লোদি উদ্যান

লোদি উদ্যান (হিন্দি: लोधी बाग़, উর্দু: لودھی باغ) হল ভারতের দিল্লি রাজ্যের একটি ঐতিহাসিক উদ্যান। এই উদ্যানের আয়তন ৯০ একর (৩,৬০,০০০ মি),[1] মহম্মদ শাহের সমাধিসৌধ, সিকন্দর লোদির সমাধিসৌধ, শিশ গুম্বাদ ও বড় গুম্বাদ এখানে অবস্থিত।[2] এগুলি পঞ্চদশ শতাব্দীতে উত্তর ভারত এবং আধুনিক পাকিস্তানের আঞ্জাবখাইবার পাখতুনিস্তান শাসনকারী সৈয়দআফগান লোদি রাজবংশের (১৪৫১-১৫২৬) স্থাপত্য নিদর্শন। এখন আর্কিওলজিক্যাল সার্ভে অফ ইন্ডিয়া (এএসআই) এই উদ্যানের রক্ষণাবেক্ষণ করে।[1]

বড় গুম্বাদ সমাধিসৌধ ও মসজিদ, লোদি উদ্যান, নতুন দিল্লি
শিশ গুম্বাদ, লোদি উদ্যান, নতুন দিল্লি

লোদি রোডের ধারে খান মার্কেটসফদরজঙ্গের সমাধিসৌধের মাঝে এই উদ্যান অবস্থিত।

ইতিহাস

সৈয়দ ও লোদি বংশের রাজত্বকালে নির্মিত স্থাপত্যের সংখ্যা অল্প। সেই দিক থেকে লোদি উদ্যান বেশ গুরুত্বপূর্ণ একটি ঐতিহাসিক নিদর্শন।

সৈয়দ রাজবংশের শেষ শাসক মহম্মদ শাহের সমাধিসৌধ এই উদ্যানের সবচেয়ে পুরনো সমাধিসৌধ। ১৪৪৪ সালে আলাউদ্দিন আলম শাহ মহম্মদ শাহে স্মৃতিরক্ষার্থে এটি নির্মাণ করান। এটি একটি অষ্টভূজ স্থাপত্য নিদর্শন। ছাদে পাথরের "ছাজ্জা" ও কোণায় "গুলদস্তা" দেখা যায়।

লোদি উদ্যানের অপর একটি সমাধিসৌধ হল সিকন্দর লোদির সমাধিসৌধ। এটিও মহম্মদ শাহের সমাধিসৌধেরই মতো। শুধু এতে "ছতরি"গুলি নেই। ১৫১৭ সালে লোদি বংশের শেষ সুলতান ইব্রাহিম লোদি এটি নির্মাণ করিয়েছিলেন। এই সৌধটিকে শিশ গুম্বাদ বলে ভুল করা হয়। প্রকৃত শিশ গুম্বাদ পানিপথে অবস্থিত। এই সমাধিসৌধের আকারটি আয়তাকার। মুঘল আমলে বিশেষ কারণে এই উদ্যানের সংস্কার করা হয়েছিল। আকবরের সময়কালে এই উদ্যানটি মানমন্দির ও নথি রক্ষণের গ্রন্থাগার হিসেবে ব্যবহৃত হত। ব্রিটিশরা সৌধটির সংস্কার করেছিল। সংস্কারের সময় ১৮৬৬ সালে একটি লিপিতে বাবরের হাতে ইব্রাহিম লোদির পরাজিত হওয়ার বিবরণীটিও এখানে যুক্ত করা হয়েছিল।[3][4]

বড় গুম্বাদের পাশে তিন গম্বুজ মসজিদ, লোদি উদ্যান, নতুন দিল্লি।

পঞ্চদশ শতাব্দীর পর এই উদ্যানকে কেন্দ্র করে দুটি গ্রাম গড়ে উঠেছিল। ১৯৩৬ সাল অবধি গ্রামদুটি ছিল। এরপর উদ্যান সংস্কারের জন্য গ্রামবাসীদের অন্যত্র সরানো হয়। ভারতের গভর্নর-জেনারেল মার্কাস অফ ওয়েলিংটনের স্ত্রী লেডি ওয়েলিংটনের নকশা অনুযায়ী উদ্যানটির সংস্কার হয় বলে ১৯৩৬ সালের ৯ এপ্রিল এটিকে 'লেডি ওয়েলিংটন পার্ক' নামে উদ্বোধন করা হয়।[5][6] ১৯৪৭ সালে ভারত স্বাধীন হওয়ার পর এই উদ্যানের নাম রাখা হয় 'লোদি উদ্যান'।

মহম্মদ শাহের সমাধিসৌধ

১৯৬৮ সালে জে এ স্টেইন এই উদ্যানের নতুন নকশায় সংস্কার করেন। স্টেইন ও গ্যারেট একবো পার্শবর্তী ইন্ডিয়া ইন্টারন্যাশানাল সেন্টারেরও নকশা করেছিলেন।[7] স্টেইন উদ্যানে একটি কাচের ঘর যুক্ত করেছিলেন।[5][8] ব্রিটিশ যুগে নির্মিত একটি প্রবেশদ্বারে এখনও সেযুগে দেওয়া 'লেডি ওয়েলিংডন পার্ক' নামটি দেখা যায়।

পাদটীকা

  1. ASI have included the remaining unprotected monuments of Lodhi Garden under the Delhi Circle protection umbrella ওয়েব্যাক মেশিনে আর্কাইভকৃত ২ আগস্ট ২০০৯ তারিখে The Hindu, October 16, 2002.
  2. "Heritage walk marks 75th anniversary of Lodhi Garden"। ২০১৩-০৪-০২ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২০১৪-০৪-২৫
  3. "Tomb of Ibrahim Lodi"। ১৪ মে ২০০৮ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২৫ এপ্রিল ২০১৪
  4. Ibrahim Lodi's Tomb
  5. Lodi Gardens turns 70 ওয়েব্যাক মেশিনে আর্কাইভকৃত ৩ নভেম্বর ২০১২ তারিখে The Hindu, April 9, 2006.
  6. "Lodi Garden"। ২ সেপ্টেম্বর ২০১১ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২৫ এপ্রিল ২০১৪
  7. Eicher:City Guide – Delhi, Eicher Goodearth Publications. 1998. আইএসবিএন ৮১-৯০০৬০১-২-০. Page 117
  8. Walk with royalty Business Line, February 23, 2007.

আরও পড়ুন

  • Sunday at the Lodi Gardens, by Vinay Dharwadker. Published by Viking, 1994.
  • Lalkot to Lodi Gardens: (Delhi of Sultans), by Ranjit Sinha. Published by South Asia Books, 1996. আইএসবিএন ৮১-৭১৬৭-২৩৭-X.

বহিঃসংযোগ

This article is issued from Wikipedia. The text is licensed under Creative Commons - Attribution - Sharealike. Additional terms may apply for the media files.