শিবসাগর
শিবসাগর (অসমীয়া: শিৱসাগৰ, খ়িৱ্খ়াগর্, ইংরেজি: Sivasagar) হল ভারতের আসাম রাজ্যের একটি পুরাতন ও ঐতিহাসিক শহর। ভারতীয় ইতিহাস মতে আহোম সাম্রাজের রাজধানী এই স্থানে ছিল। দিখৈ ও দিসাং নদী, জয়দোল, দেবিদোল ইত্যাদি অতীতের কীর্তিচিহ্ন দিয়ে সমৃদ্ধ শিবসাগর শহর একটি আকর্ষণীয় পর্যটন স্থল। এই শহরটির পুরাতন নাম রংপুর।
শিবসাগর শিৱসাগৰ | |
---|---|
আসামের শহর | |
শিবসাগর | |
স্থানাঙ্ক: ২৬.৯৮° উত্তর ৯৪.৬৩° পূর্ব | |
দেশ | India |
রাজ্য | আসাম |
জেলা | শিবসাগর |
উচ্চতা | ৯৫ মিটার (৩১২ ফুট) |
জনসংখ্যা (২০০১) | |
• মোট | ৫৩,৮৫৪ |
Languages | |
• Official | অসমীয়া, ইংরেজি |
সময় অঞ্চল | ভারত মান সময় (ইউটিসি+5:30) |
ডাক সূচক সংখ্যা | ৭৮৫৬৪০ |
Telephone code | ০৩৬৭১ |
ওয়েবসাইট | sivasagar |
নামকরণ
অঞ্চলটির নাম এখানকার বিখ্যাত জলাশয় “শিবসাগর পুকুর” থেকে হয়েছে।
স্বর্গদেউ রুদ্রসিংহের মৃত্যুর পর তাঁহার ভাই শিবসিংহ রাজসিংহাসনে বসেন। শিবসিংহের চারটি পত্নী থাকা সত্বেও তিনি চিনাতলিয়া নটের কন্যা ফুলমতী বা ফুলেশ্বরীকে বিবাহ করেন। রাজার পত্নী হয়ে ফুলমতী নাম বদল করে প্রমথেশ্বরী নাম গ্রহণ করেন। ফুলমতী সুন্দরী, বুদ্ধিমতী ও উচ্চাভিলাষী ছিলেন। মিথ্যা দোষারোপ করে রাজাকে সিংহাসন থেকে পদচ্যুত করিয়ে ফুলমতী নিজে সিংহাসনে বসেন।
সন্তান জন্ম দেওয়ার সময় ফুলমতীর মৃত্যু হয়। ফুলমতীর মৃত্যুর পর রাজা শিবসিংহ ফুলমতীর বোন দ্রৌপদীকে বিবাহ করেন। রানী হয়ে দ্রৌপদী অম্বিকা নাম গ্রহণ করেন। রানী অম্বিকা স্বামীর নামে একটি বিশাল পুকুর খনন করান যা শিবসাগর নামকরণ করা হয়। রাজা শিবসিংহের নামের “শিব” ও বিশাল জলাশয় হওয়ার জন্য “সাগর”,দুই মিলিয়ে সরোবরটির নাম শিবসাগর রাখা হয়। ব্রিটিশ শাসনকালে এই অঞ্চল প্রশাসনিক কাজের কেন্দ্র ছিল তাই কালক্রমে এই স্থানের নাম শিবসাগর নামে পরিবর্তিত হয়ে যায়।
পর্যটক স্থল
শিবসাগর আহোম রাজাগণ কর্তৃক নির্মিত বিশাল পুখুরী, দেবীর মন্দির, জাদুঘর, সংগ্রহালয় ইত্যাদি দিয়ে ভরপুর ঐতিহাসিক নগর। ১৭৩৪ খ্রিস্টাব্দে রানী অম্বিকা কলুঞ্চপারে ভগবান শিবকে উৎসর্গ করে একটি পুকুর খনন করান। শিবকে উৎসর্গ করা এই পুকুরের নাম রাখা হয় শিবসাগর। অন্যমতে রাজা শিবসিংহের নামে পুকুরটি নামাঙ্কিত করা হয়। এই পুকুরের দক্ষিণ দিকে আরও তিনটি পুকুর আছে কিন্তু এদের মধ্যে শিবদোল সর্ববৃহৎ পুকুর। শিবদোলের পুর্বে বিষ্ণুদোল ও পশ্চিমে দেবীদোল অবস্থিত। শিবদোলে শিবরাত্রির দিনে মেলার আয়োজন করা হয়। অসমের বিভিন্ন স্থান ও উত্তরপূর্বাঞ্চল সহ পশ্চিমবঙ্গের পুণ্যার্থীরা এই স্থানে আসেন ও মেলা উপভোগ করেন। দেবীদোল হচ্ছে দুর্গাদেবীর মন্দির। দুর্গাপুজার তিথিতে এখানে রীতিমতো দেবীর পূজা করা হয় অপরদিকে বিষ্ণুদোল থেকে ৪ কিলোমিটার দূরত্বে দেউঘর অবস্থিত। বর্তমানদিনে দেউঘর, হরগৌরী মন্দির নামে পরিচিত। শিবসাগর শহর থেকে ২ কিলোমিটার দূরত্বে