লর্ড হ্যারিস

কর্নেল জর্জ রবার্ট ক্যানিং হ্যারিস, ৪র্থ ব্যারন হ্যারিস, জিসিএসআই, জিসিআইই, সিবি, টিডি, এডিসি (ইংরেজি: George Harris, 4th Baron Harris; জন্ম: ৩ ফেব্রুয়ারি, ১৮৫১ - মৃত্যু: ২৪ মার্চ, ১৯৩২) ত্রিনিদাদের সেন্ট অ্যানসে জন্মগ্রহণকারী বিখ্যাত ইংরেজ আন্তর্জাতিক ক্রিকেটার ছিলেন।[1] এছাড়াও ব্রিটিশ ঔপনিবেশিক শাসনামলে প্রশাসক ছিলেন লর্ড হ্যারিস। ১৮৭০ থেকে ১৮৮৯ সময়কালে ইংল্যান্ড ক্রিকেট দলের পক্ষে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে শৌখিন ক্রিকেটার হিসেবে অংশগ্রহণ করেন। ঘরোয়া প্রথম-শ্রেণীর ইংরেজ কাউন্টি ক্রিকেটে কেন্ট দলের প্রতিনিধিত্ব করেন। কেন্ট ও ইংল্যান্ড - উভয় দলেই তিনি অধিনায়কের দায়িত্ব পালন করেছেন। ১৮৮৫ থেকে ১৯০০ সাল পর্যন্ত রাজনীতিতে জড়িয়ে পড়েন। জীবনের অধিকাংশ সময়ই ক্রিকেট প্রশাসনে অত্যন্ত প্রভাব বিস্তারকারীর ভূমিকায় অবতীর্ণ হয়েছিলেন তিনি। এছাড়াও, মেরিলেবোন ক্রিকেট ক্লাবের সাথেও তার সম্পৃক্ততা ছিল।

দ্য লর্ড হ্যারিস
১৯১৯ সালের সংগৃহীত স্থিরচিত্রে লর্ড হ্যারিস
ব্যক্তিগত তথ্য
পূর্ণ নামজর্জ রবার্ট ক্যানিং হ্যারিস
জন্ম(১৮৫১-০২-০৩)৩ ফেব্রুয়ারি ১৮৫১
স্যান্ট অ্যানস, ত্রিনিদাদ
মৃত্যু২৪ মার্চ ১৯৩২(1932-03-24) (বয়স ৮১)
থ্রোলি, কেন্ট, ইংল্যান্ড
ডাকনামলর্ড হ্যারিস
ব্যাটিংয়ের ধরনডানহাতি
বোলিংয়ের ধরনডানহাতি রাউন্ডআর্ম ফাস্ট
ভূমিকাব্যাটসম্যান, অধিনায়ক
আন্তর্জাতিক তথ্য
জাতীয় দল
টেস্ট অভিষেক
(ক্যাপ ১৩)
২ জানুয়ারি ১৮৭৯ বনাম অস্ট্রেলিয়া
শেষ টেস্ট১১ আগস্ট ১৮৮৪ বনাম অস্ট্রেলিয়া
ঘরোয়া দলের তথ্য
বছরদল
১৮৭০-১৯১১কেন্ট
১৮৭১-১৮৯৫মেরিলেবোন ক্রিকেট ক্লাব (এমসিসি)
১৮৭১-১৮৭৪অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়
খেলোয়াড়ী জীবনের পরিসংখ্যান
প্রতিযোগিতা টেস্ট এফসি
ম্যাচ সংখ্যা ২২৪
রানের সংখ্যা ১৪৫ ৯,৯৯০
ব্যাটিং গড় ২৯.০০ ২৬.৮৫
১০০/৫০ ০/১ ১১/৫৫
সর্বোচ্চ রান ৫২ ১৭৬
বল করেছে ৩২ ৩,৪৪৬
উইকেট ৭৫
বোলিং গড় ২৩.৪৪
ইনিংসে ৫ উইকেট
ম্যাচে ১০ উইকেট
সেরা বোলিং ৫/৫৭
ক্যাচ/স্ট্যাম্পিং ২/– ১৯০/–
উৎস: ইএসপিএনক্রিকইনফো.কম, ৬ সেপ্টেম্বর ২০১৭

