শ্রেণিবিন্যাসবিদ্যা (জীববিজ্ঞান)
শ্রেণিবিন্যাসবিদ্যা বিজ্ঞানের একটি শাখা যা জীবজগতের বিভিন্ন সদস্যদের যথাক্রমে শনাক্তকরণ ও নামকরণ করে বিভিন্ন দল-উপদলে বা স্তরে পর্যায়ক্রমে সাজিয়ে শ্রেণিবিন্যাস করে।[1] নামকরণের ক্ষেত্রে সাধারণত দ্বিপদ নামকরণ নীতি অনুসৃত হয়। যেমন মানুষ একটি স্তন্যপায়ী, মেরুদণ্ডী শ্রেণীর প্রাণী এবং মানুষের বৈজ্ঞানিক নাম হোমো স্যাপিয়েন্স।
বিবর্তনীয় জীববিজ্ঞান |
---|
নিম্নোক্ত বিষয়ের উপর একটি ধারাবাহিকের অংশ |
শ্রেণিবিন্যাসবিদ্যা
আজ পর্যন্ত বিভিন্ন উদ্ভিদের প্রায় চার লক্ষ ও প্রাণীর পনের লক্ষেরও বেশি প্রজাতির নামকরণ ও বর্ণনা করা হয়েছে। তবে এ সংখ্যা চূড়ান্ত নয়। কেননা, প্রায় প্রতিদিনই আরও নতুন নতুন প্রজাতির বর্ণনা সংযুক্ত হচ্ছে। অনুমান করা হয় যে, ভবিষ্যতে সব জীবের বর্ণনা শেষ হলে এর সংখ্যা দাঁড়াবে প্রায় এক কোটিতে। জানা, বোঝা ও শেখার সুবিধার্থে এই অসংখ্য জীবকে সুষ্ঠুভাবে বিন্যাস করা বা সাজানোর প্রয়োজন। জীবজগৎকে একটি স্বাভাবিক নিয়মে শ্রেণিবিন্যাস করার প্রয়োজনীয়তা অবশ্য অনেক আগেই প্রকৃতিবিদগণ অনুভব করেছিলেন। সেই প্রয়োজনের তাগিদেই জীববিজ্ঞানের স্বতন্ত্র শাখা হিসেবে এখন গড়ে উঠেছে শ্রেণিবিন্যাসবিদ্যা।
শ্রেণিবিন্যাসবিদ্যার লক্ষ্য
শ্রেণিবিন্যাসের মূল লক্ষ্য মূলত একটাই। তা হচ্ছে: এই বিশাল ও বৈচিত্র্যময় জীবজগৎকে সহজভাবে অল্প পরিশ্রমে এবং অল্প সময়ে সঠিকভাবে জানা।
শ্রেণিবিন্যাসবিদ্যার উদ্দেশ্য
শ্রেণিবিন্যাসবিদ্যার উদ্দেশ্য হলো: প্রতিটি জীবের দল ও উপদল সম্বন্ধে জ্ঞান আহরণ করা। জীবজগতের ভিন্নতার প্রতি আলোকপাত করে আহরিত জ্ঞানকে সঠিকভাবে সংরক্ষণ করা, পূর্ণাঙ্গ জ্ঞানকে সংক্ষিপ্তভাবে উপস্থাপন করা এবং প্রতিটি জীবকে শনাক্ত করে তার নামকরণের ব্যবস্থা করা, সর্বোপরি জীবজগৎ ও মানব কল্যাণে প্রয়োজনীয় জীবসমূহকে শনাক্ত করে তাদের সংরক্ষণ অথবা প্রজাতিগত সংখ্যা বৃদ্ধির ব্যবস্থা নেওয়া।
শ্রেণিবিন্যাসবিদ্যায় অবদান
