সত্য চৌধুরী

সত্য চৌধুরী (১৭ সেপ্টেম্বর ১৯১৮ -৫ ডিসেম্বর ১৯৯৩ ) ছিলেন কিংবদন্তি বাঙালি সঙ্গীতশিল্পী, সঙ্গীত পরিচালক ও সুরকার। "পৃথিবী আমারে চায়,রেখো না বেঁধে আমায়" - গানটি গেয়ে তিনি খ্যাতির শিখরে পৌঁছে গিয়েছিলেন। শুধু গানই করেননি, অভিনয় করেছেন, করেছেন আকাশবাণীতে ঘোষকের কাজও। [1] 

সত্য চৌধুরী
জন্ম(১৯১৮-০৯-১৭)১৭ সেপ্টেম্বর ১৯১৮
কলকাতা, বৃটিশ ভারত, বর্তমানে পশ্চিমবঙ্গ, ভারত
মৃত্যু৫ ডিসেম্বর ১৯৯৩(1993-12-05) (বয়স ৭৫)
কলকাতা, পশ্চিমবঙ্গ , ভারত
ধরননেপথ্য কণ্ঠশিল্পী
পেশাগায়ক
কার্যকাল১৯৩৭ –১৯৯৩
শিক্ষাআশুতোষ কলেজ
পিতা-মাতাযতীন্দ্রমোহন চৌধুরী (পিতা)
বিমলাদেবী (মাতা)

জন্ম ও শিক্ষা জীবন

সত্য চৌধুরীর জন্ম বৃটিশ ভারতের কলকাতার ৩১ নম্বর গ্রে স্ট্রীটে। পিতা যতীন্দ্রমোহন চৌধুরী ছিলেন কলকাতা হাইকোর্টের অ্যাডভোকেট। মাতা বিমলাদেবী। পিতার আদি নিবাস ছিল বাংলাদেশের রাজশাহী জেলার মাদারীপুর গ্রামে। সত্য চৌধুরীর দেড় বছর বয়সে তারা চলে আসেন মামার বাড়ির কাছে ল্যান্সডাউনে। প্রথমে পড়াশোনা শুরু পদ্মপুকুর ইনস্টিটিউশনে ও পরে মিত্র ইনস্টিটিউশনে। সেখান থেকে ম্যাট্রিক পাশ করেন। স্নাতক হন আশুতোষ কলেজ থেকে। তবে ছোটবেলা থেকেই পড়াশোনায় তিনি অমনযোগীই ছিলেন। গানের প্রতি তার আকর্ষণ ছিল প্রবল।[2]

সঙ্গীতচর্চা ও সঙ্গীতজীবন

সত্য চৌধুরী র বাড়িতে ছিল সাঙ্গীতিক আবহাওয়া। পিতা-মাতা-কাকা-জ্যাঠা সকলেই গান করতেন। মায়ের মামা ছিলেন দিলীপকুমার রায়। তাই ছোটথেকেই তাদের গান শুনে শুনে স্বাভাবিকভাবেই কিছুটা রপ্ত হয়েছিলেন। তবে শিল্পীজীবনের শুরুতে কৃষ্ণচন্দ্র দে, রাইচাঁদ বড়াল, শচীন দেববর্মণ প্রমুখের শিষ্য ছিলেন। ১৯২৭ খ্রিস্টাব্দে তিনি তার রাজশাহীর এক জ্যাঠামশাই অশোকচন্দ্র চৌধুরীর মাধ্যমে পরিচিত হন বিদ্রোহী কবি কাজী নজরুল ইসলামের সঙ্গে। কবির সান্নিধ্য ছিল সত্য চৌধুরীর জীবনে এক পরম সৌভাগ্য। তার তত্ত্বাবধানে তিনি বহু গান রেকর্ড করেছেন। তার মধ্যে 'চীন ভারত মিলেছে', 'দুর্গম গিরি কান্তার মরু', 'সঙ্ঘশরণ তীর্থযাত্রা পথে' প্রভৃতি গান এককালে লোকের মুখে মুখে ফিরত। সত্য চৌধুরী ১৯৩৬ খ্রিস্টাব্দ থেকে ১৯৪১ খ্রিস্টাব্দ পর্যন্ত গান শেখেন। ভারতীয় শাস্ত্রীয় সঙ্গীতও লঘু শাস্ত্রীয় সঙ্গীত শিক্ষা করেন দবীর খান, মেহেদি হোসেন খান ও বিষ্ণুপুর ঘরানার পণ্ডিত জ্ঞানেন্দ্রপ্রসাদ গোস্বামীর এক শিষ্য ফণিভূষণ গঙ্গোপাধ্যায়ের কাছে।[2]

