শামসুদ্দীন আহমেদ
শহীদ শামসুদ্দীন আহমেদ (জন্ম: অজানা, মৃত্যু: ১৯৭১ ) বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধের একজন বীর মুক্তিযোদ্ধা। স্বাধীনতা যুদ্ধে তার সাহসিকতার জন্য বাংলাদেশ সরকার তাকে বীর প্রতীক খেতাব প্রদান করে। [1][2]
শামসুদ্দীন আহমেদ | |
---|---|
মৃত্যু | ১৯৭১ |
জাতীয়তা | বাংলাদেশী |
নাগরিকত্ব | পাকিস্তান (১৯৭১ সালের পূর্বে) বাংলাদেশ |
পরিচিতির কারণ | বীর প্রতীক |
জন্ম ও শিক্ষাজীবন
শহীদ শামসুদ্দীন আহমেদের জন্ম কুষ্টিয়া জেলার মিরপুর উপজেলার মহিষখোলা গ্রামে। তার বাবার নাম হাউস সরদার এবং মায়ের নাম জরিমন নেছা। তার স্ত্রীর নাম আনোয়ারা খাতুন ওরফে আনারজান। তাদের দুই মেয়ে ও দুই ছেলে।
কর্মজীবন
শামসুদ্দীন আহমেদ ১৯৭১ সালে কৃষিকাজের পাশাপাশি রাজনীতির সঙ্গেও যুক্ত ছিলেন। দশম শ্রেণী পর্যন্ত পড়াশোনা করেছিলেন। তখন তার বয়স ছিল ৩২ বছর। মুক্তিযুদ্ধ শুরু হলে ঝাঁপিয়ে পড়েন যুদ্ধে। প্রতিরোধযুদ্ধে সক্রিয় অংশগ্রহণ শেষে ভারতে যান। সেখানে প্রশিক্ষণ নিয়ে যুদ্ধ করেন ৮ নম্বর সেক্টরের শিকারপুর সাব-সেক্টরে। কুষ্টিয়া জেলার মিরপুর ও দৌলতপুর উপজেলার বিভিন্ন স্থানে তিনি সাহসিকতা ও বীরত্বের সঙ্গে যুদ্ধ করেন।
মুক্তিযুদ্ধে ভূমিকা
১৯৭১ সালের ৭ ডিসেম্বরের মুক্তিযুদ্ধের চূড়ান্ত পর্যায়ে মুক্তিযোদ্ধাদের একটি দল ছিল কুষ্টিয়া জেলার দৌলতপুর উপজেলায় । তাদের দলনেতা ছিলেন আফতাব উদ্দিন আহমেদ। তার দলে শামসুদ্দীন আহমেদসহ মাত্র কয়েকজন মুক্তিযোদ্ধা। তারা ক্ষুদ্র এক দল। দলনেতা আফতাব খবর পেলেন, তাদের এলাকায় পাকিস্তানি সেনা এসেছে। পাকিস্তানি সেনা কতজন, তাদের শক্তি কী, তা তিনি জানেন না। তার পরও তিনি পাকিস্তানি সেনাদের ওপর গেরিলা আক্রমণ করার দুঃসাহসী এক সিদ্ধান্ত নিলেন। এরপর তার নির্দেশে শামসুদ্দীন আহমেদসহ মুক্তিযোদ্ধারা দ্রুত তৈরি হলেন। তাদের কাছে অস্ত্র বলতে স্টেনগান, রাইফেল আর কয়েকটি হ্যান্ড গ্রেনেড। গুলিও সামান্য। তা-ই সম্বল করে তারা বেরিয়ে পড়লেন পাকিস্তানি সেনাদের উদ্দেশে। তারা পাকিস্তানি সেনাদের মুখোমুখি হলেন শেরপুরে। দৌলতপুর উপজেলারই অন্তর্গত শেরপুর। দলনেতার নির্দেশে মুক্তিযোদ্ধারা অতর্কিতে আক্রমণ চালালেন পাকিস্তানি সেনাদের ওপর। আকস্মিক আক্রমণে সেনারা হকচকিত। তবে নিমিষেই তারা