শ্রেণিবিন্যাসবিদ্যায় উল্লেখযোগ্য অবদান রেখেছেন সুইডিস প্রকৃতিবিদ ক্যারোলাস লিনিয়াস বা কার্ল লিনিয়াস (সুয়েডীয় ভাষায়: Carl Linnaeus; লাতিন ভাষায়: Carolus Linnaeus, ক্যারোলাস লিনিয়াস) (২৩ মে, ১৭০৭-১০ জানুয়ারি, ১৭৭৮)। ১৭৩৫ সালে উপসালা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে চিকিৎসাশাস্ত্রে ডিগ্রি লাভের পর তিনি উক্ত বিশ্ববিদ্যালয়ের এনাটমির অধ্যাপক হিসেবে নিযুক্ত হয়েছিলেন। বিভিন্ন ধরনের উদ্ভিদ, বিশেষ করে ফুল সংগ্রহ ও জীবের শ্রেণিবিন্যাসে তাঁর অত্যন্ত আগ্রহ ছিল। তিনিই সর্বপ্রথম জীবের পূর্ণ শ্রেণিবিন্যাসের এবং নামকরণের ভিত্তি প্রবর্তন করেন। অসংখ্য জীবনমুনার বৈশিষ্ট্য পর্যবেক্ষণ করে তিনি জীবজগৎকে দুটি ভাগে যথা উদ্ভিদজগৎ ও প্রাণীজগৎ হিসেবে ভাগ করেন। Systema Naturae এর দশম সংস্করণে (১৭৫৮) লিনিয়াস জীবের নামকরণের ক্ষেত্রে দ্বিপদ নামকরণ নীতি প্রবর্তন করেন এবং গণ ও প্রজাতির সংজ্ঞা দেন। উদ্ভিদ ও প্রাণীর আকৃতি, গঠন, ও বৈশিষ্ট্য পর্যবেক্ষণ করে তাদের নামকরণ করা হয়।
দ্বিপদ নামকরণ নীতি
- নামকরণে অবশ্যই ল্যাটিন শব্দ ব্যবহার করতে হবে।
- বৈজ্ঞানিক নামের দুটি অংশ থাকবে, প্রথম অংশটি গণ(Genus) নাম এবং দ্বিতীয় অংশটি প্রজাতির(Species) নাম।
- জীবজগতের প্রতিটি বৈজ্ঞানিক নামকে অনন্য (unique) হতে হয়। কারণ, একই নাম দুটি পৃথক জীবের জন্য ব্যবহারের অনুমতি নেই।
- বৈজ্ঞানিক নামের প্রথম অংশের প্রথম অক্ষর বড় অক্ষর হবে,বাকি অক্ষরগুলো ছোট অক্ষর হবে এবং দ্বিতীয় অংশটির নাম ছোট অক্ষর দিয়ে লিখতে হবে।
- বৈজ্ঞানিক নাম মুদ্রণের সময় সর্বদা ইটালিক অক্ষরে লিখতে হবে।
- হাতে লেখার সময় গণ ও প্রজাতিক নামের নিচে আলাদা আলাদা দাগ দিতে হবে।
- যদি কয়েকজন বিজ্ঞানী একই জীবকে বিভিন্ন নামকরণ করেন, তবে অগ্রাধিকার আইন অনুসারে প্রথম বিজ্ঞানী কর্তৃক প্রদত্ত নামটি গৃহীত হবে।
- যিনি প্রথম কোনো জীবের বিজ্ঞানসম্মত নাম দিবেন তাঁর নাম সনসহ উক্ত জীবের বৈজ্ঞানিক নামের শেষে সংক্ষেপে সংযোজন করতে হবে।[2] নামটি অবশ্যই ইতালীয় শৈলীতে (যেমন- Staphylococcus aureus) লিখতে হবে কিংবা নাম লেখার পর গণ ও প্রজাতির নিচে পৃথক পৃথকভাবে নিম্নরেখ দ্বারা চিহ্নিত করতে হবে (যেমন- Staphylococcus aureus)।