১৯৩৭ খ্রিস্টাব্দে আকাশবাণীতে যোগ দেন এবং ঘোষকে হিসাবে কাজ করেন ১৯৭৬ খ্রিস্টাব্দ পর্যন্ত। ওই সময়েই হিন্দুস্থান রেকর্ড থেকে তার প্রথম গানের রেকর্ড প্রকাশিত হয় বিমল মিত্রের লেখা দুটি গান - 'আজি শরত চাঁদের তিথিতে' ও 'শিউলি ঝরা অঙ্গন পথে'। ১৯৪১ খ্রিস্টাব্দে তিনি "জয়দেব" ছায়াছবিতে কণ্ঠ দেন। প্রায় শতাধিক ছবিতে তিনি গান গেয়েছেন। সুদর্শন নায়কের ভূমিকায় অভিনয় করেছেন "রাঙামাটি" ছায়াছবিতে। তবে তিনি বহু নজরুলগীতিকে স্মরণীয় করে গেছেন। নজরুল অসুস্থ হবার পর থেকে তার কবিতায় তিনি ও কমল দাশগুপ্ত সুরারোপ করেছিলেন। তার সুরে 'হে গোবিন্দ রাখো চরণে' উল্লেখযোগ্য।, 'মোরা আর জনমে হংস মিথুন' গানটির সুরকার ছিলেন গিরিণ চক্রবর্তী (রেকর্ড নং জিই ২৭০১) তবে 'হে প্রবল দর্পহারি'(রেকর্ড নং এন৩১২৪২) গানটির সুরসৃষ্টি তিনি নিজে করেছিলেন। তার স্বকণ্ঠে গাওয়া কালজয়ী গানগুলি হল -

  • 'মোর প্রিয়া হবে এস রানি'
  • 'নয়নভরা জল'
  • 'জাগো অনশন বন্দি'
  • 'হে প্রবল দর্পহারি'
  • 'ভারত আজিও ভোলেনি বিরাট'
  • 'তোমার আঁখির মতো'
  • 'বল ভাই মাভৈ মাভৈ'
  • 'যাস না মা ফিরে যাস নে জননী'
  • 'বলো নাহি ভয় নাহি ভয়'
  • 'বলে দে রে কোথা গেল মোর শ্যামরাই'
  • 'ভুলে গেছ জানি'
  • 'কত যে ব্যথা ভুলালে'

সত্য চৌধুরী আবদুল আহাদের তত্ত্বাবধানে রবীন্দ্র সংগীতের রেকর্ড করেছিলেন। সেগুলি হল -

  • 'তোমার হল শুরু'
  • 'মায়াবন বিহারিণী'
  • 'নীল অঞ্জন ঘন পুঞ্জছায়ায়'
  • 'শুভ কর্মপথে' ইত্যাদি। [3]

জীবনাবসান

অকৃতদার সত্য চৌধুরী জীবনসায়াহ্নে স্বেচ্ছা-নির্বাসন বেছে নিয়েছিলেন। অবশ্য কিছু উৎসাহী ছাত্র-ছাত্রী সেসময়ে তার কাছে আসতেন। ১৯৯৩ খ্রিস্টাব্দের ৫ই ডিসেম্বর তিনি পরলোক গমন করেন।

তথ্যসূত্র

  1. অঞ্জলি বসু সম্পাদিত, সংসদ বাঙালি চরিতাভিধান, দ্বিতীয় খণ্ড, সাহিত্য সংসদ, কলকাতা, জানুয়ারি - ২০১৯ পৃষ্ঠা ৪০৭, আইএসবিএন ৯৭৮-৮১-৭৯৫৫-২৯২-৬
  2. "শতবর্ষে স্মরণ করি 'পৃথিবী আমাদের চায়' - এর গায়ককে"। সংগ্রহের তারিখ ২০২০-০৯-১৬
  3. "যেথায় গান থেমে যায়" পরমানন্দ চৌধুরী (সত্য চৌধুরীর ভ্রাতুষ্পুত্র) রচিত 'কলকাতা পুরশ্রী' ১৬-৩০ নভেম্বর, ২০১৭ সংখ্যায় প্রকাশিত
This article is issued from Wikipedia. The text is licensed under Creative Commons - Attribution - Sharealike. Additional terms may apply for the media files.