সঙ্গীতকল্পতরু

সঙ্গীতকল্পতরু হল একটি বাংলা গানের সংকলন গ্রন্থ। এই গ্রন্থের সম্পাদক স্বামী বিবেকানন্দ (নরেন্দ্রনাথ দত্ত নামে) ও বৈষ্ণবচরণ বসাক। ১৮৮৭ সালের অগস্ট বা সেপ্টেম্বর মাসে কলকাতার আর্য পুস্তকালয় থেকে বইটি প্রথম প্রকাশিত হয়। ১৯৬৩ সালে স্বামী বিবেকানন্দের জন্মশতবর্ষ উপলক্ষে প্রকাশিত দিলীপকুুমার মুখোপাধ্যায়ের সঙ্গীতসাধনায় বিবেকানন্দ ও সঙ্গীতকল্পতরু বইটিতে সঙ্গীতকল্পতরুর স্বামীজীর লেখা ভূমিকাটি মুদ্রিত হয় । প্রথম প্রকাশেের নয় মাসের মধ্যে সঙ্গীতকল্পতরুর তিনটি মুদ্রণ পাওয়া যায় । এর প্রায় ১১২ বছর পরে, ২০০০ সালে ,প্রাসঙ্গিক তথ্য ও আলোচনা-সহ সর্বানন্দ চৌধুরীর সম্পাদনায় সঙ্গীতকল্পতরুর নতুন সংস্করণ প্রকাশিত হয়,রামকৃষ্ণ মিশন ইন্সটিটিউট অব কালচার থেকে ।এটির প্রকাশক স্বামী প্রভানন্দ। আনুুষ্ঠানিক প্রকাশ করেন পণ্ডিত রবিশঙ্করসঙ্গীতকল্পতরুতে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের ১২টি গান অন্তর্ভুক্ত হয়েছিল।

সঙ্গীতকল্পতরু
লেখকস্বামী বিবেকানন্দ (নরেন্দ্রনাথ দত্ত নামে)
বৈষ্ণবচরণ বসাক
দেশভারত
ভাষাবাংলা
বিষয়বাংলা গানের সংকলন
প্রকাশিতপ্রথম প্রকাশ : ১৮৮৭
নতুন সংস্করণ: ২০০০ (রামকৃষ্ণ মিশন ইন্সটিটিউট অব কালচার)
পৃষ্ঠাসংখ্যা৭৩০
আইএসবিএন৯৭৮-৮১-৮৭৩৩-২৮৮-৬

বিষয়বস্তু

এই বইটি বাংলা গানের একটি সংকলন গ্রন্থ। এখানে কণ্ঠ ও যন্ত্রসংগীতের বিভিন্ন বিষয়ও আলোচিত হয়েছে।[1] বইটি বিভিন্ন বিভাগে বিভক্ত এবং গানগুলি বিষয় অনুযায়ী সাজানো। প্রথম বিভাগে আছে দেশাত্মবোধক গান।[2] বইটিতে ১২টি রবীন্দ্রসংগীত রয়েছে।[lower-alpha 1][3]

বইটিতে ৯০ পাতা জুড়ে সংগীত তত্ত্ব আলোচিত হয়েছে এবং ১৮ পাতা জুড়ে চণ্ডীদাস, বিদ্যাপতি, রামপ্রসাদ সেন প্রমুখ কবিদের জীবনীও আলোচিত হয়েছে।[4] বইটি বিবেকানন্দের সন্ন্যাস গ্রহণের আগে সংকলিত হয়েছিল। এই বইটিতে অন্তর্ভুক্ত ১২টি রবীন্দ্রসংগীতের মধ্যে তিনটি রবীন্দ্রনাথ নিজে বিবেকানন্দ ও অন্যান্যদের শিখিয়েছিলেন। [5] সাধারণ ব্রাহ্ম সমাজে রাজনারায়ণ বসুর কন্যা লীলা দেবীর বিবাহ অনুষ্ঠানে বিবেকানন্দ ও অন্যান্যরা এই গানগুলি সমবেত কণ্ঠে গেয়েওছিলেন। বইটি প্রকাশের আগে বিবেকানন্দ নিজেও তিনটি গান লিখেছিলেন, যার মধ্যে একটি তিনি বরানগর মঠে গাইতেন।[6]

এই বইয়ে অন্তর্ভুক্ত কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ গান হল—[7]

