শিবনারায়ণ রায়

শিবনারায়ণ রায় (ইংরেজি: Sibnarayan Ray) (২০ জানুয়ারি, ১৯২১ - ২৬ ফেব্রুয়ারি, ২০০৮) বিংশ শতাব্দীর স্বনামধন্য বাঙালি চিন্তাবিদ, শিক্ষাবিদ, দার্শনিক, এবং সাহিত্য সমালোচক। একজন রাডিকেল মানবতাবাদী মানবেন্দ্রনাথ রায়, এবং বিখ্যাত দার্শনিক বার্ট্রান্ড রাসেল, রায়ের উপরে মন্তব্য করে একদা বলেছেন "... শিবনারায়ণ রায় দাঁড়িয়েছেন সেই মতের পক্ষে যেটাকে আমি পৃথিবীর জন্য গুরুত্বপূর্ণ মনে করি। ... ... তার লেখা আমাদের সময়ের অধিকাংশ লেখকের চেয়ে বেশি যুক্তিগ্রাহ্য হিসেবে প্রকাশিত।"

শিবনারায়ণ রায়
২০০৬ সালে অধ্যাপক শিবনারায়ণ রায়
জন্ম২০ জানুয়ারি, ১৯২১
মৃত্যু২৬ ফেব্রুয়ারি, ২০০৮ (বয়স ৮৭)
জাতীয়তাভারতীয়
মাতৃশিক্ষায়তনকলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়
পেশাবিশিষ্ট প্রাবন্ধিক ও মানবতাবাদী চিন্তাবিদ ।
দাম্পত্য সঙ্গীগীতা রায়
পিতা-মাতাউপেন্দ্রনাথ বিদ্যাভূষণ শাস্ত্রী (পিতা)
রাজকুমারী রায় দেবী(মাতা)
পুরস্কাররেজিনা গুহ স্বর্ণপদক,

জন্ম ও শিক্ষা জীবন

শিবনারায়ণ রায়ের জন্ম বৃটিশ ভারতের বর্তমানে পশ্চিমবঙ্গের কলকাতায়। পিতা খ্যাতনামা সংস্কৃতবিদ, আদর্শ শিক্ষাব্রতী, বেদ,বেদান্ত, জৈন ও বৌদ্ধশাস্ত্রে সুপণ্ডিত উপেন্দ্রনাথ বিদ্যাভূষণ শাস্ত্রী। মাতা রাজকুমারী রায়চৌধুরীও ছিলেন একজন লেখিকা। তিনি নিয়মিত বামাবোধিনী,শিবম,অন্তপুর এবং মহিলা পত্রিকায় লিখতেন।[1] এঁদের পৈতৃক যোগ ছিল পূর্ববঙ্গের বরিশালের রায়েরকাঠি রাজবংশের সাথে। চিরাচরিত হিন্দু আচারনিষ্ঠ পরিবারে জন্মগ্রহণ করেও আমৃত্যু ঘোষিত নাস্তিক ছিলেন শিবনারায়ণ । [2] ১৯৪২ খ্রিস্টাব্দে রেজিনা গুহ স্বর্ণপদক নিয়ে তিনি কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ইংরাজী সাহিত্যে এম.এ পাশ করেন ।

কর্মজীবন

১৯৪৫ খ্রিস্টাব্দে কলকাতার সিটি কলেজে অধ্যাপনা দিয়ে কর্মজীবন শুরু করেন । পনেরো বছর এখানে কাজ করে ১৯৬০ খ্রিস্টাব্দে তিনি ইংরাজী ভাষা ও সাহিত্যের অধ্যাপক হিসেবে তৎকালীন বোম্বাই বিশ্ববিদ্যালয়ে যোগ দেন। ১৯৬৩ খ্রিস্টাব্দে 'ভারতবিদ্যা' বিভাগের প্রধান হিসাবে অধ্যাপনা করার জন্য অস্ট্রেলিয়ার মেলবোর্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে কাজে যোগ দেন। ১৯৮১ খ্রিস্টাব্দে সেখান থেকে অবসর নেওয়ার সময় তিনি ছিলেন ভারততত্ব বিভাগের চেয়ারম্যান । দেশে ফেরার পর তিনি বিশ্বভারতীর রবীন্দ্রভবনের অধ্যক্ষ হন। পরে দীর্ঘদিন 'রাজা রামমোহন রায় লাইব্রেরি ফাউন্ডেশনের' চেয়ারম্যানের দায়িত্ব পালন করেন ।

