সত্যেন্দ্রপ্রসন্ন সিংহ

লর্ড সত্যেন্দ্রপ্রসন্ন সিনহা বা প্রথম ব্যারণ সিনহা [1][4][5] KCSI, PC, KC, (২৪  মার্চ ১৮৬৩  ৪  মার্চ  ১৯২৮) ছিলেন বৃটিশ ভারতের  বিশিষ্ট আইনজ্ঞ ও রাষ্ট্রনায়ক। তিনি বিহার ও ওড়িশা রাজ্যের প্রথম রাজ্যপাল, বাংলার প্রথম ভারতীয়  অ্যাডভোকেট জেনারেল, বড়লাটের এক্সিকিউটিভ কাউন্সিলের প্রথম ভারতীয় সদস্য এবং প্রথম ভারতীয় অবর সচিব। [6] তিনি প্রথম ব্যারণ সিনহা নামে পরিচিত ছিলেন।[7]

The Right Honourable

সত্যেন্দ্রপ্রসন্ন সিংহ

KCSI, PC, KC
২০ শে মে ১৯২০ খ্রিস্টাব্দে তোলা সত্যেন্দ্রপ্রসন্ন সিংহ'র ছবি লন্ডনের ন্যাশনাল পোর্ট্রেট গ্যালারিতে সংরক্ষিত
বিহার ও ওড়িশার গভর্নর [1]
কাজের মেয়াদ
২৯ ডিসেম্বর ১৯২০[1]  ৩০ নভেম্বর ১৯২১[1]
পূর্বসূরীপদ গঠিত
উত্তরসূরীHavilland Le Mesurier (acting)
ভারতের অবর সচিব
কাজের মেয়াদ
১৯১৯  ১৯২০
পূর্বসূরীদ্য লর্ড ইসলিঙটন
উত্তরসূরীদ্য আর্ল অব লিটন
সভাপতি, ভারতীয় জাতীয় কংগ্রেস
কাজের মেয়াদ
১৯১৫  ১৯১৬[2]
পূর্বসূরীভূপেন্দ্রনাথ বসু
উত্তরসূরীঅম্বিকাচরণ মজুমদার
ব্যক্তিগত বিবরণ
জন্ম২৪ মার্চ ১৮৬৩
রায়পুর বীরভূম, বেঙ্গল প্রেসিডেন্সি, বৃটিশ ভারত (বর্তমানে বীরভূম, পশ্চিমবঙ্গ ভারত [3]
মৃত্যু৪ মার্চ ১৯২৮(1928-03-04) (বয়স ৬৪)
বহরমপুর, বেঙ্গল প্রেসিডেন্সি, বৃটিশ ভারত ( বর্তমানে মুর্শিদাবাদ, পশ্চিমবঙ্গ, ভারত)
দাম্পত্য সঙ্গীগোবিন্দমোহিনী সিংহ (মৃ.১৯০৯)
সন্তান
পিতামাতাসিতিকণ্ঠ সিংহ (পিতা)
পেশারাজনীতিবিদ ও আইনজ্ঞ

