রোমারিও

রোমারিও ডি ফারিয়া সুজা (জন্ম ২৯ জানুয়ারী,১৯৬৬) বিশ্ব ফুটবল মঞ্চে সবচেয়ে পরিচিত খেলোয়াড়দের একজন। তার অসাধারণ নৈপুণ্য ব্রাজিলকে ১৯৯৪ সালে চতুর্থবারের মত বিশ্বকাপ জয়ে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। ব্রাজিল জাতীয় দল ছাড়াও ক্লাব ফুটবলে রোমারিও সর্বকালের সবচেয়ে বেশি সংখ্যক গোলদাতাদের একজন।

রোমারিও
ব্যক্তিগত তথ্য
পূর্ণ নাম রোমারিও ডি সুজা ফারিয়া
উচ্চতা ১.৬৮ মিটার (৫ ফিট ৬ ইঞ্চি)
মাঠে অবস্থান স্ট্রাইকার
জ্যেষ্ঠ পর্যায়*
বছর দল ম্যাচ (গোল)
১৯৮৫-৮৭
১৯৮৮-৯২
১৯৯২-৯৪
১৯৯৫-৯৬
১৯৯৬
১৯৯৬-৯৭
১৯৯৭
১৯৯৮-৯৯
২০০০-০২
২০০২-০৩
২০০৩
২০০৩-০৪
২০০৫-০৬
২০০৬
২০০৬
২০০৭
২০০৯
ক্লাব ভাস্কো দা গামা
পিএসভি এইন্দহোভেন
এফসি বার্সেলোনা
ফ্ল্যামেঙ্গো
ভালেনসিয়া
ফ্ল্যামেঙ্গো
ভালেনসিয়া
ফ্ল্যামেঙ্গো
ক্লাব ভাস্কো দা গামা
ফ্লুমিনেস
আল সাদ
ফ্লুমিনেস
ক্লাব ভাস্কো দা গামা
মিয়ামি এফসি
অ্যাডেলেইড ইউনাইটেড
ক্লাব ভাস্কো দা গামা
আমেরিকা
৪৭ (১৭)
১০৯ (৯৮)
৪৬ (৫৪)
১৬ (৮)
৫ (৪)
৭ (2৩)
৬ (১)
৩৯ (২৬)
৪৬ (৪১)
২৬ (১৬)
৩ (০)
৩৪ (১৮)
৩২(২৪)
২৫ (১৯)
৪ (১)
৬ (৩)
১(০)
জাতীয় দল
১৯৮৭-২০০৫ ব্রাজিল ১৯৮৭-২০০৫ ৭০(৫৫) [1]
* শুধুমাত্র ঘরোয়া লিগে ক্লাবের হয়ে ম্যাচ ও গোলসংখ্যা গণনা করা হয়েছে

১৯৯৪ সালে ফিফা তাকে ফিফা বর্ষসেরা ফুটবলার হিসেবে নির্বাচিত করে। একই বছর তিনি গোল্ডেন বল বিজয়ীর সম্মান অর্জন করেন। এছাড়াও ফিফার শততম বর্ষপূর্তিতে ঘোষিত সেরা ১২৫ বেঁচে থাকা ফুটবলার-এর তালিকায় তার নাম অন্তর্ভুক্ত হয়। নিজের দাবী অনুযায়ী পেশাদারী জীবনে তিনি ১০০০-এর বেশি গোল করেছেন, যদিও প্রকৃত পরিসংখ্যানে অনেকে এই সংখ্যাটি ৯০০-এর অধিক বলে মনে করেন।[2][3]

জাতীয় দল

ব্রাজিল অলিম্পক ফুটবল দলের সদস্য হিসেবে সিউলে অনুষ্ঠিত ১৯৮৮ গ্রীষ্মকালীন অলিম্পিক্‌স এ ৭ গোল করে রৌপ্যপদক জয়ে সহায়তা করেন।১৯৯০ এবং ১৯৯৪ এর বিশ্বকাপে তিনি ব্রাজিল জাতীয় ফুটবল দলের প্রতিনিধিত্ব করেন। জাতীয় দলের হয়ে ৮৫ টি আন্তর্জাতিক ম্যাচে তিনি ৭১ টি গোল করেছেন। গোলসংখ্যার হিসেবে পেলের পরেই টার অবস্থান।

