুম চৌধুরী বলেন, "তার চিত্রকর্ম সম্পর্কে আমার বলার কিছু নেই, ধৃষ্টতাও নেই। তার চিত্রকর্মের যে বিশালতা, বলিষ্ঠতা ও ব্যাপকতা এবং ড্রইংয়ে রংয়ের প্রলেপ, যেভাবে লাইন টেনেছেন তা শুধু অনুধাবন করার বিষয়।
তথ্যসূত্র
- সৈয়দ আজিজুল হক (নভেম্বর ১০, ২০১০)। "অশেষ আলোর আধার"। দৈনিক প্রথম আলো। ২০১৭-০৩-০১ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ আগস্ট ২৮, ২০১৪।
- "ছাপচিত্রের স্রষ্টা সফিউদ্দীন আহমেদ"। bdnews24.com। মে ১৯, ২০১৪। সংগ্রহের তারিখ আগস্ট ২৮, ২০১৪।
- http://www.dailyjanakantha.com/news_view.php?nc=27&dd=2010-11-26&ni=40291%5B%5D
- "সংরক্ষণাগারভুক্ত অনুলিপি"। ২০১৮-০৬-০১ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২০১৩-১২-২৯।