শহর

শহর, নগর বা নগরী বলতে সাধারণত এমন একটি ঘনবসতিপূর্ণ বৃহৎ পৌর এলাকাকে বোঝায়, যেটি পারিপার্শ্বিক অঞ্চলের একটি কেন্দ্র হিসেবে কাজ করে ও সেখানকার অধিবাসীদের জন্য বিশেষায়িত সেবা প্রদান করে থাকে। কোনও পৌরবসতির জনসংখ্যার আকার বা এর এলাকার আয়তন ন্যূনতম কতটুকু হলে সেটিকে শহর বলা যায়, এ ব্যাপারে কোনও বিশ্বব্যাপী ঐকমত্যভিত্তিক সংজ্ঞা নেই।[1][2] বাংলা রচনাতে কদাচিৎ "শহর" পরিভাষাটি দিয়ে কেবলমাত্র ছোট শহরকে বোঝানো হতে পারে।

১৯০৮ সালে গ্রিসের অ্যাথেন্স নগরীর বন্দর পায়োরিয়াসের মানচিত্র
আদর্শ শহর; ওয়ালথার চিত্র জাদুঘর থেকে সংগৃহীত

শহর এক ধরনের মানববসতি। শহরের চেয়ে উত্তরোত্তর ছোট বসতিগুলিকে ছোট শহর (টাউন), গ্রাম ও ছোট গ্রাম (হ্যামলেট) বলা হয়। অন্যদিকে শহরের চেয়ে উত্তরোত্তর বড় বসতিগুলিকে মহানগরী, অতিমহানগরী, পৌরপুঞ্জমহাপৌরপুঞ্জ নামে ডাকা হয়। শহরকে কীভাবে অর্থের দিক দিয়ে ছোট শহর থেকে আলাদা করা হয়, সে বিষয়ে ভিন্নমত রয়েছে। তবে সাধারণত একটি শহরকে দুই বা ততোধিক প্রশাসনিক এলাকায় ভাগ করা হয়ে থাকে এবং শহরকে ঘিরে উপশহর বা শহরতলী থাকে, যেগুলি ছোট শহরের বেলায় প্রযোজ্য নয়। অনেক শহরের নিজস্ব প্রশাসন, ইতিহাস এবং আইন রয়েছে। সাধারণত একটি শহরের পয়োঃনিষ্কাশন, ভূমির ব্যবহার, গৃহায়ন, পরিবহন, আইন-শৃঙ্খলানিরাপত্তা, ইত্যাদি বিষয়ে নিজস্ব নিয়মকানুন ও ব্যবস্থা থাকে। শহরের বিকাশ মানুষ এবং ব্যবসার প্রসার ঘটাতে সহায়তা করে। শহর প্রায়শই গ্রাম দ্বারা পরিবেষ্টিত থাকে। এখানে চাকরির সুযোগ-সুবিধাও বেশি থাকে। কালক্রমে একটি বর্ধনশীল শহরের আশেপাশের এলাকাগুলিও ঐ শহরের ভেতরে অন্তর্ভুক্ত হতে শুরু করে।

শহরে বসবাসের অনেক অসুবিধা যেমন আছে (যেমন কোলাহল, দূষণ, ভিড়, অপরাধ, ফুটপাথ দখল, ইত্যাদি), তেমনি গ্রামের তুলনায় শহরে বসবাস করা অনেক দিক থেকেই সুবিধাজনক। যখন অনেক মানুষ শহরের মতো একটি ক্ষুদ্র এলাকাতে গুচ্ছবদ্ধ হয়ে বাস করতে ও অন্যান্য কর্মকাণ্ড করতে শুরু করে, তখন তাকে পিণ্ডীভবন (agglomeration) বলে। এর ফলে হাজার হাজার দৈনন্দিন কর্মকাণ্ডের জন্য বিরাট দূরত্ব পাড়ি দেবার অসুবিধা কমে যায়। আদর্শ দৃষ্টিকোণ থেকে শহর হচ্ছে মানুষের মৌলিক অধিকার পূরণের নিশ্চয়তা প্রাপ্তির একটি স্থান যেখানে মানুষ বসবাস, চিকিৎসাসেবা, শিক্ষার সুব্যবস্থা, কর্মের সুযোগ, সামাজিক যোগাযোগ ও খেলাধুলা-বিনোদনের জন্য সুবিধাজনক একটি স্থান। শহরে গণপরিবহনের ব্যয় কম, আর অবকাঠামোর খরচও এককভাবে ব্যাঙ্ক লোন নিয়ে বা পরিচিতদের সাথে ভাগাভাগি করে নেওয়া যায়, যে ব্যাপারটিকে "পিণ্ডীভবনের অর্থনীতি" বলে। এটি একটি নগর স্থাপত্য উৎপত্তির অন্যতম মূল কারণ। নগর জীবনের সুবিধা ও অর্থনৈতিক লাভের কারণে উন্নত বিশ্বের দেশগুলিতে সিংহভাগ নাগরিক শহরে বাস করে। যেমন মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের অঙ্গরাজ্য ক্যালিফোর্নিয়ার ৯৫% জনগণই কোনও না কোনও শহরে বাস করে।

