শেখ আবুল কাশেম মিঠুন

শেখ আবুল কাশেম মিঠুন (১৮ এপ্রিল ১৯৫১ – ২৫ মে ২০১৫) একজন বাংলাদেশী চলচ্চিত্র অভিনেতা।

শেখ আবুল কাশেম মিঠুন
জন্ম(১৯৫১-০৪-১৮)১৮ এপ্রিল ১৯৫১
মৃত্যু২৪ মে ২০১৫(2015-05-24) (বয়স ৬৪)
মৃত্যুর কারণকিডনি, লিভার, হৃৎপিণ্ড ও ফুসফুসের সমস্যায
জাতীয়তাবাংলাদেশী
নাগরিকত্ববাংলাদেশী
শিক্ষাবি.এস.সি., স্নাতক
মাতৃশিক্ষায়তনখুলনা সিটি কলেজ
রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়
পেশাচলচ্চিত্র অভিনেতা, নাট্যকার
প্রতিষ্ঠানবাংলাদেশ সাংস্কৃতিক কেন্দ্র, বাংলাদেশ চলচ্চিত্র ফেডারেশন
উল্লেখযোগ্য কর্ম
বেদের মেয়ে জোৎস্না
দাম্পত্য সঙ্গীপারভিন আক্তার
সন্তান২ মেয়ে (সঙ্গীতা ও তরী)
পিতা-মাতা
  • শেখ আবুল হোসেন (পিতা)
  • হাফেজা খাতুন (মাতা)

জন্ম

শেখ আবুল কাশেম মিঠুন ১৯৫১ সালের ১৮ এপ্রিল সাতক্ষীরা জেলার সুন্দরবন ঘেঁষা আশাশুনি উপজেলার দরগাহপুর গ্রামের ঐতিহ্যবাহী শেখ পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন। তার পিতা মরহুম শেখ আবুল হোসেন ও মা হাফেজা খাতুন। নয় ভাই-বোনের মধ্যে তিনি ছিলেন সকলের বড়।[1] শেখ আবুল কাশেম মিঠুন সঙ্গীতা ও তরী নামের দুই কন্যা সন্তানের জনক।[2]

শিক্ষাজীবন

১৯৭২ সালে জগৎ বিখ্যাত বিজ্ঞানী স্যার পিসি রায় প্রতিষ্ঠিত পাইকগাছা উপজেলার রাড়ুলির আরকেবিকে এইচসি ইনস্টিটিউট হতে ম্যাট্রিক পাস করেন। এরপর তিনি চলে আসেন খুলনায়। এখানে এসে তিনি ফুফাতো ভাই খাদ্য বিভাগের কর্মকর্তা শেখ আব্দুল জলিল এবং বংশের বড় বোন হাজেরা জলিলের বাসায় ওঠেন। এইচএসসিতে ভর্তি হন খুলনা সিটি কলেজে। এখান থেকে ১৯৭৪ সালে পাস করে একই কলেজে বিএসসিতে ভর্তি হন।[3] পরবর্তীতে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় থেকে গ্রাজুয়েশন করেন। [1]

