রে টমলিনসন
রেমন্ড স্যামুয়েল টমলিনসন (জন্ম: ২৩ এপ্রিল, ১৯৪১-মার্চ ৫, ২০১৬) বিখ্যাত মার্কিন কম্পিউটার বিজ্ঞানী ও বিশ্বের প্রথম ই-মেইল প্রবর্তনকারী। ১৯৭১ সালে ইন্টারনেটের সূচনাকারী আরপানেটে রে টমলিনসন প্রথম ই-মেইল পাঠান। এর আগে একই কম্পিউটারের বিভিন্ন ব্যবহারকারীদের মধ্যে মেইল আদান-প্রদান করা যেত। কিন্তু টমলিনসনের পদ্ধতিতে প্রথমবারের মতো আরপানেটে যুক্ত বিভিন্ন হোস্টের মধ্যে বার্তা আদান-প্রদান সম্ভব হয়। তিনিই প্রথম কম্পিউটার এবং এর ব্যবহারকারীদের মধ্যে পার্থক্য বোঝানোর জন্য ব্যবহারকারীর নামের সামনে @ চিহ্নটি ব্যবহার শুরু করেন।তারপর থেকে ই-মেইলে এই চিহ্নটি ব্যবহার হয়ে আসছে।[1] ইন্টারনেট হল অব ফেমে রে টমলিনসনের কাজ সম্পর্কে বলা হয়েছে,"টমলিনসনের ই-মেইল প্রোগ্রাম মানুষের পারস্পরিক যোগাযোগ ব্যবস্থাকে বদলে দিয়ে একটি নতুন বিপ্লবের সূচনা করে"।
রে টমলিনসন | |
---|---|
জন্ম | আমস্টারডাম শহর, নিউ ইয়র্ক | ২৩ এপ্রিল ১৯৪১
মৃত্যু | ৫ মার্চ ২০১৬ ৭৪) | (বয়স
জাতীয়তা | আমেরিকান |
মাতৃশিক্ষায়তন | ম্যাসাচুসেট্স ইনস্টিটিউট অব টেকনোলজি |
পরিচিতির কারণ | ই-মেইলের উদ্ভাবক |
বৈজ্ঞানিক কর্মজীবন | |
কর্মক্ষেত্র | তড়িৎকৌশল এবং কম্পিউটার প্রোগ্রামিং |
কর্মজীবন
নিউইয়র্ক শহরের আমস্টারডাম শহরে জন্মের পরপরই টমলিনসন পরিবারের সঙ্গে ভেইল মিলস নামের একটি গ্রামে চলে যান। সেখানেই তার পড়াশোনা শুরু। সেখানকার স্কুলে পড়াশোনা শুরু করে পরে নিউইয়র্কের ট্রয়ে অবস্থিত রেনসেলার পলিটেকনিক ইনস্টিটিউট থেকে তড়িৎকৌশলে বিএসসি ডিগ্রী পান ১৯৬৩ সালে। পড়ার সময় আইবিএমের কো-অপ প্রোগ্রামে অংশ নেন। স্নাতক হওয়ার পর তড়িৎকৌশলে পড়ালেখা অব্যাহত রাখার জন্য তিনি ম্যাসাচুসেট্স ইনস্টিটিউট অব টেকনোলজিতে চলে যান। সেখানে স্পীচ কমিউনিকেশন গ্রুপের সঙ্গে কাজ করেন। ১৯৬৫ সালে তিনি স্নাতকোত্তর ডিগ্রী লাভ করেন। মাস্টার্সের অভিসন্দর্ভের জন্য তিনি একটি এনালগ-ডিজিটাল হাইব্রিড স্পীচ সিনথেসাইজার ডেভেলপ করেন। ১৯৬৭ সালে বোল্ট, বারানেক ও নিউম্যান নামে (বর্তমানে বিবিএন টেকনোলজিস) একটি প্রযুক্তি প্রতিষ্ঠানে যোগ দেন। সেখানে তিনি TENEX-এর উদ্ভাবনে সহায়তা করেন যার মধ্যে ছিল আরপানেটের অপারেটিং সিস্টেম, নেটওয়ার্ক নিয়ন্ত্রক প্রোগ্রাম এবং টেলনেট বাস্তবায়ন। এ সময় তিনি CPYNET নামে একটি প্রোগ্রাম লেখেন যা আরপানেটের এক কম্পিউটার থেকে অন্য কম্পিউটারে নথি স্থানান্তর করতে পারতো। ঐ সময় টাইম শেয়ারিং কম্পিউটারের একজন ব্যবহারকারী একই কম্পিউটারের আর একজন ব্যবহারকারীকে বার্তা পাঠানোর জন্য SNDMSG নামে একটি প্রোগ্রাম ব্যবহার করতো। টমলিনসনকে দায়িত্ব দেওয়া হয় এই প্রোগ্রামটিকে পরিবর্তন করে এক কম্পিউটারের ব্যবহারকারী যেন অন্য কম্পিউটারের ব্যবহারকারীকে বার্তা প্রেরণ করতে পারে তার ব্যবস্থা করতে। তিনি তার CPYNET প্রোঁগ্রাম থেকে কোডিংয়ের অংশ বিশেষ SNDMSG-এ যুক্ত করলে সেটি এক কম্পিউটারের ব্যবহারকারীর বার্তা অন্য কম্পিউটারের ব্যবহারকারীকে পাঠানোর জন্য উপযুক্ত হয়। আর এভাবেই বিশ্বের প্রথম ই-মেইল চালু হয়। ২০১৬ সালের ৫ মার্চ আকস্মিকভাবে হৃদযন্ত্রের ক্রিয়া বন্ধ হয়ে টমলিনসন মারা যান।[2]