উৎপত্তি

শহর কেন উৎপত্তি লাভ করে সে বিষয়ে কোন নির্ধারিত প্রমাণ নেই। তবে অনেক তত্ত্ববিদ ধারণা করেন, কিছু মৌলিক প্রয়োজন মেটানোর তাগিদেই শহর জন্মলাভ করে।

ধারণা করা হয়, কৃষি বিপ্লব শহর সৃষ্টির মূল। এই বিপ্লব কৃষির উদ্ভাবন করায়। এরফলে মানুষ খাদ্য উৎপাদনের তাগিদে স্থায়ীভাবে একস্থানে বসবাস শুরু করে। এই ঘন জনবসতির ফলেই ধীরে ধীরে শহর গড়ে ওঠে।[3] পল বাইরোচ তার শহর এবং অর্থনৈতিক উন্নতি বইয়ে বলেন, কৃষির ফলেই মানুষ একসাথে বসবাস করার প্রয়োজন অনুভব করে এবং এই মৌলিক প্রয়োজন মেটানোর জন্যই মানুষ শহর গড়ে তোলে।

গ্রামীণ তত্ত্ববিদ জেন জ্যাকবস বলেন, শহরের উৎপত্তিই কৃষির আবিষ্কারকে তরান্বিত করে, তবে তার এ যুক্তি অকাট্য বলে মেনে নেয়া হয় না।[4]

ভূগোল

হারলেম-এর মানচিত্র১৫৫০ সালের দিকে জেরুজালেমের একটি শহর থেকে অনুপ্রানিত। এটি দেয়াল এবং প্রতিরক্ষামূলক খাল দ্বারা ঘেরা।

বিভিন্ন দেশে বিভিন্নভাবে শহরকে সাজানো হয়। তবে অধিকাংশ ক্ষেত্রেই গ্রিড পদ্ধতিতে শহর তৈরি হয়। হাজার বছর আগে চীনে এই পদ্ধতি অনুসরণ করা হয়েছিল। আলেকজান্ডার দ্য গ্রেটের পরিকল্পনাবিদ ডিনোক্রেটস অব রোডস এই পরিকল্পনা করেছিলেন।

স্থান-নামে "নগর" প্রত্যয়ের ব্যবহার

দক্ষিণ এশিয়ায় স্থান-নামে প্রত্যয় হিসেবে নগর শব্দের বহুল প্রচলন আছে। যেমন -

উপজেলার নামে "নগর"

বাংলাদেশে নগর প্রত্যয়যুক্ত ১৫টি উপজেলা আছে। যথা,

ইউনিয়নের নামে "নগর"

আরও দেখুন

তথ্যসূত্র

  1. Goodall, B. (1987) The Penguin Dictionary of Human Geography. London: Penguin.
  2. Kuper, A. and Kuper, J., eds (1996) The Social Science Encyclopedia. 2nd edition. London: Routledge.
  3. (Bairoch 1988, পৃ. 3–4)
  4. (Jacobs 1969, পৃ. 23)

বহিঃসংযোগ

This article is issued from Wikipedia. The text is licensed under Creative Commons - Attribution - Sharealike. Additional terms may apply for the media files.