কর্মজীবন  

বি এস সি তে ভর্তির পর তিনি সাহিত্য ও সাংস্কৃতি অঙ্গনে জড়িয়ে পড়েন। ১৯৭৮ সালে নূর মোহাম্মদ টেনা সম্পাদিত ‘সাপ্তাহিক কালান্তর’ পত্রিকায় লেখালেখির মাধ্যমে সাংবাদিকতা শুরু করেন। [4] পরবর্তী পর্যায়ে তিনি ‘কালান্তর’ এর কার্যনির্বাহী সম্পাদকের দায়িত্ব পালন করেন। এ ছাড়া তিনি বাংলাদেশ বেতার খুলনা কেন্দ্রের স্ক্রিপ্ট রাইটার ও গীতিকার হিসেবেও কাজ করেন। [5] সংস্কৃতিমনা শেখ আবুল কাশেম মিঠুন ১৯৮০ সালে চলচ্চিত্র জগতে প্রবেশ করেন। তার প্রথম অভিনীত ছবি ‘তরুলতা’। প্রথম ছবিটিতেই তিনি ব্যাপক জনপ্রিয়তা পান। তার আরো অনেকগুলো জনপ্রিয় সিনেমা রয়েছে। এরমধ্যে উল্লেখযোগ্য ‘ঈদ মোবারক’, ‘ভেজা চোখ’, ‘নিকাহ’, ‘কুসুমকলি’, ‘প্রেম প্রতিজ্ঞা’, ‘বেদের মেয়ে জোছনা’, ‘নিঃস্বার্থ’, ‘সাক্ষাৎ’, ‘স্বর্গনরক’, ‘ত্যাগ’, ‘চাকর’, ‘জিদ’, ‘চাঁদের হাসি’, ‘নরম-গরম’, ‘গৃহলক্ষ্মী’, ‘এ জীবন তোমার আমার’, ‘খোঁজ-খবর’, ‘ছোবল’, ‘কসম’, ‘দিদার’, ‘পরিচয়’ ‘মাসুম’, ‘কুসুমকলি’, ‘দস্যু রাণী ফুলন দেবী’, ‘জেলহাজত’, ‘ত্যাজ্যপুত্র’, ‘সর্দার’, ‘অন্ধবধূ’, অনন্য, চ্যালেঞ্জ, চন্দনা, ডাকু, স্যারেন্ডার, বাবা কেন চাকর প্রভৃতি। নায়ক ছাড়াও তিনি সিনেমার পার্শ্ব চরিত্রেও অভিনয় করেছেন। এছাড়াও তিনি অসংখ্য সিনেমার চিত্রনাট্য রচনা করেছেন। [6]

২০০০ সালে তিনি সিনেমার অভিনয় থেকে সরে আসেন। তারপরও তিনি স্ক্রিপ্ট রাইটার ও গীতিকার হিসেবে মৃত্যুর আগ পর্যন্ত কাজ করেছেন। শিশুদের নিয়ে দিগন্ত টেলিভিশনে করা তার অনুষ্ঠানটিও ছিল জনপ্রিয়। অভিনয় থেকে সরে আসলেও শেখ আবুল কাশেম মিঠুন আজীবন সংস্কৃতি চর্চার সঙ্গে জড়িত ছিলেন। [7][8] কবি মতিউর রহমান মল্লিক-এর মৃত্যুর পর শেখ আবুল কাশেম মিঠুন ‘বাংলাদেশ সংস্কৃতিক কেন্দ্র’র হাল ধরেন। [9] তিনি ছিলেন এই সংগঠনের উপ-পরিচালক। [10]

চলচ্চিত্র

  • সারেন্ডার (১৯৮৭) - মাসুম
  • চাকর (১৯৯২)
  • ত্যাগ (১৯৯৩)
  • বাবা কেন চাকর
  • যোদ্ধা (২০০০) - সাজ্জাদ
  • প্রেমিক ডাকাত (২০০০)
  • দুর্ধর্ষ পামেলা (২০০২)
  • খেয়া ঘাটের মাঝি (২০০৩)
  • ফুল আর পাথর (২০০৪)
  • কুখ্যাত জরিনা (২০০৪)

ঈদ মোবারক’, ‘ভেজা চোখ’, ‘নিকাহ’, ‘কুসুমকলি’, ‘প্রেম প্রতিজ্ঞা’, ‘বেদের মেয়ে জোছনা’, ‘নিঃস্বার্থ’, ‘সাক্ষাৎ’, ‘স্বর্গনরক’, ‘জিদ’, ‘চাঁদের হাসি’, ‘নরম-গরম’, ‘গৃহলক্ষ্মী’, ‘এ জীবন তোমার আমার’, ‘খোঁজ-খবর’, ‘ছোবল’, ‘কসম’, ‘দিদার’, ‘পরিচয়’ ‘মাসুম’, ‘কুসুমকলি’, ‘দস্যু রাণী ফুলন দেবী’, ‘জেলহাজত’, ‘ত্যাজ্যপুত্র’, ‘সর্দার’, ‘অন্ধবধূ’, অনন্য, চ্যালেঞ্জ, চন্দনা, ডাকু,