ই-মেইলের প্রথম ব্যবহার
টমলিনসন প্রথম যে ইমেইলটি পাঠান সেটি ছিল পরীক্ষামূলক। টমলিনসন এটিকে গুরুত্বহীন বলেছেন এবং এটি সংরক্ষণও করা হয়নি, যেটি ছিল এমন অর্থহীন "QWERTYUIOP", প্রচলিত ইংরেজি কী-বোর্ডের উপরের সারির অক্ষরগুলো নিয়ে। মাঝে মাঝে ভুলভাবে বলা হয় "প্রথম ইমেইল ছিল QWERTYUIOP"।[3] টমলিনসন পরে বলেছেন, "পরীক্ষামূলক বার্তাগুলো মনে রাখার মত কিছু ছিল না তাই আমি সেগুলো মনেও রাখিনি।" "[4]
শুরুর দিকে তাঁর ই-মেইল সিস্টেমকে তেমন গুরুত্বপূর্ণ মনে করা হয়নি। তাঁর এক সহকর্মী জেরি বার্চফিলকে তিনি বলেছিলেন,"কাউকে বলো না। এগুলো আমাদের করার কথা ছিল না।" [5]
পুরস্কার ও সম্মান
- ২০০০ সালে তিনি জর্জ আর স্টিবিৎজ কম্পিউটার পাওনিয়ার পুরস্কার পান। আমেরিকার কম্পিউটার জাদুঘর মনটানা স্টেট ইউনিভার্সিটর কম্পিউটার সায়েন্স বিভাগের সঙ্গে যৌথভাবে এই পুরস্কার প্রদন করে থাকে। [6]
- ২০০১ সালে আন্তর্জাতিক ডিজিটার আর্টস ও সায়েন্স একাডেমি তাকে আজীবন সম্মাননা হিসাবে ওয়েবি পুরস্কারে ভূষিত করে। একই বছর তিনি তার ইনস্টিটিউটের হল অব ফেমে জায়গা করে নেন।[7]
- ২০০২ সালে ডিসকভার ম্যাগাজিনের উদ্ভাবনী পুরস্কার অর্জন।
- ২০০৪ সালে ডেভ ক্রোকারের সঙ্গে যৌথভাবে আইইইই ইন্টারনেট পুরস্কার লাভ।
- ২০১২ সালে জায়গা করে নেন ইন্টারনেট হল অব ফেমে। [8]
তথ্যসূত্র
- Ray Tomlinson। "The First Network Email"। ৬ মে ২০০৬ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ৭ মার্চ ২০১৬।
- Evan Koblentz (মার্চ ৫, ২০১৬)। "Email inventor Ray Tomlinson dies at 74"। TechRepublic।
- Ray Tomlinson। "Frequently Made Mistakes"। ১ মার্চ ২০২১ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ৭ মার্চ ২০১৬।
- Mackey, Robert (২০০৯-০৫-০৪)। "Internet Star @ Least 473 Years Old"। The New York Times। সংগ্রহের তারিখ ২০১০-০৫-২২।
- Sasha Cavender (অক্টোবর ৫, ১৯৯৮)। "Legends"। Forbes। সংগ্রহের তারিখ ফেব্রুয়ারি ২, ২০১৬।
- "The Stibitz/Wilson Awards"। American Computer & Robotics Museum। ৪ মার্চ ২০১৬ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ৬ মার্চ ২০১৬।
- "Raymond S. Tomlinson: Inventor of Network Electronic Mail"। Alumni Hall of Fame। Rensselaer। ৯ মার্চ ২০১৬ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ৬ মার্চ ২০১৬।
- "Official Biography: Raymond Tomlinson"। Internet Hall of Fame। সংগ্রহের তারিখ ৬ মার্চ ২০১৬।
বহিঃসংযোগ
- Tomlinsons' E-mail page ওয়েব্যাক মেশিনে আর্কাইভকৃত ২৪ ফেব্রুয়ারি ২০২১ তারিখে
- NPR Story on Ray Tomlinson
- RPI: Alumni Hall of Fame: Raymond S. Tomlinson (Biography)
- H@ppy birthday to you at BBC on Ray Tomlinson and @ Symbol
- Motherboard.tv Interview: Ray Tomlinson Sent the First Email, But His Inbox Is Still a Mess