লিয়াকত আলী খান (বীর উত্তম)

লিয়াকত আলী খান (জন্ম: অজানা) বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধের একজন বীর মুক্তিযোদ্ধা। স্বাধীনতা যুদ্ধে তার সাহসিকতার জন্য বাংলাদেশ সরকার তাকে বীর উত্তম খেতাব প্রদান করে। [1]

লিয়াকত আলী খান
জাতীয়তাবাংলাদেশী
নাগরিকত্ব পাকিস্তান (১৯৭১ সালের পূর্বে)
 বাংলাদেশ
পরিচিতির কারণবীর উত্তম

জন্ম ও শিক্ষাজীবন

লিয়াকত আলী খানের জন্ম বাগেরহাট জেলার বাগেরহাট পৌরসভার অন্তর্গত সরাই রোডের আমলাপাড়ায়। তার বাবার নাম আতাহার আলী খান এবং মায়ের নাম আজিজা খাতুন। তার স্ত্রীর নাম নাজমা আনোয়ার বেগম। তাদের এক মেয়ে, এক ছেলে।

কর্মজীবন

১৯৭১ সালে লিয়াকত আলী খান পাকিস্তানে (তখন পশ্চিম পাকিস্তান) কর্মরত ছিলেন। মুক্তিযুদ্ধ শুরু হলে মে মাসের শেষে বাবার অসুস্থতার কথা বলে বাংলাদেশে আসেন। কয়েকদিন পর ভারতে গিয়ে মুক্তিযুদ্ধে যোগ দেন। কিছুদিন পর তাকে নিয়মিত বাহিনীর প্রথম ইস্ট বেঙ্গল রেজিমেন্টের অ্যাডজুটেন্ট হিসেবে দায়িত্ব দেওয়া হয়। ১৯৭৫ সালে ক্যু, পাল্টা ক্যুর ঘটনায় বাংলাদেশ বিমান বাহিনী থেকে বাধ্যতামূলক অবসর দেওয়া হয়। পরে তিনি মধ্যপ্রাচ্যে চাকরি করেন। এরপর বাংলাদেশ বিমানে বৈমানিক হিসেবে চাকরি করেন।[2]

মুক্তিযুদ্ধে ভূমিকা

১৯৭১ সালের ২৬ নভেম্বর মুক্তিযুদ্ধকালের উল্লেখযোগ্য যুদ্ধ ঘটে সিলেটের কানাইঘাট উপজেলার গৌরীপুরে। জৈন্তাপুর-জকিগঞ্জ সড়কে সুরমা নদীর তীরে ছিলো থানা সদরের অবস্থান। অবস্থানগত কারণে ১৯৭১ সালে মুক্তিবাহিনী ও পাকিস্তান সেনাবাহিনী উভয়ের কাছেই কানাইঘাট ছিল সামরিক দিক থেকে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। কানাইঘাটে ছিল পাকিস্তান সেনাবাহিনীর শক্ত এক অবস্থান। প্রতিরক্ষায় নিয়োজিত ছিল তাদের ৩১ পাঞ্জাব রেজিমেন্ট। আরও ছিল মিলিশিয়া ও রাজাকার। নভেম্বর মাসের শেষ দিকে এটিই ছিল পাকিস্তান সেনাবাহিনীর সম্মুখ প্রতিরক্ষা লাইন। তখন কানাইঘাটের অগ্রবর্তী এলাকা জকিগঞ্জ, আটগ্রাম, চারগ্রাম মুক্তিযোদ্ধাদের দখলে। জকিগঞ্জ, আটগ্রাম, চারগ্রাম দখলের পর মুক্তিযোদ্ধারা এগিয়ে যেতে থাকেন সিলেট অভিমুখে। মুক্তিযোদ্ধাদের এই দলে ছিলেন লিয়াকত আলী খান। ২৫ নভেম্বর তারা কানাইঘাট থানা সদরের দুই মাইল অদূরে গৌরীপুরে পৌঁছেন। তারা ছিলেন কয়েকটি দলে বিভক্ত। কানাইঘাটে আক্রমণের উদ্দেশ্যে তারা গৌরীপুরের বিভিন্ন স্থানে অবস্থান নেন। ২৬ নভেম্বর ভোরে পাকিস্তান সেনাবাহিনী অতর্কিতে মুক্তিযোদ্ধাদের একটি দলকে আক্রমণ করে। এ রকম অবস্থায় পাল্টা আক্রমণ ছাড়া আর কোনো পথ খোলা থাকে না। মুক্তিযোদ্ধারা সাহসিকতার সঙ্গে পাকিস্তান সেনাবাহিনীর আক্রমণ মোকাবিলা করতে থাকেন। কিন্তু বীরত্বের সঙ্গে যুদ্ধ করার পরও তাদের অবস্থা নাজুক হয়ে পড়ে। আক্রান্ত মুক্তিযোদ্ধা দলের অধিনায়ক ছিলেন মাহবুবুর রহমান (বীর উত্তম)। তিনি দৃঢ়তার সঙ্গে সহযোদ্ধাদের নিয়ে আক্রমণ মোকাবিলা করছিলেন। কিন্তু একপর্যায়ে তিনি পাকিস্তানি সেনাদের গুলিতে শাহাদতবরণ করেন। এ অবস্থায় লিয়াকত আলী খান যুদ্ধক্ষেত্রে অধিনায়কের দায়িত্ব পান। একপর্যায়ে তিনিও শত্রুর গুলিতে আহত হন। আহত হয়েও তিনি যুদ্ধ চালিয়ে যান। [3]

পুরস্কার ও সম্মাননা

পাদটীকা

এই নিবন্ধে দৈনিক প্রথম আলোতে ০৩-০৬-২০১২ তারিখে প্রকাশিত তোমাদের এ ঋণ শোধ হবে না প্রতিবেদন থেকে লেখা অনুলিপি করা হয়েছে। যা দৈনিক প্রথম আলো ক্রিয়েটিভ কমন্স অ্যাট্রিবিউশন-শেয়ার-এলাইক ৩.০ আন্তর্জাতিক লাইসেন্সে উইকিপিডিয়ায় অবমুক্ত করেছে (অনুমতিপত্র)। প্রতিবেদনগুলি দৈনিক প্রথম আলোর মুক্তিযুদ্ধ ট্রাস্টের পক্ষে গ্রন্থনা করেছেন রাশেদুর রহমান (যিনি তারা রহমান নামেও পরিচিত)।

তথ্যসূত্র

  1. দৈনিক প্রথম আলো, "তোমাদের এ ঋণ শোধ হবে না"| তারিখ: ০৩-০৬-২০১২
  2. একাত্তরের বীরযোদ্ধাদের অবিস্মরণীয় জীবনগাঁথা (খেতাবপ্রাপ্ত মুক্তিযোদ্ধা সম্মাননা স্মারকগ্রন্থ)। জনতা ব্যাংক লিমিটেড। জুন ২০১২। পৃষ্ঠা ১০২। আইএসবিএন 978-984-33-5144-9।
  3. একাত্তরের বীরযোদ্ধা, খেতাব পাওয়া মুক্তিযোদ্ধাদের বীরত্বগাথা (দ্বিতীয় খন্ড)। প্রথমা প্রকাশন। মার্চ ২০১৩। পৃষ্ঠা ৬১। আইএসবিএন 9789849025375।

বহি:সংযোগ

This article is issued from Wikipedia. The text is licensed under Creative Commons - Attribution - Sharealike. Additional terms may apply for the media files.