শেখ আবদুল মান্নান

শেখ আবদুল মান্নান (জন্ম: ১৯২৮ - মৃত্যু: ১৪ ডিসেম্বর ১৯৭১) তিনি ‘এস এ মান্নান’ ও ‘লাডু ভাই’ নামে সমধিক পরিচিতি। বাংলাদেশী সাংবাদিক ও শহীদ বুদ্ধিজীবী। যিনি বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধে মুক্তিযুদ্ধে শহীদ হন।[1][2][3]

শেখ আবদুল মান্নান
জন্ম১৯২৮
পার্ক সার্কাস, কলকাতা, পশ্চিমবঙ্গ রাজ্য, ব্রিটিশ ভারত
(বর্তমান  বাংলাদেশ)
মৃত্যু১৪ ডিসেম্বর ১৯৭১(1971-12-14) (বয়স ৫৮–৫৯)
ঢাকা (বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধে)
মাতৃশিক্ষায়তনইসলামিয়া কলেজ
পেশাসাংবাদিক
শহীদ বুদ্ধিজীবী
পিতা-মাতা
  • শেখ আব্দুল গণি (পিতা)
  • আঞ্জুমান আরা বেগম (মাতা)

জন্ম ও প্রথমিক জীবন

শেখ আবদুল মান্নানের জন্ম ১৯২৮ সালে ব্রিটিশ ভারতের পশ্চিমবঙ্গ রাজ্যের কলকাতার পার্ক সার্কাসে। শৈশবকাল কেটেছে সেখানেই। তার বাবা শেখ আব্দুল গণি ও মা আঞ্জুমান আরা বেগম। খেলাধুলা ছাড়াও লাডু ভাই রাজনীতি ও সংস্কৃতি ক্ষেত্রে সক্রিয় ভূমিকা রাখেন। এস এ মান্নান অবিবাহিত ছিলেন।[2]

শিক্ষা জীবন

লাডু ভাইয়ের কলকাতায় প্রাথমিক শিক্ষা শেষ হয়। কলকাতার ক্যাথোভিয়াল মিশন স্কুল থেকে ১৯৪৪ সালে ম্যাট্রিক পাস করেন। ইসলামিয়া কলেজ থেকে ১৯৪৬ সালে আই .এ পাস করেন এবং একই কলেজ থেকে ১৯৪৮ সালে বি.এ পাস করেন।[4]

কর্মজীবন

কোলকাতায় দৈনিক আজাদের সহ-সম্পাদক হিসেবে সাংবাদিকতা পেশায় প্রবেশ করেন। ভারত বিভক্তির পর ১৯৪৭ সালে তার পরিবার পূর্ব পাকিস্তানে চলে আসেন। দেশ বিভাগের পর দৈনিক আজাদও ঢাকা চলে এলে তিনি এই পত্রিকার ক্রীড়া সম্পাদক হিসেবে যোগ দেন। ‘খেলার খবর’ নামে একটি ক্রীড়া সাপ্তাহিকের প্রকাশক ও সম্পাদক ছিলেন তিনি।[4][5][6]

পূর্ব পাকিস্তানে ক্রীড়া সাংবাদিকতার পথিকৃৎ বলা হয় তাকে। পাকিস্তান অবজার্ভার পত্রিকার ক্রীড়া বিভাগের প্রধান ছিলেন তিনি। রেসিং করেসপন্ডেন্ট হিসেবেও কাজ করেন কিছুদিন। এর আগে তিনি দৈনিক সংবাদ পত্রিকার বার্তা বিভাগে কাজ করেন।[7][8][9]

৬০ এর দশকে পাকিস্তান অবজার্ভার ঢাকা ফুটবল লীগে পশ্চিম পাকিস্তানি খেলোয়াড়দের ব্যাপক প্রাধান্যের বিরুদ্ধে কথা তুলেন কর্তৃপক্ষের বিরুদ্ধে। এ সময়ে তিনি ঢাকা লীগের খেলায় পশ্চিম পাকিস্তান থেকে আগত খেলোয়াড়দের নিয়ে গঠিত টীমকে তিনি অবজার্ভার পত্রিকায় ‘মাকরানি এগারো’ খেতাবে চিহ্নিত করেন। কারণ তারা মাকরান থেকে এসেছিলেন।[3][10][11]

তিনি ১৯৬৩ থেকে ১৯৬৪ সালে মোহামেডান স্পোর্টিং ক্লাবের সাধারণ সম্পাদক ছিলেন। পূর্ব পাকিস্তান ক্রীড়া ফেডারেশনের সদস্য হিসেবে তিনি পূর্ব পাকিস্তানের খেলোয়াড়দের অধিকার প্রতিষ্ঠায় ভূমিকা রাখেন। তার নেতৃত্বের কারণে পাকিস্তান অবজার্ভারের ক্রীড়া পাতা পূর্ব পাকিস্তানের ক্রীড়া সংগঠক ও ক্রীড়ামোদীদের নিকট অত্যন্ত জনপ্রিয় ছিল। তিনি ১৯৬৪ সালে টোকিও অলিম্পিক গেমসে পূর্ব পাকিস্তানের ডেলিগেশন ম্যানেজার হিসেবে গিয়েছিলেন। [5][12][13]

