লিঙ্গ উত্থান ত্রুটি

উত্থান ত্রুটি বা পুরুষত্বহীনতা বা লিঙ্গ শৈথিল্য হল এক প্রকারের যৌন রোগ যাতে শিশ্ন উত্থিত অবস্থা ধরে রাখতে পারে না বা লিঙ্গ উত্থান হয় না। সাধারণত যৌন ক্রিয়ার অংশ হিসেবে যৌন উত্তেজনা আসার লক্ষন এবং মিলনের পূর্বশত হিসেবে লিঙ্গ শক্ত হয়ে উত্থান হয়। পুরুষের যৌন সমস্যাগুলির মধ্যে এটি সবচেয়ে সাধারণ।[1] এ সমস্যার কারনে মানসিক ক্ষতি হতে পারে কারণ এটি ব্যক্তিসত্ত্বা এবং যৌন সম্পর্কে সঙ্গীর সাথে সরাসরি জড়িত একটি বিষয়।

উত্থান ত্রুটি
প্রতিশব্দপুরুষত্বহীনতা/লিঙ্গ শিথীলতা/ধ্বজভঙ্গ
একটি শিশ্নের ক্রশ-সেকশন
বিশেষত্বমূত্রব্যবস্থা বিজ্ঞান
লক্ষণযৌন উত্তেজনাহেতু লিঙ্গের উত্থান লাভ না করা বা উত্থান ধরে রাখতে না পারা
ঝুঁকির কারণহৃদযন্ত্রের রোগ, ডায়াবেটিস

৮০ ভাগ ক্ষেত্রেই এর পেছনে শারীরিক সমস্যা খুঁজে পাওয়া যায়।[2] যার মধ্যে রয়েছে হৃদযন্ত্রের রোগ; ডায়াবেটিস; স্নায়ুতাত্ত্বিক সমস্যা যেমন মাদকের প্বার্শপ্রতিক্রিয়া, প্রোস্টেটেকটমি এবং হাইপোগোনাডিসম। ১০ ভাগ সমস্যা তৈরী হয় মানসিক সমস্যা থেকে যেমন ঘৃনার অনুভূতি, রক্ষণশীল চিন্তা।[2]


লিঙ্গ উত্থান ত্রুটির সংজ্ঞা দিয়ে অন্যকোন উত্থানজনিত ত্রুটিকে বুঝায় না যেমন প্রিয়েপিজম।

এ রোগের চিকিৎসা করতে হলে এর পেছনে কি কারণ আছে তা খুঁজে দেখা জরুরী - কারো জীবনযাত্রা ব্যঘাত, বা কোন মানসিক সমস্যার মধ্য দিয়ে যাচ্ছে কিনা তা বের করা জরুরী। [2] অনেক ক্ষেত্রেই ঔষধ দ্বারা চিকিৎসা শুরু করা হয় বিশেষত পিডিই৫ ইনহিবিটর দিয়ে যেমন সিলডেনাফিল যেটা রক্তে দ্রবীভূত হয়ে শিশ্নর স্পন্জের মত তন্তুর মধ্যে বেশি করে রক্ত প্রবাহিত করে। অন্যান্য চিকিৎসা যেটা কম ব্যবহার করা হয় তা হল প্রোস্টেগ্লাডিন প্যালেট মূত্রনালীতে প্রবেশ করানো, পেশীকে শিথিল করা এবং ভ্যসোডায়ালেটর শিশ্নে প্রয়োগ করা, শিশ্ন বসানো, শিশ্ন পাম্প পদ্ধতি এবং রক্তনালী পুনঃস্থাপন অপারেশন ইত্যাদি।[2][3]

লক্ষণ ও উপসর্গ

লিঙ্গ উত্থানের ত্রুটির বৈশিষ্ঠ্য হল যৌন ক্রিয়া সম্পাদনের লক্ষ্যে যে মাত্রায় লিঙ্গের উত্থান প্রয়োজন তা প্রতিবার বা পুন পুন উত্থিত না হওয়া কিংবা উত্থিত হলেও সেটা ধরে রাখতে না পারা। সংজ্ঞায়িত করা হয় এভাবে "শারীরিক মিলনের জন্য প্রয়োজনীয় কার্য সম্পাদনের জন্য যদি লিঙ্গ পুন পুন কিংবা লাগাতার উত্থান না হয় ও যে পরিমান শক্ত হওয়া প্রয়োজন তা অর্জন ও ধরে রাখতে কমপক্ষে তিন মাস ধরে ব্যর্থ হয় তখন তাকে উত্থানজনিত ত্রুটি বলে ধরা যায়।"[2]