১৯৪৬ খ্রিস্টাব্দে তার আলাপ হয় বিপ্লবী মানবেন্দ্রনাথ রায়ের সঙ্গে । এরপর আমৃত্যু তিনি মানবেন্দ্রনাথের ভাবাদর্শে বিশ্বাসী ছিলেন।[3] নাস্তিক, যুক্তিবাদ, বুদ্ধির মুক্তি ও মানবতাবাদের সপক্ষে তিনি সক্রিয় ছিলেন । একাধিক কর্মকান্ডে মত প্রকাশের স্বাধীনতার জন্য প্রতিবাদ করেছেন। বুদ্ধদেব বসু ,অমিয় চক্রবর্তী সহ সমকালীন বাংলা সাহিত্যের উজ্জ্বল ব্যক্তিদের সঙ্গে ঘনিষ্ঠতা ছিল। তিনি বিশিষ্ট রসবেত্তা হয়ে ওঠেন রবীন্দ্রচর্চাতেও । তার সম্পাদিত ত্রৈমাসিক "জিজ্ঞাসা" পত্রিকার প্রতিষ্ঠাতা-সম্পাদক ছিলেন । কলকাতার রাডিক্যাল হিউম্যানিস্ট সংস্থার প্রাণপুরুষ ছিলেন তিনি ।

রচিত গ্রন্থসমূহ

তিনি মননশীল সাহিত্য ত্রৈমাসিক জিজ্ঞাসা পত্রিকার সম্পাদক ছিলেন। তার উল্লেখযোগ্য গ্রন্থ হচ্ছে,

  • সাহিত্য চিন্তা,
  • নায়কের মৃত্যু,
  • কবির নির্বাসন ও অন্যান্য ভাবনা,
  • রবীন্দ্রনাথ, শেক্সপিয়র ও নক্ষত্রসংকেত,
  • খাড়াইয়ের দিকে,
  • স্বদেশ, স্বকাল, স্বজন,
  • বিবেকী বিদ্রোহের পরম্পরা,
  • বাঙালিত্বের খোঁজে ও অন্যান্য আলোচনা,
  • প্রবাসের জার্নাল,
  • মৌমাছিতন্ত্র,
  • স্রোতের বিরুদ্ধে,
  • গণতন্ত্র, সংস্কৃতি ও অবক্ষয় প্রভৃতি[4]
  • রেনেসাঁস
  • লাঠি থেকে লাটাই
  • মাইকেল!মাইকেল!
  • কথারা তোমার মন
  • প্রবন্ধ সংগ্রহ

এছাড়া তার উল্লেখযোগ্য কীর্তি বিপ্লবী মানবেন্দ্রনাথ রায়ের জীবনী রচনা ও তার নির্বাচিত রচনা সম্পাদনা - Selected works of M.N.Roy[2]

শেষ জীবন ও মৃত্যু

অধ্যাপক শিবনারায়ণ কলকাতা ও শান্তিনিকেতনের পুর্বপল্লী দু-জায়গাতেই বাস করতেন। বার্ধক্য জনিত কারণে তার মৃত্যু হয় শান্তিনিকেতনে। চিকিৎসাশাস্ত্রে ব্যবহারের জন্য তার ইচ্ছানুসারে দেহদান করায় শান্তিনিকেতন থেকে কলকাতার এস.এস.কে.এম. হাসপাতালে তার মরদেহ সমর্পণ করা হয়।

তথ্যসূত্র

  1. "শিবনারায়ণ রায় ও তার অনন্ত জিজ্ঞাসা"redtimes.com.bd (ইংরেজি ভাষায়)। সংগ্রহের তারিখ ২০২১-০৩-০৮
  2. অঞ্জলি বসু সম্পাদিত, সংসদ বাঙালি চরিতাভিধান, দ্বিতীয় খণ্ড, সাহিত্য সংসদ, কলকাতা, জানুয়ারি ২০১৯ পৃষ্ঠা ৩৮৭, আইএসবিএন ৯৭৮-৮১-৭৯৫৫-২৯২-৬
  3. ইসলাম, মুহম্মদ সাইফুল (ফেব্রুয়ারি ২০০৭)। ফজলুল হক, আবুল কাসেম; ইসলাম, মুহম্মদ সাইফুল, সম্পাদকগণ। মানুষের স্বরূপ (১ সংস্করণ)। ঢাকা: কথাপ্রকাশ। পৃষ্ঠা ৩৮১। আইএসবিএন 984-8524487।
  4. অনুপ সাদি সম্পাদিত, বাঙালির গণতান্ত্রিক চিন্তাধারা; ইত্যাদি গ্রন্থপ্রকাশ, ঢাকা; ফেব্রুয়ারি, ২০১০; পৃষ্ঠা- ৪৮৭।

বহিঃসংযোগ

This article is issued from Wikipedia. The text is licensed under Creative Commons - Attribution - Sharealike. Additional terms may apply for the media files.