সত্য বন্দ্যোপাধ্যায়
সত্য বন্দ্যোপাধ্যায় ; (১ জানুয়ারি ১৯২৬ – ২৮ জুলাই ১৯৯৭) ছিলেন পশ্চিমবঙ্গের বাংলা চলচ্চিত্র ও নাট্যজগতের বিশিষ্ট ব্যক্তিত্ব। [1] তিনি তিনশোর বেশি চলচ্চিত্র এবং অসংখ্য নাটকে অভিনয় করেন। বেতারের অনুষ্ঠানেও প্রায়ই অংশগ্রহণ করতেন। [2]
সত্য বন্দ্যোপাধ্যায় | |
---|---|
জন্ম | ১৯২৬ |
মৃত্যু | ১৯৯৭ ৭০–৭১) | (বয়স
জাতীয়তা | ভারতীয় |
পেশা | অভিনেতা,নাট্যকার |
কর্মজীবন | ১৯৪৮–১৯৯৭ |
দাম্পত্য সঙ্গী | সবিতা বন্দ্যোপাধ্যায় |
সন্তান |
|
পিতা-মাতা |
|
ওয়েবসাইট | https://www.imdb.com/name/nm0051851/ |
জন্ম ও প্রারম্ভিক জীবন
সত্য বন্দ্যোপাধ্যায়ের জন্ম বৃটিশ ভারতের অধুনা পশ্চিমবঙ্গের কলকাতায়। পিতা বনমালী বন্দ্যোপাধ্যায় ও মাতা চারুশীলা দেবী। স্কুলে র পাঠ রাণী ভবানী স্কুলে। কৈশোরেই তার মাতৃবিয়োগ হয়। কলকাতার সিটি কলেজের পাঠ শেষ করে [[টিটাগড় | টিটাগড়ের কাগজ কারখানায় এক কাজ নেন। সেসময় ফুটবল ও ব্যাডমিন্টন খেলায় তার দক্ষতা ছিল। [3]
নাট্যজগতে অভিনয়
তার অভিনয় জীবন শুরু হয় শেখেন নাট্যদলে অভিনয়ের মাধ্যমে। বীরেন্দ্রকৃষ্ণ ভদ্র তাঁকে আকাশবাণীতে বেতার নাটকে অংশগ্রহণের সুযোগ করে দেন। তার যথার্থ নাট্যশিক্ষা বীরেন্দ্রকৃষ্ণ ভদ্রের কাছেই।"শহীদের ডাক" নাটকে তার প্রথম প্রধান চরিত্রে অভিনয় ছিল গণনাট্য সংস্থার প্রযোজনায়।[2] ১৯৫৫ খ্রিস্টাব্দে মিনার্ভায় 'ঠাকুর শ্রীশ্রীরামকৃষ্ণ' নাটকে 'হৃদের' ভূমিকায় প্রথম পেশাদার মঞ্চে অভিনয়। নাটকটি বেশিদিন চলেনি। পরে রঙমহল থিয়েটারে যোগ দিয়ে ক্রমে বাংলা পেশাদার মঞ্চের নির্ভরশীল অভিনেতা হয়ে ওঠেন। নিজস্ব নাট্যদল 'ইঙ্গিত ' ও পরে সহকর্মী ও বন্ধু তরুণকুমারের সঙ্গে 'কল্পতরু' নাট্যগোষ্ঠী গঠন করেন। [2]
তিনি নিজে নাট্য রচনা করে, তাতে অভিনয়ও করেছেন। বেশিরভাগ নাটক অত্যন্ত জনপ্রিয় হয়েছিল। যেমন - 'শেষ থেকে শুরু', 'এরাও মানুষ' এবং 'নাগপাশ'। তার রচিত ও পরিচালিত সবচেয়ে জনপ্রিয় নাটক ছিল - নহবত । কলকাতার তপন থিয়েটারে ১৯৭৬ খ্রিস্টাব্দ হতে ১৯৮৪ খ্রিস্টাব্দ পর্যন্ত নিরবচ্ছিন্নভাবে ১৬০০ রজনী চলেছিল। তার অভিনয় দক্ষতা বহু সমসমায়িক স্বনামধন্য পরিচালক ও অভিনেতা দ্বারা প্রশংসিত হয়েছিল। তিনি ও তরুণ কুমার চট্টোপাধ্যায় মিলে তরুণ কুমারের জ্যেষ্ঠ ভ্রাতা মহানায়ক উত্তমকুমারের স্মৃতিতে রঙ্গমঞ্চ - উত্তমমঞ্চ প্রতিষ্ঠা করেন।
চলচ্চিত্রে অভিনয়
বাংলা চলচ্চিত্রে কিছু ছবিতে নায়ক হিসাবে তার অভিনয় জীবনের শুরু ১৯৪০ এর দশকের শেষভাগে। পরে তিনি চরিত্রশিল্পী হিসাবে নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করেন এবং সাবলীল ভাবে হাস্যরসাত্নক ছবিতে অভিনয় করতে থাকেন। সমান পারদর্শীতায় খলনায়কের চরিত্রেও কাজ করেছেন। তার মধ্যে উল্লেখযোগ্য হল চারমূর্তি' যেখানে 'ঘুটঘুটানন্দ'-এর ভূমিকায় দেখা গেছে।