মানসিক প্রভাব

রোগটির ফলে রোগী এবং তার সঙ্গীর আবেগিক সুস্থতার ক্ষতি হয়। অনেক পুরুষই লজ্জাজনক অনুভূতি লুকাতে গিয়ে কোন চিকিৎসাই করান না। এ রোগে আক্রান্ত রোগী প্রাথমিকভাবে চিহ্নিত হলেও প্রায় ৭৫% ভাগই চিকিৎসা করান না।[4]

কারণ

রোগটির কারণ হিসেবে নিম্নোক্ত প্রভাবকগুলোর ভূমিকা রয়েছে:

  • ডাক্তারের ব্যবস্থাপত্রের ঔষধ গ্রহনজনিত কারনে যেমন সিলেক্টিভ সিক্রোটিনিন রিআপটেক ইনহিবিটর,[5] বেটা-বাধাপ্রধানকারক, আলফা২ এন্ড্রেনার্জিক রিসেপ্টর এগোনিস্টস, থায়াজাইডস, হরমোন মডুলেটর এবং ৫α-রিডাক্টেস ইনহিবিটর)[1][2]
  • নিওরোজেনিক ব্যাধি যেমন ডায়াবেটিক নিউরোপ্যাথি, টেম্পোরাল লোব মৃগী, একাধিক স্ক্লেরোসিস, পারকিনসন রোগ, একাধিক সিস্টেম এট্রফি)[1][2][6]
  • ক্যাভারনোসল ব্যাধি যেমন পেরোনি রোগ [1][7]
  • হাইপারপ্রোল্যাক্টিনিমিয়া যেমন প্রোল্যাকটিনোমার কারনে [1]
  • মানসিক কারনে যেমন মানসিক চাপ, মানসিক ব্যাধি এবং কর্মক্ষমতা উদ্বেগ [8]
  • সার্জারির কারনে যেমন রেডাকাল প্রোস্টেটেকটমি [9]
  • বয়সের কারনে যারা ষাটোর্ধ তাদের এটি চল্লিশোর্ধের তুলনায় প্রায় চারগুন বেশি সম্ভাবনা [10]
  • কিডনি অক্ষমতা
  • জীবনযাত্রার অভ্যাস বিশেষত ধুম্রপান যার কারনে রক্তশিরা সংকুচিত হয়ে যায় [11][12][13]

সার্জিক্যাল কারনে উত্থানের বেশ সমস্যা তৈরী করতে পারে যেমন নার্ভ নষ্ট করে ফেলা বা রক্ত সংবহন ব্যবস্থার বাধা সৃষ্টি করা। [9] প্রোস্টেট ক্যান্সারে আক্রান্ত রোগীদের চিকিৎসার সাধারণ প্বার্শপ্রতিক্রিয়া হল উত্থানজনিত সমস্যা হওয়া। প্রোস্টেট ক্যান্সারের চিকিৎসার সময় প্রস্টেটেকটমি কিংবা বর্হি রেডিয়েশন রশ্মির দ্বারা প্রোস্টেটকে পুরোপুরি ধ্বংস করার যে সার্জারি করা হয় (যদিও এক্ষেত্রে উত্থানের জন্য যদিও প্রস্টেটের কোন প্রয়োজন নেই) তা পরবর্তীতে উত্থানের সমস্যা করতে পারে। হার্নিয়া সার্জারির ক্ষেত্রে বেশির ভাগ সময়ই এবং যে ক্ষেত্রে অপারেশনের পরবর্তীতে যাদের কোন সমস্যা হয় নি সেই ক্ষেত্রে, যাদের আগে যৌন অক্ষমতা ছিল তারা সেটি পুনরায় উদ্ধার করতে সক্ষম হতে পারেন। অন্যদিকে বেশিরভাগ ক্ষেত্রে যাদের আগেও কোন সমস্যা ছিল না তাদের পরেও যৌন জীবনে কোন সমস্যা দেখা দেয়না।[14]

বাইসাইকেল চালানোর সাথে উত্থানের সম্পর্ক রয়েছে কারণ সাইকেল চালনার সময় স্নায়ুবিক এবং শিরা উপশিরা ব্যবস্থায় রক্তপরিবহন ব্যবস্থার সমস্যা হয়।[15] এর ফলে ঝুঁকি বেড়ে যায় যাকে ১.৭-ফোল্ডে মাপা হয়।[16]

পর্নোগ্রাফির ফলে উত্থানজনিত সমস্যা হতে পারে বলে মত রয়েছে।[17] যদিও ২০১৫ সালে হওয়া একটি পর্যবেক্ষনে এটি বিশদ আকারে হয় কিনা তার ব্যপারে খুব কম প্রমাণ আছে বলে মত দেওয়া হয়।[18]


