লুসাই
লুসাই একটি ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠী। তারা পূর্ব বাংলাদেশ, উত্তর-পূর্ব ভারত এবং মায়ানমারে বসবাস করে। তারা নিজেদের মঙ্গোলীয় জনগোষ্ঠীর বংশধর বলে পরিচয় দেয়। তাদের অধিকাংশই পাহাড়ে জুম চাষ করে। লুসাই পাহাড়ের নামেই তাদের নামকরণ হয়েছে।[1] লুসাইদের চাকমারা ‘কুগী’, মারমারা ‘লাঙ্গী’ ও ত্রিপুরারা ‘শিকাম’ নামে অভিহিত করে।
সংস্কৃতি
লুসাই জনগোষ্ঠী লোকবিশ্বাস তাদের কারো মৃত্যুর পর মৃতের আত্না ‘মিথিখুয়া’ নামক মৃতপূরীতে বাস করে। মিথিখুয়াতে অবস্থানকালে প্রত্যেকের নিজ নিজ কর্মফলের বিচার হবে। কর্মফল অনুসারেই তারা স্বর্ণে (পিয়াল রাল) যেতে পারবে। পৃথিবী ছেড়ে মিথিখুয়াতে যাবার মান হিসেবে (থি টিন থ্লা) আগস্ট মাসকেই ধরা হয়। তাই লুসাই সমাজে আগস্ট মাসে কোন বিয়ের অনুষ্ঠান বা বিনোদনমূলক উৎসব করা হয় না। বর্তমানেও এ রীতি মানা হয়। লুসাইরা আদিতে সৃষ্টিকর্তা বা পাথিয়েল বিশ্বাস করতো। লুসাই জনগোষ্ঠী এককালে জড়োপাসক ও সর্বপ্রাণবাদের বিশ্বাসী ছিল। তারা ভূতপ্রেত, অপদেবতা ইত্যাদি বিশ্বাস করতো। তারা ভূতপ্রেত ও অপদেবতা উদ্দেশ্যে পশুদিয়ে শির পূজা ও নদী পূজা দিত।
অতীতে লুসাইরা যার যার গ্রামে একেক নিয়মে দেবদেবীর পূজা করতো। পরে লুসাইদের মধ্যে খ্রিস্টানধর্ম বিস্তার লাভ করে। বর্তমানে শতভাগ লুসাই খ্রিস্টান ধর্মাবলম্বী। ধর্মীয় উৎসব পালন ছাড়াও বছরে তারা প্রধান তিনটি উৎসব পালন করে থাকে: ১. চাপচারকূত (বসন্ত উৎসব) ২. মীমতূত (মৃত আত্মাদের স্মরণে) এবং ৩. পলকূত (শস্য কাটার উৎসব)। এছাড়াও রয়েছে চাপচার কুট, মিনকুট, পাল কুট। তাদের মাতৃভাষায় রচিত বিভিন্ন গান ও আদি নৃত্য। মনকুট উৎসব- জুমের ঘাস কাটার যখন শেষ হয় তখন এই উৎসব করা হয়। চাপচার কুট- এটি নবান্ন উৎসব। জুমের ধান কাটা শেষ হলে এই উৎসব করা হয়।
তথ্যসূত্র
- "লুসাই - বাংলাপিডিয়া"। bn.banglapedia.org। সংগ্রহের তারিখ ২০১৯-১০-০৯।