শামছুল হুদা পাঁচবাগী
শামছুল হুদা পাঁচবাগী (১৮৯৭ – ২৪ সেপ্টেম্বর ১৯৮৮) বাংলাদেশের একজন আলেম ও রাজনীতিবিদ ছিলেন। তিনি বঙ্গীয় আইনসভার সদস্য ছিলেন।[1]
শামছুল হুদা পাঁচবাগী | |
---|---|
ব্যক্তিগত তথ্য | |
জন্ম | ১৮৯৭ |
মৃত্যু | ২৪ সেপ্টেম্বর ১৯৮৮ (বয়স ৯১) |
ধর্ম | ইসলাম |
জীবনী
শামছুল হুদা পাঁচবাগী ১৮৯৭ সালে ময়মনসিংহের গফরগাঁওয়ের মাইজবাড়ি গ্রামে জন্মগ্রহণ করেছিলেন।[2][3] তার পিতার নাম মো. রিয়াজ উদ্দিন ও মাতার নাম উম্মে কুলসুম। তিনি নিজ বাড়িতেই প্রাথমিক শিক্ষা লাভ করেছিলেন। এরপর, তিনি রামপুর স্টেট মাদ্রাসায় ভর্তি হয়েছিলেন। সেখান থেকে শিক্ষা লাভ করার পর তিনি লাহোরের ওরিয়েন্টাল কলেজে ভর্তি হন।[2]
পড়াশোনা শেষ করে নিজ দেশে ফিরে আসার পর শামছুল হুদা পাঁচবাগী কৃষকদের জন্য কাজ শুরু করেন এবং ব্রিটিশ ও জমিদারদের বিরুদ্ধে সংগ্রামে নামেন। তিনি জমিদারদের অত্যাচারের বিরুদ্ধে আন্দোলনের ডাক দেন। তার আন্দোলনের ডাকে সাড়া দিয়ে জমিদারদের বাজার বর্জন করেছিল সাধারণ মানুষ।[4] তিনি ঈদুল আযহায় গরু কোরবানির ওপর আরোপিত নিষেধাজ্ঞার বিরোধী ছিলেন। ঈদের নামায আদায়ের পর তিনি হোসেনপুরে কোরবানির ঈদ উপলক্ষে গরু কোরবানি করেছিলেন।[2]
শামছুল হুদা পাঁচবাগী ১৯৩৭ সাল থেকে ১৯৫৪ সাল পর্যন্ত আইনপ্রণেতা হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছিলেন।[5] তিনি ১৯৩৭ সালে কৃষক প্রজা পার্টির প্রার্থী হিসেবে বঙ্গীয় আইনসভার সদস্য হিসেবে নির্বাচিত হয়েছিলেন।[4] এরপর, ১৯৪৫ সালে তিনি ইমারত পার্টি প্রতিষ্ঠা করেন। তিনি ছিলেন দলটির সভাপতি ও সানাউল্লাহ ছিলেন দলটির সহসভাপতি। ১৯৪৬ সালেও তিনি বঙ্গীয় আইনসভার সদস্য হিসেবে নির্বাচিত হয়েছিলেন।[4] তিনি পাকিস্তান সৃষ্টির বিরোধী ছিলেন।[2] তিনি অবিভক্ত স্বাধীন বাংলার সমর্থক ছিলেন।[4] তিনি পাঁচবাগে ছাপাখানা প্রতিষ্ঠা করেছিলেন। তিনি বাংলা, ইংরেজি, আরবি, উর্দু ও ফার্সি ভাষায় ১০,০০০ এর বেশি প্রচারপত্র ছাপিয়েছিলেন।[2] তিনি প্রচারপত্রে পাকিস্তান সৃষ্টির প্রস্তাবের বিরোধিতা করেছিলেন।
শামছুল হুদা পাঁচবাগী ষাটের দশকে রাজনীতিতে নিষ্ক্রিয় হয়ে পড়েন।[4] তিনি বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধকে সমর্থন করেছিলেন। বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ চলাকালে তিনি নারীদের রক্ষায় কাজ করেছেন।[2] এছাড়া, যুদ্ধের সময়ে তিনি সংখ্যালঘুদের রক্ষায়ও কাজ করেছেন।[4] তিনি ১৯৭১ সালে অনেক মানুষকে আশ্রয় ও খাদ্য প্রদান করেছিলেন। এছাড়া, তিনি যুবকদের বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধে অংশগ্রহণ করতে উদ্বুদ্ধ করেছিলেন।[2]
শামছুল হুদা পাঁচবাগী শাহজাদী বেগম ওয়াকফ স্টেটের মোতাওয়াল্লি ছিলেন। তিনি দীন দুনিয়া, হুজ্জাতুল ইসলাম ও তর্জুমানে দীন শিরোনামের তিনটি পত্রিকার সম্পাদক ও প্রকাশক ছিলেন।[2] তিনি অনেক শিক্ষা প্রতিষ্ঠান প্রতিষ্ঠা করেছিলেন।
শামছুল হুদা পাঁচবাগী ১৯৮৮ সালের ২৪ সেপ্টেম্বর ৯১ বছর বয়সে ময়মনসিংহে নিজ বাসভবনে মৃত্যুবরণ করেন।[2] মৃত্যুর পর পাঁচবাগ জামে মসজিদের নিকটে তাকে সমাহিত করা হয়।[6]
তথ্যসূত্র
- শিবলি, শাকের হোসাইন (২০২১)। একুশের মাওলানারা। বাংলাদেশ: মাহফিল/দিলরুবা/সুবাহসাদিক। পৃষ্ঠা ১৯৮–২০১।
- "মুক্তিযুদ্ধে মেয়েদের সম্ভ্রম রক্ষাই ছিল তার ব্রত"। রাইজিংবিডি.কম। ২৪ সেপ্টেম্বর ২০১৭। সংগ্রহের তারিখ ২৪ জানুয়ারি ২০২০।
- "আলেমদের জীবন ও কর্মের রাষ্ট্রীয় স্বীকৃতি নেই!"। কালের কণ্ঠ। ২৮ জুন ২০১৯। সংগ্রহের তারিখ ২৪ জানুয়ারি ২০২০।
- "বাংলাদেশের জন্ম ও মাওলানা পাঁচবাগীর ভূমিকা"। ভোরের কাগজ। ২০ ডিসেম্বর ২০১৪। ২৫ জানুয়ারি ২০২০ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২৪ জানুয়ারি ২০২০।
- "উপজেলার ঐতিহ্য"। গফরগাঁও উপজেলা। ২৫ জানুয়ারি ২০২০ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২৪ জানুয়ারি ২০২০।
- "পাঁচবাগ জামে মসজিদ"। গফরগাঁও উপজেলা। ২৫ জানুয়ারি ২০২০ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২৪ জানুয়ারি ২০২০।