১৯৯০ বিশ্বকাপে বেশিরভাগ সময়ই বেঞ্চে বসে কেটেছে তার। স্কটল্যান্ডের বিরুদ্ধে ম্যাচে তিনি ৬৬ মিনিট খেলার সুযোগ পান। শেষ ১৬ তে সেবার আর্জেন্টিনার কাছে পরাজিত হয়ে ব্রাজিল বিদায় নেয়।

১৯৯৪ বিশ্বকাপ

১৯৯২ সালে , পিএসভি এইন্দহোভেন এর হয়ে সফল মৌসুম কাটানোর সময় , জার্মানীর বিরুদ্ধে পোর্ট আলেগ্রেতে অনুষ্ঠিত প্রীতিম্যাচে জাতীয় দলে খেলার জন্য ডাক পান।কিন্তু পুরোটা সময় দলের বেঞ্চে কাটানোয় তিনি ক্ষুদ্ধ হয়ে ঘোষণা করেন যে, খেলতে পারবেন না জানলে তিনি নেদারল্যান্ড থেকে ফিরতেন না। ফলে কোচ কার্লোস আলবার্তো পেরেইরা তাকে জাতীয় দলে নিষিদ্ধ ঘোষণা করেনI[20]

১৯৯৪ বিশ্বকাপের বাছাইপর্বের প্রথম ৭ টি ম্যাচে ব্রাজিল রোমারিওকে দলে নেয়নি।ফলে বলিভিয়ার কাছে লা-পাজ এ ব্রাজিলের ঐতিহাসিক পরাজয় ঘটে। এ ঘটনার পর সমর্থক এবং সাংবাদিকদের প্রবল চাপের মুখে কোচ তাকে দলে অন্তর্ভুক্ত করতে বাধ্য হন।সমীকরণ এমন দাঁড়ায় যে , শেষ ম্যাচে মারকানা স্টেডিয়ামে ব্রাজিলকে অবশ্যই উরুগুয়েকে পরাজিত করতে হবে। ব্রাজিল রোমারিওর অনবদ্য জোড়া গোলের উপর সে ম্যাচটি ২-০ গোলে বিজয়ী হয়ে যুক্তরাষ্ট্র বিশ্বকাপের মূলপর্বে উন্নীত হয়।

বিশ্বকাপের চূড়ান্ত পর্বে বেবোতোর সাথে জুটি ব্রাজিলকে ২৪ বছর পর বিশ্বকাপ জয় এবং বিশ্বের প্রথম দেশ হিসেবে চতুর্থবারের মত বিশ্বকাপ জয়ের সম্মান এনে দেয়। চূড়ান্ত পর্বে তিনি পাঁচটি গোল করেন। এর মাঝে ছিল গ্রুপের তিনটি ম্যাচে রাশিয়া,ক্যামেরুন এবং সুইডেনের বিরুদ্ধে একটি করে , কোয়ার্টার ফাইনালে নেদারল্যান্ডসের বিরুদ্ধে একটি গোল । সুইডেনের বিরুদ্ধে তার মাথা ছুঁয়ে আসে ম্যাচের একমাত্র গোলটি । এছাড়া শেষ ১৬ রাউন্ডে যুক্তরাষ্ট্রের বিরুদ্ধে ১-০ গোলের জয়ে , বেবেতোর করা গোলটিও হয় তার পাস থেকে। ফলে তিনি টুর্নামেন্টের সবচেয়ে ভাল খেলোয়াড় হওয়ার গৌরব অর্জন করেন।

ইতালীর বিরুদ্ধে ফাইনাল খেলাটি নির্ধারিত সময়ে গোলশূন্যভাবে শেষ হয়। টাইব্রেকারে ব্রাজিলের ৩-২ জয়ে পেনাল্টি শ্যুটআউটে রোমারিও গোল করেন।

