সংকেত (তথ্য প্রক্রিয়াজাতকরণ)

যোগাযোগ ও তথ্য প্রক্রিয়াজাতকরণ ক্ষেত্রে কোনও সাংকেতিক পদ্ধতির মাধ্যমে উৎপাদিত তথ্য-উপাত্তকে সাংকেতিক তথ্য-উপাত্ত বা সংক্ষেপে সংকেত বলে। সাংকেতিক পদ্ধতি বলতে কতগুলি নিয়ম বা সূত্রের সমন্বয়ে গঠিত একটি পদ্ধতিকে বোঝায় যার মাধ্যমে মানুষের বোধগম্য কোনও তথ্য-উপাত্ত যেমন বর্ণ, সংখ্যা, শব্দ, চিত্র বা ইঙ্গিতকে অন্য একটি অবোধগম্য রূপে রূপান্তর করা যায়। ইংরেজি পরিভাষায় কোড (Code) শব্দটি দিয়ে সাংকেতিক পদ্ধতি এবং ঐ পদ্ধতির মাধ্যমে উৎপাদিত সাংকেতিক তথ্য-উপাত্ত তথা সংকেত --- উভয়কেই বোঝানো হয়।

মোর্স সাংকেতিক পদ্ধতি (মোর্স কোড), একটি বিখ্যাত সাংকেতিক পদ্ধতি

সাংকেতিক প্রক্রিয়াতে তথ্য-উপাত্তকে সংকুচিত করা হতে পারে কিংবা এর অর্থকে গুপ্ত করা হতে পারে। সাংকেতিক তথ্য-উপাত্ত সংবলিত বার্তাটিকে একটি যোগাযোগ প্রণালী (Communication channel) দিয়ে সম্প্রচার করা হতে পারে, কিংবা কোনও সংরক্ষণ মাধ্যমে (Storage medium) সংরক্ষণ করা হতে পারে।

সাংকেতিক পদ্ধতির সবচেয়ে প্রাচীন ও সরল উদাহরণ হল মানুষের মুখের স্বাভাবিক ভাষা, যার সুবাদে একজন ব্যক্তি কথা বলার (speech) মাধ্যমে অন্য ব্যক্তির সাথে যোগাযোগ স্থাপন করে এবং সে যা কিছু দেখে, শোনে, অনুভব করে বা চিন্তা করে, তা উপস্থিত এক বা একাধিক শ্রোতাকে মৌখিক বার্তারূপে জ্ঞাপন করতে বা অবহিত করতে পারে। কিন্তু কোনও ব্যক্তির কণ্ঠ যত বেশি দূরত্ব পর্যন্ত শোনা যায়, ঠিক ততদূর পর্যন্ত মুখের ভাষার পরিধি সীমিত, ফলে মানুষের মুখের স্বাভাবিক ভাষা শোনার জন্য অন্য শ্রোতাদেরকে বক্তার কথা বলার সময় কাছাকাছি অবস্থানে উপস্থিত থাকতে হয়। এরপর লিখন পদ্ধতির উদ্ভাবনের ফলে কথিত ভাষাকে দৃশ্যমান প্রতীকে রূপান্তর করা সম্ভব হয় এবং যোগাযোগের পরিসর স্থান-কালের সীমাবদ্ধতা অতিক্রম করতে সক্ষম হয়। ১৯শ শতকে টেলিগ্রাফ বা দূরলিখন প্রযুক্তির উদ্ভাবনের সুবাদে লিখিত বার্তা এবং এরপর বিংশ শতাব্দীতে টেলিফোন বা দূরালাপনী প্রযুক্তির উদ্ভাবনের ফলে মৌখিক বার্তাকে তাৎক্ষণিকভাবে স্থান-কালের সীমানা পেরিয়ে জ্ঞাপন করা সম্ভব হয়।

সাংকেতিকীকরণ ও বিসাংকেতিকীকরণ

সাংকেতিকীকরণ (Encoding এনকোডিং) প্রক্রিয়াতে কোনও ডিজিটাল ব্যবস্থাতে প্রবিষ্ট কিংবা যোগাযোগের কোনও উৎস থেকে প্রাপ্ত মানুষের বোধগম্য তথ্য-উপাত্তকে যোগাযোগ বা সংরক্ষণের স্বার্থে সুনির্দিষ্ট পদ্ধতির মাধ্যমে অবোধগম্য সংকেতে রূপান্তর করা হয়। এর বিপরীতমুখী প্রক্রিয়া হল বিসাংকেতিকীকরণ (Decoding ডিকোডিং) যেখানে সাংকেতিক তথ্য-উপাত্তকে (কোড) সুনির্দিষ্ট পদ্ধতিতে পুনরায় মানুষের বোধগম্য একটি রূপে (যেমন মানুষের কোনও স্বাভাবিক ভাষার রূপে) ফিরিয়ে আনা হয়।

আধুনিক ডিজিটাল ইলেক্ট্রনিক যন্ত্র কম্পিউটারে যোগাযোগ ও তথ্য বিশ্লেষণের জন্য যে সাংকেতিক পদ্ধতি ব্যবহার করা হয় তা হল বাইনারি সাংকেতিক পদ্ধতি।

বিভিন্ন ধরনের সাংকেতিক পদ্ধতি

  1. বাইনারি কোডেড ডেসিমাল (বিসিডি) : দুই-ভিত্তিক বা দ্বিমিক সংকেতে রূপান্তরিত দশমিক সংখ্যা।
  2. আলফা নিউমেরিক কোড : বর্ণ-সাংখ্যিক সাংকেতিক পদ্ধতি
  3. ইবিসিআইসি
  4. অ্যাস্কি কোড বা আস্কি সাংকেতিক পদ্ধতি
  5. ইউনিকোড: ডিজিটাল ব্যবস্থাতে ব্যবহার্য বিশ্বজনীন প্রমিত সাংকেতিক পদ্ধতি।

তথ্যসূত্র

    This article is issued from Wikipedia. The text is licensed under Creative Commons - Attribution - Sharealike. Additional terms may apply for the media files.