শাজাহানপুর উপজেলা
শাহজাহানপুর উপজেলা বাংলাদেশের বগুড়া জেলার একটি উপজেলা।
শাহজাহানপুর উপজেলা | |
---|---|
উপজেলা | |
ডাকনাম: মাঝিড়া | |
![]() ![]() শাহজাহানপুর উপজেলা ![]() ![]() শাহজাহানপুর উপজেলা | |
স্থানাঙ্ক: ২৪°৪৬′০.০১২″ উত্তর ৮৯°২৪′০.০০০″ পূর্ব | |
দেশ | বাংলাদেশ |
বিভাগ | রাজশাহী বিভাগ |
জেলা | বগুড়া জেলা |
আয়তন | |
• মোট | ২২১.৮ বর্গকিমি (৮৫.৬ বর্গমাইল) |
জনসংখ্যা [1] | |
• মোট | ২,৪৭,৮১৪ |
• জনঘনত্ব | ১,১০০/বর্গকিমি (২,৯০০/বর্গমাইল) |
সাক্ষরতার হার | |
• মোট | ৬৫% |
সময় অঞ্চল | বিএসটি (ইউটিসি+৬) |
প্রশাসনিক বিভাগের কোড | ৫০ ১০ ৮৫ |
ওয়েবসাইট | প্রাতিষ্ঠানিক ওয়েবসাইট ![]() |
অবস্থান ও আয়তন
বগুড়া শহর থেকে দূরত্ব ১০ কিমি। বগুড়া সদরের দক্ষিণ দিকে এর অবস্থান। শাহজাহানপুর উপজেলার উত্তরে বগুড়া সদর উপজেলা, দক্ষিণে শেরপুর উপজেলা পূর্বে গাবতলী উপজেলা ও ধুনট উপজেলা, পশ্চিমে নন্দীগ্রাম উপজেলা ও কাহালু উপজেলা।
প্রশাসনিক এলাকা
এই উপজেলার ইউনিয়নসমূহ হল -
শাহজাহানপুর উপজেলার পটভূমি
জনশ্রততি রয়েছে যে,ষোড়শ শতাব্দীতে করতোয়া নদী পথে মাঝে মাঝে মধ্য রাতে মাছ ধরা মাঝির বেশে জলদস্যুরা আসতো। এ অঞ্চলে লুটতরাজ করতো। ফলে সমস্ত এই জনপদের নাম হয়ে পড়ে মাঝিড়া। সপ্তদশ শতাব্দীর প্রথমার্ধে সুবে-বাংলা এ সমস্যার কথা পত্রযোগে আগ্রাতে সম্রাট শাজাহানকে অবহিত করলেন। সম্রাট তাৎক্ষণিকভাবে সেনা ছাউনি সহাপনের জন্য এখানে একটি সেনাদল প্রেরণ করেন। মোঘল সেনাদল এই উপজেলা সদরের ৭০০ গজ উত্তরে ঢাকা-বগুড়া মহাসড়কের পূর্ব পাশে ২৫/৩০ ফুট মাটি ভরাট করে সহানটিতে উঁচু ঢিবি তৈরি করে সেনা ছাউনি সহাপন করা হয়। যাতে সেই উঁচু ঢিবি হতে দিগমত বিসতৃত অঞ্চলে জলদস্যুদের যে কোন আনাগোনা বা গতিবিধি লক্ষ্য করা যায়। ধার্মিক সম্রাটের বদান্যতায় এই জনপদের মানুষ সন্ত্রাস আর দস্যুতা হতে পরিত্রাণ পায়। মোঘল সম্রাটের নাম অনুসারেই পুরো এলাকার নাম হয় শাজাহানপুর বা সাজাপুর। ব্রিটিশ আমল থেকে সকল রেকর্ড পত্রে মৌজাটির শাজাপুর নাম বহাল রয়েছে। এরই ধারাবাহিকতায় এ উপজেলার নাম হয় শাজাহানপুর উপজেলা।
ইতিহাস
২০০২ সালের ৩ জুন ‘মাঝিড়া উপজেলা’ নামে নতুন একটি উপজেলা প্রতিষ্ঠা করতে গেজেট প্রকাশ হয়। এরপর ২৩ অক্টোবর থেকে একটি ভাড়া বাড়িতে উপজেলা প্রশাসনের কার্যক্রম চালু করা হয়। সে সময় প্রথম উপজেলা নির্বাহী অফিসার হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন মো. আব্দুস সালাম মিয়া। তৎকালীন জেলা প্রশাসক রফিকুল মোহামেতের সহযোগীতায় ‘মাঝিড়া উপজেলা’র নাম পরিবর্তন করে ‘শাজাহানপুর উপজেলা’ নামে নামকরণ করা হয়। এরপর ২০০৪ সালের ১৪ অক্টোবরে প্রায় ৫ কোটি টাকা ব্যয়ে ঢাকা-বগুড়া মহাসড়কের পাশে সাজাপুর মৌজায় নির্মিত ‘শাজাহানপুর উপজেলা’ কমপ্লেক্স’র উদ্বোধন করেন প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়া।