স্বাধীনতা যুদ্ধ ও গুপ্তহত্যা

শেখ আবদুল মান্নান বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধে তার অবদান অপরিসীম। মুক্তিযুদ্ধাদের সাথে ঘনিষ্ঠ যোগাযোগ রাখতেন। ১৪ ডিসেম্বর ১৯৭১ সালে সন্ধ্যায় রাজাকার বাহিনী তার পুরানা পল্টনের বাসা থেকে তাকে তুলে নিয়ে যায়। তার আর কোনো সন্ধান পাওয়া যায় নাই।[14]

আরও দেখুন

তথ্যসূত্র

  1. "প্রতিকৃতিঃ শহীদ বুদ্ধিজীবী স্মারক ডাকটিকিট (প্রথম পর্যায়) প্রকাশ উপলক্ষে প্রকাশিত স্মরণিকা"। ১৯৯১।
  2. বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধে শহীদ সাংবাদিক। বাংলাদেশ: বাংলাদেশ প্রেস ইনস্টিটিউট। ২০১৫।
  3. আখতার হোসেন খান (২০১২)। "মান্নান, শেখ আবদুল"ইসলাম, সিরাজুল; মিয়া, সাজাহান; খানম, মাহফুজা; আহমেদ, সাব্বীর। বাংলাপিডিয়া: বাংলাদেশের জাতীয় বিশ্বকোষ (২য় সংস্করণ)। ঢাকা, বাংলাদেশ: বাংলাপিডিয়া ট্রাস্ট, বাংলাদেশ এশিয়াটিক সোসাইটিআইএসবিএন 9843205901। ওএল 30677644Mওসিএলসি 883871743
  4. "শহীদ সাংবাদিক এস এ মান্নান (লাডু ভাই)"বাংলাদেশ জাতীয় তথ্য। ১৩ সেপ্টেম্বর ২০১৮। ৩ সেপ্টেম্বর ২০১৯ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ৩ সেপ্টে ২০১৯
  5. "এমন খেলাপাগল মানুষটাকে খুন করেছিল পাকিস্তানিরা!"প্রথম আলো। সংগ্রহের তারিখ ২০১৯-০৯-০৩
  6. "১৩ শহীদ সাংবাদিকের ছবি সংবলিত স্মৃতিফলক উন্মোচন"jagonews24.com (ইংরেজি ভাষায়)। সংগ্রহের তারিখ ২০১৯-০৯-০৩
  7. সম্পাদনা রশীদ হায়দার, প্রথম প্রকাশ (১৯৯০)। স্মৃতি: ১৯৭১। বাংলাদেশ।
  8. "কৌশলে যুদ্ধের সংবাদ উপস্থাপন করতেন সাংবাদিকরা | banglatribune.com"Bangla Tribune। সংগ্রহের তারিখ ২০১৯-০৯-০৩
  9. "জাতির শ্রেষ্ঠ সন্তানদের স্মরণ আজ"Dhakatimes News। সংগ্রহের তারিখ ২০১৯-০৯-০৩
  10. "আজ শহীদ বুদ্ধিজীবী দিবস"Bhorer Kagoj। ২০১৭-১২-১৪। সংগ্রহের তারিখ ২০১৯-০৯-০৩
  11. "আত্মত্যাগী সাংবাদিক-বুদ্ধিজীবীদের পথই সমৃদ্ধির পথ : তথ্যমন্ত্রী"The Daily Sangram। সংগ্রহের তারিখ ২০১৯-০৯-০৩
  12. "ডাকটিকিটে শহীদ বুদ্ধিজীবী | আয়োজন | The Daily Ittefaq"archive1.ittefaq.com.bd। ২০১৯-০৯-০৩ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২০১৯-০৯-০৩
  13. "মুক্তিযুদ্ধে বঙ্গবন্ধু ছিলেন অসি আর বুদ্ধিজীবীরা ছিলেন মসী : তথ্যমন্ত্রী ওয়েবসাইট=দৈনিক নয়াদিগন্ত"। ২০১৯-০৯-০৩ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২০১৯-০৯-০৩
  14. "এস এ মান্নান (লাডু)"প্রথম আলো। সংগ্রহের তারিখ ২০১৯-০৯-০৩

বহিঃসংযোগ

This article is issued from Wikipedia. The text is licensed under Creative Commons - Attribution - Sharealike. Additional terms may apply for the media files.