গানবর্গরচয়িতারাগতাল
যাবে কি হে দিন বিফলে চলিয়েব্রহ্মসংগীতমুলতানএকতাল
মন চল নিজ নিকেতনেব্রহ্মসংগীতঅযোধ্যানাথ পাকড়াশীসুরাত মল্লারএকতাল
গগনের থালে রবি চন্দ্র দীপক জ্বলেব্রহ্মসংগীতরবীন্দ্রনাথ ঠাকুর[7]জয়জয়ন্তীঝাঁপতাল
মলিন পঙ্কিল মনে কেমনে ডাকিব তোমায়ভক্তিগীতিবিজয়কৃষ্ণ গোস্বামীমুলতানআধাঠেকা
বিপদ ভয় বরণ যে করে ওরে মনভক্তিগীতিযদুভট্টছায়ানটঝাঁপতাল
দেখিলে তোমার সেই অতুল প্রেম আনেনাভক্তিগীতিগগনেন্দ্রনাথ ঠাকুরবাহারএকতাল
তুমি আমার বন্ধু, কী বলি তোমায় নাথকীর্তন
অজ্ঞাত
ডুব ডুব ডুব রূপসাগরে আমার মনবাউল গান
অজ্ঞাত
প্রভু ম্যায় গুলাম, ম্যায় গুলাম, ম্যায় গুলাম তেরাভজন
অজ্ঞাত

প্রকাশ ও পুনঃপ্রকাশ

১৮৮৭ সালের অগস্ট বা সেপ্টেম্বর মাসে কলকাতার ১১৮, আপার চিৎপুর রোডে অবস্থিত আর্য পুস্তকালয় থেকে প্রথম সঙ্গীতকল্পতরু প্রকাশিত হয়। সংকলকের নাম হিসেবে লেখা ছিল “শ্রীনরেন্দ্রনাথ দত্ত, বি. এ. ও বৈষ্ণবচরণ বসাক”। বিবেকানন্দই এই বইয়ের অধিকাংশ গান সংকলন করেছিলেন। কিন্তু অনিবার্য কারণবশতঃ কাজটি শেষ করতে পারেননি। রাজাগোপাল চট্টোপাধ্যায়ের মতে, সংগীতের উপর ৯০ পাতার পরিচিতিটি বৈষ্ণবচরণ বসাকের লেখা।যদিও এর পক্ষে কোনা প্রমাণই নেই। বিভিন্ন তথ্যের ভিত্তিতে প্রমাণিত ও নিশ্চিতভাবেই বলা যায় এটি স্বামীজীর রচনা।দিলীপকুমারের সঙ্গীতসাধনায় বিবেকানন্দ -তেে ও সর্বানন্দ সম্পাদিত সঙ্গীতকল্পতরু-র প্রাসঙ্গিক আলোচনায় এই বিষয়ে বহু তথ্য আছে। যদিও এই বইয়ের চতুর্থ সংস্করণে বিবেকানন্দের নামটি বর্জিত হয় । বৈষ্ণবচরণ বিবেকানন্দের নাম ও লেখা বাদ দিয়ে বইয়ের নাম দেন বিশ্বসঙ্গীত । এরপর আবার ২০০০ সালে সঙ্গীতকল্পতরু -র নতুন সংস্করণ প্রকাশিত হয় রামকৃষ্ণ মিশন ইন্সটিটিউট অব কালচার থেকে ।

তথ্যসূত্র

টীকা

  1. Songs written by Rabindranath Tagore

পাদটীকা

  1. Society 1986, পৃ. 51।
  2. The Institute 2002, পৃ. 261।
  3. "বিবেকানন্দ বনাম রবীন্দ্রনাথ"Anandabazar Patrika। ৫ জানুয়ারি ২০১৩। ৩ অক্টোবর ২০১৩ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ৩ অক্টোবর ২০১৩ (বাংলা)
  4. Chattopadhyaya 1999, পৃ. 33।
  5. Ramananda Chatterjee (১৯৮০)। The Modern Review। Modern Review Office। পৃষ্ঠা 166।
  6. Chattopadhyaya 1999, পৃ. 34।
  7. Dey 1990, পৃ. 96।

সূত্র

This article is issued from Wikipedia. The text is licensed under Creative Commons - Attribution - Sharealike. Additional terms may apply for the media files.