১৮৭০ থেকে ১৯১১ সাল পর্যন্ত হ্যারিস প্রথম-শ্রেণীর ক্রিকেট জীবন কাটান। ৪২ মৌসুমে অংশ নিয়ে অন্যতম দীর্ঘস্থায়ী ক্রিকেট জীবন অতিবাহিত করেন। তবে, ১৮৮৯ সালের পর কেবলমাত্র সাত মৌসুমে অংশ নিয়েছেন। ১৮৭০ থেকে ১৮৮৯ সাল পর্যন্ত একাধারে খেলেন। কেন্টের অধিনায়কত্ব থেকে অব্যহতি লাভই এর প্রধান কারণ ছিল। ২২৪টি প্রথম-শ্রেণীর খেলায় অংশ নেন। তন্মধ্যে, চারটি টেস্ট খেলা অন্তর্ভুক্ত রয়েছে। ডানহাতি ব্যাটসম্যান হিসেবে রাউন্ডআর্ম ভঙ্গীমায় ডানহাতে ফাস্ট বোলিং করতেন তিনি। প্রথম-শ্রেণীর ক্রিকেটে ৯,৯৯০ রান সংগ্রহ করেন। ব্যক্তিগত সর্বোচ্চ ছিল ১৭৬। সাতটি সেঞ্চুরিসহ ১৯০ ক্যাচ নেন। এছাড়াও, ৭৫ উইকেট লাভ করেন। তন্মধ্যে সেরা বোলিং পরিসংখ্যান ছিল ৫/৫৭।[2]

ত্রিনিদাদের সেন্ট অ্যানসে জন্মগ্রহণ করেন ও কেন্টের থ্রোলি এলাকায় দেহাবসান ঘটে হ্যারিসের। মূলতঃ তিনি সম্মানীয় জর্জ হ্যারিস নামে পরিচিত ছিলেন। তৃতীয় ব্যারন হ্যারিস জর্জ হ্যারিসের সন্তান ছিলেন তিনি। এটন কলেজে অধ্যয়ন করেন। সেখানেই ১৮৭০ সালে ক্রিকেট দলের অধিনায়কের দায়িত্ব পালন করেছেন। এরপর অক্সফোর্ডের ক্রাইস্ট চার্চে চলে যান। আগস্ট, ১৮৭০ সালে কেন্টের পক্ষে প্রথম-শ্রেণীর ক্রিকেটে অভিষেক ঘটে তার। ১৮৭১ থেকে ১৮৭৪ সাল পর্যন্ত অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয় দলে খেলেন। ১৮৭১ সালে প্রথমবারের মতো কেন্টের অধিনায়কত্ব করেন। তিনি সাউথ নর্টনের স্থলাভিষিক্ত হয়েছিলেন। ১৮৮৯ সাল পর্যন্ত এ দায়িত্ব পালন করেন। ২৩ নভেম্বর, ১৮৭২ তারিখে পিতার মৃত্যুর পর হ্যারিস ব্যারনি পদবী ধারণ করেন। এর কয়েক সপ্তাহ পর আর. এ. ফিটজজেরাল্ড একাদশের সাথে উত্তর আমেরিকা সফরে যান। দলটিতে ডব্লিউ. জি. গ্রেস ছিলেন ও তার সাথে বন্ধুত্বসূলভ সম্পর্ক গড়ে তোলেন। অক্সফোর্ড ত্যাগ করার পর হ্যারিস সক্রিয়ভাবে ক্রিকেট প্রশাসনে জড়িয়ে পড়েন। ১৮৭৫ সালে কেন্টের ক্লাব সভাপতি পদে নির্বাচিত হন হ্যারিস। ১৮৭৫ থেকে ১৮৮০ সাল পর্যন্ত তিনি ক্লাবের সচিবের দায়িত্ব পালন করেন ও দীর্ঘদিন কমিটির সদস্য ছিলেন। জানুয়ারি, ১৮৭৯ থেকে আগস্ট, ১৮৮৪ সাল পর্যন্ত চার টেস্টে অংশগ্রহণ করেন। সবকটি টেস্টেই তিনি অধিনায়কত্ব করেছিলেন। ১৮৭৮-৭৯ মৌসুমে ইংল্যান্ড ক্রিকেট দলকে নিয়ে অস্ট্রেলিয়া ও নিউজিল্যান্ড সফরে যান। তন্মধ্যে, ৮ ফেব্রুয়ারি, ১৮৭৯ তারিখে সিডনিতে অনুষ্ঠিত খেলায় সৃষ্ট দর্শক রোষানলে পড়ার ঘটনার কেন্দ্রবিন্দুতে ছিলেন তিনি।