রো-রো হ্যাট্রিক

পরবর্তী বছরগুলিতে রোমারিও ব্রাজিল দলের অন্যতম খ্যাতনামা স্ট্রাইকার রোনাল্ডোর সাথে দুর্ধর্ষ স্ট্রাইকিং জুটি গড়ে তোলেন। নামের আদ্যক্ষরের সাথে মিলিয়ে এ জু'টিকে রো-রো জুটি জুটি হিসেবে আখ্যায়িত করা হত। ১৯৯৭ সালে কনফেডারেশন্স কাপ ফাইনালে ব্রাজিল , অস্ট্রেলিয়াকে ৬-০ গোলে বিধ্বস্ত করে। রোমারিও এবং রোনাল্ডো উভয়েই এ ম্যাচে হ্যাটট্রিক করেন।

১৯৯৮ এবং ২০০২ বিশ্বকাপে অনুপস্থিতি

১৯৯৮ সালের বিশ্বকাপ শুরুর কিছুদিন আগে ডাক্তারি পরীক্ষায় রোমারিওর পেশিতে আঘাতের প্রমাণ পাওয়া যায়। বিশ্বকাপকে সামনে রেখে নিবিড় পরিচর্যায় রোমারিও সেরে উঠতে থাকেন। দল ঘোষণার সর্বশেষ দিনেও রোমারিও সেরে না উঠলে তাকে কোচ জাগালো দল থেকে বাদ দেন। রোমারিওকে বাদ দেয়ার ঘটনায় ব্রাজিলে মারিও জাগালো প্রচন্ড সমালোচনার শিকার হয়। রোমারিও বিহীন ব্রাজিল সেবার ফাইনালে পৌঁছালেও ফ্রান্সের কাছে শোচনীয়ভাবে পরাজিত হয়[4]

২০০২ বিশ্বকাপের আগে ৩৬ বছর বয়েসি রোমারিও ফ্লুমিনেস ক্লাবের হয়ে বেশ ভাল ফর্মে ছিলেন। কিন্তু শৃংখলাজনিত অভিযোগ তুলে ব্রাজিলের তৎকালীন কোচ লুইজ ফেলিপে স্কলারি তাকে দলে নেননি। সেবার ব্রাজিল ফাইনালে জার্মানীকে পরাজিত করে কাপ তুলে নেয়।

ব্রাজিলের পক্ষে সর্বশেষ ম্যাচ

২০০৫ সালের ২৮ এপ্রিল গুয়েতামালা দলের বিরুদ্ধে এক প্রদর্শনী ম্যাচে সবশেষ বারের মত ব্রাজিলের হলুদ-নীল জার্সি পড়েন রোমারিও । ৩-০ গোলের জয়ে দ্বিতীয় গোলটি আসে রোমারিওর পা থেকে। এ ম্যাচে তার হলুদ কার্ড প্রাপ্তি আরেকটি উল্লেখযোগ্য ঘটনা

বিখ্যাত ফুটবলারদের স্বীকৃতি

  • ইয়োহান ক্রুইফ তাকে আখ্যা দিয়েছেন গোলমুখ অভিমুখী মেধা হিসেবে ("genius of the goal area")[5]
  • দিয়েগো ম্যারাডোনা, তার আত্মজীবনী "আমি দিয়েগো বলছি"(Yo soy El Diego)তে লিখেছেন, রোমারিও একজন অবিশ্বাস্য ফিনিশার। তার মত স্ট্রাইকার আমি কখনও দেখিনি। সর্বকালের সেরা ফুটবলারদের যে কোন দলেই অনায়াসে জায়গা পাবেন রোমারিও।
  • রোমারিওর সমসাময়িক ইতালির বিশ্বনন্দিত তারকা রবের্তো বাজ্জো বলেন: "রোমারিও সর্বকালের সেরাদের একজন। তার রয়েছে অসাঘারণ কৌশল এবং ব্যক্তিত্ব। পেনাল্টি বক্সের ভেতরে সে ছিল রীতিমত কুশলী শিল্পী"[6]
  • ডেনমার্কের বিখ্যা্য ফুটবলার মাইকেল লাউড্রপ এর মতে রোমারিও তার জীবনের সেরা স্ট্রাইকিং পার্টনার। তিনি আরও বলেন: রোমারিওর মত আর কেউ আমার পাসগুলির এত সদ্ব্যবহার করতে পারত না

