শেখ সোলায়মান

শেখ সোলায়মান (জন্ম: অজানা - মৃত্যু: ১৯৮৬) বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধের একজন বীর মুক্তিযোদ্ধা। স্বাধীনতা যুদ্ধে সাহসিকতাপূর্ণ অবদানের জন্য বাংলাদেশ সরকার তাকে বীর প্রতীক খেতাবে ভূষিত করে।[1]

শেখ সোলায়মান
মৃত্যু১৯৮৬
জাতীয়তাবাংলাদেশী
নাগরিকত্ব পাকিস্তান (১৯৭১ সালের পূর্বে)
 বাংলাদেশ
পরিচিতির কারণবীর প্রতীক

জন্ম ও শিক্ষাজীবন

শেখ সোলায়মানের পৈতৃক বাড়ি মাদারীপুর জেলার রাজৈর উপজেলার নারায়ণপুর গ্রামে। তার বাবার নাম মো. সবদু শেখ এবং মায়ের নাম মাজু বিবি। তার স্ত্রীর নাম আনোয়ারা বেগম। তাদের চার ছেলে ও এক মেয়ে।

কর্মজীবন

শেখ সোলায়মান চাকরি করতেন ইপিআরে। ১৯৭১ সালে কর্মরত ছিলেন চট্টগ্রাম সেক্টরের অধীনে। মুক্তিযুদ্ধ শুরু হলে ঝাঁপিয়ে পড়েন যুদ্ধে। কালুরঘাট, রাঙামাটি, হেঁয়াকো, চিকনছড়াসহ বিভিন্ন স্থানে প্রতিরোধযুদ্ধ শেষে ভারতে যান। এরপর প্রথমে ১ নম্বর সেক্টরে এবং পরে নিয়মিত মুক্তিবাহিনীর জেড ফোর্সের অধীনে যুদ্ধ করেন।

মুক্তিযুদ্ধে ভূমিকা

মুক্তিযুদ্ধ শুরু হলে টানা প্রায় এক মাস শেখ সোলায়মান ও তার সহযোদ্ধারা যুদ্ধে ছিলেন। পাকিস্তান সেনাবাহিনীর বিরুদ্ধে বিভিন্ন স্থানে ক্রমাগত যুদ্ধ করেন। ঠিকমতো তাদের আহার-নিদ্রা হয়নি। জনবল ও অস্ত্রের রসদ কমে যায়। সেনাবাহিনীর অব্যাহত আক্রমণের মুখে তারা পিছু হটেন, কিন্তু মনোবল হারাননি। শেখ সোলায়মান ও তার সহযোদ্ধারা পিছু হটে সমবেত হন সীমান্ত এলাকায়। চারদিকে পাহাড়। তাদের অবস্থান এক জঙ্গলের ভেতরে। চারদিক সুনসান। ক্লান্ত সহযোদ্ধারা বিশ্রামে, তবে সবাই সতর্ক। যেকোনো সময় পাকিস্তান সেনাবাহিনী তাদের আক্রমণ করতে পারে। ভোর হয় হয়। এমন সময় তাদের অবস্থানে আক্রমণ চালায় পাকিস্তানি সেনারা। শান্ত এলাকা তীব্র গোলাগুলিতে হঠাৎ প্রকম্পিত হয়ে পড়ে। শত্রুর আক্রমণে শেখ সোলায়মান ও তার সহযোদ্ধারা বিচলিত হননি। প্রত্যাশিত ছিল শত্রুর এ আক্রমণ। তারা প্রস্তুতই ছিলেন। দ্রুত যে যেভাবে পারেন আক্রমণ মোকাবিলা শুরু করেন। আক্রমণকারী পাকিস্তানি সেনারা ছিল বেপরোয়া ও অপ্রতিরোধ্য। জীবনের মায়া তাদের ছিল না। মরিয়া মনোভাব নিয়ে মুক্তিযোদ্ধাদের আক্রমণ করে। শেখ সোলায়মান সহযোদ্ধাদের নিয়ে সাহসিকতার সঙ্গে আক্রমণ প্রতিরোধ করেন। কিন্তু বিপুল বিক্রমে যুদ্ধ করেও পাকিস্তানি সেনাদের অগ্রযাত্রা তারা ঠেকাতে ব্যর্থ হন। কয়েক ঘণ্টা তুমুল যুদ্ধ হয়। এরপর তারা পুনরায় পিছু হটতে বাধ্য হন। এ ঘটনা ১৯৭১ সালের ২৭ এপ্রিলের। বৃহত্তর চট্টগ্রাম জেলার অন্তর্গত হেঁয়াকোয়। মুক্তিযুদ্ধ শুরু হলে চট্টগ্রাম অঞ্চলে প্রতিরোধযুদ্ধরত মুক্তিযোদ্ধারা বিভিন্ন স্থানে যুদ্ধের পর সমবেত হন সীমান্তবর্তী রামগড়ে। তাদের একাংশ প্রতিরক্ষা অবস্থান নেন হেঁয়াকোয়। মুক্তিযোদ্ধাদের এ দলে ছিলেন শেখ সোলায়মান। তারা ছিলেন কয়েকটি উপদলে বিভক্ত। একটি উপদলের নেতৃত্বে ছিলেন তিনি। রামগড় মুক্ত রাখতে সামরিক দিক থেকে হেঁয়াকো ছিল বেশ গুরুত্বপূর্ণ। পাকিস্তান সেনাবাহিনী রামগড় দখলের জন্য পূর্ণ শক্তিতে অগ্রসর হয়। প্রথমে হেঁয়াকোয় অবস্থানরত মুক্তিযোদ্ধাদের তিন দিক থেকে আক্রমণ করে। ভারী অস্ত্রশস্ত্রে সজ্জিত পাকিস্তানি সেনাদের আক্রমণে শেখ সোলায়মানসহ মুক্তিযোদ্ধারা বেশ নাজুক অবস্থায় পড়ে যান। কয়েক ঘণ্টা যুদ্ধের পর তারা পিছু হটে চিকনছড়ায় যান। পাকিস্তান সেনাবাহিনী এক দিন পর সেখানেও আক্রমণ করে। তখন মুক্তিযোদ্ধাদের চিকনছড়া থেকে পিছু হটে রামগড় যেতে হয়। ২ মে রক্তক্ষয়ী এক যুদ্ধের পর রামগড়ের পতন ঘটে। [2]

পুরস্কার ও সম্মাননা

তথ্যসূত্র

  1. দৈনিক প্রথম আলো, "তোমাদের এ ঋণ শোধ হবে না" | তারিখ: ০২-১০-২০১২
  2. একাত্তরের বীরযোদ্ধা, খেতাব পাওয়া মুক্তিযোদ্ধাদের বীরত্বগাথা (দ্বিতীয় খন্ড)। প্রথমা প্রকাশন। মার্চ ২০১৩। পৃষ্ঠা ৩২৪। আইএসবিএন 9789849025375।

পাদটীকা

বহি:সংযোগ

This article is issued from Wikipedia. The text is licensed under Creative Commons - Attribution - Sharealike. Additional terms may apply for the media files.