প্রারম্ভিক জীবন ও শিক্ষা

সত্যেন্দ্রপ্রসন্ন সিংহ বৃটিশ ভারতের বেঙ্গল প্রেসিডেন্সির অধুনা পশ্চিমবঙ্গের বীরভূমের রায়পুরে ১৮৬৩ খ্রিস্টাব্দের ২৪ শে মার্চ জন্ম গ্রহণ করেন। তার পিতার নাম সিতিকণ্ঠ সিংহ।[3]  তার পূর্বপুরুষ লালচাঁদ দে মেদিনীপুর জেলার বড় ব্যবসায়ী ছিলেন। অজয় নদ  হয়ে তারা বোলপুরের দক্ষিণে রায়পুরে নতুন বসতি স্থাপন করেন এবং গ্রামের চৌধুরীদের কাছ থেকে জমিদারি কিনে নেন।  তার জন্ম সেই জমিদার বংশের উত্তর রাঢ় শ্রেণীর কায়স্থ পরিবারে।  [8] তিনি সিউড়ির বীরভূম জেলা স্কুলে প্রাথমিক শিক্ষা নেন। ১৮৭৭ খ্রিস্টাব্দে এন্ট্রান্স পাশ করেন ও স্কলারশিপ লাভ করেন। ১৮৭৯ খ্রিস্টাব্দে কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় অধীনস্থ  প্রেসিডেন্সি কলেজ থেকে এফ.এ পাশ করেন। প্রতি বৎসর ৫০ পাউন্ড হিসাবে চার বৎসরের স্কলারশিপ পেয়ে  ১৮৮১ খ্রিস্টাব্দে তিনি লন্ডনে যান এবং Lincoln's Inn নামক আইন বিদ্যালয়ে প্রবেশ করেন। কৃতিত্বের সাথে আইন পাঠ শেষ করেন। এখানে তিনি অনেক পুরস্কার ও তিন বৎসরের জন্য ১০০ পাউন্ড মূল্যের লিঙ্কন্ স ইন্ স্কলারশিপ পান।[9] ১৮৮৬ খ্রিস্টাব্দে তিনি ব্যারিস্টার হয়ে কলকাতায় চলে আসেন।[10]

কর্মজীবন

১৮৮৬ খ্রিস্টাব্দে দেশে ফিরে তিনি কলকাতা হাইকোর্টে  ব্যারিস্টারি এবং সিটি কলেজে আইন বিষয়ে অধ্যাপনা শুরু করেন। ১৮৯৪ খ্রিস্টাব্দে একজন ইউরোপীয়ের সঙ্গে অত্যন্ত দক্ষতায় মামলা পরিচালনা করে ১৯০৪ খ্রিস্টাব্দে র জানুয়ারি মাসে ভারত সরকারের স্ট্যান্ডিং কাউন্সেল নিযুক্ত হন। ভারতীয়দের মধ্যে  তিনিই প্রথম ১৯০৬ খ্রিস্টাব্দে অস্থায়ী অ্যাডভোকেট জেনারেল হয়ে ১৯০৮ খ্রিস্টাব্দে ওই পদে স্থায়ী হন। প্রথমদিকে তিনি আইন ব্যবসা হতে দশ হাজার পাউন্ডের বার্ষিক আয় ছেড়ে  এই পদ নিতে চাননি, কিন্তু মহম্মদ আলি জিন্না এবং গোপালকৃষ্ণ  গোখলের পরামর্শেই তা গ্রহণ করেন। [11] ১৯০৯ খ্রিস্টাব্দে বড়লাটের এক্সিকিউটিভ কাউন্সিলের প্রথম ভারতীয় সদস্য হন। ১৯১৫ খ্রিস্টাব্দে ১লা জানুয়ারি নববর্ষের সম্মাননা নাইট উপাধি লাভ করেন। ওই বছরেই তিনি ভারতীয় জাতীয় কংগ্রেসের বোম্বাই অধিবেশনে সভাপতি নির্বাচিত হন।  [12]

১৯১৪-১৮ খ্রিস্টাব্দে বিশ্বযুদ্ধের সময়, ১৯১৭ খ্রিস্টাব্দে তিনি War Conference-এর সদস্য নির্বাচিত হয়ে বিলেত যান। স্বদেশে ফিরে সরকারের শাসন পরিষদের অন্যতম সদস্যরূপে কাজ করেন। বিশ্বযুদ্ধ শেষে Peace Conference-এ ভারতের প্রতিনিধি হিসাবে ১৯১৯ খ্রিস্টাব্দে ইউরোপ যান। এই সময় "লর্ড" উপাধি-ভূষিত হয়ে সহকারী ভারতসচিবরূপেপার্লামেন্ট মহাসভায় আসন লাভ করেন। ১৯১৯ খ্রিস্টাব্দের ফেব্রুয়ারি তিনি বৃটিশ হাউস  অব লর্ডসে ভারতীয় হিসাবে বেঙ্গল প্রেসিডেন্সির  প্রথম ব্যারণ সিনহা অফ রায়পুর হন। ভারতীয়দের মধ্যে তিনিই প্রথম এবং একমাত্র উক্ত গৌরবের অধিকারী হন। তারই প্রচেষ্টায় হাউস অব লর্ডসে গভর্নমেন্ট অব ইন্ডিয়া অ্যাক্ট, ১৯১৯ পাশ হয়।