আহোম রাজার নির্মাণ করা তলাতল ঘর অবস্থিত। আহোম রাজা রাজেশ্বর সিংহ তলাতল ঘর নির্মাণ করিয়েছিলেন। তলাতল ঘর থেকে দিখৈ নদি ও কারেং ঘর যাওয়ার জন্য ২টি গুহা বা সুড়ঙ্গ ছিল যা প্রাকৃতিক দুর্যোগের ফলে ধ্বংস হয়ে গিয়েছে। তলাতল ঘর থেকে সামান্য দূর ব্যবধানে রংঘর অবস্থিত যা ৩৭ নং রাষ্ট্রীয় ঘাইপথ দ্বারা সংযুক্ত। স্বর্গদেউ প্রমত্তসিংহ ১৭৪৪ খ্রিস্টাব্দে পশুযুদ্ধের আনন্দ করার উদ্দেশ্যে এই দুটিতালা বিশিষ্ট মহল নির্মাণ করেছিলেন। লাই বা রুদ্রসিংহ নিজমাতা জয়মতীর স্মৃতিচিহ্ন হিসাবে জয়সাগর নামক একটি পুকুর খনন করান। ১৭০৩ খ্রিস্টাব্দে স্বর্গদেউ রুদ্রসিংহ শিবসাগর থেকে প্রায় ১২ কিলোমিটার দূরত্বে নামডাং নদীর উপরে শিলা বা পাথর দ্বারা একটি সেতু নির্মাণ করিয়েছিলেন যার নাম “খিলর খাঁকু”। নাগা পাহাড় থেকে পাথড় সংগ্রহ করে নির্দিষ্ট অনুপাতে সরিষার তেল, ধুনা, গুর, মাটিকালাই দাল, চুন, বরাচাউল ও হাঁসের ডিম ব্যবহার করে প্রায় ২০০ ফুট দীর্ঘ এই সেতুটির নির্মাণ করা হয়েছিল।
যাতায়াত ব্যবস্থা
রাজধানী গুয়াহাটি থেকে এই অঞ্চলে নৈশ বাসযাত্রা সুবিধা আছে। তেজপুর থেকে সচরাচর বাসের ব্যবস্থা আছে। নিকটবর্ত্তী শহর ডিব্রুগঢ় থেকে ভারতের বিভিন্ন স্থানে যাওয়ার জন্য ট্রেনের সুবিধা আছে। ইহাছাড়াও নিকটবর্ত্তী স্থানে যাতায়ত করার জন্য জলপথে ফেরির ব্যবস্থা আছে।
আবহাওয়া
শিবসাগরের আবহাওয়া সারা বছর মনোরম থাকে। তাপমাত্রা ১০° সেন্টিগ্রেড থেকে ৪০° সেন্টিগ্রেডের মধ্যে থাকে। ব্রহ্মপুত্র নদ শহরের নিকট দিয়ে প্রবাহিত হওয়ায় এখানে বছরে ৯০ থেকে ৯৪ ইঞ্চি (২৩০ থেকে ২৪০ সেমি) বৃষ্টিপাত হয়।
Sivasagar-এর আবহাওয়া সংক্রান্ত তথ্য | |||||||||||||
---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|
মাস | জানু | ফেব্রু | মার্চ | এপ্রিল | মে | জুন | জুলাই | আগস্ট | সেপ্টে | অক্টো | নভে | ডিসে | বছর |
সর্বোচ্চ রেকর্ড °সে (°ফা) | ২৯ (৮৪) |
৩২ (৯০) |
৩৪ (৯৩) |
৩৬ (৯৭) |
৪০ (১০৪) |
৩৮ (১০০) |
৩৮ (১০০) |
৩৮ (১০০) |
৩৬ (৯৭) |
৩৭ (৯৯) |
৩৩ (৯১) |
৩৪ (৯৩) |
৪০ (১০৪) |
সর্বোচ্চ গড় °সে (°ফা) | ২৩ (৭৩) |
২৪ (৭৫) |
২৬ (৭৯) |
২৮ (৮২) |
৩০ (৮৬) |
৩১ (৮৮) |
৩১ (৮৮) |
৩২ (৯০) |
৩১ (৮৮) |
৩০ (৮৬) |
২৮ (৮২) |
২৫ (৭৭) |
২৮ (৮৩) |
সর্বনিম্ন গড় °সে (°ফা) | ১০ (৫০) |
১৩ (৫৫) |
১৬ (৬১) |
১৯ (৬৬) |
২২ (৭২) |
২৪ (৭৫) |
২৫ (৭৭) |
২৫ (৭৭) |
২৪ (৭৫) |
২১ (৭০) |
১৬ (৬১) |
১১ (৫২) |
১৯ (৬৬) |
সর্বনিম্ন রেকর্ড °সে (°ফা) | ৩ (৩৭) |
৪ (৩৯) |
৮ (৪৬) |
১২ (৫৪) |
১২ (৫৪) |
১২ (৫৪) |
১৩ (৫৫) |
১৪ (৫৭) |
১৭ (৬৩) |
১৬ (৬১) |
৪ (৩৯) |
৫ (৪১) |
৩ (৩৭) |
অধঃক্ষেপণের গড় মিমি (ইঞ্চি) | ৩৬ (১.৪) |
৭০ (২.৮) |
১০২ (৪.০) |
১৯৫ (৭.৭) |
৩৬৮ (১৪.৫) |
৪১০ (১৬.১) |
৪৮৭ (১৯.২) |
৩৩৭ (১৩.৩) |
৩১৬ (১২.৪) |
১২১ (৪.৮) |
৩০ (১.২) |
১৩ (০.৫) |
২,৪৮৫ (৯৭.৯) |
উৎস: Weather2 |