পরিসংখ্যান

মৌসুম ক্লাব লীগ লীগ আঞ্চলিক লীগ কাপ মহাদেশীয় অন্যান্য সর্বমোট
ম্যাচগোলম্যাচগোলম্যাচগোলম্যাচগোলম্যাচগোলম্যাচগোল
১৯৮৫ক্লাব ভাস্কো দা গামাA২১১১২৮১১
১৯৮৬ক্লাব ভাস্কো দা গামাA২৩২৫২০৪৮২৯
১৯৮৭ক্লাব ভাস্কো দা গামাA১৭২৪১৬৪১২৪
১৯৮৮ক্লাব ভাস্কো দা গামাA২৪১৬২৪১৬
১৯৮৮–১৯৮৯পিএসভি আইন্দোভেনEredivisie২৪১৯৩২২৬
১৯৮৯–১৯৯০পিএসভি আইন্দোভেনEredivisie২০২৩২৬৩১
১৯৯০–১৯৯১পিএসভি আইন্দোভেনEredivisie২৫২৫২৯৩১
১৯৯১–১৯৯২পিএসভি আইন্দোভেনEredivisie১৪১৮
১৯৯২–১৯৯৩পিএসভি আইন্দোভেনEredivisie২৬২২৩৭৩২
১৯৯৩–১৯৯৪বার্সেলোনাLiga৩৩৩০১০৪৭৩২
১৯৯৪–১৯৯৫বার্সেলোনাLiga১৩১৯
১৯৯৫ফ্ল্যামেঙ্গোA১৬২১২৬৪৬৩৭
১৯৯৬ফ্ল্যামেঙ্গোA১৯২৬৩৩৩১
১৯৯৬–১৯৯৭ভালেনসিয়াLiga-
১৯৯৭ফ্ল্যামেঙ্গোA১৮১৮৩৬৩৫
১৯৯৭–১৯৯৮ভালেনসিয়াLiga
১৯৯৮ফ্ল্যামেঙ্গোA২০১৪১১১০৪০৩৫
১৯৯৯ফ্ল্যামেঙ্গোA১৯১২১৫১৬৫৪৪৬
২০০০ক্লাব ভাস্কো দা গামাA২৭১৯১৭১৯১১১১১৪১৫৭১৬৫
২০০১ক্লাব ভাস্কো দা গামাA১৯২২১১১৩৩৯৪০
২০০২ক্লাব ভাস্কো দা গামাA১৩১৩২৫২৬
২০০২ফ্লুমিনেসA২৬১৬২৬১৬
২০০৩ফ্লুমিনেসA
২০০৩আল সাদCQ
২০০৩ফ্লুমিনেসA২১১৩২১১৩
২০০৪ফ্লুমিনেসA১৩২৪১৩
২০০৫ক্লাব ভাস্কো দা গামাA৩২২৪১০৪৪৩২
২০০৬ক্লাব ভাস্কো দা গামাA১০১১
২০০৬Miami FCUSL ১st২৫১৯২৬১৯
২০০৬অ্যাডেলেইড ইউনাইটেডA-League
২০০৭ক্লাব ভাস্কো দা গামাA১০১৯১৫
২০০৯আমেরিকা ফুটবল ক্লাবA
মোট৪৫১৩১৩২৫৪২৩৩৫৯৫১৭১৫০৫৩৪৪৮৮৮৬৯১

তথ্যসূত্র

  1. Romário de Souza Faria - Goals in International Matches, RSSSF, May 1, 2005
  2. Romário completes a famous 1,000 ওয়েব্যাক মেশিনে আর্কাইভকৃত ১৩ নভেম্বর ২০১৩ তারিখে FIFA.com, May 21, 2007
  3. "সংরক্ষণাগারভুক্ত অনুলিপি"। ৪ সেপ্টেম্বর ২০১১ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ১৭ অক্টোবর ২০১১
  4. "Brazil in the 1998 World Cup" – v-brazil.com
  5. Romario falls short in quest of 1,000th goal HULIQ.com
  6. ROBERTO BAGGIO'S WORLD ওয়েব্যাক মেশিনে আর্কাইভকৃত ২৭ সেপ্টেম্বর ২০১১ তারিখে Pro-Paul.net, 2001
This article is issued from Wikipedia. The text is licensed under Creative Commons - Attribution - Sharealike. Additional terms may apply for the media files.