১৯২০ খ্রিস্টাব্দে দেশে ফিরে আসার পর তিনি বিহার ও ওড়িশার প্রথম ভারতীয় গভর্নর হন। অসুস্থতার জন্য মাত্র এগারো মাস তিনি ওই পদে ছিলেন। ১৯২৬ খ্রিস্টাব্দে পুনরায় লন্ডনে যান এবং সেখানে  প্রিভি কাউন্সিলের সদস্য হন। আবার স্বাস্থ্যের কারণে  ভারতে ফিরে আসেন।[9]

ভারতীয় জাতীয় কংগ্রেস

সত্যেন্দ্রপ্রসন্ন সিংহ ১৮৯৬ খ্রিস্টাব্দ থেকে ১৯১৯ খ্রিস্টাব্দ পর্যন্ত ভারতীয় জাতীয় কংগ্রেসের সদস্য ছিলেন। ১৯১৫ খ্রিস্টাব্দে বোম্বাই অধিবেশনে তিনি কংগ্রেসের সভাপতি নির্বাচিত হন। তবে তিনি ১৯১৯ খ্রিস্টাব্দে অন্যান্য মধ্যপন্থী সদস্যদের সাথে কংগ্রেস ত্যাগ করেছিলেন। ১৮৯৬ খ্রিস্টাব্দে কংগ্রেসের কলকাতা অধিবেশনে - তিনি একটি প্রস্তাব নিয়ে এসেছিলেন যে, কোনও ভারতীয় রাজ্যের কোনও শাসককে প্রকাশ্য বিচার ব্যতিরেকে পদচ্যুত করা উচিত নয়। [12]

শান্তিনিকেতন

শান্তিনিকেতন মূলত বীরভূমের রায়পুরের সিংহ পরিবারের পৈতৃক জমিদারির একটি অংশ ছিল। [13] সত্যেন্দ্রপ্রসন্ন সিংহ একটি ঘড়ি টাওয়ার এবং বেল দিয়ে সিংহ সদন নির্মাণের জন্য অনুদান দিয়েছিলেন। এই ভবনেই অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয় কবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরকে সম্মানসূচক ডক্টরেট প্রদান করে। [14]

সিংহ সদন - ১৯২৬ খ্রি - শান্তিনিকেতন ২০১৪-০৬-২৯ ৫৫০৫
প্রবেশদ্বার - সিংহ সদন - ১৯২৬ খ্রি - শান্তিনিকেতন ২০১৪-০৬-২৯ ৫৫২৫

জীবনাবসান

সত্যেন্দ্রপ্রসন্ন সিংহ ১৯২৮ খ্রিস্টাব্দের ৪ঠা মার্চ মুর্শিদাবাদ জেলার বহরমপুরে প্রয়াত হন।

ব্যক্তিগত জীবন

তিনি ১৮৮০ খ্রিস্টাব্দের ১৫ ই মে বেঙ্গল প্রেসিডেন্সির বর্ধমান জেলার (বর্তমানে পূর্ব বর্ধমান জেলার) ভাতারের মাহাতা গ্রামের গোবিন্দমোহিনী মিত্রকে বিবাহ করেন। তাঁদের চার পুত্র এবং তিন কন্যা ছিল। [15]