মৃত্যু

শেখ আবুল কাশেম মিঠুন ২০১৪ সালের মার্চে হঠাৎ অসুস্থ হয়ে পড়েন। এরপর ঢাকার বিভিন্ন হাসপাতালে তিনি চিকিৎসা নেন। তিনি যে কঠিন রোগে আক্রান্ত ছিলেন তার কথাবার্তায় তা কখনো ফুটে ওঠেনি। তিনি কিডনি, লিভার, হৃৎপিণ্ড ও ফুসফুসের সমস্যায় ভুগছিলেন। [11] অসুস্থ অবস্থাতেই ২০১৫ সালের ১১ মে তিনি তার অসুস্থ মা হাফেজা খাতুনকে দেখতে খুলনায় আসেন। অসুস্থ মাকে দেখতে এসে তিনি নিজেই অসুস্থ হয়ে পড়েন। তার শরীরের অবস্থার অবনতি হলে ১৪ মে বিকেলে স্থানীয় ইসলামী ব্যাংক হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। এখানে ১৮ মে পর্যন্ত তিনি চিকিৎসাধীন ছিলেন। অবস্থার আরো অবনতি হলে উন্নত চিকিৎসার জন্য ১৯ মে সকালে তাকে বেনাপোল সীমান্ত পথে ভারতের কোলকাতায় পাঠানো হয়।[12] সেখানে তিনি বিশিষ্ট কার্ডিয়াক সার্জন প্রফেসর ডা. পিবি শুকলা এবং কোটারী হাসপাতালের বিশিষ্ট মেডিসিন বিশেষজ্ঞ ডা. শেখ শামীমুল হকের তত্ত্বাবধানে চিকিৎসা নেন। [13] চিকিৎসাধীন অবস্থায় কোটারী হাসপাতালে ২৪ মে দিবাগত রাত টার দিকে শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন।[13][14][15][16][17][18] ২৬ মে সন্ধ্যা ৭টায় পেট্রাপোল সীমান্ত দিয়ে লাশ দেশে পৌঁছে। সেখান থেকে এ্যাম্বুলেন্সে রাত ১০টায় লাশ দরগাঁহপুর গ্রামে আনা হয়। রাত ১০ টার পর আবুল কাশেম মিঠুনের কফিন দরগাঁহপুর পৌঁছায়। [19][20] রাত ১১টা ৪৫ মিনিটে  জানাজা নামাজ দরগাহপুর এস কে আর এইচ কলেজিয়েট স্কুল]] মাঠে অনুষ্ঠিত হয়। [21][22][23][24][25][26]