তথ্যসূত্র

  1. Cunningham GR, Rosen RC. Overview of male sexual dysfunction. In: UpToDate, Martin KA (Ed), UpToDate, Waltham, MA, 2018.
  2. Chowdhury SH, Cozma AI, Chowdhury JH. Erectile Dysfunction. Essentials for the Canadian Medical Licensing Exam: Review and Prep for MCCQE Part I. 2nd edition. Wolters Kluwer. Hong Kong. 2017.
  3. Montague DK, Jarow JP, Broderick GA, Dmochowski RR, Heaton JP, Lue TF, Milbank AJ, Nehra A, Sharlip ID (জুলাই ২০০৫)। "Chapter 1: The management of erectile dysfunction: an AUA update"J. Urol.174 (1): 230–39। ডিওআই:10.1097/01.ju.0000164463.19239.19পিএমআইডি 15947645
  4. Frederick, LR; Cakir, OO; Arora, H; Helfand, BT; McVary, KT (অক্টোবর ২০১৮)। "Undertreatment of Erectile Dysfunction: Claims Analysis of 6.2 Million Patients"The Journal of Sexual Medicine11 (10): 2546–53। ডিওআই:10.1111/jsm.12647পিএমআইডি 25059314
  5. Delgado PL, Brannan SK, Mallinckrodt CH, Tran PV, McNamara RK, Wang F, Watkin JG, Detke MJ (২০০৫)। "Sexual functioning assessed in 4 double-blind placebo- and paroxetine-controlled trials of duloxetine for major depressive disorder"। The Journal of Clinical Psychiatry66 (6): 686–92। ডিওআই:10.4088/JCP.v66n0603পিএমআইডি 15960560
  6. "Neurogenic Sexual Dysfunction in Men and Women"। Neurologic Bladder, Bowel and Sexual Dysfunction। এসটুসিআইডি 35058570
  7. "Male Sexual Dysfunction Epidemiology"Erectile dysfunction। Armenian Health Network, Health.am। ২০০৬। সংগ্রহের তারিখ ২০০৭-১০-০৭
  8. Tom F. Lue, MD (২০০৬)। "Causes of Erectile Dysfunction"Erectile dysfunction। Armenian Health Network, Health.am। সংগ্রহের তারিখ ২০০৭-১০-০৭
  9. "Erectile Dysfunction Causes"Erectile Dysfunction। Healthcommunities.com। ১৯৯৮। ২০০৭-১০-০৯ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২০০৭-১০-০৭
  10. "Erectile Dysfunction"। সংগ্রহের তারিখ ২০১০-০৭-০১
  11. Peate I (২০০৫)। "The effects of smoking on the reproductive health of men"। Br J Nurs14 (7): 362–66। ডিওআই:10.12968/bjon.2005.14.7.17939পিএমআইডি 15924009
  12. Korenman SG (২০০৪)। "Epidemiology of erectile dysfunction"। Endocrine23 (2–3): 87–91। এসটুসিআইডি 29133230ডিওআই:10.1385/ENDO:23:2-3:087পিএমআইডি 15146084
  13. Kendirci M, Nowfar S, Hellstrom WJ (২০০৫)। "The impact of vascular risk factors on erectile function"। Drugs Today (Barc)41 (1): 65–74। ডিওআই:10.1358/dot.2005.41.1.875779পিএমআইডি 15753970
  14. Zieren J, Menenakos C, Paul M, Müller JM (২০০৫)। "Sexual function before and after mesh repair of inguinal hernia"। Journal of Pharmaceutical and Biomedical Analysis12 (1): 35–38। এসটুসিআইডি 30209465ডিওআই:10.1111/j.1442-2042.2004.00983.xপিএমআইডি 15661052
  15. Sommer F, Goldstein I, Korda JB (জুলাই ২০১০)। "Bicycle riding and erectile dysfunction: a review."। The Journal of Sexual Medicine7 (7): 2346–58। এসটুসিআইডি 34409059ডিওআই:10.1111/j.1743-6109.2009.01664.xপিএমআইডি 20102446
  16. Huang V, Munarriz R, Goldstein I (সেপ্টেম্বর ২০০৫)। "Bicycle riding and erectile dysfunction: an increase in interest (and concern)."। The Journal of Sexual Medicine2 (5): 596–604। ডিওআই:10.1111/j.1743-6109.2005.00099.xপিএমআইডি 16422816
  17. Robinson, M.; Wilson, G. (জুলাই ১১, ২০১১)। "Porn-Induced Sexual Dysfunction: A Growing Problem"। Psychology Today
  18. Landripet I, Štulhofer A (মে ২০১৫)। "Is Pornography Use Associated with Sexual Difficulties and Dysfunctions among Younger Heterosexual Men?"। The Journal of Sexual Medicine12 (5): 1136–39। ডিওআই:10.1111/jsm.12853পিএমআইডি 25816904

বহিঃসংযোগ

শ্রেণীবিন্যাস
বহিঃস্থ তথ্যসংস্থান
This article is issued from Wikipedia. The text is licensed under Creative Commons - Attribution - Sharealike. Additional terms may apply for the media files.