শ্মশান

শ্মশান হল মৃতদেহ অন্ত্যেষ্টিস্থল। এখানে মৃতদেহ এনে চিতায় দাহ করা হয়। সাধারণতও গ্রাম বা শহরের উপকণ্ঠে কোনও নদী বা জলাশয়ের তীরে শ্মশান গড়ে ওঠে। অধিকাংশ শ্মশানই নদীর ঘাটের কাছে অবস্থিত বলে একে শ্মশানঘাট নামেও চিহ্নিত করা হয়।

ভারতের একটি গ্রামের উপকণ্ঠে অবস্থিত শ্মশানক্ষেত্র

"শ্মশান" শব্দটি সংস্কৃত ভাষা থেকে আগত: "শ্ম" শব্দের অর্থ "শব" ("মৃতদেহ") এবং "শান" শব্দটির অর্থ "শন্য" ("বিছানা")।[1][2] প্রধানত হিন্দুধর্ম, জৈনধর্ম, বৌদ্ধধর্মশিখধর্ম এর অনুগামীরা শ্মশানে ধর্মীয়ভাবে মৃতের শেষকৃত্য সম্পন্ন করেন। এছাড়া কিছু নাস্তিক্যবাদে বিশ্বাসী ও অন্যরাও মৃতদেহ দাহ করেন।

ধর্মীয় মতে শশ্মানে দাহ করাকে পঞ্চতত্বএ বিলীন বলা হয়। অর্থাৎ পাঁচটা তত্বে দেহ বিলীন হয়। যথা- অগ্নি, জল, বায়ু, আকাশমাটি

প্রথা

হিন্দু রীতি অনুযায়ী, মৃতদেহকে সৎকারের জন্য শ্মশানে আনা হয়। সেখানে মুখাগ্নিকারীকে দক্ষিণার বিনিময়ে শ্মশানক্ষেত্রের নিকটে বসবাসকারী ডোমের হাত থেকে অগ্নি সংগ্রহ করে চিতা প্রজ্বালিত করতে হয়।[3]

বিভিন্ন হিন্দু শাস্ত্রগ্রন্থে শ্মশান নির্বাচনের স্থান সম্পর্কে বিস্তারিত নির্দেশ দেওয়া হয়েছে: এই স্থান কোনও গ্রামের উত্তর দিকে অবস্থিত হতে হবে এবং শ্মশানের জমির ঢাল দক্ষিণ দিকে থাকতে হবে। সেই সঙ্গে শ্মশানকে কোনও নদী বা জলের উৎসের নিকটবর্তী হতে হবে এবং তা সাধারণের দৃষ্টিপট থেকে একটু দূরে থাকতে হবে।[4]

শ্মশানে মৃতদেহ সাধারণত দাহ করা হয় কাঠের তৈরি চিতায়। তবে আধুনিক কালে ভারতের অনেক শহরে আভ্যন্তরীণ শ্মশানগৃহে বৈদ্যুতিক বা গ্যাসের চুল্লিতেও শবদাহ করা হয়।[5][6]

আধ্যাত্মিক ভূমিকা

হিন্দুরা শ্মশানকে ভূত, প্রেতাত্মা ও উগ্রস্বভাব দেবদেবীদের আবাসস্থল মনে করেন। তান্ত্রিকেরা শ্মশানে তন্ত্রসাধনা করে থাকেন। তাই সাধারণ লোকে রাতে শ্মশানের কাছে যেতে চান না। স্ত্রীলোকের শ্মশানে যাওয়া শাস্ত্রনিষিদ্ধ। পুরুষেরাই শবদাহের জন্য শ্মশানে যেতে পারেন। শুধুমাত্র ডোম ও চণ্ডালেরা শ্মশানে বা শ্মশানের কাছে বাস করে।

শ্মশানক্ষেত্র হল অঘোরী, কাপালিক, কাশ্মীরী শৈব, কৌল প্রভৃতি অধুনা বিরল বামাচারী সাধক সম্প্রদায়ের শবসাধনা জাতীয় বিভিন্ন সাধনার স্থল। ঐন্দ্রজালিক শক্তি অর্জনের জন্য তারা শ্মশানে কালী, তারা, ভৈরব, ভৈরবী, ডাকিনী, বেতাল ইত্যাদির পূজা করেন। বজ্রযান, দোগচেন প্রভৃতি সম্প্রদায়ের তিব্বতি বৌদ্ধ তান্ত্রিকেরাও একই উদ্দেশ্যে শ্মশানে চোদ, ফাওয়া, ঝিত্রো ইত্যাদির সাধনা করেন। শ্মশানাধিপতি নামে এক দেবতাকে সাধারণত শ্মশানের অধীশ্বর মনে করা হয়।

আরও দেখুন

  • শ্মশানাধিপতি


শ্মশানের উৎপত্তি, ইতিহাস, পুরাণ, জনশ্রুতি, দেবদেবী, শ্মশান সাধনা, প্রাচীন ও মধ‍্যযুগের শ্মশান, শ্মশানের বিবর্তন, লোকাচার, উৎসব প্রভৃতি বিষয় নিয়ে আলোচিত অলোক সরকারের ‘শ্মশান : মিথ পুরাণ ইতিহাস’ গ্রন্থের নাম অনুসন্ধিৎসু পাঠকের জন‍্য উল্লেখযোগ্য। লেখক বিস্তৃতভাবে শ্মশানকে দেখতে চেয়েছেন নানান দিক থেকে।

তথ্যসূত্র

  1. Diana L. Eck (১৯৮২)। Banaras: City of Light। Routledge & Kegan Paul। পৃষ্ঠা 33–। আইএসবিএন 978-0-7102-0236-9। সংগ্রহের তারিখ ৯ সেপ্টেম্বর ২০১২
  2. Bibek Debroy, Dipavali Debroy। The Garuda Purana। Lulu.com। পৃষ্ঠা 174–। আইএসবিএন 978-0-9793051-1-5। সংগ্রহের তারিখ ৯ সেপ্টেম্বর ২০১২
  3. Lalita Prasad Vidyarthi; Makhan Jha; Baidyanath Saraswati (১৯৭৯)। The Sacred Complex of Kashi: A Microcosm of Indian Civilization। Concept Publishing Company। পৃষ্ঠা 60–। GGKEY:PC0JJ5P0BPA। সংগ্রহের তারিখ ৯ সেপ্টেম্বর ২০১২
  4. Ahsan Jan Qaisar; Som Prakash Verma; Mohammad Habib (১ ডিসেম্বর ১৯৯৬)। Art and Culture: Endeavours in Interpretation। Abhinav Publications। পৃষ্ঠা 2–। আইএসবিএন 978-81-7017-315-1। সংগ্রহের তারিখ ৯ সেপ্টেম্বর ২০১২
  5. A modern indoor Electric crematorium in Surat, India
  6. Cemetery Staff Go On Strike From May 1. DNA India, 25 May 2010 - At every cemetery, there is a death register karkoon (clerk), also known as a DRK, an electrician for electric crematorium, a furnace operator and labourers.
This article is issued from Wikipedia. The text is licensed under Creative Commons - Attribution - Sharealike. Additional terms may apply for the media files.