তথ্যসূত্র

  1. "সংরক্ষণাগারভুক্ত অনুলিপি"। ২২ সেপ্টেম্বর ২০১৯ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২৭ সেপ্টেম্বর ২০২১
  2. "শেখ আবুল কাশেম মিঠুন"দৈনিক সংগ্রাম। সংগ্রহের তারিখ ২০১৯-০৯-২২
  3. "চিত্রনায়ক শেখ আবুল কাশেম মিঠুন"The Daily Sangram। সংগ্রহের তারিখ ২০১৯-০৯-২২
  4. probashsangbad.com (২০১৯-০৫-২৪)। "চিত্রনায়ক মিঠুনের চতুর্থ মৃত্যুবার্ষিকী"Probash Sangbad (প্রবাস সংবাদ)। ২০১৯-০৯-২২ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২০১৯-০৯-২২
  5. http://www.dailysangram.com/post/235918-%5B%5D
  6. কম, শিরোনাম ডট (২০১৫-০৫-২৬T১৩:০০:২৬+০৬:০০)। "শক্তিমান অভিনেতা মিঠুনের ইন্তেকাল"Shironaam Dot Com (ইংরেজি ভাষায়)। ২০১৭-০৮-১৪ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ 2019-09-22 এখানে তারিখের মান পরীক্ষা করুন: |তারিখ= (সাহায্য)
  7. "চিত্রনায়ক শেখ আবুল কাশেম মিঠুন : বদলে যাওয়া জীবন – www.boishakhinews24.com" (ইংরেজি ভাষায়)। সংগ্রহের তারিখ ২০১৯-০৯-২২
  8. "সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব আবুল কাশেম মিঠুন: বদলে যাওয়া জীবন"WORLDBANGLA.COM (ইংরেজি ভাষায়)। সংগ্রহের তারিখ ২০১৯-০৯-২২
  9. "» চলে গেলেন চিত্রনায়ক আবুল কাশেম মিঠুন" (ইংরেজি ভাষায়)। সংগ্রহের তারিখ ২০১৯-০৯-২২
  10. "Daily Patradoot Satkhira || Frist Online Satkhira news paper || We Serve Latest Satkhira News, Satkhirar Khabor,Satkhirarkhabor, Khulna, Sundarban, sunderbon, সাতক্ষীরা জেলা, kalaroa, Debhata, Asasuni, Symnagar, kaligang, tala, patkelghata, khulna news, newspaper of khulna, jessore"patradoot.net (ইংরেজি ভাষায়)। ২০১৫-০৫-১৬। সংগ্রহের তারিখ ২০১৯-০৯-২২
  11. "চিত্রনায়ক আবুল কাশেম মিঠুন আর নেই"Amar Sangbad (ইংরেজি ভাষায়)। ২০১৯-০৯-২২ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২০১৯-০৯-২২
  12. "শেখ আবুল কাশেম মিঠুন চিকিৎসার্থে ভারত গেছেন | daily nayadiganta"The Daily Nayadiganta। ২০১৯-০৯-২২ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২০১৯-০৯-২২
  13. "চিত্রনায়ক মিঠুনের ইন্তেকাল"www.jugantor.com। সংগ্রহের তারিখ ২০১৯-০৯-২২
  14. "চিত্রনায়ক শেখ আবুল কাশেম মিঠুন ইন্তিকাল |টাইগার নিউজ"। সংগ্রহের তারিখ ২০১৯-০৯-২২
  15. "চলে গেলেন চিত্রনায়ক আবুল কাশেম মিঠুন | কালের কণ্ঠ"Kalerkantho। সংগ্রহের তারিখ ২০১৯-০৯-২২
  16. "চিত্রনায়ক মিঠুন আর নেই"সমকাল (ইংরেজি ভাষায়)। সংগ্রহের তারিখ ২০১৯-০৯-২২
  17. http://www.newsgarden24.com/চলে-গেলেন-চিত্রনায়ক-আবুল/%5B%5D
  18. newsbangladesh.com। "চিত্রনায়ক মিঠুন আর নেই"www.newsbangladesh.com। ২০২০-০৬-১০ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২০১৯-০৯-২২
  19. "রাতেই সাতক্ষীরায় পৌঁছাবে চিত্রনায়ক মিঠুনের লাশ"www.bd24live.com (ইংরেজি ভাষায়)। সংগ্রহের তারিখ ২০১৯-০৯-২২
  20. News, Lalmohan BD। "চিরতরে চলে গেলেন চিত্রনায়ক আবুল কাশেম মিঠুন"Lalmohan BD News (ইংরেজি ভাষায়)। সংগ্রহের তারিখ ২০১৯-০৯-২২
  21. "অভিনেতা মিঠুন আর নেই"প্রথম আলো। সংগ্রহের তারিখ ২০১৯-০৯-২২
  22. "চিত্রনায়ক শেখ আবুল কাশেম মিঠুন স্মরণে আলোচনা সভা || সাপ্তাহিক সোনার বাংলা"www.weeklysonarbangla.net। সংগ্রহের তারিখ ২০১৯-০৯-২২
  23. "চলে গেলেন চিত্রনায়ক আবুল কাশেম মিঠুন | বাংলাদেশ প্রতিদিন"Bangladesh Pratidin (ইংরেজি ভাষায়)। ২০২০-০৬-১০ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২০১৯-০৯-২২
  24. "চিত্রনায়ক মিঠুন আর নেই | AjkerKhobor.Com" (ইংরেজি ভাষায়)। সংগ্রহের তারিখ ২০১৯-০৯-২২
  25. "চলচ্চিত্র অভিনেতা মিঠুন আর নেই"NTV Online। সংগ্রহের তারিখ ২০১৯-০৯-২২
  26. বার্তা, সময়ের (২০১৫-০৫-২৫)। "মিঠুন আর নেই"Ajker Somoyer Barta। সংগ্রহের তারিখ ২০১৯-০৯-২২
This article is issued from Wikipedia. The text is licensed under Creative Commons - Attribution - Sharealike. Additional terms may apply for the media files.