জনসংখ্যার উপাত্ত
জনসংখ্যা ২৩৪৩৬৫; পুরুষ ১২০৫১০, মহিলা ১১৩৮৫৫। মুসলিম ২২৪৩৭৩, হিন্দু ৯৯১৫, বৌদ্ধ ৩৪, খ্রিস্টান ১৯ এবং অন্যান্য ২৪।
শিক্ষা
শাহজাহানপুর উপজেলায় পাঁচটি কলেজ রয়েছে। এদের মধ্যে দুবলাগাড়ি কলেজ১৯৮৬ সালে স্থাপিত হয়। বগুড়া ক্যান্টনমেন্ট পাবলিক স্কুল ও কলেজ১৯৭৯ সালে স্থাপিত, বগুড়া ক্যান্টনমেন্ট বোর্ড হাই স্কুল ১৯৭৭ সালে স্থাপিত, এই দুইটি স্কুল মাঝিড়া সেনানিবাসে অবস্থিত। এছাড়া করমউদ্দিন কলেজ, ডেমাজানী ।ডেমাজানী শহীদ মোখলেছুর রহমান বহুমুখী উচ্চ বিদ্যালয়, আড়িয়া রহিমাবাদ সরকাারি উচ্চ বিদ্যালয়, আড়িয়া রহিমাবাদ প্রাথমিক বালক বিদ্যালয়, আড়িয়া রহিমাবাদ বালিকা বিদ্যালয়, রহিমাবাদ শালুকগাড়ি প্রাথমিক বিদ্যালয়, কামারপাড়া প্রাথমিক বিদ্যালয়, মাঝিড়া সরকারি উচ্চ বিদ্যালয়, পারফেক্ট হাই স্কুল, সানবিমস হাই স্কুল সেনাপল্লী স্কুল উল্লেখ্য,মিলেনিয়াম স্কলাস্টিক স্কুল ও কলেজ ১৯৯৮ সালে স্থাপিত হয় এবং প্রয়াস স্কুল (প্রতিবন্ধী স্কুল) ২০১২ সালে স্থাপিত, এই দুই জাহাঙ্গিরাবাদ সেনানিবাসে অবস্থিত। শাহজাহানপুর উপজেলায় ছয়টি ফাযিল এবং দুইটি কামিল মাদ্রাসাও আছে। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হচ্ছে জোড়া নজমুল উলূম কামিল মাস্টার্স মাদ্রাসা যা স্থাপিত হয়েছিল ১৯১০ সালে। এছাড়াও আজিরন রাবেয়া মহিলা আলিম মাদ্রাসা । স্হাপিত ১৯৭৪। এছাড়াও গ্রীণ ফিউচার পাবলিক স্কুল, নগরহাট। স্কুলটি ২০০৭ সালে প্রতিষ্ঠা লাভ করলেও এর আধুনিকায়ন শুরু হয়েছে ২০১৭ সালের ০১অক্টোবর থেকে।শাহজাহনপুর উপজেলায় একমাত্র নারী উচ্চ শিক্ষা প্রতিষ্ঠান শাহজাহানপুর মহিলা টেকনিক্যাল এন্ড বিএম কলেজ 2003 সালে প্রতিষ্ঠিত হয়ে 2011 সাল থেকে পাঠ দান করে আসতেছে।ইহা ছাড়া আরও রয়েছে নগর জে এম সিনিয়র মাদ্রাসা, নগর শাহ্ মোজাম্মেল হক উচ্চ বিদ্যালয়,নগর বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়। খরনা ইউনিয়নের কালুদাম গ্রামে রহিম আফরোজ পরিচালিত আরএসএফ মডেল স্কুল এন্ড কলেজ নামের একটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান গড়ে উঠেছে। অপরদিকে উপজেলার বেশ কিছু এলাকা বগুড়া পৌরসভার অন্তরভূক্ত। এর মধ্যে ২১নং ওয়ারড্ এর বেজোড়া দক্ষিণপাড়ায় ২০১৭ সালে প্রতিষ্ঠিত হয়েছে ‘নূরুন আইসিটি স্কুল’।
প্রতি বৎসর ভলিবল লীগ অনুষ্ঠিত হয়। প্রতি বৎসর যুব এবং সিনিয়র ক্রিকেট লীগ প্রতিযোগিতা অনুষ্ঠিত হয়।