১৮৮৫ থেকে ১৯০০ সালের মধ্যে হ্যারিস রাজনৈতিক কর্মকাণ্ডে জড়িত হয়ে পড়েন। তন্মধ্যে বোম্বে প্রেসিডেন্সির গভর্নর থাকাবস্থায় ব্যাপকভাবে সমালোচিত হন। ২৫ জুন, ১৮৮৫ তারিখ থেকে ভারতে আন্ডার-সেক্রেটারি অব স্টেট রাজনৈতিক পদে নিযুক্ত হন। ৪ আগস্ট, ১৮৮৬ তারিখ থেকে ১৮৯০ সাল পর্যন্ত যুদ্ধবিষয়ক সংসদীয় আন্ডার-সেক্রেটারি অব স্টেট; ১৮৯০ থেকে ১৮৯৫ সাল পর্যন্ত বোম্বে প্রেসিডেন্সির গভর্নর এবং ১৬ জুলাই, ১৮৯৪ তারিখ থেকে ৪ ডিসেম্বর, ১৯০০ সাল পর্যন্ত মহারাণী ভিক্টোরিয়ার লর্ড ইন ওয়েটিং পদে ছিলেন।

ভারত থেকে ফিরে আসার পর ১৮৯৫ সালে এমসিসি’র সভাপতি পদে নির্বাচিত হন হ্যারিস। এমসিসি কার্যালয়ে অবস্থানকালে ক্রিকেট প্রশাসনে উল্লেখযোগ্য ব্যক্তিত্বে পরিণত হন, ব্যাপকভাবে প্রভাব বিস্তারকারীর ভূমিকায় অবতীর্ণ হন। সভাপতির দায়িত্ব পালনের পর ১৯০৬ থেকে ১৯১৬ সাল পর্যন্ত ক্লাবের ট্রাস্টি ছিলেন ও ১৯১৬ সাল থেকে ১৯৩২ সালে মৃত্যু পূর্ব-পর্যন্ত কোষাধ্যক্ষের দায়িত্ব পালন করেন। লর্ড হকের সাথে একযোগে কাজ করেন। হককে হ্যারিসের দোসর নামে পরিচিতি ঘটানো হতো। কার্যতঃ এ দু’জন ১৮৯০-এর দশক থেকে ১৯৩০-এর দশক পর্যন্ত ইংরেজ ক্রিকেটকে নিয়ন্ত্রণ করতেন। ক্রিকেটের আইন-কানুনের উপর তার সবিশেষ দক্ষতা ছিল ও তা মেনে চলতে দৃঢ় প্রতিজ্ঞাবদ্ধ ছিলেন।[3] অবৈধ বোলিং ভঙ্গীমাসহ কাউন্টি ক্রিকেট ও আবাসিক শর্তাবলীতে তিনি আইনের যথাযথ প্রয়োগ ঘটাতেন। হ্যারিস সর্বত্র বিতর্কিত ব্যক্তিত্ব ছিলেন।[4][5]