শ্রেণিবিন্যাসবিদ্যার ধারাক্রম
- ডোমেইন বা সম্রাজ্য
- মহাপর্ব (উদ্ভিদবিজ্ঞানে মহাবিভাগ)
- পর্ব (উদ্ভিদবিজ্ঞানে বিভাগ)
- উপপর্ব (উপবিভাগ)
- ইনফ্রাপর্ব (ইনফ্রাবিভাগ)
- উপপর্ব (উপবিভাগ)
- পর্ব (উদ্ভিদবিজ্ঞানে বিভাগ)
- মহাকোহর্ট (উদ্ভিদবিজ্ঞান)
- কোহর্ট (উদ্ভিদবিজ্ঞান)
- উপকোহর্ট (উদ্ভিদবিজ্ঞান)
- ইনফ্রাকোহর্ট (উদ্ভিদবিজ্ঞান)
- উপকোহর্ট (উদ্ভিদবিজ্ঞান)
- কোহর্ট (উদ্ভিদবিজ্ঞান)
- মহাশ্রেণী
- মহাবিভাগ (প্রাণিবিজ্ঞান)
- বিভাগ (প্রাণিবিজ্ঞান)
- উপবিভাগ (প্রাণিবিজ্ঞান)
- ইনফ্রাবিভাগ (প্রাণিবিজ্ঞান)
- উপবিভাগ (প্রাণিবিজ্ঞান)
- বিভাগ (প্রাণিবিজ্ঞান)
- মহালিজন (প্রাণিবিজ্ঞান)
- লিজন (প্রাণিবিজ্ঞান)
- উপলিজন (প্রাণিবিজ্ঞান)
- ইনফ্রালিজন (প্রাণিবিজ্ঞান)
- উপলিজন (প্রাণিবিজ্ঞান)
- লিজন (প্রাণিবিজ্ঞান)
- মহাকোহর্ট (প্রাণিবিজ্ঞান)
- কোহর্ট (প্রাণিবিজ্ঞান)
- উপকোহর্ট (প্রাণিবিজ্ঞান)
- ইনফ্রাকোহর্ট (প্রাণিবিজ্ঞান)
- উপকোহর্ট (প্রাণিবিজ্ঞান)
- কোহর্ট (প্রাণিবিজ্ঞান)
- গিগাবর্গ (প্রাণিবিজ্ঞান)
- মেগানবর্গ বা মেগাবর্গ (প্রাণিবিজ্ঞান)
- অনুচ্ছেদ (প্রাণিবিজ্ঞান)
- উপঅনুচ্ছেদ (প্রাণিবিজ্ঞান)
- গিগাপরিবার (প্রাণিবিজ্ঞান)
- মহাগোত্র
- গণ
- উপগণ
- অনুচ্ছেদ (উদ্ভিদবিজ্ঞান)
- উপঅনুচ্ছেদ (উদ্ভিদবিজ্ঞান)
- সিরিজ (উদ্ভিদবিজ্ঞান)
- উপসিরিজ (উদ্ভিদবিজ্ঞান)
- সিরিজ (উদ্ভিদবিজ্ঞান)
- উপঅনুচ্ছেদ (উদ্ভিদবিজ্ঞান)
- অনুচ্ছেদ (উদ্ভিদবিজ্ঞান)
- উপগণ
- মহাপ্রজাতি বা প্রজাতিশ্রেণী
উদাহরণ
|
|
|
আরো দেখুন
তথ্যসূত্র
- Judd, W.S., Campbell, C.S., Kellog, E.A., Stevens, P.F., Donoghue, M.J. (2007) Taxonomy. In Plant Systematics - A Phylogenetic Approach, Third Edition. Sinauer Associates, Sunderland.
- মাধ্যমিক জীববিজ্ঞান(নবম-দশম শ্রেণী) (অধ্যায়-১; পৃষ্ঠা-৭-৮), জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ড, ঢাকা। সংস্করণ: নভেম্বর ২০১২।।