সকিম উদ্দিন

শহীদ সকিম উদ্দিন (জন্ম: অজানা - মৃত্যু: ১৯৭১) বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধের একজন বীর মুক্তিযোদ্ধা। স্বাধীনতা যুদ্ধে তার সাহসিকতার জন্য বাংলাদেশ সরকার তাকে বীর বিক্রম খেতাব প্রদান করে। [1]

সকিম উদ্দিন
মৃত্যু১৯৭১
জাতীয়তাবাংলাদেশী
নাগরিকত্ব ব্রিটিশ ভারত (১৯৪৭ সাল পর্যন্ত)
 পাকিস্তান (১৯৭১ সালের পূর্বে)
 বাংলাদেশ
পরিচিতির কারণবীর বিক্রম

জন্ম ও শিক্ষাজীবন

শহীদ সকিম উদ্দিনের পৈতৃক বাড়ি পঞ্চগড় জেলার তেঁতুলিয়া উপজেলার দেবনগর ইউনিয়নের মাগুরমারী গ্রামে। ছোটবেলায় তার বাবা মারা যান। সকিম উদ্দিনেরা এক ভাই, এক বোন। তিনি অবিবাহিত ছিলেন। তার বাবার নাম হিরিম উদ্দিন এবং মায়ের নাম সকিনা বেগম।

কর্মজীবন

সকিম উদ্দিন চাকরি করতেন পাকিস্তান সেনাবাহিনীর চতুর্থ ইস্ট বেঙ্গল রেজিমেন্টে। এর অবস্থান ছিল কুমিল্লার ময়নামতী সেনানিবাসে। মার্চ মাসে ছুটিতে বাড়িতে ছিলেন। মুক্তিযুদ্ধ শুরু হলে ঝাঁপিয়ে পড়েন যুদ্ধে। তিনি ৬ নম্বর সেক্টরের ভজনপুর সাব-সেক্টরের বিভিন্ন স্থানে সাহসিকতার সঙ্গে যুদ্ধ করেন।

মুক্তিযুদ্ধে ভূমিকা

পাকিস্তান সেনাবাহিনীর অগ্রবর্তী ঘাঁটি অমরখানা মুক্তিযোদ্ধাদের দখলে। পেছনে হটে পাকিস্তানিরা অবস্থান নিয়েছে জগদলহাটে। পঞ্চগড় জেলার অন্তর্গত অমরখানা ও জগদলহাট। অমরখানার অবস্থান ভারত-বাংলাদেশ সীমান্তে। অমরখানা দখলের পর সকিম উদ্দিনসহ একদল মুক্তিযোদ্ধা দ্রুত সমবেত হন জগদলহাটে। তিনি একটি উপদলের (প্লাটুন) দলনেতা। তাদের সঙ্গে আছে মিত্র বাহিনীও। পাকিস্তান সেনাবাহিনী তাদের উপস্থিতি টের পেয়ে আর্টিলারির গোলাবর্ষণ শুরু করে। সকিম উদ্দিনসহ নিয়মিত মুক্তিবাহিনীর মুক্তিযোদ্ধারা ছিলেন সামনের ফ্রন্ট লাইনে। বেশুমার কামানের গোলা এসে পড়ে তাদের পেছনে ও আশপাশে। মাটি কাঁপিয়ে বিকট শব্দে সেগুলো বিস্ফোরিত হয়। সমানে ফাটতে থাকে। নিমেষে জায়গাটা পরিণত হয় নরকে। পোড়া বারুদের গন্ধ আর ধোঁয়ায় বাতাস ভারী হয়ে পড়ে। প্রায় আধা ঘণ্টা ধরে চলে পাকিস্তান সেনাবাহিনীর গোলন্দাজ আক্রমণ। এরপর শুরু হয় স্থল আক্রমণ। সামনের প্রতিরক্ষা অবস্থানে সকিম উদ্দিন ও তার সহযোদ্ধারা প্রস্তুতই ছিলেন। তারা বিক্রমের সঙ্গে পাকিস্তান সেনাবাহিনীর আক্রমণ মোকাবিলা করেন। যুদ্ধক্ষেত্রের সামনের ফ্রন্ট প্রচণ্ড গোলাগুলিতে গর্জে ওঠে। অগ্রবর্তী ঘাঁটি হাতছাড়া হয়ে যাওয়ায় পাকিস্তানিরা ছিল উন্মত্ত। বেপরোয়া হয়ে তারা আক্রমণ শুরু করে। প্রতিটা পাকিস্তানি সেনা ছিল সুইসাইড স্কোয়াডের মতো। ক্ষিপ্রগতিতে এগিয়ে যায় মুক্তিযোদ্ধাদের অবস্থানের দিকে। এতে সকিম উদ্দিন ও তার সহযোদ্ধারা বিচলিত হননি। সাহসিকতার সঙ্গে আক্রমণ প্রতিহত করেন। সকিম উদ্দিন ও তার সহযোদ্ধাদের বীরত্বে থেমে যায় পাকিস্তানিদের এগিয়ে আসার প্রচেষ্টা। তুমুল মুখোমুখি যুদ্ধের একপর্যায়ে অসীম সাহসী সকিম উদ্দিন ঝোড়োগতিতে গুলি করতে করতে এগিয়ে যান। জীবনের মায়া ত্যাগ করে ঝাঁপিয়ে পড়েন পাকিস্তানিদের ওপর। এ সময় হঠাৎ গুলিবিদ্ধ হন তিনি। তার বুকসহ হাত-পায়ে গুলি লাগে। মাটিতে ঢলে পড়েন তিনি। নিভে যায় তার জীবন প্রদীপ। সেদিন যুদ্ধ চলাবস্থায় সকিম উদ্দিনের সহযোদ্ধারা চেষ্টা করেন তার মরদেহ উদ্ধারের। কিন্তু পাকিস্তান সেনাবাহিনীর ব্যাপক গোলাগুলির মুখে তারা মরদেহ উদ্ধারে ব্যর্থ হন। কয়েকজন আহতও হন। পরে যৌথ বাহিনীর তীব্র আক্রমণের মুখে পাকিস্তানিরা পালিয়ে যায়। তখন মরদেহ উদ্ধার করে জগদলহাটেই তাকে সমাহিত করা হয়। শহীদ সকিম উদ্দিনের সমাধি সংরক্ষিত। তবে স্বাধীনতার পর থেকে তা অযত্ন-অবহেলায় পড়ে ছিল। সম্প্রতি জেলা পরিষদের উদ্যোগে সংস্কার করা হয়েছে। কিন্তু নামফলকে তার নামের পাশে বীর বিক্রম না লিখে বীর প্রতীক লেখা হয়েছে। পঞ্চগড় শহীদ মুক্তিযোদ্ধা স্মৃতিস্তম্ভেও তার নামের পাশে বীর প্রতীক লেখা রয়েছে। [2]

পুরস্কার ও সম্মাননা

তথ্যসূত্র

  1. "দৈনিক প্রথম আলো, "তোমাদের এ ঋণ শোধ হবে না" | তারিখ: ২০-০৯-২০১২"। ২০২০-০৭-২৩ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২০১৪-০১-০৩
  2. একাত্তরের বীরযোদ্ধা, খেতাব পাওয়া মুক্তিযোদ্ধাদের বীরত্বগাথা (দ্বিতীয় খন্ড)। প্রথমা প্রকাশন। মার্চ ২০১৩। পৃষ্ঠা ১৪৫। আইএসবিএন 9789849025375।

বহি:সংযোগ

This article is issued from Wikipedia. The text is licensed under Creative Commons - Attribution - Sharealike. Additional terms may apply for the media files.