লাবণ্য প্রভা ঘোষ

লাবণ্য প্রভা ঘোষ (১৮৯৭-২০০৩) ভারতের একজন গান্ধীবাদী স্বাধীনতা সংগ্রামী এবং মানভূম জেলায় অনুষ্ঠিত বাংলা ভাষা আন্দোলনের একজন নেত্রী ছিলেন।[4][5] জীবনের শেষভাগে তিনি দারিদ্র্যপীড়িত অবস্থায় একটি আশ্রমে বসবাস করেন। তার একমাত্র আয় ছিল স্বাধীনতা যোদ্ধাদের দেয়া ভাতা। ভারতের স্বাধীনতার আগে ও পরে সারা জীবন তিনি সাধারণ মানুষের অধিকারের জন্য লড়ে গেছেন।

লাবণ্য প্রভা ঘোষ
জন্ম
লাবণ্য প্রভা ঘোষ

(১৮৯৭-০৮-১৪)১৪ আগস্ট ১৮৯৭[1][2]
মৃত্যু১১ এপ্রিল ২০০৩(2003-04-11) (বয়স ১০৫)[3]
শিল্পাশ্রম, পুরুলিয়া
জাতীয়তাব্রিটিশ ভারতীয় (১৮৯৭-১৯৪৭)
ভারতীয় (১৯৪৭-২০০৩)
অন্যান্য নামমানভূম জননী[2]
পরিচিতির কারণস্বাধীনতা সংগ্রামী, ভাষা আন্দোলন (মানভূম)[1]
সন্তানঅরুণ চন্দ্র ঘোষ
ঊর্মিলা মজুমদার[3]
পিতা-মাতাঅঘোরচন্দ্র রায়

প্রথম জীবন

লাবণ্য প্রভা ১৮৯৭ খ্রিষ্টাব্দের ১৪ই আগস্ট জন্মগ্রহণ করেন। ১৯০৮ খ্রিষ্টাব্দে এগারো বছর বয়সে স্বাধীনতা সংগ্রামী অতুলচন্দ্র ঘোষের সাথে তার বিবাহ হয়। তিনি কখনও বিদ্যালয়ে যান নি, তবে তার পিতা তাকে শিখিয়েছিলেন। তার পিতা ছিলেন পুরুলিয়ার বিখ্যাত শিক্ষাব্রতী অঘোরচন্দ্র রায়। ঋষি নিবারণ চন্দ্র দাশগুপ্ত, লাবণ্য প্রভা ও তার স্বামী একত্রে পুরুলিয়ায় “শিল্পাশ্রম” স্থাপন করেন।[1] এই স্থানে সুভাষ চন্দ্র বসু, চিত্তরঞ্জন দাশ ও অনেক স্বাধীনতা সংগ্রামী জড়ো হতেন।[3] তিনি ছিলেন পুরুলিয়ার প্রথম মহিলা বিধায়ক, যিনি লোকসেবক সংঘের হয়ে নির্বাচিত হন। তিনি মানভুম অঞ্চলে স্বাধীনতা সংগ্রামের গুরুত্বপূর্ণ কেন্দ্র "শিল্পশ্রমে" সক্রিয় সদস্য ছিলেন। তিনি পুরুলিয়ার ব্রিটিশ বিরোধী আন্দোলনে সক্রিয় নেতৃত্ব দেন। তার পুত্র অরুণ চন্দ্র ঘোষ এবং ঊর্মিলা মজুমদার ও স্বাধীনতা আন্দোলনে ছিলেন এবং তারাও মায়ের সঙ্গে শিল্পাশ্রমে থাকতেন।

স্বাধীনতা আন্দোলন

লাবণ্য প্রভা শিল্পাশ্রমের সক্রিয় সদস্য হিসেবে মানভূম অঞ্চল থেকে ভারতের স্বাধীনতা আন্দোলনে যোগ দেন। তিনি তার স্বামী কর্তৃক প্রতিষ্ঠিত সাপ্তাহিক সাময়িকী “মুক্তি”-তে লেখালেখি করতে এবং ১৯৬১ সালে তার স্বামীর মৃত্যুর পরে তিনি সাময়িকীর সম্পাদকের দায়িত্ব নিয়েছিলেন।[4][6]