প্রারম্ভিক জীবন

৩ ফেব্রুয়ারি, ১৮৫১ তারিখে সম্মানীয় জর্জ হ্যারিস ত্রিনিদাদের সেন্ট অ্যানসে জন্মগ্রহণ করেন। ১৮৪৬ থেকে ১৮৫৪ সময়কালে তার বাবা তৃতীয় ব্যারন হ্যারিস, জর্জ হ্যারিস ত্রিনিদাদের গভর্নরের দায়িত্ব পালন করছিলেন। দুই বছর বয়সে তার মাতা দেহত্যাগ করলে হ্যারিসকে এ সংবাদ জানানো হয়নি। ১৮৫৪ সালে গভর্নর হিসেবে মাদ্রাজে স্থানান্তর করা হলে পরিবারটি সেখানে চলে যায়। মার্চ, ১৮৫৯ সালে হ্যারিস সিনিয়র অবসর গ্রহণ করে ইংল্যান্ডে ফিরে যান। সেখানে তিনি কেন্ট কাউন্টি ক্রিকেট ক্লাবের কমিটি সদস্য হন ও ১৮৭০ সালে ক্লাবের প্রেসিডেন্টের দায়িত্ব পালন করেন। নভেম্বর, ১৮৭২ সালে তিনি মারা যান। ফলে হ্যারিস জুনিয়র চতুর্থ ব্যারন হ্যারিস হিসেবে তার স্থলাভিষিক্ত হন। ইতোমধ্যেই তিনি প্রথম-শ্রেণীর ক্রিকেটার হিসেবে খেলছেন ও বৈশ্বিকভাবে ঐ ক্রীড়ায় লর্ড হ্যারিস নামে পরিচিতি পেয়ে আসছেন।

১৮৬৪ সালে ১৩ বছর বয়সে এটন কলেজে আরও পড়াশোনার জন্য হ্যারিসকে ভর্তি করা হয়। ১৮৬৮ সালে লর্ডসে প্রথম গুরুত্বপূর্ণ ক্রিকেট খেলায় অংশগ্রহণের সুযোগ ঘটে তার। সতের বছর বয়সে এটন বনাম হ্যারোর মধ্যকার খেলাটিতে তিনি ২৩ ও ৬ রান তুলেন। পরের বছর একই সময়ে কুথবার্ট ওটাওয়ের ১০৮ রানের কল্যাণে এটন ইনিংস ও উনিশ রানের ব্যবধানে জয় পেলেও হ্যারিস করেছিলেন রান। ১৮৭০ সালে এটনে তার সর্বশেষ মৌসুম কাটে। হ্যারোর বিপক্ষে ১২ ও ৭ রান তুলেন।

১৮৭৪ সালে তৃতীয় ভিসকাউন্ট সেন্ট ভিনসেন্ট কার্নেগি রবার্ট জন জার্ভিসের কন্যা সম্মানীয়া লুসি অ্যাডা জার্ভিসের সাথে পরিণয়সূত্রে আবদ্ধ হন জর্জ হ্যারিস। ২৪ মার্চ, ১৯৩২ তারিখে ৮১ বছর বয়সে কেন্টের থ্রোলিতে তার দেহাবসান ঘটে। এরফলে তার পুত্র পঞ্চম ব্যারন হ্যারিস, জর্জ হ্যারিস তার স্থলাভিষিক্ত হয়।

খেলোয়াড়ী জীবন

এটন থেকে চলে আসার পর ১৮৭০ সালে কেন্টের পক্ষে প্রথম-শ্রেণীর ক্রিকেটে তার অভিষেক হয়। সমাজে তার অবস্থানকে ঘিরে তাকে দ্রুত ক্লাব কমিটির সদস্য নির্বাচিত করা হয়। এরপর থেকে জীবনের বাদ-বাকী দিন কেন্টের সাথে সম্পর্ক রক্ষা করেন। সেপ্টেম্বর, ১৮৭০ সালে অক্সফোর্ডের ক্রাইস্ট চার্চে চলে যান। ১৮৭১ থেকে ১৮৭৪ সময়কালে অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয় দলের পক্ষে খেলেন। ঐ মৌসুমগুলোর দ্বিতীয়ার্ধে কেন্টের পক্ষে খেলতে থাকেন। ১৮৭১ সালে সাউথ নর্টনের পরিবর্তে কাউন্টি দলের অধিনায়ক মনোনীত হন। তবে, অক্সফোর্ড ত্যাগ করার পরই আনুষ্ঠানিকভাবে এ দায়িত্ব পালন করেন। কেন্টের অধিনায়ক হিসেবে ১৮৮৯ সাল পর্যন্ত খেলেন।