শৈলী

  • 1863–1886: সত্যেন্দ্র প্রসাদ সিনহা
  • 1886–1915: সত্যেন্দ্র প্রসাদ সিনহা, কেসি
  • 1915-10 ফেব্রুয়ারি 1919: স্যার সত্যেন্দ্র প্রসাদ সিনহা, কেসি
  • 10-19 ফেব্রুয়ারি 1919: সঠিক সম্মানিত স্যার সত্যেন্দ্র প্রসাদ সিনহা, পিসি, কেসি
  • 19 ফেব্রুয়ারি 1919 - 1920: ডান মাননীয় দ্য লর্ড সিনহা, পিসি, কেসি
  • 1920-1921: মহামান্য দ্য রাইট মাননীয় প্রভু সিনহা, পিসি, কেসি
  • 1921–1928: সঠিক সম্মানিত দ্য লর্ড সিনহা, কেসিএসআই, পিসি, কেসি

তথ্যসূত্র

  1. "Governor of Bihar"governor.bih.nic.in। ৪ ফেব্রুয়ারি ২০০৮ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ৮ জানুয়ারি ২০১৮
  2. "Indian National Congress: From 1885 till 2017, a brief history of past presidents"The Indian Express (ইংরেজি ভাষায়)। ৪ ডিসেম্বর ২০১৭। সংগ্রহের তারিখ ৮ জানুয়ারি ২০১৮
  3. সেনগুপ্ত, সুবোধচন্দ্র; বসু, অঞ্জলি (২০১৬)। সংসদ বাঙালি চরিতাবিধান (Biographical dictionary)। কলকাতা: সাহিত্য সংসদ। পৃষ্ঠা ৭৬২। আইএসবিএন ৯৭৮-৮১-৭৯৫৫-১৩৫-৬ |আইএসবিএন= এর মান পরীক্ষা করুন: invalid character (সাহায্য)
  4. "The London Gazette"
  5. "The language of difference"The Telegraph। সংগ্রহের তারিখ ৮ জানুয়ারি ২০১৮
  6. "Dadabhai Naoroji to Nehru; Indira to Sonia: Profiles of Congress presidents"Hindustan Times (ইংরেজি ভাষায়)। ২০ নভেম্বর ২০১৭। সংগ্রহের তারিখ ৮ জানুয়ারি ২০১৮
  7. "S. P. Sinha | Making Britain"www.open.ac.uk। সংগ্রহের তারিখ ৮ জানুয়ারি ২০১৮
  8. An Indian In The House: The lives and times of the four trailblazers who first brought India to the British Parliament (ইংরেজি ভাষায়)। Mereo Books। ২০১৯। আইএসবিএন 978-1-86151-490-5। সংগ্রহের তারিখ ৪ এপ্রিল ২০২০
  9. FitzGerald, S. V. (২০০৪)। "Sinha, Satyendra Prasanna, first Baron Sinha (1863–1928)"অক্সফোর্ড ডিকশনারি অব ন্যাশনাল বায়োগ্রাফি (অনলাইন সংস্করণ)। অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয় প্রেস। ডিওআই:10.1093/ref:odnb/36112 (সাবস্ক্রিপশন বা যুক্তরাজ্যের গণগ্রন্থাগারের সদস্যপদ প্রয়োজন।)
  10. Wolpert, Stanley (২০১৩)। Jinnah of Pakistan। Karachi, Pakistan: Oxford University Press। পৃষ্ঠা 30। আইএসবিএন 978-0-19-577389-7।
  11. "Indian National Congress"। ৭ জুলাই ২০২০ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ৮ জানুয়ারি ২০১৮
  12. Basak, Tapan Kumar, Rabindranath-Santiniketan-Sriniketan (An Introduction), p. 2, B.B.Publication
  13. "Santiniketan"UNESCO World Heritage Centre (ইংরেজি ভাষায়)।
  14. "Sinha, Satyendra Prasanna, first Baron Sinha (1863–1928)"অক্সফোর্ড ডিকশনারি অব ন্যাশনাল বায়োগ্রাফি (অনলাইন সংস্করণ)। অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয় প্রেস। সংগ্রহের তারিখ ১৮ আগস্ট ২০১৩ (সাবস্ক্রিপশন বা যুক্তরাজ্যের গণগ্রন্থাগারের সদস্যপদ প্রয়োজন।)
This article is issued from Wikipedia. The text is licensed under Creative Commons - Attribution - Sharealike. Additional terms may apply for the media files.