তিনি ১৯৩০ খ্রিষ্টাব্দে অনুষ্ঠিত লবণ সত্যাগ্রহ, ১৯৪২ খ্রিষ্টাব্দের ভারত ছাড়ো আন্দোলন ও ১৯৪৫ খ্রিষ্টাব্দের পতাকা সত্যাগ্রহ আন্দোলনে যোগদান করে বহুবার কারাবরণ করেন।[2][7][8] ১৯৪১ সালে তিনি পৃথক সত্যগ্রহ পালন করেছিলেন এবং ব্রিটিশরা তাকে গ্রেপ্তার করেছিল। ১৯৪২ সালে মহাত্মা গান্ধীর আহ্বানে ভারতছাড় আন্দোলনের অংশ হিসাবে লাবণ্য প্রভা ঘোষ এবং তার কন্যা কমলা ঘোষ একত্রে মিলে পুরুলিয়ার শিল্পআশ্রমে প্রতিবাদের আয়োজন করেছিলেন এবং উভয়কে ব্রিটিশরা গ্রেপ্তার করেছিল। তিনি ব্রিটিশ রাজত্বকালে পুরুলিয়ায় হওয়া বেশ কয়েকটি বিক্ষোভের শীর্ষনেত্রী ছিলেন।

ভাষা আন্দোলন

ভারতের স্বাধীনতা লাভের পর লাবণ্য প্রভা বিহারের মানভূম জেলায় বাংলা ভাষা আন্দোলনে যোগদান করেন। এই আন্দোলনে তিনি তিনবার গ্রেপ্তার হন। ১৯৫৬ খ্রিষ্টাব্দের ২০শে এপ্রিল তিনি পাকবিড়া গ্রাম থেকে কলকাতা শহরের দিকে শান্তিপূর্ণ পদযাত্রার নেতৃত্ব দেন ও ৭ই মে কলকাতা পৌছলে কারাবরণ করেন।[2]

স্বীকৃতি

ভাষা আন্দোলনে অবদানের জন্য ভাষাশহীদ স্মারক সমিতির পক্ষ থেকে ২০০৩ সালের ফেব্রুয়ারিতে সুনীল গঙ্গোপাধ্যায় তাকে সমাদৃত করেছিলেন।[5]

মৃত্যু

২০০৩ খ্রিষ্টাব্দের ১১ই এপ্রিল ১০৬ বছর বয়সে অত্যন্ত দরিদ্র অবস্থায় তার মৃত্যু ঘটে।[3]

তথ্যসূত্র

  1. Chakraborty, Debajyoti (২৪ জুলাই ২০০১)। "No freedom from poverty"The Times of India (ইংরেজি ভাষায়)। সংগ্রহের তারিখ ২৩ সেপ্টেম্বর ২০১২
  2. "INFORMATION & CULTURE : PURULIA,FAMOUS PERSONALITIES,Labanya Prabha Ghosh" (ইংরেজি ভাষায়)। purulia.gov.in.। সংগ্রহের তারিখ ২২ সেপ্টেম্বর ২০১২
  3. "Suffering in the land of martyrs"The Statesman (ইংরেজি ভাষায়)। ৪ জুলাই ২০০৩। সংগ্রহের তারিখ ২২ সেপ্টেম্বর ২০১২
  4. Ghosh, Niranjan (১৯৮৮)। Role of women in the freedom movement in Bengal, 1919-1947: Midnapore, Bankura, and Purulia district (ইংরেজি ভাষায়)। Tamralipta Prakashini। পৃষ্ঠা 291, 308, 310।
  5. "Purulia pioneer passes away" (ইংরেজি ভাষায়)। The Telegraph। ১২ এপ্রিল ২০০৩। সংগ্রহের তারিখ ২৪ সেপ্টেম্বর ২০১২
  6. Choudhary, Valmiki(Ed.)। Dr. Rajendra Prasad, Correspondence and Select Documents Vol 10 (ইংরেজি ভাষায়)। 10। নতুন দিল্লি: Allied Publishers। পৃষ্ঠা 134। আইএসবিএন 9788170230021। সংগ্রহের তারিখ ২৪ সেপ্টেম্বর ২০১২
  7. Kumari, Saroj (২০০৫)। Role of women in the freedom movement in Bihar, 1912-1947 (ইংরেজি ভাষায়)। পাটনা: Janaki Prakashan। পৃষ্ঠা ১৩৮, ১৭৯। সংগ্রহের তারিখ ২৪ সেপ্টেম্বর ২০১২
  8. Thakur, Bharti (২০০৬)। Women in Gandhi's Mass Movements (ইংরেজি ভাষায়)। Deep and Deep Publications। পৃষ্ঠা ১৬৪। আইএসবিএন 9788176298186। সংগ্রহের তারিখ ২৪ সেপ্টেম্বর ২০১২
This article is issued from Wikipedia. The text is licensed under Creative Commons - Attribution - Sharealike. Additional terms may apply for the media files.