১৮৭৮-৭৯ মৌসুমে ইংরেজ দলকে নিয়ে অস্ট্রেলিয়া ও নিউজিল্যান্ড সফরে যান। ৮ ফেব্রুয়ারি, ১৮৭৯ তারিখে সিডনিতে অনুষ্ঠিত খেলায় দর্শকদের রোষানলে দাঙ্গা বাধানোর প্রধান কেন্দ্রবিন্দুতে ছিলেন তিনি। এরপূর্বে দলটি মেলবোর্ন ক্রিকেট গ্রাউন্ডে সর্ব-অস্ট্রেলিয়া একাদশের বিপক্ষে একটি খেলায় অংশ নেয়। পরবর্তীতে খেলাটি ইতিহাসের তৃতীয় টেস্ট খেলার মর্যাদা লাভ করে। এরফলে, জেমস লিলিহোয়াইটের পর দ্বিতীয় ইংরেজ টেস্ট অধিনায়কের মর্যাদার অধিকারী হন। ডেভ গ্রিগরি’র নেতৃত্বাধীন অস্ট্রেলিয়া দল ঐ খেলায় ১০ উইকেটে জয় পেয়েছিল।

অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে হ্যারিস আরও তিনবার অধিনায়কের দায়িত্বে ছিলেন। ১৮৮০ সালে ওভালে অনুষ্ঠিত খেলাটি পরবর্তীকালে ইংল্যান্ডের মাটিতে প্রথম টেস্ট খেলার স্বীকৃতি লাভ করে। খেলায় ইংল্যান্ড ৫ উইকেটে বিজয়ী হয়। ১৮৮৪ সালে ইংল্যান্ডের অধিনায়ক হিসেবে দুই টেস্টে অংশ নেন। লর্ডসে তার দল ইনিংস ও ৫ রানে জয় তুলে নেয়। ওভালে অনুষ্ঠিত চূড়ান্ত খেলাটি ড্রয়ে পরিণত হয়।

বিতর্ক

১৮৮০-এর দশকের শুরুতে কয়েকজন বোলারের অবৈধ বোলিং ভঙ্গীমার মাধ্যমে বল ছোঁড়ার ঘটনার জন্য সর্বত্র আলোচিত হচ্ছিল। তন্মধ্যে, ল্যাঙ্কাশায়ারের জ্যাক ক্রসল্যান্ড ও জর্জ ন্যাশ অন্যতম ছিলেন। ১৮৮৫ সালে কেন্টের প্রতিপক্ষ ল্যাঙ্কাশায়ারের বিপক্ষে খেলায় অংশগ্রহণকালীন ক্রসল্যান্ড ও ন্যাশের বোলিংয়ের মুখোমুখি হন তিনি। এরপর তিনি সিদ্ধান্ত নেন যে, প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করবেন। তিনি কেন্ট কমিটিকে খেলা বাতিল করে নতুন তারিখের কথা বলেন। ঐ মৌসুম শেষে দেখা যায় যে, নটিংহ্যামশায়ারে বসবাসের কারণে ল্যাঙ্কাশায়ারের পক্ষে আবাসিক শর্তাবলী ভঙ্গ করায় ক্রসল্যান্ড দল থেকে বাদ পড়েন। ন্যাশকেও দলের বাইরে রাখা হয়। পরের মৌসুমে উভয় কাউন্টি দল পুনরায় একে-অপরের মুখোমুখি হয়। হ্যারিস প্রসঙ্গে উইজডেনের স্মরণিকায় লেখা হয়, ‘কোন সন্দেহই নেই যে, লর্ড হ্যারিস এ পদক্ষেপ গ্রহণ করেছিলেন। যদিও বল ছোঁড়া পুরোপুরি দূরীকরণ সম্ভব হয়নি, তবে খেলায় ব্যাপক প্রতিক্রিয়ার সৃষ্টি করেছিল।’[6]