পাল্টা আক্রমণ শুরু করল। ব্যাপক সেই আক্রমণ। বৃষ্টির মতো শত শত গুলি মুক্তিযোদ্ধাদের মাথার ওপর দিয়ে যেতে থাকল। এতে মুক্তিযোদ্ধাদের পক্ষে মাথা তোলাও দুঃসাধ্য হয়ে পড়ল। পাকিস্তানি সেনারা সংখ্যায় মুক্তিযোদ্ধাদের দ্বিগুণেরও বেশি। তাদের অস্ত্রশস্ত্রও মুক্তিযোদ্ধাদের চেয়ে অত্যাধুনিক। একপর্যায়ে পাকিস্তানি আক্রমণের তীব্রতা প্রচণ্ড বেড়ে গেল। তখন মুক্তিযোদ্ধাদের গুলি প্রায় শেষ হওয়ার পথে। এর ফলে তারা প্রচণ্ড ঝুঁকির মুখে পড়ে গেলেন। এ অবস্থায় মুক্তিযোদ্ধাদের দলনেতা সিদ্ধান্ত নিলেন পশ্চাদপসরণের। তিনি শামসুদ্দীন আহমেদসহ অন্য সহযোদ্ধাদের দ্রুত পেছনে হটে নিরাপদ স্থানে যেতে বললেন। এরপর মুক্তিযোদ্ধারা পশ্চাদপসরণ শুরু করলেন। কিন্তু পাকিস্তানি সেনারা তাদের ধাওয়া করল। ছত্রভঙ্গ মুক্তিযোদ্ধারা পালিয়ে যাচ্ছেন। তাদের পেছন পেছন পাকিস্তানি সেনারাও ব্যাপক গুলি করতে করতে যেতে থাকল। ব্যাপক গুলির মধ্যে মুক্তিযোদ্ধাদের পশ্চাদপসরণ বেশ কষ্টসাধ্য হয়ে পড়ল। তারা কখনো ক্রল করে, কখনো দৌড়ে যেতে থাকলেন। এভাবে শামসুদ্দীন আহমেদ ও তার এক সঙ্গী ছাড়া সবাই পালাতে সক্ষম হলেন। তারা দুজন বেশি দূর যেতে পারলেন না। একপর্যায়ে পাকিস্তানি সেনারা শামসুদ্দীন আহমেদকে শেরপুরের পাশের সাতবাড়িয়া গ্রামে ঘেরাও করে। ক্লান্ত ও পরিশ্রান্ত শামসুদ্দীন আহমেদ অস্ত্রসহ পাকিস্তানি সেনাদের হাতে ধরা পড়েন। তখন তার কাছে কোনো গুলি ছিল না। পাকিস্তানি সেনারা তাকে আটকের পর সঙ্গে সঙ্গে গুলি করে হত্যা করে।
পুরস্কার ও সম্মাননা
তথ্যসূত্র
- দৈনিক প্রথম আলো, "তোমাদের এ ঋণ শোধ হবে না"| তারিখ: ১৭-০৬-২০১২
- একাত্তরের বীরযোদ্ধাদের অবিস্মরণীয় জীবনগাঁথা, খেতাবপ্রাপ্ত মুক্তিযোদ্ধা সম্মাননা স্মারকগ্রহন্থ। জনতা ব্যাংক লিমিটেড। জুন ২০১২। পৃষ্ঠা ১৪০। আইএসবিএন 9789843351449।
পাদটীকা
- এই নিবন্ধে দৈনিক প্রথম আলোতে ১৩-০২-২০১২ তারিখে প্রকাশিত তোমাদের এ ঋণ শোধ হবে না প্রতিবেদন থেকে লেখা অনুলিপি করা হয়েছে। যা দৈনিক প্রথম আলো ক্রিয়েটিভ কমন্স অ্যাট্রিবিউশন-শেয়ার-এলাইক ৩.০ আন্তর্জাতিক লাইসেন্সে উইকিপিডিয়ায় অবমুক্ত করেছে (অনুমতিপত্র)। প্রতিবেদনগুলি দৈনিক প্রথম আলোর মুক্তিযুদ্ধ ট্রাস্টের পক্ষে গ্রন্থনা করেছেন রাশেদুর রহমান (যিনি তারা রহমান নামেও পরিচিত)।