শরিফা খাতুন
অধ্যাপক শরিফা খাতুন হলেন একজন বাংলাদেশী শিক্ষাবিদ ও সমাজকর্মী। ১৯৫২ খ্রিষ্টাব্দে বাংলা ভাষাকে পাকিস্তানের রাষ্ট্রভাষা হিসেবে ঘোষণার দাবীতে আন্দোলনে অংশ গ্রহণ করেন এবং এ কারণে ২০১৭ খ্রিষ্টাব্দে তাকে একুশে পদক প্রদান করা হয়।
শরিফা খাতুন | |
---|---|
![]() অধ্যাপক শরিফা খাতুন (ঢাকা, ২০১৭) | |
জন্ম | ডিসেম্বর ৬, ১৯৩৬ |
জাতীয়তা | ![]() ![]() |
নাগরিকত্ব | বাংলাদেশ |
মাতৃশিক্ষায়তন | ইডেন কলেজ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় |
পেশা | অধ্যাপনা[1] |
পরিচিতির কারণ | নারী ভাষাসৈনিক |
পুরস্কার | একুশে পদক (২০১৭)[2] |
জন্ম ও প্রাথমিক জীবন
নারী ভাষা সৈনিক শরিফা খাতুন ফেনী মহকুমার শশ্মদি ইউনিয়নের জাহানপুর গ্রামে ৬ ডিসেম্বর ১৯৩৬ সালে জন্মগ্রহণ করেন। তার বাবা আসামের রেলওয়েতে চাকরি করতেন। পাঁচ বছর পর্যন্ত তিনি বাবা-মায়ের সঙ্গে আসামেই থাকতেন। বাবা মোহাম্মদ আসলাম এবং মা জেবুন্নেছা চৌধুরাণী যখন দেখলেন বাংলা ভাষায় পড়ার উপযোগী কোনো শিক্ষা প্রতিষ্ঠান আসামে নেই তখন শরীফা খাতুনকে কুমিল্লা তার খালার বাসার পাঠিয়ে দেন।[3] বাবার চাকরির সুবাদে আসামেই থাকা হতো ড. শরিফা খাতুনের। ছোটবেলা কেটেছে আসাম-বেঙ্গল রেলওয়ের কোয়ার্টারে। পরে কুমিল্লায় খালুর বাসায় থেকে শহরের লুৎফুন্নেসা স্কুলে লেখাপড়া শুরু করেন[4]
শিক্ষাজীবন
শরিফা খাতুন কুমিল্লায় শহরের লুৎফুন্নেসা স্কুলে লেখাপড়া শুরু করেন। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ শুরু হলে তার স্কুলে যাওয়া বন্ধ হয়ে যায়। তখন তার চাচা তাকে ফেনীতে নিয়ে ভর্তি করান। পরবর্তীতে ১৯৫১ সালে নোয়াখালী সদরের উমা গার্লস স্কুল থেকে ম্যাট্রিকুলেশন পাস করেন। ১৯৫৩ সালে ইডেন কলেজ থেকে উচ্চ মাধ্যমিক, ১৯৫৭ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ইসলামের ইতিহাস ও সংস্কৃতি বিষয়ে স্নাতক (সম্মান) , ১৯৫৮ সালে এমএ পাস করেন। [4]
বিশেষ অবদান
স্কুলের ছাত্রী থাকাকালীন ১৯৪৭ সালে ব্রিটিশবিরোধী আন্দোলনের দু’একটি মিছিলেও তিনি অংশ নেন। তখনো ভাষা আন্দোলন শুরু হয়নি। ১৯৪৭ সালের আগস্টে দেশভাগের পর ভাষা আন্দোলন প্রসঙ্গটি প্রকাশ্যে আসে। মুহাম্মদ আলী জিন্নাহ ৪৮ সালে উর্দুকে রাষ্ট্রভাষা করার ঘোষণা দেন। তখন আন্দোলনটা সারা দেশে ছড়িয়ে পড়তে থাকে। স্কুলের ছাত্রীরা সে মিছিলে অংশ নিয়েছে। ১৯৫২ সালের ২১ ফেব্রুয়ারির সকালবেলার কথা স্মৃতিচারণে জানিয়েছেন শরিফা। সেদিন ১৪৪ ধারা জারি হয়ে গেছে ততক্ষণে। তবে ইডেন কলেজের এ ছাত্রীদের লক্ষ আমতলার সভা। ছাত্রীরা সকালবেলা উঠে প্রস্তুত হন। ততক্ষণে কলেজের গেট কিন্তু তালাবদ্ধ। তখন শরীফাসহ আরো কয়েক ছাত্রী গাছ ও ডাল বেয়ে দেয়াল টপকে কলেজ আঙিনা থেকে বের হয়ে ঢাকা মেডিকেল কলেজের পাশ দিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের আমতলায় চলে যান। [3] ১৯৫৫ সালের ২১ ফেব্রুয়ারি আরেকটি বড় ধরনের ঘটনা ঘটে। অনেক ছাত্রী গ্রেপ্তার হয়। অনেককেই সেদিন ১৪৪ ধারা ভাঙার দায়ে পুলিশ ট্রাকে উঠিয়ে নিয়ে যায়। সেদিন গ্রেফতার হওয়া ছাত্রীর সংখ্যা ছিল ২০-২১ জন। কুমিল্লা ভিক্টোরিয়া কলেজের অধ্যাপক লায়লা নূরও ছিলেন তাদের সঙ্গে। লায়লা শরীফার পরিচিতদের একজন। লায়লা নূরের সঙ্গে মিছিল-মিটিংয়ে অংশ নিয়েছেন শরীফা খাতুন। ২১ পরবর্তী সময়ে দেশের প্রথম শহীদ মিনার তৈরি করে তাতে যখন শ্রদ্ধা অর্পণ করা হয়, সেটিতেও অংশ নিয়েছিলেন শরিফা খাতুন। দাবি আদায় না হওয়া পর্যন্ত লড়াই করেছেন সহযোদ্ধাদের সঙ্গে।
আরও দেখুন
তথ্যসূত্র
- বাসস (২০ ফেব্রুয়ারি ২০১৭)। "একুশে পদক প্রদান করলেন প্রধানমন্ত্রী"। বাংলাদেশ সংবাদ সংস্থা (বাংলাদেশের জাতীয় সংবাদ সংস্থা)। ২০১৭-০২-২৮ তারিখে মূল (HTML) থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ৯ জুন ২০১৭।
- ইকবাল, দিদারুল (২২ ফেব্রুয়ারি ২০১৭)। "একুশে পদক প্রদান করেছেন বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী" (HTML)। চীন আন্তর্জাতিক বেতার (সিআরআই)। সংগ্রহের তারিখ ৯ জুন ২০১৭।
- "শরিফা খাতুন : এক ভাষাসৈনিকের গল্প"। বণিক বার্তা। ২৭ ফেব্রুয়ারি ২০১৭। সংগ্রহের তারিখ ১৬ মে ২০১৯।
- "ভাষা আন্দোলনে নারীদের ভূমিকা আজও অস্বীকৃতই রয়ে গেছে"। প্রিয়.কম। ১৫ ফেব্রুয়ারি ২০১৬। ১৬ মে ২০২০ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ১৬ মে ২০১৯।