ক্রিকেট প্রশাসন

লর্ডস ও এমসিসি উভয়ের সাথে খেলোয়াড় ও প্রশাসক হিসেবে দীর্ঘদিন সম্পর্ক বজায় রেখেছেন। ১৮৬২ সালে লর্ডসে এগারো বছর বয়সে অনুশীলনীমূলক খেলায় অংশ নিতেন। ১৯২৯ সাল পর্যন্ত ৭৮ বছর বয়সেও সেখানে তিনি সর্বশেষবারের মতো এমসিসির পক্ষে ইন্ডিয়ান জিমখানার বিপক্ষে মাঠে নামেন।[7] ১৮৯৫ সালে এমসিসির প্রেসিডেন্ট হন। এরপর ১৯০৬ থেকে ১৯১৬ সাল পর্যন্ত ট্রাস্টি হন ও ১৯১৬ থেকে ১৯৩২ সময়কালে কোষাধ্যক্ষের ভূমিকায় অবতীর্ণ হন। পাশাপাশি অনেকবারই এমসিসি অর্থ ও ক্রিকেট উপ-কমিটিতে সভাপতি হিসেবে কাজ করেন। বিশ্ব ক্রিকেট অঙ্গনেও হ্যারিস দূর্দণ্ড প্রতাপে রাজত্ব কায়েম করেছেন। বলা হয়ে থাকে যে, ‘কোন ব্যক্তিই বিশ্ব ক্রিকেট অঙ্গনে তাঁর ন্যায় দীর্ঘদিন প্রভাব ফেলতে পারেনি।’[8]

জুলাই, ১৯০৯ সালে ইংল্যান্ড, অস্ট্রেলিয়া ও দক্ষিণ আফ্রিকার প্রতিনিধিদের নিয়ে এক সভায় সভাপতিত্ব করেন তিনি। তিন দেশকে একত্রিত করে টেস্ট ক্রিকেটের নিয়ন্ত্রণ নিয়ে একমত হয়ে নিয়ম-কানুন প্রণয়ন করেন ও ইম্পেরিয়াল ক্রিকেট কনফারেন্স গঠন করেন। ১৯২৬ সালে ওভালে এক সভায় সভাপতিত্ব করেন ও সিদ্ধান্ত নেয়া হয় যে, সাম্রাজ্যভূক্ত দেশগুলোর পরিচালনা পরিষদই ক্রিকেট দল প্রেরণ করতে পারবে বা ইংল্যান্ডে আসতে পারবে। এরফলে তারা আইসিসি’র সদস্যপদ লাভ করতে পারবে। এ সভার মাধ্যমেই তিনটি নতুন টেস্টখেলুড়ে দেশ - ওয়েস্ট ইন্ডিজ, নিউজিল্যান্ডভারত আইসিসি’র সদস্য হয়।[9]

রাজনৈতিক অঙ্গন

রক্ষণশীল দলের সদস্যরূপে সক্রিয়ভাবে রাজনীতিতে অংশগ্রহণ করেন জর্জ হ্যারিস। লর্ডস সভায় কাজ করেছেন। ২৫ জুন, ১৮৮৫ তারিখ থেকে ভারতে আন্ডার-সেক্রেটারি অব স্টেট পদে ছিলেন। এরপর ৪ আগস্ট, ১৮৮৬ তারিখ থেকে ১৮৯০ সাল পর্যন্ত সংসদীয় যুদ্ধবিষয়ক আন্ডার-সেক্রেটারি অব স্টেট হন। ১৮৯০ থেকে ১৮৯৫ সাল পর্যন্ত তৎকালীন ব্রিটিশ ভারতের বোম্বে প্রেসিডেন্সির গভর্নর মনোনীত হন। ইংল্যান্ডে ফিরে আসার পর রক্ষণশীল সরকারের পক্ষে রাণী ভিক্টোরিয়ার লর্ড ইন ওয়েটিং হিসেবে ১৬ জুলাই, ১৮৯৫ থেকে ৪ ডিসেম্বর, ১৯০০ তারিখ পর্যন্ত দায়িত্ব পালন করেন।

