শওকত আলী সরকার

শওকত আলী সরকার (জন্ম: ১৯৪৮) বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধের একজন বীর মুক্তিযোদ্ধা। স্বাধীনতা যুদ্ধে তার সাহসিকতার জন্য বাংলাদেশ সরকার তাকে বীর বিক্রম খেতাব প্রদান করে।[1]

শওকত আলী সরকার
জন্ম১৯৪৮
মৃত্যু২২ আগস্ট,২০২২
জাতীয়তাবাংলাদেশী
নাগরিকত্ব পাকিস্তান (১৯৭১ সালের পূর্বে)
 বাংলাদেশ
পরিচিতির কারণবীর বিক্রম

জন্ম ও শিক্ষাজীবন

শওকত আলী সরকারের জন্ম কুড়িগ্রাম জেলার চিলমারী উপজেলার রানীগঞ্জ ইউনিয়নের দক্ষিণ ওয়ারী গ্রামে। তার বাবার নাম ইজাব আলী সরকার এবং মায়ের নাম শরিতুজ নেছা। তার স্ত্রীর নাম খালেদা খানম। তাদের চার মেয়ে দুই ছেলে। [2]

কর্মজীবন

১৯৭১ সালে শওকত আলী সরকার শিক্ষার্থী ছিলেন। মুক্তিযুদ্ধ শুরু হলে তিনি যুদ্ধে যোগ দেন। প্রশিক্ষণ শেষে ১১ নম্বর সেক্টরের মানকারচর সাব-সেক্টরে যুদ্ধ করেন।

মুক্তিযুদ্ধে ভূমিকা

১৯৭১ সালের নভেম্বর মাসে কুড়িগ্রাম জেলার উলিপুর উপজেলার হাতিয়া ইউনিয়নের অন্তর্গত অনন্তপুরে বেলা ১১টার দিকে একদল পাকিস্তানি সেনা হঠাৎ হাতিয়া ইউনিয়নে চলে আসে। পাকিস্তানি সেনারা সেখানে মুক্তিযোদ্ধাদের খুঁজতে থাকে। হাতিয়া ইউনিয়নের অনন্তপুরে ছিল মুক্তিযোদ্ধাদের মূল শিবির। মুক্তিযোদ্ধারা দুপুরে এক দফা যুদ্ধ করেছেন পাকিস্তানি সেনাদের সঙ্গে। তাদের নেতৃত্বে ছিলেন শওকত আলী সরকার। সে সময়ে যুদ্ধে পাকিস্তান সেনাবাহিনীর বিরুদ্ধে তারা ব্যর্থ হন। শওকত আলী সরকার সহযোদ্ধাদের নিয়ে পিছু হটে সাময়িকভাবে আত্মগোপন করতে বাধ্য হলেন। বিকেলে পুনঃসংগঠিত ও শক্তি বৃদ্ধি করে আবার পাল্টা আক্রমণ চালালেন। এবার পাকিস্তানি সেনারা বিপর্যস্ত। শেষে পাকিস্তানিরা তাদের হতাহত সহযোদ্ধাদের ফেলে পালিয়ে গেল। পাকিস্তানি সেনারা একপর্যায়ে কয়েকটি দলে বিভক্ত হয়ে সেদিকে রওনা হওয়ার পর খবর পেয়ে মুক্তিযোদ্ধারা পাকিস্তানি সেনাদের আক্রমণ করেন। পাকিস্তানি সেনা ছিল সংখ্যায় বিপুল এবং তাদের সাথে ছিলো ভারী অস্ত্রশস্ত্রও। গুলির শব্দ শুনে পাকিস্তানিরা মুক্তিযোদ্ধাদের অবস্থান চিহ্নিত করে কয়েকটি গ্রাম ঘিরে ফেলে। কিন্তু মুক্তিযোদ্ধাদের না পেয়ে তারা নির্বিচারে গ্রামের মানুষকে হত্যা ও বাড়িঘরে আগুন দেয়। মুক্তিযোদ্ধারা পাকিস্তানি সেনাদের প্রতিরোধ করার চেষ্টা করেন কিন্তু তাদের বেপরোয়া আক্রমণে মুক্তিযোদ্ধারা পিছু হটে ঝোপ-জঙ্গলে আশ্রয় নিতে বাধ্য হন। এমন পরিস্থিতিতে শওকত আলী সরকার মুক্তিযোদ্ধাদের সংগঠিত করে আবার ঝাঁপিয়ে পড়লেন পাকিস্তানি সেনাদের বিরুদ্ধে। তাদের সঙ্গে যোগ দেয় মুক্তিযোদ্ধাদের অপর দল—চাঁদ প্লাটুনের কিছু মুক্তিযোদ্ধা। গ্রামবাসী হত্যার প্রতিশোধ নিতে জীবনের ঝুঁকি নিয়ে শওকত আলী সরকার মুখোমুখি যুদ্ধ শুরু করেন। মুক্তিযোদ্ধাদের প্রবল আক্রমণে পাকিস্তানি সেনারা বেসামাল হয়ে পড়ে। এতে মুক্তিযোদ্ধাদের সাহস আরও বেড়ে যায়। বিপুল বিক্রমে তারা যুদ্ধ করেন। এক সময় শওকত আলী সরকারসহ কয়েকজন মুক্তিযোদ্ধা আহত হন। কিন্তু তাদের হাতেও হতাহত হয় ২৫-৩০ জন পাকিস্তানি সেনা। শেষ পর্যন্ত নিহত কয়েকজনের লাশ ফেলে পাকিস্তানিরা পালিয়ে যায় কুড়িগ্রামে। সেদিন পাকিস্তানি সেনারা কয়েক শ নিরস্ত্র মানুষ হত্যা করে। জীতেন্দ্র নাথ, গোলজার হোসেন, মনতাজ আলী, আবুল কাসেম কাচু, নওয়াব আলীসহ কয়েকজন মুক্তিযোদ্ধা যুদ্ধে শহীদ হন। [3]

পুরস্কার ও সম্মাননা

তথ্যসূত্র

  1. "দৈনিক প্রথম আলো, "তোমাদের এ ঋণ শোধ হবে না" | তারিখ: ১৬-০৩-২০১২"। ২০১৯-০৩-২৮ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২০১৭-০১-৩১
  2. একাত্তরের বীরযোদ্ধাদের অবিস্মরণীয় জীবনগাঁথা, খেতাবপ্রাপ্ত মুক্তিযোদ্ধা সম্মাননা স্মারকগ্রহন্থ। জনতা ব্যাংক লিমিটেড। জুন ২০১২। পৃষ্ঠা ২৬৬। আইএসবিএন 9789843351449।
  3. একাত্তরের বীর মুক্তিযোদ্ধা (দ্বিতীয় খন্ড)। ঢাকা: প্রথমা প্রকাশন। মার্চ ২০১৩। পৃষ্ঠা পৃ ১৪১। আইএসবিএন 9789849025375।

বহি:সংযোগ

This article is issued from Wikipedia. The text is licensed under Creative Commons - Attribution - Sharealike. Additional terms may apply for the media files.