বিনোদনঃপ্রতি বৎসর যাত্রা পালা, নাটক মঞ্চায়ন হয়ে থাকে। এছাড়াও ঋতুভিত্তিক বিভিন্ন মেলা-যেমনঃ একদিনের মেলা, পৌষমেলা, কৃষি মেলা, মাছের মেলা, মহিষের মাংশের মেলা এবং বৈশাখী মেলা অনুষ্ঠিত হয়ে থাকে।
অর্থনীতি
জনগোষ্ঠীর আয়ের প্রধান উৎস কৃষি ৫৫.৪৮%, অকৃষি শ্রমিক ২.৫২%, শিল্প ১.৩৭%, ব্যবসা ১৩.০১%, পরিবহন ও যোগাযোগ ৬.৪৯%, চাকরি ১০.৯৮%, নির্মাণ ২.৫০%, ধর্মীয় সেবা ০.১৭%, রেন্ট অ্যান্ড রেমিটেন্স ০.৩৯% এবং অন্যান্য ৭.০৯%।
কৃষিভূমির মালিকানা ভূমিমালিক ৫৭.৩৫%, ভূমিহীন ৪২.৬৫%।
প্রধান কৃষি ফসল ধান, ডাল, আলু, ভুট্টা, শাকসবজি।
মৎস্য, গবাদিপশু ও হাঁস-মুরগির খামার গবাদিপশু ৬২, হাঁস-মুরগি ৬৫, কৃত্রিম প্রজনন কেন্দ্র ৩।
যোগাযোগ বিশেষত্ব পাকারাস্তা ১১৬.৩০ কিমি, আধা-পাকারাস্তা ১৫.৪৩ কিমি, কাঁচারাস্তা ২৪০.৪৯।
শিল্প ও কলকারখানা ধাতব-শিল্প, আসবাব তৈরির কারখানা।
কুটিরশিল্প তাঁতশিল্প, মৃৎশিল্প, দারুশিল্প, সূচিশিল্প, বাঁশ ও বেতের কাজ।
উল্লেখযোগ্য ব্যক্তি
১। আলহাজ ডাক্তার মোঃ আব্দুল মান্নান (এমবিবিএস, এফসিপিএস, নবজাতক ও শিশু বিশেষজ্ঞ, কামিল হাদিস ও তাফসির), পীর (পারতেখুর ফতেহিয়া ওয়ায়েছিয়া দরবার শরীফ ও আইলপুনিয়া দরবার শরীফ, নন্দীগ্রাম), সহকারি অধ্যাপক (শহীদ জিয়াউর রহমান মেডিকেল কলেজ, বগুড়া)।
২। সংসদ সদস্য সাংবাদিক রেজাউল করিম বাবলু
৩। মোঃ লুৎফর রহমান সরকার, সাবেক বাংলাদেশ ব্যাংক এর গভর্নর।
দর্শনীয় স্থান
১। সাব্বির শাহ (রহ:) এর মাজার, শাবরুল।
২। কাশেম আলী (রহ:) এর মাজার, পারতেখুর।
৩। সাজাপুর গড়/টিলা, উপজেলা হতে ৬০০গজ উত্তরে।
৪। বাবুর পুকুর বধ্য ভূমি, টেংগামাগুর।
৫। জমিদার কাছারি বাড়ী, খরনা বাজার।
৬। আদর্শ আহ্ছানিয়া মিশন, শালুকগাড়ী। (ধর্মীয় ও সেবামুলক প্রতিষ্ঠান)
৭। ২টি কামিল ৪টি ফাযিল মাদরাসা, তাদের ৩দিন ব্যপী বার্ষিক ইছালে ছাওয়াব অনুষ্ঠান।
৮। বড় ভালো স্কুল কলেজ, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান অংশে দেখুন।
৯। পারতেখুর, ডেমাজানি খেলার মাঠ।
১০। ঐতিহাসিক আড়িয়া রহিমাবাদ খেলার মাঠ।
১১। প্রাচীন নিদর্শনাদি ও প্রত্নসম্পদ খাদাশ রাজবাড়ি (গোহাইল ইউনিয়ন)।
১২। পণ্ডিত শাহ নির্মিত তিন গম্বুজ বিশিষ্ট গোহাইল জামে মসজিদ।
১৩। বৌদ্ধ মঠ (বেতগাড়ি গ্রাম)।
১৪। আড়িয়া পাল পাড়া (মৃৎশিল্প গ্রাম)
১৫। বিজয়াঙ্গন (মুক্তিযুদ্ধ ভিত্তিক জাদুঘর)
১৬। সন্ধার পর খরনা বাজারের মুখ রোচক খাবার জিগরি ভাজি।
তথ্যসূত্র
- বাংলাদেশ জাতীয় তথ্য বাতায়ন (জুন ২০১৪)। "এক নজরে শাহজাহানপুর"। গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকার। ২১ জানুয়ারি ২০১৪ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ১৪ জুলাই ২০১৪।