সত্যজিৎ রায়, মৃনাল সেন সহ বহু খ্যাতনামা পরিচালকের অধীনে কাজ করেছেন। তিনি তরুণ মজুমদারের পরিচালনায় তার একাধিক ছবিতে সফল অভিনয় করেন। [2]
পুরস্কার ও সম্মাননা
মঞ্চাভিনেতা হিসাবে সত্য বন্দ্যোপাধ্যায় অনেক পুরস্কার ও সম্মান পেয়েছেন। তন্মধ্যে ১৯৮৭ খ্রিস্টাব্দে মাইকেল মধুসূদন অ্যাওয়ার্ড ও ১৯৮৮ খ্রিস্টাব্দে পশ্চিমবঙ্গ নাট্য আকাদেমি পুরস্কার উল্লেখযোগ্য। [1]
নির্বাচিত চলচ্চিত্রসমূহ
বছর | ফিল্ম | পরিচালক | ভূমিকা |
---|---|---|---|
১৯৪৮ | ভুলি নাই | হেমেন গুপ্ত | |
১৯৫১ | বরযাত্রী | সত্যেন বোস | |
১৯৫২ | পাশের বাড়ি | সুধীর মুখোপাধ্যায় | |
১৯৫৩ | স্বশুর বাড়ি | ||
১৯৫৩ | বাঁশের কেল্লা | ||
১৯৫৩ | বউ ঠাকুরানির হাট | বিভার স্বামী | |
১৯৫৪ | লেডিজ সিট | ||
১৯৫৪ | এই সত্যি | ||
১৯৫৫ | ভগবান শ্রীশ্রীরামকৃষ্ণ | ||
১৯৫৭ | টনসিল | তপন সিনহা | |
১৯৫৬ | সাবধান | ||
১৯৫৬ | নাগরদোলা | ||
১৯৫৬ | গোবিন্দদাস | ||
১৯৫৬ | চোর | ||
১৯৫৭ | উল্কা | ||
১৯৫৭ | রাত্রি শেষে | ||
১৯৫৭ | অমি বড় হব | ||
১৯৫৭ | সুরের পরশে | ||
১৯৬৫ | মহাপুরুষ | সত্যজিৎ রায় | নিতাই বাবু |
১৯৬৬ | নায়ক | সত্যজিৎ রায় | ডাব্লুডাব্লুডাব্লু সেজ |
১৯৬৭ | বালিকা বধু (১৯৬৭ চলচ্চিত্র) | তরুণ মজুমদার | |
১৯৬৯ | বিবাহ বিভ্রাট | আশিম ব্যানার্জি | |
১৯৭১ | কুহেলি | তরুণ মজুমদার | ড.চৌধুরী |
১৯৭১ | কলকাতা ৭১ | মৃণাল সেন | |
১৯৭৩ | শ্রীমান পৃথ্বীরাজ | তরুণ মজুমদার | রসিকের বাবা |
১৯৭৪ | কোরাস | মৃণাল সেন | |
১৯৭৭ | ভোলা ময়রা | পীযূষ কান্তি গাঙ্গুলি | |
১৯৭৮ | চারমূর্তি | উমানাথ ভট্টাচার্য | স্বামী ঘুটঘুটানন্দ |
১৯৭৯ | ঘটকালি | বিমল রায় জুনিয়র | |
১৯৮০ | দাদার কীর্তি | তরুণ মজুমদার | পরিতোষ চ্যাটার্জী |
১৯৮১ | আকালের সন্ধানে | মৃণাল সেন | |
1982 | অমৃত কুম্ভের সন্ধানে | দিলীপ রায় | |
১৯৮৬ | তিন পুরুষ | উমানাথ ভট্টাচার্য | |
১৯৮৭ | নদিয়া নগর | ||
১৯৯২ | সিটি অফ জয় (১৯৯২ চলচ্চিত্র) | রোল্যান্ড জোফ | |
১৯৯৬ | দামু | রাজা সেন |
তথ্যসূত্র
- অঞ্জলি বসু সম্পাদিত, সংসদ বাঙালি চরিতাভিধান, দ্বিতীয় খণ্ড, সাহিত্য সংসদ, কলকাতা, জানুয়ারি ২০১৯ পৃষ্ঠা ৪০৭, আইএসবিএন ৯৭৮-৮১-৭৯৫৫-২৯২-৬
- "ঘুটঘুটানন্দ ধরলেন নহবতের পোঁ"। www.anandabazar.com। সংগ্রহের তারিখ ২০২১-০৭-২৮।
- Bandopadhyay, Satya। "many-facets-of-actor-satya-bandyopadhyay"। anandabazar.com।