দ্বিতীয় বোয়ের যুদ্ধে ২৮ ফেব্রুয়ারি, ১৯০০ তারিখ থেকে এপ্রিল, ১৯০১ সালে পদত্যাগের পূর্ব-পর্যন্ত ইম্পেরিয়াল ইওম্যানরি সহকারী অ্যাডজুটেন্টট-জেনারেলের দায়িত্বে ছিলেন।[10]

বোম্বের গভর্নর

লর্ডসের হ্যারিস গার্ডেনে লর্ড হ্যারিসের স্মৃতিস্তম্ভ রয়েছে।

বোম্বের গভর্নর হিসেবে তিনি সমালোচনার ঊর্ধ্বে ছিলেন না। অজ্ঞাতনামা লেখক কবিতার মাধ্যমে হ্যারিসের রাজনৈতিক অপরিপক্কতা থেকে বোম্বে রক্ষা পাবে বলে আশাবাদ ব্যক্ত করার কথা তুলে ধরা হয়।[11] ভারত উপনিবেশে অন্যান্য সতীর্থ ইউরোপীয়দের তুলনায় প্রধানতঃ ক্রিকেটের প্রতি তিনি অতিমাত্রায় আগ্রহ দেখিয়েছেন ও স্থানীয় অধিবাসীদেরকে এর সাথে যুক্ত করার প্রচেষ্টা চালিয়ে গেছেন। ১৮৯৩ সালে আন্তঃজাতিগোষ্ঠী সম্পর্কীয় বোম্বে দাঙ্গা ছড়িয়ে পড়ে। হ্যারিস তখন পুনে চলে যান ও ক্রিকেট খেলা উপভোগ করেছেন। দাঙ্গার নবম দিনে বোম্বে ফিরে আসেন ও তখন মূলতঃ ক্রিকেট খেলা দেখেছেন।[11] পরবর্তীকালে অনেক লেখক শুধুমাত্র একহাতে ভারতে এ ক্রীড়া প্রসারে ও উন্নয়নে কাজ করার জন্য তার ভূমিকাকে ভূয়সী প্রশংসার চোখে দেখেছেন। তবে তার প্রত্যাবর্তনের বেশ পূর্বেই অবশ্য খেলাটি স্থানীয় জনগোষ্ঠীর মাঝে বিস্তার ঘটেছিল। এছাড়াও ১৮৯০ সালে সহস্রাধিক স্থানীয় অধিবাসী ইউরোপীয় পোলো খেলোয়াড়দেরকে অন্য মাঠ ব্যবহারের পরিবর্তে ক্রিকেট খেলা ব্যবহারের আবেদনটি প্রত্যাখ্যাত করেছেন। ১৮৯২ সালে নব প্রতিষ্ঠিত মুসলিম জিমখানার জন্য ক্রিকেট মাঠে তৈরিতে জমি বরাদ্দ করেন।

ভারত থেকে চলে যাবার প্রাক্কালে দূর্ভিক্ষ, দাঙ্গা ও ধর্মীয় অস্থিতিশীলতা রেখে গেছেন। একজন প্রকাশক সংবাদপত্র থেকে গভর্নর হিসেবে তার সার-সংক্ষেপ একত্রিত করে প্রকাশ করেছেন। এর সূচনাতে বর্ণিত হয়েছে:[11]

বোম্বের গভর্নর হিসেবে গত শতাব্দী কঠোরভাবে সমালোচিত হয়েছে ও তাঁর ন্যায় সর্বত্র অজনপ্রিয় ব্যক্তির সাথে কেউ মুখোমুখি হতে চাইবে না, যেমনটি হয়েছে লর্ড হ্যারিসের প্রশাসনে।

