শিকার

শিকার জীবিত কোন পশু-পাখি ধরা কিংবা হত্যা করার লক্ষ্যে অনুসরণ করার উপযোগী কলাকৌশল। মানুষ তার নিজের ও পরিবারের জন্যে খাদ্য সংগ্রহ, আত্মরক্ষা করা, বিনোদন কিংবা ব্যবসা-বাণিজ্য করার লক্ষ্যেই সাধারণতঃ বন্যপ্রাণী শিকার করতে শুরু করে। এছাড়া, পশু-পাখিও নিজেদের জীবন ধারনের জন্যে তার আহার উপযোগী অন্যান্য প্রাণী শিকার করে থাকে। শিকারের জন্যে নির্দিষ্ট অস্ত্রশস্ত্র কিংবা সহায়ক উপকরণের প্রয়োজন পড়ে। যিনি বন্য পশু-পাখি শিকার করেন তিনি শিকারী নামে পরিচিত হয়ে থাকেন। অনেক সময় শিকার করতে গিয়ে শিকারী নিজেই শিকারে পরিণত হয়ে পড়তে পারেন।

আনুমানিক ৩২৫ খ্রীষ্ট-পূর্বাব্দে প্রাচীন গ্রীসের ভাস্কর্য্যে শিকারের দৃশ্য

ব্যবহৃত উপকরণাদি

যখন মানুষ পাথর এবং কাঠের যন্ত্রপাতির ব্যবহার করতে শিখে তখনই তারা শিকার কার্য্যের সাথে পরিচিত হয়। তখন তারা বর্শাফলক, বল্লম, সড়কি ইত্যাদি অস্ত্রশস্ত্র নিয়ে দলবদ্ধভাবে শিকারে বেরুতো। এ সকল অস্ত্র দিয়ে প্রাণী হত্যা করে কিংবা আহত প্রাণীকে সাথে নিয়ে নিজ নিজ গুহায় ফিরে আসতো। বর্তমানের আধুনিক সভ্য জীবনে শিকারপ্রিয় ব্যক্তিরা বন্দুক এবং তীর-ধনুকের সাহায্যে শিকার করতে বের হয়। কেউ কেউ নিছক চিত্তবিনোদনের উদ্দেশ্যে শিকারে বেড়িয়ে পড়েন। অনেক দেশেই শিকার কার্য্য পরিচালনার জন্য সুনির্দিষ্ট নিয়ম-কানুন রয়েছে।

সচরাচর খাঁচা কোন পশু-পাখিকে তার স্বাভাবিক জীবন থেকে বিচ্যুত করার উদ্দেশ্যে ধরা বা ফাঁদ হিসেবে ব্যবহার করা হয়। এ কারণেই খাঁচা শিকারের অন্যতম উপকরণ হিসেবে পরিচিত যা প্রায়শঃই নির্দিষ্ট প্রাণীর গর্তের সম্মুখে রাখা হয় বা সাধারণভাবে পাকড়াও করা হয়।

কারণ

প্রাগৈতিহাসিককাল থেকেই খাদ্য সংস্থান ও আত্মরক্ষাকল্পেই মানুষ বুনো পশু-পাখিকে ভোঁতা পাথড়, গাছের ফলা ইত্যাদি দিয়ে শিকার করতো। সময়ের বিবর্তনে অনেক শিকারীই শুধুমাত্র পশুর চামড়া দিয়ে পোশাক বানানোর উদ্দেশ্যে শিকার করে থাকে। কেউবা আবার ব্যক্তিগত সক্ষমতা, পারিবারিক ঐতিহ্য বা বাহাদুরী প্রদর্শনের উদ্দেশ্যে বাড়ীর দেয়ালে সৌন্দর্য্য বর্ধনের জন্যে ঝুলিয়ে রাখে। আবার কেউ হয়তোবা অর্থ উপার্জনের হীন উদ্দেশ্যে শিকার করে থাকে।

পশুর ঘণত্ব বৃদ্ধিরোধকল্পে শিকার করা ভাল বলে দাবী করা হয়েছে। শস্যাদির জন্যে ক্ষতিকারক স্তন্যপায়ী জীব ও পাখি নিধনে শিকার কার্য পরিচালনা করা হয়ে থাকে। কীট-পতঙ্গ দমনের স্বার্থে এবং খাদক পশুর অনুপস্থিতিজনিত কারণে[1] পশু-পাখির ঘণত্ব রোধে এ ধরনের শিকার হয়। সেজন্যে আধুনিক বন্যপ্রাণী ব্যবস্থাপনায় শিকারকে আবশ্যকীয় উপাদান হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে।[2]

কিন্তু অতিমাত্রায় শিকারের ফলে বিভিন্ন প্রজাতির পশু-পাখির বিলুপ্তি ঘটতে পারে। সপ্তদশ শতকের শেষ দিকে মরিশাসের ডোডো পাখি ব্যাপকহারে শিকার হওয়ায় তা বিলুপ্ত প্রজাতি হিসেবে গণ্য হয়েছে। এটিই প্রথম প্রজাতির পাখি হিসেবে পরিচিত যা মানুষের হাতে শিকার হয়ে পৃথিবী থেকে বিলুপ্ত হয়।[3]

ব্যতিক্রম

পেশা হিসেবে নদী-পুকুরে জালের মাধ্যমে মাছ ধরা ও অবমুক্ত করা কিংবা খাদ্যের জন্যে মৎস্য শিকারকে সাধারণতঃ শিকারের পর্যায়ে ফেলা যায় না। ফাঁদের মাধ্যমে পশু-পাখি ধরাকেও একই পর্যায়ে ফেলা হয়। কারণ এ পদ্ধতির মাধ্যমে প্রাণীকে হত্যা করা হয়নি। যে-কোন ধরনের শস্য সংগ্রহ কিংবা মাশরুম সংগ্রহকে উদ্ভিদ সংরক্ষণ বা সংগ্রহকরণ হিসেবে গণ্য করা হয়।

গ্যালারী চিত্র

তথ্যসূত্র

  1. Harper, Craig A। "Quality Deer Management Guidelines for Implementation" (পিডিএফ)। Agricultural Extension Service, The University of Tennessee। ১২ সেপ্টেম্বর ২০০৬ তারিখে মূল (PDF) থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২০ ডিসেম্বর ২০০৬
  2. Williams, Ted. "Wanted: More Hunters," Audubon magazine, March 2002, copy retrieved 26 October 2007.
  3. Reilly, David। "Background: the tragedy of the Dodo (1598-1681)"। www.davidreilly.com। সংগ্রহের তারিখ ২০০৯-০৩-০৯

বহিঃসংযোগ

This article is issued from Wikipedia. The text is licensed under Creative Commons - Attribution - Sharealike. Additional terms may apply for the media files.