তথ্যসূত্র

  1. "নং. 30723"দ্যা লন্ডন গেজেট (সম্পূরক) (ইংরেজি ভাষায়)। ৩ জুন ১৯১৮।
  2. "Lord Harris profile" (ইংরেজি ভাষায়)। CricketArchive। সংগ্রহের তারিখ ৮ ফেব্রুয়ারি ২০১৫(সদস্যতা নেয়া প্রয়োজন (সাহায্য))
  3. "Lord Harris profile" (ইংরেজি ভাষায়)। ESPNcricinfo। সংগ্রহের তারিখ ৮ ফেব্রুয়ারি ২০১৫
  4. "Lord Harris obituary" (ইংরেজি ভাষায়)। Wisden Cricketers' Almanack। ১৯৩৩। সংগ্রহের তারিখ ৮ ফেব্রুয়ারি ২০১৫
  5. Birley, pp.115, 128–129, 140–141, 145, 164, 166, 177, 185, 218–220.
  6. Wisden Cricketer's Almanack, 1933 edition.
  7. Gibson, p.14.
  8. Barclay's World of Cricket, p.170.
  9. "ICC History 1909–1963" (ইংরেজি ভাষায়)। ICC। ২৯ সেপ্টেম্বর ২০০৭ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ৮ ফেব্রুয়ারি ২০১৫
  10. "নং. 27169"দ্যা লন্ডন গেজেট (ইংরেজি ভাষায়)। ২৭ ফেব্রুয়ারি ১৯০০।
  11. Guha, pp.56–75.

আরও দেখুন

গ্রন্থপঞ্জী

বহিঃসংযোগ

ক্রীড়া অবস্থান
পূর্বসূরী
সাউথ নর্টন
কেন্ট ক্রিকেট অধিনায়ক
১৮৭৫-১৮৮৯
উত্তরসূরী
ফ্রাঙ্ক মার্চান্ট ও উইলিয়াম প্যাটারসন
পূর্বসূরী
জেমস লিলিহোয়াইট
ইংল্যান্ড ক্রিকেট অধিনায়ক
১৮৭৮-১৮৮০
উত্তরসূরী
আলফ্রেড শ
পূর্বসূরী
সম্মানীয় ইভো ব্লাই
ইংল্যান্ড ক্রিকেট অধিনায়ক
১৮৮৪
উত্তরসূরী
আর্থার শ্রিউসবারি
রাজনৈতিক দপ্তর
পূর্বসূরী
জন কিনাস্টন ক্রস
ভারতে আন্ডার-সেক্রেটারি অব স্টেট
১৮৮৫-১৮৮৬
উত্তরসূরী
স্যার আগট্রেড কে-শাটলওয়ার্থ, বিটি
পূর্বসূরী
দ্য লর্ড স্যান্ডহার্স্ট
যুদ্ধবিষয়ক সংসদীয় আন্ডার-সেক্রেটারি অব স্টেট
১৮৮৬-১৮৯০
উত্তরসূরী
দি আর্ল ব্রাউনলো
পূর্বসূরী
দ্য লর্ড রি
বোম্বে প্রেসিডেন্সির গভর্নর
১৮৯০-১৮৯৫
উত্তরসূরী
দ্য লর্ড স্যান্ডহার্স্ট
পূর্বসূরী
দ্য লর্ড হকসবারি
লর্ড ইন ওয়েটিং
১৮৯৫-১৯০০
উত্তরসূরী
দ্য লর্ড কেনিয়ন
যুক্তরাজ্যের অভিজাত সম্প্রদায়
পূর্বসূরী
জর্জ হ্যারিস
ব্যারন হ্যারিস
১৮৭২-১৯৩২
উত্তরসূরী
জর্জ হ্যারিস
This article is issued from Wikipedia. The text is licensed under Creative Commons - Attribution - Sharealike. Additional terms may apply for the media files.